মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) থেকে সন্ত্রাসকে নির্মূল করত ফের বড়সড় অভিযান চালাল সেনা। অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) আবহে মঙ্গলবারই সোপিয়ানে ‘অপারেশন কেল্লার’ চালিয়ে ৩ জঙ্গিকে নিকেশ করল নিরাপত্তাবাহিনী। এরা প্রত্যেকেই লস্কর জঙ্গি বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
সোপিয়ানের জিনপাথের জঙ্গলে শুরু হয় গুলির লড়াই
প্রসঙ্গত,পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরেই অ্যাকশন মোডে (Operation Sindoor) নামে ভারত সরকার। উপত্যকাজুড়ে লাগাতার অভিযান শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গির বাড়ি। সন্ত্রাসযোগের অভিযোগে শতাধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে চলতে থাকে জিজ্ঞাসাবাদ। এর পাশাপাশি খতম করা হয় একাধিক জঙ্গিকে। জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সোপিয়ানের জিনপাথের কেল্লের জঙ্গলঘেরা এলাকায় জঙ্গিদের উপস্থিতির গোপন খবর পায় সেনা। এরপরেই শুরু হয় অভিযান। যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন কেল্লার’। গোটা এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। এই অবস্থায় পিছু হঠার জায়গা না পেয়ে গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে পালটা জবাব দেয় ভারতীয় সেনাও। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে দুপক্ষের গুলির লড়াই। এরপরেই খবর আসে ৩ জঙ্গি নিহত হওয়ার।
জঙ্গিদের পরিচয় জানাল সরকার
সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মৃত এক জঙ্গির নাম শাহিদ কুট্টে। মহম্মদ ইউসুফ কুট্টের ছেলে। সোপিয়ানের ছোটিপোড়া হিরাপোরা এলাকার বাসিন্দা ছিল। ২০২৩ সালের ৮ মার্চ সে লস্কর-ই-তৈবাতে যোগ দিয়েছিল। ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল ড্যানিস রিসর্টে গুলি চালানোর ঘটনার যুক্ত ছিল সে। সেদিন দুজন জার্মান পর্যটককে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। এক চালক আহত হয়েছিলেন। সোপিয়ানের হিরাপোরাতে বিজেপির এক পঞ্চায়েত প্রধানকে গুলি করার ঘটনাতেও যুক্ত ছিল সে। ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুলগামে গুলি চালানোর ঘটনায় সে যুক্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় জঙ্গিকেও শনাক্ত করা গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যটকের নাম আদনান শাফি দার। সে মহম্মদ শাফি দারের ছেলে। তারও বাড়ি সোপিয়ানে। সোপিয়ানের ওয়ানদুনা মেলহোরা এলাকার বাসিন্দা ছিল সে। সে লস্করে যোগ দিয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর। ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর সোপিয়ানে স্থানীয় নয় এমন কয়েকজন শ্রমিকের উপর গুলি চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও এই জঙ্গি জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তৃতীয় জঙ্গির পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তার পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor)
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলা চালায় পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। এই বর্বর হামলা অপারেট করা করা পাকিস্তানে বসেই। বেছে বেছে হিন্দুদের ধর্মীয় পরিচয় দেখে হত্যা করা হয় ২৫ পর্যটককে। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান এক কাশ্মীরি যুবক (Jammu and Kashmir)। এমন হামলার পরে গত ৭ মে পাকিস্তানে জঙ্গিদের আঁতুড়ঘরে অপারেশন সিঁদুর প্রয়োগ করে ভারত। এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ৯টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যু হয় শতাধিক জঙ্গির। তবে সন্ত্রাসের বুকে আঘাত হানতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের মদতদাতারা। ভারতের ওপর পালটা হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। তবে তা রুখে দেয় ভারতের উন্নত মানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। পাকিস্তানের ওপর কড়া প্রত্যাঘাত করে ভারত। পাকিস্তানের বায়ুসেনা ঘাঁটি-সহ অন্তত ১১টি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতের সেনা। এরপরেই পাকিস্তানের তরফে আসে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব। এরপর ভারত সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি।
মোদির কড়া বার্তা (Operation Sindoor)
সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সন্ত্রাস নির্মূল করতে কড়া বার্তা দেন তিনি। তারপরে মঙ্গলবারই জঙ্গি দমনে সেনার সাফল্য সামনে এল। সোমবার মোদি বলেন, “পাকিস্তানকে যদি বাঁচতে হয়, তাহলে ওদের সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মূল করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত আর সন্ত্রাসবাদীদের চোখরাঙানি সহ্য করবে না।” এর পরেই তিনি বলেন, “পাকিস্তানকে যদি বাঁচতে হয় ওদের সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মূল করতে হবে। ‘টেরর’ ও ‘টক’ (সন্ত্রাস ও আলোচনা) এক সঙ্গে চলতে পারে না। জল এবং রক্ত একই সঙ্গে বইতে পারে না।” অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্টেট স্পনসর্ড টেররিজমের বড় উদাহরণ হল পহেলগাঁওকাণ্ড। প্রতিটি যুদ্ধের ময়দানে আমরা পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছি। ‘অপারেশন সিঁদুরে’ও আমরা সেই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছি। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ হাতিয়ার তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।”
পহেলগাঁও হত্যালীলায় জড়িত জঙ্গিদের ছবি-সহ পোস্টার সাঁটানো হয়েছে
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পহেলগাঁওকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের খোঁজও জারি রয়েছে। চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সেনা। এই আবহে মঙ্গলবারই সামনে এসেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রকাশিত একটি ভিডিও। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলওয়ামা জেলার বিভিন্ন জায়গায় মঙ্গলবার সকালে পহেলগাঁও হত্যালীলায় জড়িত জঙ্গিদের ছবি-সহ পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পহেলগাঁওকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের কোনও খোঁজ দিতে পারলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার, তিন পাক জঙ্গির স্কেচ আগেই প্রকাশ করেছিল পুলিশ। এ বার তাদের ছবি ছাপিয়ে পোস্টার পড়ল কাশ্মীরে। পহেলগাঁও হামলার পরে তিন জন পাকিস্তানি জঙ্গিকে চিহ্নিত করে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। জানা যায়, এদের এক জন স্থানীয় জঙ্গিকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গিদের খুঁজতে পুলিশ, সেনার পাশাপাশি এই হামলার তদন্ত চালাচ্ছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাও। জঙ্গিদের সহযোগিতা করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই কাশ্মীর উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে একশোরও বেশি স্থানীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মূলত তাঁরা জঙ্গিদের ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ হিসেবে কাজ করত।