মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহাকুম্ভ। বিগত ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা (Mahakumbha 2025) চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১৪৪ বছর পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহাকুম্ভ। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে মাঘী পূর্ণিমার আগেই ভক্তদের সংখ্যা সেখানে ৪০ কোটি পৌঁছে যাবে। প্রথম ২৪ দিনেই কুম্ভ মেলায় ভক্ত সংখ্যা ছুঁয়েছে ৩৮.২৯ কোটি। কুম্ভ মেলা যেন সব কিছুকেই এক করে দিয়েছে। সাধারণ ভক্ত থেকে রাষ্ট্রনেতা থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে পবিত্র স্নান সারছেন। এমন ঘটনা বিশ্বের কোথাও আর দেখা যায় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার মাঘী অষ্টমী বা ভীষ্ম অষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নান সেরেছেন। স্নান করেছেন ভুটানের রাজাও। মহাকুম্ভ (Guinness World Records) পৃথিবীর সবথেকে বড় ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। এই আবহে আরও উল্লেখযোগ্য খবর সামনে এসেছে।
মহাকুম্ভে (Mahakumbha 2025) তৈরি হচ্ছে ৪ নয়া রেকর্ড
মহাকুম্ভে (Mahakumbha 2025) তৈরি হতে চলেছে চারটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। এর মধ্যে প্রথমটি হল ১৫ হাজার সাফাই কর্মী একসঙ্গে মহাকুম্ভের ঘাটগুলি পরিষ্কার করবেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি এই নয়া রেকর্ড তৈরি হতে চলেছে মহাকুম্ভে। এর আগে ২০১৯ সালের অর্ধ কুম্ভে এমন চিত্রই দেখা গিয়েছিল। সে সময় দশ হাজার সাফাই কর্মী একসঙ্গে ঘাট পরিষ্কার করেছিলেন। অর্থাৎ ভারত তার নিজের রেকর্ডই ভাঙছে। ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভের যে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন সাফাই কর্মীরা, তাঁরাই আবার নিজেদের রেকর্ড ভাঙছেন ২০২৫ সালে। মহাকুম্ভে এই ঘটনা অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেকর্ড (Mahakumbha 2025)
অন্যদিকে, দ্বিতীয় যে রেকর্ড হতে চলেছে হতে চলেছে সেটি ১৫ ফেব্রুয়ারি সবার নজরে আসবে। ওইদিন তিনশোর বেশি মানুষ একসঙ্গে ত্রিবেণী সঙ্গমের জলকে পরিষ্কার করবেন। এমনভাবেই ওই তিনশো কর্মী গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে মহাকুম্ভকে স্থান দেবেন। এরপরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ফের নয়া একটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলবে মহাকুম্ভ। জানা গিয়েছে, ওই দিন ১০০০-এরও বেশি ই-রিকশা হাজির হবে কুম্ভের প্রাঙ্গণে। এরপরে তারা প্যারেড করবে। এটিও একটি নয়া ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫০০ বাস প্যারেড করেছিল অর্ধকুম্ভে। তার নিয়ন্ত্রণকর্তা ছিল উত্তরপ্রদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন। সেই সময় উত্তরপ্রদেশ সরকারের এমন উদ্যোগ নয়া গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করে, ‘ লার্জেস্ট প্যারেড অফ বাসেস’। এবার সেটি হতে চলেছে লার্জেস্ট প্যারেড অফ ই-রিস্কা। প্রসঙ্গতই বাসগুলি চলে ছিল ৩.২ কিলোমিটার এক সঙ্গে। এর আগে বাসের প্যারেডের রেকর্ড ছিল আবুধাবিতে। সেটি ২০১০ সালে তৈরি হয়েছিল এবং সে সময় ৩৯০টি বাস একসঙ্গে চলেছিল।
তৃতীয় রেকর্ড
প্রসঙ্গত, এর পরের রেকর্ডটি তৈরি হতে চলেছে ১৭ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ১০ হাজার লোক একসঙ্গে নয়া ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করবেন। জানা গিয়েছে, ১০,০০০ লোক একসঙ্গে হ্যান্ড প্রিন্টিং করবেন আট ঘণ্টা ধরে, গঙ্গা প্যান্ডেলের মধ্যে। বর্তমানে এই ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রয়েছে কুম্ভের নামেই। ২০১৯ সালে একসঙ্গে বসে ৭,৬৬৪ জন হ্যান্ড পেইন্টিং করেছিলেন। ৬ বছর আগে অর্ধকুম্ভের প্রয়াগরাজে যে রেকর্ড তৈরি হয়েছিল, তা এবার ভাঙছে ২০২৫ সালে। এই রেকর্ড নতুন ভাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাচ্ছে।
কী বলছেন আধিকারিক?
মহাকুম্ভের গোটা ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখছেন উচ্চপদস্থ আমলা বিজয় কিরণ আনন্দ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘চারটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে মহাকুম্ভ নাম তুলতে চলেছে। এটি সত্যিই খুব আনন্দের এবং যার শুরু হতে চলেছে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রথমটি স্বচ্ছতায়। পরেরটি নদী পরিষ্কার করাতে, এরপরে একটি ই-রিক্সার ক্ষেত্রে এবং সর্বশেষটি হ্যান্ড প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে।’’ এই সমস্ত ইভেন্টগুলির প্রস্তুতিপর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজয় কিরণ আনন্দ।
বিদেশি ভক্তদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রে মহাকুম্ভ
১৪৪ বছর পরে হওয়া এই মহাকুম্ভ (Mahakumbh 2025) পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে। পর্যটক বলতে আধ্যাত্মিক পর্যটক, যাদের আমরা তীর্থযাত্রীও বলতে পারি। এখনও পর্যন্ত, ৩৮ কোটির বেশি পুণ্যার্থী সঙ্গমে স্নান করেছেন। পবিত্র স্নানের উদ্দেশেই ভক্তরা এখানে সমবেত হচ্ছেন। বিশ্বাস, কুম্ভের ডুব জীবনে আনে অপার শান্তি ও সুখ। মহাকুম্ভে এই ব্যাপক পরিমাণে ভক্তদের আগমন শুধুমাত্র ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না, অর্থাৎ ভারতীয়রা শুধুমাত্র যে প্রয়াগরাজে হাজির হচ্ছেন এমনটা নয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিপুল পরিমাণে তীর্থযাত্রী ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিতে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। পরিসংখ্যান বলছে যে, আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করার ৪৮ শতাংশ ভিসা মহাকুম্ভের (Mahakumbh 2025) দিকেই যাচ্ছে।