Tag: KB Hedgewar

  • Nagpur: ১৯২৭ সালে নাগপুরে মৌলবাদীদের তাণ্ডব রুখে দেয় আরএসএস

    Nagpur: ১৯২৭ সালে নাগপুরে মৌলবাদীদের তাণ্ডব রুখে দেয় আরএসএস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৯২৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নাগপুরের (Nagpur) ঘটনা নিয়েই এই প্রতিবেদন। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশ এবং বেরারের অংশ ছিল নাগপুর, বর্তমানে যা মহারাষ্ট্রে অবস্থান করছে। জানা যায়, ৪ সেপ্টেম্বর মহালক্ষ্মী পুজোর একটি বিশাল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, সে সময় হিন্দুদের শোভাযাত্রা যখন নাগপুরের বিভিন্ন রাস্তার ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই মৌলবাদীরা এতে অতর্কিত হামলা চালায়। ১৯২৭ সালে ৪ সেপ্টেম্বরের সেই সন্ধ্যায় মৌলবাদী আক্রমণের দৃশ্য অনেকটা ফুটে উঠেছে লেখক এমজি চিকারার লেখা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ – এক জাতীয় উত্থান বইতে। এই বইতে লেখক লিখছেন, ‘‘লক্ষ্মী পুজোর দিন দুপুরে প্রসাদ গ্রহণ করার পরে হিন্দুরা বিশ্রাম নিতে শুরু করে। কারণ সারাদিন ধরে তাঁরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। এরপরেই ঠিক বিকেলে শোভাযাত্রা বের হয়। তখনই প্রাণঘাতী অস্ত্র হাতে নিয়ে পাল্টা মিছিল করতে দেখা যায় মৌলবাদীদের। এই মিছিল অতর্কিত আক্রমণ চালায়। নাগপুরের হিন্দু পরিবারগুলিকে আক্রমণও করা হয়। তাদের ঘরবাড়ি লুট করা হয়।’’

    সাম্প্রদায়িক হিংসার খবর প্রকাশিত হয় নিউ ইয়র্ক টাইমসে

    প্রসঙ্গত, ১৯২৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে নাগপুরে (Nagpur), তা ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনেও প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ বোঝাই যায়, এই ঘটনা সেসময় আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রেও খবরের শিরোনামে চলে আসে। নাগপুরের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়ে ওঠে এক আন্তর্জাতিক ইস্যু। লেখক এমজি চিকারা তাঁর বইতে আরও লিখছেন, ‘‘মৌলবাদীরা হামলা শুরু করলে পাল্টা প্রতিরোধ করেন স্থানীয় হিন্দু যুবকরা। তখনই প্রমাণ হয় যে হিন্দুরাও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে।’’

    সিপি ভিসিকর নিজের বইতে কী লিখেছিলেন?

    আর একজন লেখক সিপি ভিসিকর ১৯৭৯ সালে একটি বই লেখেন। যার নাম “কেশব: সংঘ নির্মাতা”। এই বইয়ের ৪৩ এবং ৪৪ পাতায় তিনি নাগপুরের (Nagpur) ওই ঘটনা উল্লেখ করেন। সিপি ভিসিকর তাঁর বইতে লিখছেন, ‘‘মৌলবাদীরা ৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৭ সালে একটি বিশাল মিছিল বের করে এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার পরিকল্পনা শুরু করে। তারা বিকেলের সময়ে মিছিলটি আয়োজন করেছিল। কারণ তারা জানত যে হিন্দুরা দুপুরে খাবারের পরে বিশ্রাম নেবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মীরা সেই পরিকল্পনা বুঝতে পেরেছিলেন। স্বয়ংসেবকরা জানতেন, ওই মিছিল থেকে হিংসা ছড়াবে। সংঘ প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার হেডগেওয়ার সেদিন ব্যক্তিগত কাজে নাগপুরের বাইরে ছিলেন। মৌলবাদীদের ওই মিছিল নাগপুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এলাকাগুলি দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যে পথ দিয়ে ওই মিছিল যাচ্ছিল, তার আশেপাশে অনেক সরু গলি ছিল। মৌলবাদীদের হাতে লাঠি ,বর্শা, ছুরি – এই সমস্ত কিছুই ছিল। এই আবহে তারা একটি হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ করার উদ্দেশে জড়ো হয়, কিন্তু সেখানে ঢোকার মুহূর্তেই তাদেরকে প্রতিহত করা হয়।’’

    আরএসএস প্রচারক বসন্তরাও ওকের বিবৃতি

    রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বরিষ্ঠ প্রচারক বসন্তরাও ওক ওই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নিয়ে যা মন্তব্য করেছিলেন, তা লিপিবদ্ধ আছে এমজি চিকারার লেখা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও জাতীয় উত্থান বইয়ের ২৪৯ নম্বর পৃষ্ঠায়। বসন্তরাও ওকের বিবৃতি অনুযায়ী, ১৯২৭ সালে নাগপুরে ভয়ঙ্কর সম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছিল এবং হিন্দুরা মৌলবাদীদের প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছিল।

    কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের ভূমিকা

    প্রসঙ্গত, ১৯২০র দশক থেকেই মৌলবাদীরা নাগপুরের (Nagpur) রাস্তাঘাটে ব্যাপক তাণ্ডব চালাত। এই সময় থেকেই ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার উপলব্ধি করেছিলেন, কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতি, ভারতে খিলাফত আন্দোলন – এসব কিছুই যেন হিন্দুদের দুর্বল করার জন্য। হিন্দুরা ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগী হন হেডগেওয়ার। এই সময় কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের কাছে মৌলবাদীরা বিভিন্ন হুমকির চিঠিও পাঠাতে থাকে। এমনকি তাঁর ওপর একাধিক হামলারও প্রচেষ্টা করা হয়। তবে নাগপুরে (Nagpur) শহরে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের নেতৃত্বে আরএসএস গোটা হিন্দু সমাজকে এক করতে সমর্থ হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগপুরে ১৯২৭ সালের পরে গোটা বিংশ শতাব্দীজুড়ে কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

  • RSS: আরএসএস-ই মহাত্মা গান্ধীর যথার্থ উত্তরসূরি!

    RSS: আরএসএস-ই মহাত্মা গান্ধীর যথার্থ উত্তরসূরি!

    মাধ্যম বাংলা নিউজ: আরএসএসের (RSS) নাম শুনলেই যাঁরা নাক সিঁটকান, তাঁরা জেনে রাখুন আরএসএস-ই মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) যথার্থ উত্তরসূরি! কারণ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদর্শ ধরে রেখেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, যাঁরা আরএসএস নামেই পরিচিত।

    মহাত্মা গান্ধী (RSS)

    মহাত্মা গান্ধী ছিলেন একনিষ্ঠ হিন্দু। হিন্দু ধর্ম, গো-সুরক্ষা, স্বদেশি ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ সম্পর্কে তাঁর ভাবনাগুলি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে আরএসএস। প্রকৃতপক্ষে, মহাত্মা গান্ধী ছিলেন সংঘের অন্যতম বড় প্রশংসক। ১৯৩৪ সালে গান্ধী মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় একটি আরএসএস প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। এটি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। কারণ এই প্রশিক্ষণ শিবিরে সব বর্ণের যুবক ও বালকরা একসঙ্গে অবস্থান করছিল। তারা একই ছাদের নীচে খাচ্ছিল। সহ-স্বয়ংসেবকদের জাতি নিয়ে কোনও ভেদাভেদ ছিল না।

    গান্ধীর বক্তব্য

    স্বাধীনতার এক মাস পর, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে, দিল্লিতে এক ভাষণে আরএসএস কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গান্ধী স্মরণ করেছিলেন, “আমি বছর কয়েক আগে আরএসএস (RSS) শিবিরে গিয়েছিলাম। যখন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীর (কেশব বালিরাম) হেডগেওয়ার উপস্থিত ছিলেন। তোমাদের শৃঙ্খলা, অস্পৃশ্যতার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং কঠোর সরলতা আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করেছিল।” তিনি বলেছিলেন, “তখন থেকে সংঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে যে কোনও সংগঠন, যা সেবার উচ্চ আদর্শ এবং আত্মত্যাগ দ্বারা অনুপ্রাণিত, তা অবশ্যই শক্তিশালী হয়ে উঠবে (Mahatma Gandhi)।”

    হেডগেওয়ারের বক্তব্য

    ১৯৩৯ সালে পুণেতে সংঘ শিক্ষা বর্গ (আরএসএসের প্রশিক্ষণ শিবির) পরিদর্শন করেছিলেন ভারতীয় সংবিধানের জনক ভীমরাও অম্বেডকরও। তিনি যখন আরএসএসের (RSS) প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কে বি হেডগেওয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে শিবিরে কোনও অস্পৃশ্য ব্যক্তি রয়েছেন কিনা। তখন আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা উত্তর দিয়েছিলেন যে এখানে স্পৃশ্য বা অস্পৃশ্য কেউ নেই, কেবল হিন্দুরাই রয়েছেন। অম্বেডকর বলেছিলেন, “আমি আশ্চর্য হয়েছি দেখে যে স্বয়ংসেবকরা সম্পূর্ণ সমতা ও ভ্রাতৃত্বের সঙ্গে চলাফেরা করছে। তারা এমনকি একে অন্যের জাতপাত সম্পর্কে জানার প্রয়োজনও অনুভব করছে না।”

    ওয়াল্টার অ্যান্ডারসন

    আরএসএসের উচ্চকিত প্রশংসা করেছিলেন বিশ্বশ্রুত লেখক ওয়াল্টার অ্যান্ডারসনও। তিনি ছিলেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রধান। আরএসএসের ওপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন তিনি। ‘ইন্টিগ্রাল হিউম্যানিজম’ শীর্ষক একটি সংকলনে (দীনদয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশ করেছে) তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে প্রবীণ আরএসএস প্রচারক ও চিন্তাবিদ পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের তুলনা (RSS) করেছেন।

    অ্যান্ডারসনের বক্তব্য

    এই উপাধ্যায়ই ছিলেন ভারতীয় জনসংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্ববর্তী রূপ এই ভারতীয় জনসংঘ (Mahatma Gandhi)। “অখণ্ড মানবতাবাদ”-ই হল বিজেপির সরকারি মতাদর্শ। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ‘গান্ধী এবং দীনদয়াল: দুই ঋষি’ শীর্ষক প্রবন্ধে অ্যান্ডারসন গান্ধী ও উপাধ্যায়ের মধ্যে তুলনা করেছিলেন। তিনি তাঁদের দুজনের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। অ্যান্ডারসন লেখেন, “গান্ধী ও উপাধ্যায় মূলত সংগঠক ছিলেন। দার্শনিক জল্পনার চেয়ে সংগঠন গঠনে বেশি আগ্রহী ছিলেন। উভয়ই ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।” তিনি আরও লেখেন, “গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে রূপান্তরিত করেছিলেন। ‘মহাত্মা’ হিসেবে তার ক্যারিশমাটিক আবেদন কংগ্রেসকে স্বাধীনতা আন্দোলনের কার্যকর বাহিনীতে পরিণত করেছিল। উপাধ্যায়ও সাধুসুলভ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। জনসংঘের কর্মীদের ওপর তাঁরও একই রকম প্রভাব ছিল।”

    গান্ধী ও উপাধ্যায়

    গান্ধী ও উপাধ্যায় উভয়েই সরাসরি ক্ষমতার রাজনীতির বৃত্ত থেকে দূরে ছিলেন। দুজনেই তীক্ষ্ণ কিন্তু বাস্তববাদী বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তাঁদের তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। গান্ধী ছিলেন ‘স্বরাজ’ ও ‘স্বদেশী’র প্রবল সমর্থক। উপাধ্যায়ও ‘অখণ্ড মানবতাবাদে’র আলোচনায় একই দর্শনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমি উন্নয়ন মডেলের প্রত্যাখ্যানই ছিল গান্ধী ও উপাধ্যায় উভয়ের চিন্তার মূল ভিত্তি। অ্যান্ডারসন লিখেছেন, “শেষ পর্যন্ত, উভয়েই রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি সন্দিহান ছিলেন। এটি কীভাবে জননেতাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে তা নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন। কেউই কখনও কোনও রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হননি, এমনকি তা চাওয়ারও চেষ্টা করেননি”। তিনি লিখেছেন, “ভারত স্বাধীনতা লাভের কয়েক মাস পর গান্ধী তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের বলেছিলেন— ক্ষমতা পরিত্যাগ করে এবং ভোটারদের প্রতি বিশুদ্ধ ও নিঃস্বার্থ সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে, আমরা তাঁদের পরিচালিত ও প্রভাবিত করতে পারি। এটি আমাদের প্রকৃত ক্ষমতা দেবে, যা আমরা সরকারে গিয়ে অর্জন করতে পারব না। আজ রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। যে কেউ এতে প্রবেশ করে, সে কলুষিত হয়। আসুন আমরা একেবারেই এর বাইরে থাকি। এর ফলে আমাদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে।”

    গান্ধী এবং উপাধ্যায় উভয়েই একই (RSS) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে সমাজে পুরুষ ও নারীর গুণগত মানই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। আরএসএস মনে করে যে এমন পুরুষ ও নারীদের প্রস্তুত করার কাজই গত ৯৩ বছর ধরে দেশে কেবলমাত্র একটি সংগঠন— আরএসএসই নিরবচ্ছিন্নভাবে করে আসছে (Mahatma Gandhi)।

     

LinkedIn
Share