Tag: Kisan Diwas

  • Kisan Diwas: ডিজিটাল পেমেন্ট, ফসল বিমা ও পেনশন—ভারতীয় কৃষকদের জন্য নতুন যুগ

    Kisan Diwas: ডিজিটাল পেমেন্ট, ফসল বিমা ও পেনশন—ভারতীয় কৃষকদের জন্য নতুন যুগ

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রতি বছর ২৩ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পালিত হয় কিষাণ দিবস বা জাতীয় কৃষক দিবস। এই দিনটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের জন্মবার্ষিকী হিসেবে চিহ্নিত, যিনি আজীবন কৃষকস্বার্থের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিষাণ দিবস উপলক্ষে দেশ শ্রদ্ধা জানায় সেই কৃষকদের—যাঁরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির মূল ভরকেন্দ্র। ২০১৪ সালের পর থেকে কৃষক কল্যাণ ও কৃষি উন্নয়ন নরেন্দ্র মোদি সরকারের নীতির কেন্দ্রে রয়েছে। আর্থিক সহায়তা, ঝুঁকি সুরক্ষা, সহজ ঋণপ্রাপ্তি, প্রযুক্তির ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে কৃষিকাজকে আরও লাভজনক, নিরাপদ ও টেকসই করার চেষ্টা চলছে।

    সরাসরি আয় সহায়তা: পিএম-কিষাণ সম্মান নিধি

    কৃষকদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প হল প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM-KISAN)। এই প্রকল্পের আওতায় যোগ্য কৃষকরা বছরে ৬,০০০ টাকা পান, যা তিনটি কিস্তিতে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এই অর্থ কৃষিজ উপকরণ কেনা থেকে শুরু করে পারিবারিক প্রয়োজনে কাজে আসে, ফলে উচ্চ সুদের ঋণের ওপর নির্ভরতা কমে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন ১১ কোটিরও বেশি কৃষক এবং মোট বিতরণ করা হয়েছে ৩.২৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে পিএম-কিষাণের ২১তম কিস্তি প্রদান করা হয়, যার মধ্যে শুধু হরিয়ানাতেই ৩১৬ কোটি টাকা পৌঁছেছে ১৫.৮ লক্ষের বেশি কৃষকের কাছে।

    কৃষি সুরক্ষা: প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা

    প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ঝুঁকি থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা (PMFBY)। এই প্রকল্পে খরিফ ফসলের জন্য কৃষকদের মাত্র ২ শতাংশ এবং রবি ফসলের জন্য ১.৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হয়, বাকি অংশ বহন করে সরকার। ২০২৫ সালে উত্তরাখণ্ড-সহ বিভিন্ন রাজ্যে হাজার হাজার কৃষক এই বিমা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। শুধু উত্তরাখণ্ডেই ২৮,০০০-এর বেশি কৃষকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৬২ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

    আত্মনির্ভরতার পথে নতুন উদ্যোগ

    ২০২৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি কৃষকদের আত্মনির্ভরতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দুটি নতুন উদ্যোগের সূচনা করেন—পিএম ধান-ধান্য কৃষি যোজনা এবং ডাল স্বনির্ভরতা মিশন। প্রায় ৩৫,৪৪০ কোটি টাকার এই সম্মিলিত প্রকল্প ১০০টি জেলায় সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। উদ্দেশ্য একটাই—কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে কৃষি স্বাস্থ্যের উন্নতি।

    সহজ ঋণ: কিষাণ ক্রেডিট কার্ড

    বীজ, সার, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকের জন্য মূলধনের প্রয়োজন মেটাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) প্রকল্প কৃষকদের সহজ ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা দেয়। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কার্যকর কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ৭.৭৫ কোটিরও বেশি। পাশাপাশি সুদের ভর্তুকি কৃষকদের বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাচ্ছে। আজীবন কৃষিকাজের পর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালু হয়েছে পিএম কিষাণ মানধন যোজনা। এটি একটি স্বেচ্ছামূলক পেনশন প্রকল্প, যার মাধ্যমে ৬০ বছর বয়সের পর কৃষকরা মাসিক পেনশন পান।

    প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির পথে

    আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সরকার কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, ফসল ফলন পূর্বাভাস প্রযুক্তি (YES-TECH) এবং উন্নত তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকদের সময়োপযোগী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই কিষাণ দিবসে মোদি সরকারের কৃষিনীতি এক নতুন ভারতের ছবি তুলে ধরছে—যেখানে ডিজিটাল লেনদেন কৃষকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সহায়তা পৌঁছে দেয়, বিমা প্রকল্প প্রাকৃতিক ঝুঁকি কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করে। হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের উর্বর মাঠ থেকে শুরু করে উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি কৃষিজমি—সর্বত্রই সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। মোদি সরকারের সহায়তায় অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও আত্মনির্ভর কৃষিই শক্তিশালী ভারতের ভিত্তি।

LinkedIn
Share