মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ককে (Turkey) সবার আগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির ভারত। বিশেষ বিমানে করে ত্রাণ পাঠিয়েছিল নয়াদিল্লি। অথচ, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের জেরে যখন পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, তখন নয়াদিল্লির অবদান ভুলে গিয়ে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের পাশেই দাঁড়ায় ইসলামিক রাষ্ট্র তুরস্ক (India Greece Missile Deal)! উন্নত ড্রোন, অন্যান্য সামরিক যুদ্ধাস্ত্র এবং যুদ্ধ জাহাজ দিয়ে বন্ধু পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল তুরস্ক। সেই তুরস্ককেই এবার উপযুক্ত জবাব দিতে চলেছে ভারত! তুরস্কের জাতশত্রু গ্রিসকে লং রেঞ্জ ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল দিতে চলেছে ভারত। সাম্প্রতিক গ্রিস সফরের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান মার্শাল ভিআর চৌধুরি গ্রিসের বিমান বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গ্রিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উভয় দেশই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি সই করেছে। এই চুক্তির আওতায় ভারত থেকে গ্রিসে লং-রেঞ্জ ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল সরবরাহের একটি সম্ভাব্য চুক্তির কথাও উল্লেখ রয়েছে।
ক্রুজ মিসাইল গ্রিসকে দেওয়ার প্রস্তাব (India Greece Missile Deal)
তুরস্কের সংবাদসংস্থা টিআর হেবার জানিয়েছে, ডিআরডিও নির্মিত এই মিসাইল সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। যদিও ভারত বা গ্রিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র মারফত পাওয়া খবরে ওই সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, ভারত ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম একটি ক্রুজ মিসাইল গ্রিসকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই সম্ভাব্য মিসাইল দেওয়ার খবরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তুরস্কে। ভারতের কাছ থেকে গ্রিস এই ধরনের কৌশলগত অস্ত্র পেতে পারে, এমন আশঙ্কায় কাঁটা আঙ্কারা (তুরস্কের রাজধানী)। ভারতের এই মিসাইলটি বিমানঘাঁটি, প্রতিরক্ষা (Turkey) ব্যবস্থা, রাডার ইনস্টলেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। এটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আঙ্কারার (India Greece Missile Deal)।
ভারত-তুরস্ক সম্পর্ক
এই জল্পনা এমন একটা সময়ে উঠেছে যখন ভারত-তুরস্ক সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানকে নানাভাবে সাহায্য করেছিল তুরস্ক। বস্তুত তার পরেই ভারত-তুরস্কের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতের অস্ত্রের ক্ষমতা চাক্ষুষ করেছে তামাম বিশ্ব। তাই আরও বেশি করে ভয় পেয়েছে তুরস্ক। কারণ গ্রিস যদি ভারতের এলআর-এলএএসিএম মিসাইল পায়, তাহলে তারা তুরস্কের বিমান ঘাঁটিতে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারবে। তখন পরিস্থিতি অনেকটা এমন হবে, যেমনটা হয়েছিল অপারেশন সিঁদুরের সময়। প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুরে ভারত বেছে বেছে আঘাত হেনেছিল পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে।
এলআর-এলএএসিএম মিসাইলটি বৈশিষ্ট্য
প্রসঙ্গত, এলআর-এলএসিএম মিসাইলটি ব্রহ্মোস মিসাইলের মতোই তৈরি করা হয়েছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কম উচ্চতায় এবং অত্যন্ত উচ্চ গতিতে চলা, যার ফলে একে প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং এটি প্রচলিত ও অপ্রচলিত—উভয় ধরনের যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম। এটি তৈরি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা। ২০২৪ সালে এর প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয় (Turkey)।
তুরস্কের সংবাদ মাধ্যমে জল্পনা
তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম এই জল্পনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হেবারের একটি প্রতিবেদনের হেডলাইনই ছিল, “ভারত ১,০০০ কিমি রেঞ্জের ক্রুজ মিসাইল এজিয়ানে নিয়ে এসেছে! তারা তুরস্ককে টার্গেট বানাবে!” ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিস সম্ভবত ভারতের “অপারেশন সিঁদুরের কৌশলগত দিকগুলি বিশ্লেষণ করে তুরস্কে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে এও দাবি করা হয়েছে, গ্রিস ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমানের পারফরম্যান্স সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে (India Greece Missile Deal)।
গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা
গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। এই দুই ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। সামরিক সংঘর্ষ এবং আইজিয়ান সাগর, আকাশসীমা লঙ্ঘন, সাইপ্রাস ইস্যু এবং সাম্প্রতিককালে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে জ্বালানি সম্পদের ওপর প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা উঠেছে তুঙ্গে। একই সামরিক জোটের অংশ হওয়া এবং ইউরোপীয় (Turkey) ইউনিয়নের কিছু সহযোগিতা কাঠামো শেয়ার করা সত্ত্বেও, গ্রিস-তুরস্কের সম্পর্ক কার্যত সাপে-নেউলে (India Greece Missile Deal)।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দ্বীপপুঞ্জকে কেন্দ্র করে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে গ্রিস আর তুরস্ক। গ্রিসের দাবি, কোস, সামোস, লেসবস-সহ পূর্ব এজিয়ান সাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে তুরস্ক। ওই দ্বীপগুলির ওপর দিয়ে তারা নাকি নিয়মিত যুদ্ধবিমানও ওড়ায়। ১৯২৩ সালে লুসানের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিস আর তুরস্কের বর্তমান (Turkey) সীমান্ত নির্ধারিত হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী লেসবস, চিওস, সামোসের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পেয়েছিল গ্রিস (India Greece Missile Deal)।