মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দাপট দেখাচ্ছে ভারত। আমেরিকা-রাশিয়ার মতো এবার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির খেলায় ময়দানে নেমে পড়েছে ভারতও। ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (India BrahMos Missile) রফতানিতে ভারতের পরবর্তী গন্তব্য হতে চলেছে ভিয়েতনাম। ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, এই চুক্তি কয়েক মাসের মধ্যেই স্বাক্ষরিত হতে পারে। ফিলিপিন্সের মতোই ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের উপকূলীয় ব্যাটারি সিস্টেম ভারত থেকে সংগ্রহ করতে চায় ভিয়েতনাম।
চিনকে টক্কর দিতেই ব্রহ্মস
ব্রহ্মোসের (India BrahMos Missile) ২৯০ কিলোমিটার পাল্লার নিখুঁত আঘাত হানার ক্ষমতা ভিয়েতনামকে দক্ষিণ চিন সাগরে তার সামুদ্রিক সীমানা সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে। এতে করে চিনা যুদ্ধজাহাজের হুমকির মোকাবিলায় ভিয়েতনাম আরও প্রস্তুত থাকবে, বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। যদি ভারত-ভিয়েতনাম ব্রহ্মস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে ফিলিপিন্সের পর ভিয়েতনাম হবে দ্বিতীয় দেশ, যারা তাদের নৌবাহিনীতে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করবে। প্রসঙ্গত, ভারত ২০২২ সালে ফিলিপিন্সের সঙ্গে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ব্রহ্মোস চুক্তি করেছিল, যা ছিল এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম আন্তর্জাতিক বিক্রি। ভিয়েতনামের এই সম্ভাব্য চুক্তি ইঙ্গিত দেয় যে, চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে জড়িত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্রহ্মোসের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ইতিমধ্যেই ব্রহ্মোস নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই নয়, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশও ব্রহ্মোস সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষত্ব কী?
ব্রহ্মোস (India BrahMos Missile) ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২৯০ কিলোমিটার এবং এটি শব্দের গতির চেয়ে আড়াই গুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে। এটি বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে একটি। এটি যৌথভাবে রাশিয়ার ডিআরডিও এবং এনপিওএম দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি, ভারতীয় বিমান বাহিনী সুখোই বিমান থেকে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মোস সফলভাবে পরীক্ষা করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি শাখাই ব্রহ্মোস ব্যবহার করে। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র তার গতি ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। পদাতিক সেনা তো বটেই, বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীও এই ক্ষেপণাস্ত্রে ভরসা রেখে আসছে।
আরও উন্নত ব্রহ্মোস
২০১৬ সালে ভারত মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (MTCR)-এর সদস্য হওয়ার পর, ব্রহ্মোসের পাল্লা ৩০০ কিমির বেশি বাড়ানোর পথ খুলে যায়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ৩০০ কিমির বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে প্রথমে ভারত ও রাশিয়ার যৌথভাবে তৈরি ব্রহ্মোসের পাল্লা সীমিত ছিল ২৯০ কিমি পর্যন্ত। বর্তমানে ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪০০ থেকে ৬০০ কিমি পর্যন্ত বাড়ানোর কাজ করছে। সম্প্রতি ভারতীয় বায়ুসেনা একটি সু-৩০ যুদ্ধবিমান থেকে ৪০০ কিমি পাল্লার ব্রহ্মোসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে এগোচ্ছে ভারত
মেক-ইন-ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় বেড়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ‘চলতি বছরে ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করা হবে। আমাদের লক্ষ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত ৩ লক্ষ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করবে ভারত।’ একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের। যা চলতি বছরে এসে ঠেকেছে ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকায়। প্রসঙ্গত, ফিলিপিন্সকে ব্রহ্মোস পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ভারত। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গে ব্রহ্মোস-চুক্তি সাক্ষর করতে চলেছে নয়াদিল্লি।
চিন্তায় চিন
ব্রহ্মোসের (India BrahMos Missile) প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বৃদ্ধিতে চিন্তিত চিন। বিশেষ করে দক্ষিণ চিন সাগরের ওপর তার দাবিকে ঘিরে ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক উত্তপ্ত। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য ব্রহ্মোস এক প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠছে। দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য থাকবে কার, এই নিয়ে উত্তর-পূর্ব দেশগুলির মধ্যে বিরোধ নতুন নয়। চিনের ‘দাদাগিরি’ আটকাতে প্রায়ই ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া লড়াই করে। দক্ষিণ চিন সাগরে একাধিপত্য বিস্তার করতে সব সময়ই আগ্রাসী ভূমিকা নেয় বেজিং। এই সাগরে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ তারা। ফিলিপিন্স-সহ অন্য দেশগুলিও যে পিছু হটতে নারাজ তা বার বার বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই এই সব দেশগুলির সঙ্গে সংঘাত লেগেই রয়েছে চিনের। সেই সংঘাতেই এবার জড়িয়ে পড়ল ভারতও। এ দেশে তৈরি দূরপাল্লার ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ইতিমধ্যেই ফিলিপিন্সে পৌঁছেছে। এবার পালা ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার।