মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কাজের সময় পেরিয়ে গেলে অফিসের ফোন কল বা ইমেল (No Calls emails after work) আর নয়। কর্মীদের স্বার্থের কথা ভেবে লোকসভায় (Lok Sabha) পেশ হল নতুন বিল। প্রায় সময়েই শুনতে দেখা যায়, অফিসের সময়ের পরেও বাড়িতে কর্মক্ষেত্র থেকে ফোন আসে বা ইমেল আসে। সঙ্গে সঙ্গে কাজের রিপোর্ট বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মীরা কোম্পানি বা সংশ্লিষ্ট দফতরের ব্যবস্থাপনার আচরণে অস্বস্তি প্রকাশ করেন। একে দফতরে কাজের চাপ, অপর দিকে অফিস সময়ের পরেও বাড়িতে বা ছুটিতে কাজ সংক্রান্ত ইমেল বা কল সত্যই কর্মীদের কাছে সমস্যার বিষয়। মানসিক ভাবে মনকে খুব বিচলিত করে। তাই কর্মীদের স্বার্থে “রাইট টু ডিসকানেক্ট বিল ২০২৫” পেশ করেছেন লোকসভার বিরোধী দলের সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল তুলে ধরা হয়েছে।
বিলে কী বলা হয়েছে (Lok Sabha)?
রাষ্ট্রবাদী কংগ্রেস বা এনসিপির সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে প্রাইভেট মেম্বার হিসবে বিল পেশ করেছেন। বিলে (Lok Sabha) বলা হয়েছে, “অফিস আওয়ারের কাজ শেষ হলে কোনও কর্মীদের যাতে ফোন ধরতে বা ইমেল না দেখতে হয় সেই অধিকারকে সুনিশ্চিত করা হোক। অফিসের কাজ শেষ হলে কর্মীদের ব্যক্তিগত সময় শুরু হয়। ছুটির দিন কর্মীদের সম্পূর্ণ সময় ব্যক্তিগত। আর এই সময়ে ফোন না ধরার বা ইমেল না দেখার অধিকার রয়েছে। এবার এই বিলে কর্মীদের (No Calls emails after work) অধিকারের স্বার্থকে নিশ্চিত করতে হবে। মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না ।”
সরকার পক্ষ সাধারণত বিল আনে
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের যে কোনও সাংসদ যদি মনে করেন কোনও বিষয়ে বিল (Lok Sabha) নিয়ে আসা যেতে পারে, তাহলে সেই সংক্রান্ত বিল পেশ (No Calls emails after work) করতে পারেন। তবে সাংসদরা দল বিশেষে জনমতের উপর নির্ভর করে বিলের প্রস্তাব করতে পারেন। ফলে সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষের যে কোনও সাংসদ বিল উত্থাপনের অধিকার রাখেন। কিন্তু সাধারণত সরকার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলিই বিল বেশি নিয়ে আসে। বিলে জবাবের প্রেক্ষিতে গ্রহণ বা প্রত্যাখান হয়। লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়ের সদস্যরাই এমন বিষয়ে বিল পেশ করতে পারেন, যেগুলি তাঁদের মতে সরকারি আইন প্রণয়নের পক্ষে প্রয়োজন বলে মনে করেন। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, প্রস্তাবিত আইনের প্রতি সরকারের সাড়া পাওয়ার পর বেসরকারি সদস্য বিল প্রত্যাহার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় পাশ হয়েছে বিল
অস্ট্রেলিয়া গত বছর রাইট টু ডিসকানেক্ট আইন (No Calls emails after work) পাশ হয়েছে। এবার ভারতেও কর্মজীবনের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে নতুন করে জোর দেওয়া হয়েছে। যেখানে পুনের ইওয়াই কর্মীর মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান এই আইন কর্মীদের কাজের সময় শেষ হয়ে গেলে ফোন কল বা ইমেলকে প্রত্যাখ্যান করার অনুমতি দেয়। এই আইন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং পরিমণ্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা। উল্লেখ্য গত বছর গ্লোবাল জব প্ল্যাটফর্ম ইনডিড দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে এই “রাইট টু ডিসকানেক্ট” (Lok Sabha) নীতির প্রতি জোরালো সমর্থন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
সমীক্ষায় কী বলছে?
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কাজের সময় শেষ হওয়ার পরেও অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়। ৮৮ শতাংশ কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে কাজের সময়ের বাইরে গিয়ে যোগাযোগ করা হতো। আবার ৮৫ শতাংশ কর্মীদের মত যখন তারা অসুস্থ বা ছুটি ছিল সেই সময়েও অফিসের কল বা ইমেলে কাজের নির্দেশ আসত। অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অস্বস্তিবোধ করে বলেন, ৭৯ শতাংশ কর্মীরা আশঙ্কা করেন কর্মক্ষেত্রের কল বা ইমেলের বার্তাকে উপেক্ষা করলে তাদের ক্যারিয়ারের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবুও অনেকেই এখনও অতিরিক্ত লাভের আশায় চাহিদাকে বৃদ্ধির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল, ইমেলে কাজ করাতে বাধ্য করছেন। তবে ৬৬ শতাংশ মানুষের আশঙ্কা অতিরিক্ত সময়ে কাজ না করালে উৎপাদনশীলতায় হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনার ভয় থাকে।
বর্ধিত কাজের সময় কটা সুবিধা দেবে?
সংসদে (Lok Sabha) এই বিলটির আলোচনা শুরু হয় ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি এবং এলএন্ডটি-র সিইও এসএন সুব্রহ্মণ্যমের মতো ব্যবসায়ীদের মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে। তাঁরা সম্প্রতি যথাক্রমে ৭০ ঘণ্টা এবং এমনকি ৯০ ঘণ্টা কর্মসপ্তাহের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। নারায়ণ মূর্তি তাঁর দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে চীনের ৯-৯-৬ কর্ম মডেলের উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে বর্ধিত কাজের সময় ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কংগ্রেস সাংসদ কাদিয়াম কাব্য আরেকটি বেসরকারি কর্মী বিলে (No Calls emails after work) মাসিক সুবিধা বিল ২০২৪-এর আলোচনায় বলেন, “মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময় কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত।”









