মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হাত মুঠো করে বসে রয়েছে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কলকাতা। বদলার এমন সুযোগ, বারবার মেলে না। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে অস্ট্রেলিয়া। সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন (ICC Women’s World Cup)। স্কোর বোর্ড বলছে, শুধু কঠিন নয়, তীব্র চাপেরও। নার্ভ একবার ফেল করলে হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ৩৩৯ রানের পাহাড়প্রমাণ টার্গেট। কিন্তু হার না মানা মনোভাব নিয়েই যেন এদিন মাঠে নেমেছিলেন ২৫ বছরের মেয়ে জেমাইমা রড্রিগস (Jemimah Rodrigues)। দ্বিতীয় ওভারে ব্যাট করতে নামা ২৫ বছরের মেয়ে অবলীলায় সেঞ্চুরি করে গেলেন। প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যখন হার, সেখান থেকে টিমকে তুলে দিলেন সরাসরি ফাইনালে। নট আউট ১২৭ রানের আশ্চর্য ইনিংস খেলে। নবি মুম্বইয়ের মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৮ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জেমাইমা ১২৭ ও অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের ৮৯ রানে ভর করে সেই রান তাড়া করে জিতল ভারত।
হিলিদের জয়রথ থামালেন হরমনপ্রীতেরা
২০১৭ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। হরমনপ্রীত কৌর সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেই ইনিংসকেও ছাপিয়ে গেলেন জেমি। অবশ্য এই ম্যাচেও হ্যারি ৮৮ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে গিয়েছেন। জেমাইমার সঙ্গে হরমনপ্রীতের ১৫৬ বলে ১৬৭ রানের পার্টনারশিপটা না থাকলে কিন্তু জয়ের আনন্দ চোখের জলে বদলে যেত। ২০১৭ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শেষ বার হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই ভারতের কাছেই। তার পর থেকে আর এক দিনের বিশ্বকাপে হারেনি তারা। আট বছর পর সেই ভারতের কাছেই হারল অস্ট্রেলিয়া। হিলিদের জয়রথ থামালেন হরমনপ্রীতেরা।
স্বপ্ন দেখছিলেন জেমি
নবি মুম্বইয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অ্যালিসা হিলি। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক চেয়েছিলেন, বড় রান বোর্ডে তুলতে। সেই মতোই ভারতীয় বোলিংকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফোব লিচফিল্ড একাই প্রায় ম্যাচটা কেড়ে নিয়েছিলেন। ওপেন করতে নেমে মাত্র ৯৩ বলে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেন। চার-ছক্কায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন দীপ্তি শর্মা, রাধা যাদবরা। তিনটে লাগাতার রান আউট আর দিপ্তীর দুটো উইকেট শেষ পর্বে না থাকলে সেমিফাইনালের গল্প অন্যভাবে লিখতে হত। এলিস প্যারি ৭৭ করেন। অ্যাশলি গার্ডনার ৬৩ করেন। ৩৩৯ রানের টার্গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইনালের স্বপ্ন দেখা কঠিন! ভারত দেখেছিল। নিভে যেতে যেতে সেই স্বপ্নকে মুঠোতেও ধরল ওই জেমাইমা রড্রিগস আর হরমনপ্রীত কৌরের জন্য। সারা টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকলেও সেমিতে রান পাননি স্মৃতি মান্ধানা। মাত্র ২৪ করে ফেরেন। তাঁর আগে ফিরে গিয়েছেন প্রতীকা রাওয়ালের বদলে ওপেন করতে নামা শেফালি ভার্মা (১০)। শুরুতেই ধাক্কা। বাকি ম্যাচ সামলে দেওয়া যাবে, এমন স্বপ্ন হয়তো অনেকেই দেখছিলেন না। জেমি দেখেছিলেন।
চোখের জল সামলাতে পারছিলেন না জেমি
২০০৩ বিশ্বকাপের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে ৩৬০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি ৷ ২০২৫-এ ভারতের মেয়েরা রেকর্ড ৩৩৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ম্যাচ জিততে তাঁরা সফল। ম্যাচ শেষে তখন কথা বলবেন কী, চোখের জলই সামলাতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই কোনও মতে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে জেমাইমা রড্রিগেজ নিজের মনের সব কথা এদিন ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে বললেন ৷ জেমাইমা বলেন, ‘‘স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। স্বপ্নটা এখনও শেষ হয়নি। সত্যিই গত এক মাসের কাজটা কঠিন ছিল। একা এটা করতে পারিনি। মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর যাঁরা বিশ্বাস রেখেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’
জানতাম জ্বলে উঠতে হবে
১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের এরকম দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলবেন, ভাবেননি। জেমাইমা বললেন, ‘‘আমি জানতাম না যে, তিন নম্বরে ব্যাট করতে হবে। মাঠে নামার পাঁচ মিনিট আগে, আমাকে বলা হয়েছিল যে আমি তিন নম্বরে ব্যাট করছি। আজ আমার হাফ-সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরিটা বিষয় নয়। ভারতকে জিতিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল। জেমাইমা আরও বলেন, ‘‘আগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো আমরা হেরেছি। গত বছর আমাকে এই বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কোনও কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই সফরে আমি প্রায় প্রতিদিনই কেঁদেছি। মানসিক ভাবে ভাল জায়গায় ছিলাম না। একটা উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। জানতাম আমাকে জ্বলে উঠতে হবে।’’
অসাধ্যসাধন করল ভারত
জ্বলে উঠলেন জেমাইমা। অসাধ্যসাধন করল ভারত। সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে মহিলাদের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেন হরমনপ্রীত কৌরেরা। এক দিনের ক্রিকেটে এটি ভারতের সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়। আমানজ্যোত কৌরের ব্যাটে ফাইনাল বাউন্ডারি আসতেই এদিন মাঠে আবেগের বাঁধ ভেঙে যায়। আজ বিশ্ব ক্রিকেট দেখল এক নতুন সূর্যোদয়। মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ময়দানে দাপট দেখানো ‘মহা-শক্তিশালী’ অস্ট্রেলিয়া অবশেষে তাদের সিংহাসনচ্যুত হল। রবিবার ফাইনালে ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ, এক দিনের বিশ্বকাপে এবার পাওয়া যাবে এক নতুন চ্যাম্পিয়ন।



