মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওড়িশার (Odisha) গঞ্জামের ঐতিহাসিক লোকনৃত্য় হল বাঘা-নাচ বা বাঘ নৃত্য (Bagha Nacha)। এই উৎসবে নৃত্যশিল্পীদের বাঘের পোশাক পরে নাচতে দেখা যায়। তাঁরা দেবীকে বুধি ঠাকুরানিকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন এভাবেই। এরসঙ্গে শুরু হয় ঠাকুরানি যাত্রা। ভক্তদের বিশ্বাস, এতে দেবী সন্তুষ্ট হন।
বাঘা নাচ (Bagha Nacha) সম্পর্কে কী বলছেন জনৈক নৃত্যশিল্পী?
বাঘা নাচ (Bagha Nacha) সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন শিল্পী রাজকুমার বেহারা বলেন, ‘‘এখানে নাচটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেমন পরিবেশন হল সেই নাচটা, সেটাও খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে এই নৃত্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আধ্যাত্মিকতার এবং দেবত্ব লাভের। দেবীকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এই বাঘা নাচ (Bagha Nacha) অনুষ্ঠিত হয়। এটি এক ধরনের ব্রত বলা যেতে পারে। ভক্তরা যাঁরা এই নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং বাঘা নাচে অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা এই ব্রত পালন করেন। তাঁদেরকে উপবাস পালন করতে হয়। এই সময়কালে ব্রহ্মচর্য বজায় রাখতে হয়। এর পাশাপাশি মানসিকভাবে শান্ত থাকতে হয়। তাঁরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং পবিত্র পোশাক পরেন। গোটা গায়ে তাঁরা পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে হলুদ এবং চন্দনের গুঁড়ো লাগান। একইসঙ্গে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ দিয়েও তাঁরা শরীরে নকশা করেন।’’
সারা রাত ধরে চলে বাঘা নাচ (Bagha Nacha)
জানা যায়, এভাবে সেজে উঠতে প্রত্যেক ব্যক্তির পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা সময় লাগে। ব্যবহৃত রঙ গুলিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে নানা রকমের পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। যাতে তা খুব সহজে গা থেকে উঠে না যায়। নৃত্যশিল্পী বেহেরা আরও বলেন,‘‘এই রঙ গুলি তৈরি করতেও আমাদের দু মাসের বেশি সময় লাগে। সারা শরীর এইভাবেই আমরা চিত্রকর্ম করি। দেবী বুধি ঠাকুরানীকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই শিল্পীরা বাঘের মুখোশ পরেন।’’ তবে, নৃত্যশিল্পীরা যে ধরনের পোশাক ব্যবহার করেন, তার দাম কিন্তু খুব একটা কম নয়। ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে এই পোশাক তাঁরা কেনেন। নিজেরাই কেনেন। দেবী বুধি ঠাকুরানির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি অর্পণ করতেই তাঁরা এই কাজ করেন। এই পোশাক প্রস্তুত হয়ে গেলে নৃত্যশিল্পীরা এক একটি স্থানে যান। সেখানে অনেক মানুষের জমায়েত হয়। সারা রাত ধরেই তাঁরা নৃত্য পরিবেশন করতে থাকেন। এই সময়ের মধ্যে যে সমস্ত মানুষ বা ভক্তবৃন্দ বাঘা নাচ দেখতে আসেন, তাঁরাই এই শিল্পীদের এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যান।