Tag: india Ethiopia outreach

  • Ethiopia: ইথিওপিয়া সফর সেরে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী, বড় লাভ হল ভারতের

    Ethiopia: ইথিওপিয়া সফর সেরে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী, বড় লাভ হল ভারতের

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এই প্রথমবার ইথিওপিয়া (Ethiopia) সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (India)। আর তাতেই মাত করে ফেলেছেন বাজি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই ইথিওপিয়া সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুণগত উত্তরণ ঘটিয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করা হয়েছে এবং বাণিজ্য, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতাকে এক সুতোয় গাঁথা হয়েছে। উভয় সরকারের ঘোষিত ফলগুলি স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে, কীভাবে নয়াদিল্লি ও আদ্দিস আবাবা (ইথিওপিয়ার রাজধানী) কয়েক দশকের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে বাস্তবে অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক সাফল্যে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে।

    ভারত ও ইথিওপিয়ার সম্পর্ক (Ethiopia)

    ভারত ও ইথিওপিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ ছিল। এই সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করা সেই ঐতিহ্যকে সমসাময়িক বাস্তবতায় দৃঢ় ভিত্তি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ, লোহিত সাগর–হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক সেতু গড়ে ওঠার সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলছে। ইথিওপিয়ার জন্যও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অর্থনৈতিক চাপ ও জটিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের এই সময়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করার একটি কার্যকর পথ হিসেবেও এই উদ্যোগ কাজ করছে (India)।

    প্রধানমন্ত্রীর সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিক 

    প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিশেষ করে রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে। রাষ্ট্রসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য একটি ইমপ্লিমেন্টিং অ্যারেঞ্জমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা শান্তিরক্ষায় অন্যতম বৃহৎ সেনা-অবদানকারী দেশ হিসেবে ভারতের অভিজ্ঞতা এবং আফ্রিকা-কেন্দ্রিক মিশনে সেনাদল মোতায়েনের ক্ষেত্রে ইথিওপিয়ার সুনামের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যৌথ প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে উভয় দেশই পারস্পরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারবে এবং রাষ্ট্রসংঘের সেই সব ফোরামে রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করবে, যেখানে শান্তিরক্ষা সংস্কার ও ম্যান্ডেট নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে।

    সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াই

    সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াই এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তাও কৌশলগত আলোচনার অংশ ছিল। এর কারণ হল লোহিত সাগরের (Ethiopia) গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সংকীর্ণ পথগুলির কাছে ইথিওপিয়ার অবস্থান এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ভারতের ক্রমবর্ধমান নৌ উপস্থিতি। আনুষ্ঠানিকভাবে একে কোনও সামরিক জোট বলা না হলেও, এই অংশীদারিত্ব আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলে উগ্রপন্থার বিস্তার এবং বিরাট শক্তিগুলির প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সূক্ষ্মভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

    অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই সফরের লক্ষ্য

    অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই সফরের লক্ষ্য হল প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনামূলকভাবে সীমিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পথে থাকা কিছু বাধা দূর করা। যদিও ভারত ইথিওপিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক প্রশাসনিক সহায়তা সংক্রান্ত চুক্তির উদ্দেশ্য হল নথিপত্রের জটিলতা কমানো, তথ্য আদান-প্রদান উন্নত করা এবং চোরাচালান বা ভুল ইনভয়েসিংয়ের মতো সমস্যার মোকাবিলা করা, যা উভয় দেশের রাজস্বের ক্ষতি করতে পারে (Ethiopia)।

    ডেটা সেন্টার স্থাপনের জন্য মউ স্বাক্ষরিত

    সমান গুরুত্বপূর্ণ হল ইথিওপিয়ার বিদেশমন্ত্রকে একটি ডেটা সেন্টার স্থাপনের জন্য মউ স্বাক্ষরিত হওয়া। এটি সরাসরি ভারতের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার রফতানির উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে পরিচয়, লেনদেন (India) ও শাসনব্যবস্থার জন্য নিরাপদ ও স্বল্পব্যয়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম অন্তর্ভুক্ত। অনেক আফ্রিকান দেশই এগুলিকে পুরানো ব্যবস্থা এড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে দেখছে। টেলিকম ও আর্থিক খাতের মতো ক্ষেত্রগুলি উদারীকরণে এগিয়ে থাকা ইথিওপিয়ার জন্য, নিরাপদ ডেটা কাঠামো গড়ে তুলতে ভারতের সহায়তা প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিক নিশ্চয়তাও জোগায়।

    জি২০ কমন ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ইথিওপিয়ার ঋণ পুনর্গঠন

    রাজনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ফলগুলির একটি হল জি২০ কমন ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ইথিওপিয়ার ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত মউ স্বাক্ষরিত হওয়া। ইথিওপিয়া দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ বৈদেশিক ঋণের চাপ ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির সঙ্গে লড়াই করছে। এই বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় ভারতের সমর্থন আদ্দিস আবাবার জন্য বড় ঋণদাতাদের সঙ্গে পুনর্গঠন সংক্রান্ত আলোচনায় একদিকে যেমন নমনীয়তা যোগ করছে, তেমনই আলোচনার বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়াচ্ছে। নয়াদিল্লির দৃষ্টিতে এটি সার্বভৌম ঋণ সংকটে গ্লোবাল সাউথ-বান্ধব একটি দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ, যা অন্য কিছু বড় শক্তির তথাকথিত অস্বচ্ছ বা নিরাপত্তা-সংযুক্ত ঋণদানের ধারণার স্পষ্ট বিরোধী (Ethiopia)।

    মহাত্মা গান্ধী হাসপাতালের ক্ষমতা বাড়াতে ভারতের প্রতিশ্রুতি

    এই সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল ‘জনকেন্দ্রিক’ ফলের ওপর জোর। এই শব্দবন্ধটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। আদ্দিস আবাবার মহাত্মা গান্ধী হাসপাতালের ক্ষমতা বাড়াতে ভারতের (India) প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে মাতৃ ও নবজাতক পরিচর্যার ক্ষেত্রে, ইথিওপিয়ার জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকারের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের একটি দৃশ্যমান ও উচ্চ-প্রভাবযুক্ত প্রকল্প হিসেবেও সামনে আসে। বিশেষায়িত ইউনিট নির্মাণ, চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ – এসব উদ্যোগ শহর ও শহরতলি এলাকার মহিলা ও নবজাতকদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে (Ethiopia)।

    ইথিওপীয় শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা দ্বিগুণ

    মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইসিসিআর কর্মসূচির আওতায় ইথিওপীয় শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা দ্বিগুণ করা এবং আইটিইসি কাঠামোর অধীনে এআই বিষয়ক স্বল্পমেয়াদি বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা – এই দুই উদ্যোগ ইথিওপিয়ার অভিজাত মহলের ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে আরও বিস্তৃত করছে। বিশেষত এআই-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সগুলি আদ্দিস আবাবার প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি একই সঙ্গে প্রশাসনিক কাঠামোকে উদীয়মান প্রযুক্তি বোঝার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করবে। এসব উদ্যোগ এমন এক প্রজন্মের ইথিওপীয় পেশাজীবী গড়ে তুলছে, যাঁদের ভারত-অভিজ্ঞতা বাস্তব ও প্রত্যক্ষ – যা কোনও একক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমেও অর্জন করা সম্ভব নয়, এবং যা ভারতের সফট পাওয়ারকে দীর্ঘমেয়াদে আরও গভীর ও শক্তিশালী করে তোলে।

    গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরীক্ষাক্ষেত্র

    একটু পিছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই সফরের ফলগুলি এটা স্পষ্ট করে যে, ভারত আফ্রিকার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে সমমর্যাদার অংশীদারিত্ব হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, যার মূল লক্ষ্য সক্ষমতা গঠন, স্থিতিশীলতা এবং স্বনির্ভরতা, কোনও শোষণমূলক চুক্তি নয়। আফ্রিকার একটি জনবহুল রাষ্ট্র হিসেবে (India), আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দফতরের আতিথ্যকারী এবং লোহিত সাগর, নীল নদের অববাহিকা ও বিস্তৃত হর্ন অব আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থানকারী ইথিওপিয়া এই মডেলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরীক্ষাক্ষেত্র (Ethiopia)। ঋণমকুব, ডিজিটাল পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য সহযোগিতা, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ – এই সব কিছুকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত প্যাকেজে উপস্থাপন করার মাধ্যমে মোদি–আবিই রোডম্যাপ দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতার একটি বিকল্প বয়ান হাজির করছে, এমন একটা সময়ে যখন হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চল এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনা উভয়ই চাপের মুখে রয়েছে। যদি এই উদ্যোগগুলির বাস্তব প্রতিফলন ফিল্ড লেভেলে দেখা যায়, যেমন দ্রুততর শুল্ক ছাড়পত্র, কার্যকর একটি ডেটা সেন্টার, আরও ভালোভাবে সজ্জিত সরকারি হাসপাতাল, এবং ভারতীয় সহায়তায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরও বেশি ইথিওপীয় ছাত্র ও শান্তিরক্ষী, তাহলে ভারত–ইথিওপিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্ব নয়াদিল্লির জন্য মহাদেশের অন্যত্রও অনুসরণযোগ্য একটি মডেলে পরিণত হতে পারে (Ethiopia) ।

LinkedIn
Share