Tag: Lockheed Martin F-35

  • F-35 Stealth Fighter: ট্রাম্পের এফ-৩৫ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের, কেন? রইল ১০ কারণ

    F-35 Stealth Fighter: ট্রাম্পের এফ-৩৫ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের, কেন? রইল ১০ কারণ

    সুশান্ত দাস: ‘‘আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু বন্ধু হওয়া সর্বনাশা।’’ কথাটা অন্য কেউ নয়, বলেছিলেন প্রয়াত মার্কিন বিদেশসচিব তথা সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ সামলানো হেনরি কিসিঞ্জার, যিনি রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের মতো প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছেন। ফলে, আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব দেশের বুঝতে হবে ঠিক কী করণীয়। কিন্তু, সমস্যা একটা জায়গায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (US President Donald Trump) মতো ব্যক্তিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে, এটা বোঝা দায় যে, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। ফলে, সম্পর্ক ঠিক রাখতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে এমন ভুল হয়ে যেতে পারে যে, তার মাশুল দীর্ঘদিন ধরে চোকাতে হতে পারে। তাই, সব বিষয় যাচাই করে, পরখ করে এগনোই শ্রেয়।

    বিশ্ববাসীর চোখ কপালে…

    গত মাসে হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ভারতকে তাদের ‘নয়নের মণি’ পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান (F-35 Stealth Fighter) দেওয়ার প্রস্তাব আচমকাই পেড়ে দেন ট্রাম্প। বলা বাহুল্য, এই প্রস্তাবের খবরে সারা বিশ্ববাসীর চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হয়। কারণ, এই বিমান এতটাই আধুনিক ও উন্নত যে, নেটো-গোষ্ঠীভুক্ত দেশ বা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ঘনিষ্ঠ সহযোগী অথবা ইজরায়েলের মতো সব ঋতুর বন্ধু ছাড়া অন্য কোনও দেশকে তা বেচেনি ওয়াশিংটন। প্রযুক্তিগতভাবে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমান ভালো কিনা তা প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু, যে প্রশ্নটা করা উচিত, তা হল— ভারতের জন্য এই বিমান কি আদৌ প্রয়োজন? মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বিমানকে (F-35 Sale Offer) সরাসরি কিনতে হবে। সেখানে রাশিয়া জানিয়েছে, ভারতকে তারা এদেশেই তাদের পঞ্চম প্রজন্মের সু-৫৭ যুদ্ধবিমান (Sukhoi Su-57) উৎপাদন করার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও অনুমতি দিতে রাজি।

    মার্কিন যুদ্ধবিমান অপরিচিত…

    ভারতের সঙ্গে রুশ যুদ্ধবিমানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান স্তম্ভ রুশ-নির্মিত সু-৩০। এর পাশাপাশি রয়েছে মিগ-২৯/২৯কে ও মিগ-২১ বাইসন। এছাড়া, ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের একাধিক যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করে আসছে। সেই তালিকায় রয়েছে— জাগুয়ার, মিরাজ ও রাফাল। আজ পর্যন্ত ভারত কোনও মার্কিন ফাইটার জেট ব্যবহার করেনি। ফলে, এখন আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান (F-35 Stealth Fighter) ভারতীয় বায়ুসেনার বর্তমান ইকোসিস্টেমের জন্য আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।

    সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি…

    এমতাবস্থায়, একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন (বলা ভালো ট্রাম্পের) প্রস্তাব সুকৌশলে প্রত্যাখ্যান করা উচিত ভারতের। তবে, সরাসরি ‘না’ না বলে বরং বদলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম বা সামরাস্ত্র কেনা যেতে পারে। তাতে সাপও মরবে, আবার লাঠিও ভাঙবে না। সামরিক বিশেষজ্ঞরা নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এটা দাবি করেছেন যে, এফ-৩৫ কেনা (F-35 Sale Offer) ভারতের পক্ষে একেবারেই লাভজনক হবে না। উল্টে ক্ষতিই বেশি। কারণ হিসেবে তাঁদের দাবি, এই বিমানের সুবিধা যেমন, অসুবিধাও নেহাত কম নয়, বাস্তবে প্রচুর! তাঁরা জানিয়েছেন, এফ-৩৫ কিনবে কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মোদি সরকার এবং সামরিক শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু, এই বিমানে ব্যবহারে একাধিক প্রতিবন্ধকতা খালি চোখেই ধরা পড়েছে। অসুবিধাগুলি এতটাই স্পষ্ট যে সেগুলিকে কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মত ওই বিশেষজ্ঞদের।

    সবদিক খতিয়ে দেখে আমেরিকার এফ-৩৫ না কেনার ১০টি কারণ তুলে ধরেছেন ওই বিশেষজ্ঞরা—

    কারণ এক…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) মূলত একটি ‘উড়ন্ত কম্পিউটার’, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। যুদ্ধবিমানের নির্মাতা লকহিড-মার্টিন (Lockheed Martin) কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে। নিজেদের ‘নয়নের মণি’ বিমানের প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশ— উভয়ের উপরই কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখে পেন্টাগন। এর অর্থ হল, যে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ভারতের হাতে ছাড়া হবে না। তার জন্য ভারতে একাধিক মার্কিন কর্মীকে মোতায়েন করতে হবে। আমেরিকার সব ঋতুর বন্ধু ইজরায়েলের মতো মিত্র দেশও এটি করতে পারে না। এতে একদিকে যেমন ভারতে মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি বাড়বে, তেমনই ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্রয়ের বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কঠোর এন্ড-ইউজার মনিটরিং ক্লজ চাপাতে পারে, যাতে ভারত সায় দেবে না।

    কারণ দুই…

    কৌশলগত দিক থেকেও এফ-৩৫ ভারতীয় সামরিক কৌশলের সঙ্গে কতটা খাপ খাবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। প্রতিটি এফ-৩৫ বিমান মার্কিন অটোমেটিক লজিস্টিক্স ইনফরমেশন সিস্টেম (এএলআইএস)-এর সঙ্গে যুক্ত। এই প্রযুক্তি দিয়ে বিমানের ওপর প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাতে পারে পেন্টাগন (Pentagon)। এমনকি, প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে যদি আমেরিকা চায়, তাহলে এটি কার্যত ‘বন্ধ’ করে দিতে পারবে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বিমানের কার্যকারিতা সীমিত করতে পারে। আমেরিকা চাইলে ভারতকে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে (যেমন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) এটি ব্যবহার করতে দিতেও আপত্তি জানাতে পারে। একইভাবে, আপত্তি জানাতে পারে নির্দিষ্ট দেশের (যেমন রাশিয়া) সঙ্গে এই বিমান নিয়ে ভারতের যুদ্ধ-মহড়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও।

    কারণ তিন…

    সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হল এফ-৩৫ বিমানের দাম, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল খরচের ভার। এক-একটি এফ-৩৫ ফাইটার জেটের (F-35 Stealth Fighter) আনুমানিক দাম ৮ থেকে ১১ কোটি মার্কিন ডলার। ঘণ্টা-প্রতি ওড়ানোর খরচ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ডলার। তার ওপর, যুদ্ধের সময় এফ-৩৫ বিমানের গোটা ফ্লিট উপলব্ধ নাও হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বর্তমানে এফ-৩৫ ফ্লিটের (F-35 Sale Offer) মাত্র ৫১ শতাংশই উপলব্ধ। ভারতের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও কম হবে। অর্থাৎ, ভারত যদি ৩৬টি বিমান কেনে (রাফালের মতো), তাহলে যে কোনও সময় মাত্র ১৮টি কিংবা তারও কম সংখ্যক বিমান উপলব্ধ থাকবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব। এই খরচের জেরে, খোদ মার্কিন বাহিনীই এই বিমান নিয়ে নাকানি-চোবানি খাচ্ছে। সহজ কথায় বলতে গেলে,  এফ-৩৫ একটি সাদা হাতি হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের উচ্চ দামের সমালোচনা করে তাকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ বলে দাগিয়েছিলেন। আজ তিনিই ভারতকে এই বিমান বেচতে উদ্যোগী। প্রশ্ন উঠছে, কেন?

    কারণ চার…

    নেটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ না হওয়ায় পরবর্তীকালে, এফ-৩৫ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে ভারতকে। কারণ, ভারতের কাছে যে কোনও বিক্রি মার্কিন কংগ্রেসের মাধ্যমে পাস করা কঠিন হবে এবং লকহিড থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ এবং আপগ্রেড পেতে ভারতের সম্ভবত মার্কিন আইনসভার নিয়মিত অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। ট্রাম্প একবার চিত্রের বাইরে চলে গেলে অথবা তার চার বছরের মেয়াদের দ্বিতীয়ার্ধে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লে, প্রতিহিংসাপরায়ণ ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস এফ-৩৫ প্রোগ্রামের (F-35 Sale Offer) কী ক্ষতি করতে পারে তা অনুমান করাই যায়।

    কারণ পাঁচ…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) একটি এক ইঞ্জিন-বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনা সাধারণত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান পছন্দ করে, কারণ এটি নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো দেশে, যেখানে প্রচুর গরম ও ধুলোবালি ও আর্দ্রতা থাকে এবং যেখানে বার্ড হিটের (পাখির ধাক্কা) ঝুঁকি অনেক বেশি, এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান একটি বড় ঝুঁকি হতে পারে। একটি ইঞ্জিন বিকল হলে, দ্বিতীয় ইঞ্জিনের সহায়তায় পাইলট নিরাপদে অবতরণ করতে পারে। কিন্তু এক ইঞ্জিন থাকলে, বিমান হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর সেই বিমান যদি এফ-৩৫ এর মতো ব্যয়বহুল হয়, তাহলে তো বড় ক্ষতি।

    কারণ ছয়…

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইটার নিলে সমস্যাটা মূলত হবে গ্রাউন্ড ক্রু-দের। যাঁরা এই ফাইটারের ডেটা লিঙ্কের উপরে কাজ করবেন। কারণ, ভারত তাঁর আকাশসীমা রক্ষায় ব্যবহার করে রুশ এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম। সমস্যা হল, এস-৪০০ সিস্টেমের সঙ্গে এফ-৩৫ কখনই কাজ করতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দুয়ের মধ্যে ডেটা-লিঙ্কের অনুমতি দেবে না। কারণ, তারা কখনই চাইবে না যে, এস-৪০০ আকাশে এফ-৩৫কে চিহ্নিত করতে পারুক। ফলে, আইডেন্টফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো বা আইএফএফ সিস্টেমে আপডেট করে ফ্রেন্ডলি-ফায়ার থেকে এফ-৩৫ বিমানকে রক্ষা করার কাজটা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং হবে। অর্থাৎ, নিজেদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে কমিউনিকেট না হলে, যুদ্ধের সময় আকাশে ভারতের এফ-৩৫ বিমানকেই ধ্বংস করার জন্য উড়ে যাবে ভারতেরই এস-৪০০।

    কারণ সাত…

    এফ-৩৫ (F-35 Stealth Fighter) কিনলে ভারতকে মার্কিন প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের আওতায় চলে যেতে হবে। কারণ, সফটওয়্যারের অ্যাক্সেস না পাওয়ার কারণে ভারত এই ধরনের ফাইটারের নিজের অস্ত্র মিসাইলের মত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না। অর্থাৎ এই ফাইটার নিলে ভারতকে আলাদাভাবে আমেরিকার অস্ত্র কিনতে হবে ব্যবহারের জন্য। আমেরিকা চাইবে, নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র গছাতে (F-35 Sale Offer)। তাতে, তাদের ব্যবসা বাড়বে। অন্যদিকে, আখেরে ভারতের ক্ষতি হবে। কারণ, ভারতের নিজের দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের গবেষণা, উৎপাদন ও ব্যবহার মার খাবে। এতে, প্রতিরক্ষা অর্থনীতির ক্ষতি। ইতিমধ্যেই, ভারতকে এফ-৩৫ বিমানের সঙ্গে তাদের এক গুচ্ছ সামরাস্ত্রর তালিকাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বলা হয়েছে, এফ-৩৫ কিনলে এগুলো ওর সঙ্গে পেতে পারো (মোদ্দা কথা, কিনতে হবে)।

    কারণ আট…

    শুধু ক্ষেপণাস্ত্র-সমস্যাই সব নয়। ভারত যদি এফ-৩৫ কেনে (F-35 Sale Offer), তাহলে মিড-এয়ার রিফুয়েলিং বা মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ভারতের (আবার রুশ-নির্মিত) আইএল-৭৮ ট্যাঙ্কারগুলো প্রোব-অ্যান্ড-ড্রোগ পদ্ধতি ব্যবহার করে। কিন্তু এফ-৩৫ ফ্লাইং বুম পদ্ধতির জন্য ডিজাইন করা। আবার, ভারত যদি এফ-৩৫ বিমানে প্রোব সিস্টেম ইন্টিগ্রেট করতে চায়, তাহলে তাতে রাজি হবে না আমেরিকা। ফলে, এফ-৩৫ বিমানে তেল ভরার জন্য আলাদা করে বোয়িং কেসি পেগাসাস বা এ৩৩০ এমআরটিটি-র মতো ফ্লাইং বুম বৈশিষ্ট থাকা ট্যাঙ্কার কিনতে হবে, যা ভারতের খরচ বাড়াবে।

    কারণ নয়…

    এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের (F-35 Stealth Fighter) অন্যতম প্রধান বিক্রয়-বৈশিষ্ট্য হল এর স্টেলথ প্রযুক্তি, যা শত্রুর রেডার এড়াতে সক্ষম। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী রেডার ও ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং সিস্টেমের প্রভুত উন্নতির ফলে স্টেলথ ফাইটারগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আজ না হলেও, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এফ-৩৫-কে ট্র্যাক করতে সক্ষম রেডার বানিয়ে ফেলবে আমেরিকার প্রতিপক্ষ দেশগুলি। সেই সময়, নিজের অ্যাডভান্টেজ বা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে এফ-৩৫। এমনিতেই, বলা হচ্ছে যে, রুশ এস-৫০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম উন্নত ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (IRST) সেন্সর প্রযুক্তির সাহায্যে স্টেলথ বিমানের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।

    এও দাবি যে, সু-৫৭ ও ইউরোপীয় টাইফুনের মতো বিমানে ব্যবহৃত এই অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড সেন্সর আমেরিকার দুই পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ বিমান এফ-২২ ও এফ-৩৫ ফাইটারগুলোকেও (F-35 Stealth Fighter) ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে সনাক্ত করতে সক্ষম। পাশাপাশি, যুদ্ধক্ষেত্রে কখনই এক ধরনের রেডার ব্যবহৃত হয় না। বরং একাধিক রেডারের নেটওয়ার্ক শত্রু বিমান চিহ্নিত করে। স্টেলথ বিমান একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে রেডার এড়াতে সক্ষম হলেও, একাধিক কোণ থেকে রেডারের তরঙ্গ প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা স্টেলথ প্রযুক্তিকে সীমিত করে ফেলে।

    কারণ দশ…

    ভারত যদি এফ-৩৫ কেনে (F-35 Sale Offer), তাহলে নিজস্ব দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অ্যামকা তৈরির কাজ বড় ধাক্কা খাবে। অ্যামকার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। ইতিহাস বলছে, যখনই কোনও দেশ আমেরিকার যুদ্ধবিমান কেনে, তখন তাদের নিজস্ব পঞ্চম-প্রজন্মের ফাইটার প্রোগ্রাম পিছিয়ে যায়। ভারতের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। তাই ভারতের উচিত আত্মনির্ভরতা বজায় রেখে অ্যামকা প্রকল্পে মনোযোগ দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে আমেরিকা নয়, ভারতই অন্যদের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার সরবরাহ করতে পারে।

  • F-35 vs Su-57: রেডারকে ফাঁকি দিতে ওস্তাদ এফ-৩৫, গতি-অস্ত্রসম্ভারে তুখোড় সু-৫৭, ভারতের মন জিতবে কে?

    F-35 vs Su-57: রেডারকে ফাঁকি দিতে ওস্তাদ এফ-৩৫, গতি-অস্ত্রসম্ভারে তুখোড় সু-৫৭, ভারতের মন জিতবে কে?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে দেখা যাবে, এখন একটাই প্রশ্ন চারদিকে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। তা হল- মার্কিন এফ-৩৫ নাকি রুশ সু-৫৭, (F-35 vs Su-57) কোন যুদ্ধবিমান কিনবে ভারত? কিন্তু কেন উঠছে এই প্রশ্ন, তা বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে। বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত এরো ইন্ডিয়া শো-তে দুই যুদ্ধবিমানই উপস্থিত ছিল। এক কথায় এই দুই বিমানই ছিল এবারের সংস্করণের ‘শো-স্টপার’। পঞ্চম প্রজন্মের এই দুই স্টেলথ যুদ্ধবিমানই তাদের কলা-কৌশল যথাসম্ভবভাবে তুলে ধরেছে। অবশ্যই ভারতকে আকৃষ্ট করার জন্য। এর সঙ্গেই ওয়াশিংটন ও মস্কোর থেকে বিবৃতির পর এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

    এদিকে হোয়াইট হাউস, ওদিকে ক্রেমলিন!

    একদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাশে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তাঁরা ভারতকে এই বিমান দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন। ভারত এই বিমানই নেবে, সেই ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী। হোয়াইট হাউস যখন এগিয়েছে, তাহলে ক্রেমলিন পিছিয়ে থাকে কী করে! পুতিনের তরফে আরও এক কদম বাড়িয়ে ঘোষণা করা হয়, ভারত সু-৫৭ নিলে তারা প্রযুক্তি হস্তান্তরেও রাজি। এর পর থেকেই সমাজ মাধ্যমের পাতায় জমে উঠেছে মার্কিন এফ-৩৫ বনাম রুশ সু-৫৭ যুদ্ধবিমানের ‘লড়াই’। এখন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে দেশপ্রেমী নেটাগরিক— সকলেই যে যার মতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছে।

    রুশ সু-৫৭ বনাম মার্কিন এফ-৩৫ (F-35 vs Su-57)

    এখন প্রশ্ন হল, ভারত যেখানে দেশে নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাহলে সারা কেন হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কিনবে? এর উত্তর অবশ্য অনেকেরই জানা। তা হল, ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যার নাম অ্যাডভান্সড মাল্টি-রোল এয়ারক্র্যাফট বা অ্যামকা— তার এখনও দিনের আলোই দেখেনি। ফলে, বায়ুসেনায় (Indian Air Force) অন্তর্ভুক্ত হতে এখনও অন্তত এক দশক দেরি। অন্যদিকে, চিন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। ফলে, ভারতীয় বায়ুসেনাকে এখনই একটা বিকল্প উপায় বেছে নিতে হবে। তা হল, বিদেশ থেকে অল্প সংখ্যক যুদ্ধবিমান কিনে পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেওয়া। আর সেখানেই বিকল্প হিসেবে নাম উঠে এসেছে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর— এফ-৩৫ ও সু-৫৭ (F-35 vs Su-57)।

    এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই দুই অত্যাধুনিক স্টেলথ যুদ্ধবিমানের মধ্যে প্রযুক্তিগত তফাত কোথায়—

    প্রযুক্তিগত তুল্যমূল্য বিশ্লেষণ

    উৎপাদন ও উন্নয়ন— সু-৫৭ যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে রাশিয়ার সুখোই সংস্থা, যাদের ব্যবহৃত সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এখ ভারতেই নির্মিত হয় সু-৩০এমকেআই। সু-৫৭ বিমানে আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে মার্কিন সংস্থা লকহিড-মার্টিন। এটি মাল্টি-রোল স্টেলথ ফাইটার জেট।

    স্টেলথ সক্ষমতা— সু-৫৭ যুদ্ধবিমানের স্টেলথ-সক্ষমতা মার্কিন পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ বা এফ-২২ যুদ্ধবিমানের তুলনায় কম উন্নত। অন্যদিকে, এফ-৩৫ বিমানের ‘স্টেলদিনেস’ উচ্চমানের। শত্রুর রেডারে প্রায় ধরা পড়ে না এই যুদ্ধবিমান।

    ইঞ্জিন ও গতি— সু-৫৭ যুদ্ধবিমানকে শক্তি জোগায় স্যাটার্ন এএল-৪১এফ১ ইঞ্জিন। এর সর্বোচ্চ গতি ২২৭৮ কিমি প্রতি ঘণ্টা, যা আনুমানিক শব্দের গতির ২.২৫ গুণ। অন্যদিকে, এফ-৩৫ জেটে রয়েছে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি এফ১৩৫ ইঞ্জিন। এর সর্বোচ্চ গতি ১৪৩২ কিমি প্রতি ঘণ্টা, যা শব্দের গতির প্রায় ১.১৫ গুণ। ফলে, গতিতে মার্কিন জেটকে টেক্কা দেবে রুশ যুদ্ধবিমান (F-35 vs Su-57)।

    অস্ত্রবহনের ক্ষমতা— সু-৫৭ যুদ্ধবিমানে রয়েছে ১২টি ‘হার্ডপয়েন্ট’, যাতে বিভিন্ন ধরনের মিসাইল মোতায়েন করা যেতে পারে। এই তালিকায় রয়েছে হাইপারসনিক (শব্দের চেয়ে ন্যূনতম ৫ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন) ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল। অন্যদিকে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কেবলমাত্র ৬টি অস্ত্রবহণ করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র।

    লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতকরণ— সু-৫৭ যুদ্ধবিমানে রয়েছে এন০৩৬ বেলকা এইসা রেডার সিস্টেম, যা একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে সক্ষম। অন্যদিকে, এফ-৩৫ জেটে রয়েছে এএন/এপিজি-৮১ এইসা রেডার এবং ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম, যা আরও নিখুঁতভাবে শত্রুর সঠিক জায়গা চিহ্নিত করতে সক্ষম।

    লড়াইয়ের সক্ষমতা— সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে বেশি দ্রুত) গতিতে সুপারক্রুজ করতে সক্ষম সু-৫৭। অর্থাৎ এটি আফটারবার্নার ব্যবহার না করেই সুপারসনিক গতিতে উড়তে পারে। এর সরাসরি অর্থ হল, এটি অতিরিক্ত জ্বালানি না পুড়িয়েও দীর্ঘ দূরত্বে অভিযান সম্পন্ন করতে পারে। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের সুপারক্রুজ ক্ষমতা নেই, অর্থাৎ সুপারসনিক গতিতে উড়তে একে অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়াতে হয় (F-35 vs Su-57)।

    মাল্টিরোল ক্ষমতা— সু-৫৭ আকাশ থেকে আকাশে এবং ভূমিতে আক্রমণ চালানোর জন্য তৈরি, তবে এটি মূলত ‘ডগফাইট’-এর (মাঝ-আকাশে দুই বিমানের লড়াই) ক্ষেত্রে আরও ভালো। অন্যদিকে, এফ-৩৫ হল একটি সত্যিকারের বহুমুখী যুদ্ধবিমান। এটি একইধারে আকাশে যুদ্ধ, নজরদারি, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং স্থল আক্রমণে সক্ষম।

    ম্যানুভারাবিলিটি বা দ্রুত দিশা পরিবর্তন— সু-৫৭ যুদ্ধবিমানে থ্রাস্ট-ভেক্টরিং প্রযুক্তি রয়েছে, যা এটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তোলে। বিশেষ করে, ডগফাইটের সময় এটি ভীষণ কাজে লাগে। তুলনায়, এতটা উন্নত নয় এফ-৩৫। এটি বহুমুখী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

    ব্যবহার এবং মূল্য— সু-৫৭ শুধুমাত্র রাশিয়ায় ব্যবহৃত হয়, তাও সীমিত সংখ্যায়। এর এক-একটির দাম ৩.৫ থেকে ৫ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত। সেখানে, বিশ্বের অনেক দেশ ব্যবহার করে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, এবং এর এক-একটির দাম ৮ থেকে ১১ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত। অর্থাৎ, রুশ যুদ্ধবিমানের দ্বিগুণ (F-35 vs Su-57)।

    রয়েছে আরও অনেক হিসেব-নিকেশ

    এতো গেল প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ। যা পরখ করে দেখা হবে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু, এর বাইরেও রয়েছে অনেক হিসেব-নিকেশ। যার মধ্যে কূটনৈতিক ও কৌশলগত লাভ-ক্ষতির বিষয় জড়িয়ে। তার পর বিচার্য হবে প্রয়োজনীয়তা, দাম, সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলি। এত ধাপ পেরিয়ে তবে চূড়ান্ত হবে ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) ঘরে কোন বিমানটি আসবে।

LinkedIn
Share