মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-র নেতা-কর্মীদের বার বার মূলস্রোতে ফিরে আসার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানিয়েছেন, দেশকে ২০২৬ সালেই মাওবাদী মুক্ত করবেন। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় সাফল্য এনে দিল ছত্তিশগড়ের খৈরাগড়–ছুইখাদান–গণ্ডাই জেলা। আত্মসমর্পণ করল মোট ১২ জন মাওবাদী। এদের মধ্যে রয়েছে অন্যতম কুখ্যাত রামধের মাজ্জি, যার মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা। রামধের সেন্ট্রাল কমিটি সদস্য (CCM)। মাও-বিরোধী অভিযানে বিরাট সাফল্য পেয়েছে মধ্যপ্রদেশও। অস্ত্র থেকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরেছেন মোস্ট ওয়ান্টেড ১০ জন মাওবাদী। যৌথভাবে যাদের মাথার দাম ছিল ২.৩৬ কোটি টাকা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় আত্মসমর্পণ কর্মসূচি।
ছত্তিশগড়ে আত্মসমর্পণ মাওবাদী নেতাদের
বকরকাটা থানায় আত্মসমর্পণের এই ঘটনাকে এমএমসি (মহারাষ্ট্র–মধ্যপ্রদেশ–ছত্তিশগড়) জোনে মাওবাদী নেটওয়ার্কের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তিন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকা রামধের মাজ্জি তার সহযোগী ডিভিশনাল কমিটি সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত হয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেন। তার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছে এসিএম রামসিং দাদা এবংএসিএম সুকেশ পোত্তমও। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ছয়জন মহিলা মাওবাদীও রয়েছেন—লক্ষ্মী, শীলা, যোগিতা, কবিতা এবং সাগর। এছাড়া ডিভিশনাল কমিটি সদস্য ললিতা ও জানকিও আত্মসমর্পণ করেছে। উল্লেখযোগ্যদের তালিকায় আরও রয়েছেন ডিভিসিএম চান্দু উসেন্দি এবং প্রেম।
মাওবাদী সংগঠনের কাঠামো ভাঙার ইঙ্গিত
পুলিশ সূত্রে খবর, এই মাওবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে মহারাষ্ট্র–মধ্যপ্রদেশ–ছত্তিশগড় বিশেষ জোনাল কমিটির এলাকায় সক্রিয় থাকলেও টানা নিরাপত্তা অভিযান ও সরকারি পুনর্বাসন কর্মসূচির চাপে তারা দুর্বল হতে শুরু করে। রামধের মাজ্জির আত্মসমর্পণকে তাই একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা। তাদের মতে, তার সিদ্ধান্তের পর এমএমসি জোন কার্যত ভেঙে পড়েছে। বছরের পর বছর ঘন জঙ্গল ও দুর্গম এলাকায় ঘাঁটি তৈরি করে থাকা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার হওয়ার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। উচ্চপদস্থ মাও নেতাদের এমন বড়মাপের আত্মসমর্পণ মাওবাদী সংগঠনের কাঠামো ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পণ মাওবাদীদের
মধ্যপ্রদেশের মান্ডলা জেলাকেও মাওবাদীমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেন, ‘পুনর্বাসন পুনর্জীবন’ প্রকল্পের আওতায় চার মহিলা-সহ মোট ১০ জন মাওবাদী রবিবার বালাঘাটে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মূল স্রোতে ফিরেছেন। এই সাফল্য সুশাসনের শক্তি, পোক্ত আইনি ব্যবস্থা ও উন্নয়নের উপর বিশ্বাসের সুফল।’ একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “মাওবাদীদের স্বাভাবিক জীবনে গত জানুয়ারি মাস থেকে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছিল। অবশেষে তাঁরই সুফল মিলেছে। বর্তমানে দিনদোরি এবং মান্ডলা পুরোপুরি মাওবাদীমুক্ত। পাশাপাশি আরও জানান, “সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে হিংসার রাস্তা থেকে যারা ফিরে আসবে, সরকার তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য একাধিক উদ্যোগ নেবে। আর যারা ফিরবে না, তাঁদের জন্য ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।”
মাওবাদীদের থেকে উদ্ধার বিপুল অস্ত্র
জানা যাচ্ছে, যে ১০ জন মাওবাদী এদিন আত্মসমর্পণ করেন তারা মহারাষ্ট্র-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড় জোনের শীর্ষ মাও-কমান্ডার। এদের যৌথ মাথার দাম ছিল ২ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছে মোস্ট ওয়ান্টেড কবীর ওরফে সোম। ওই ডিভিশনের সাব-জোনাল কমিটির সেক্রেটারি কবিরের মাথার দাম ছিল ৬২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন মাও নেতা রাকেশ ওরফে মণীশ। এই নেতারও মাথার দাম ছিল ৬২ লক্ষ। আত্মসমর্পণের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রও পুলিশের কাছে জমা দেন মাওবাদীরা। যে তালিকায় ছিল, একটি একে-৪৭, দুটি ইনসাস রাইফেল, দুটি সিঙ্গেল শট রাইফেল, একটি সেলফ লোডিং রাইফেল, ৭টি ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার সেলস, ৫টি ডিটোনেটর, ৪টি ওয়াকিটকি ও ১০০-র বেশি কার্তুজ।









