Tag: Marichjhapi massacre

  • Marichjhapi Massacre: হিন্দু উদ্বাস্তুদের ওপর বাম সরকারের বর্বরোচিত অত্যাচার, ফিরে দেখা মরিচঝাঁপি গণহত্যা

    Marichjhapi Massacre: হিন্দু উদ্বাস্তুদের ওপর বাম সরকারের বর্বরোচিত অত্যাচার, ফিরে দেখা মরিচঝাঁপি গণহত্যা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৩১ জানুয়ারি মরিচঝাঁপি দিবস (Marichjhapi Massacre)। ১৯৭৯ সালের এই দিনেই সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপকে মৃত্যুপুরী করার অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৯ সালের মরিচঝাঁপি গণহত্যা, আজও সভ্য সমাজের কাছে লজ্জার অধ্যায় হয়ে আছে। শরণার্থী হিন্দুদের (Hindu Refugees) ওপর সংঘটিত একটি নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসনে, এমনটাই মত গবেষকদের। অনেকে বলেন, এই ঘটনা শুধু নৃশংসতার জন্য নয়, বরং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্টদের শ্রেণি-রাজনীতি ও উদ্বাস্তু বিরোধিতার এক কালো অধ্যায়।

    ঘটনার প্রেক্ষাপট (Marichjhapi Massacre)

    ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, লক্ষ লক্ষ হিন্দু শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে, নিম্নবর্ণের হিন্দুরা (যেমন নমঃশূদ্র সম্প্রদায়) পাকিস্তানে অত্যাচারের শিকার হয়ে ভারতে চলে আসেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সরকার তখন তাঁদের যথাযথ পুনর্বাসন দিতে ব্যর্থ হয়। ১৯৫০-এর দশকে, তৎকালীন কংগ্রেস সরকার হিন্দু শরণার্থীদের অপসারণের উদ্দেশ্যে মধ্য ভারতের দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দণ্ডকারণ্যে থাকা উদ্বাস্তু পরিবারগুলি মানিয়ে নিতে পারেনি সেখানকার আবহাওয়া। কারণ পূর্ববঙ্গে নরম আর্দ্র জল-হাওয়ার পরিবেশেই বেড়ে ওঠা তাঁদের। এই আবহে দণ্ডকের রুক্ষ পাথুরে জমি, দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে ১৯৫৮ সাল থেকেই উদ্বাস্তুরা যখনই সুযোগ পেয়েছেন ছোট ছোট দলে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন। জানা যায়, ১৯৭৬ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন বামফ্রন্টের নেতা জ্যোতি বসু দণ্ডকারণ্যের একটি উদ্বাস্তু শিবির (Marichjhapi Massacre), মানা ক্যাম্পের কাছেই ভিলাই শহরে এক বিরাট জনসভায় বক্তব্য় রাখেন। সেদিন তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত আপনাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’’ শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এলে উদ্বাস্তুদের সুন্দরবনে বসতি স্থাপনের ন্যায্য দাবি অবশ্যই মানা হবে।’’ অবশেষে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৮ সালের প্রথমদিক থেকেই উদ্বাস্তুদের দল দণ্ডকারণ্য থেকে আসতে থাকে দলে দলে। সুন্দরবনের জনমানবশূন্য মরিচঝাঁপি দ্বীপে তাঁরা বসতি স্থাপন করেন।

    কৃষিকাজ-মাছধরা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন উদ্বাস্তুরা

    প্রথমদিকে, মরিচঝাঁপিতে বসতি গড়ে তোলার পরে শরণার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে কৃষিকাজ, ছোটখাটো ব্যবসা এবং মাছ ধরা শুরু করে। কিন্তু তখনই বামপন্থী সরকার দাবি করল, সুন্দরবনের এই এলাকা পরিবেশগতভাবে সংরক্ষিত এবং সেখানে বসবাস অবৈধ। গবেষকরা বলেন, আসল সত্যি হল, শরণার্থীরা সরকারের কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু সিপিআই(এম) সরকার তা মানেনি। বরং, তাঁদের উচ্ছেদ করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

    শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান (Marichjhapi Massacre)

    ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত শরণার্থীদের খাদ্য, পানীয়, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি, পুলিশের কঠোর অবরোধের ফলে দ্বীপের ভেতর খাদ্য সংকট ও রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১১ মে পর্যন্ত রাজ্য পুলিশ ও বামপন্থী ক্যাডারদের যৌথ অভিযানে হাজার হাজার শরণার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকারের এই অভিযানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরও হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, মারাত্মক অভিযোগ ওঠে বাম সরকারের বিরুদ্ধে, শরণার্থীদের নৌকায় করে নদীতে কুমিরমারি এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। যাতে করে মৃত, অর্ধমৃত দেহগুলি কুমিরে খেয়ে ফেলতে পারে। এভাবেই অত্যাচার চালায় বাম সরকার। সুন্দরবনের বাঘ যে এলাকায় সংরক্ষিত আছে, সেই এলাকায় মৃত অর্ধমৃত দেহগুলিকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অর্ধমৃত মানুষগুলি আমাদের বাঘের পেটে দেবেন না বলে চিৎকারও করেন।

    প্রায় ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষ এই গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন

    বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষ এই গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন। যদিও কমিউনিস্ট সরকার এই সংখ্যা কখনও স্বীকার করেনি এবং এই অপরাধের জন্য কোনও বিচারও হয়নি আজ পর্যন্ত। জানা যায়, ১৯৭৯ সালের এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পরেও গণমাধ্যম এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নীরব ছিল। বামপন্থী সরকার এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে একাধিক সংবাদপত্রের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় কিছু সাংবাদিক মরিচঝাঁপি কভার করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদেরকে আটকে দেওয়া হয় এবং তথ্য সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি।

    আজও কারও হয়নি সাজা

    অনেক গবেষেক বলেন, মরিচঝাঁপির শরণার্থীরা মূলত নমঃশূদ্র ও অন্যান্য তথাকথিক নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য ছিল। ফলে, বামফ্রন্ট সরকার তাঁদের অবহেলা করে এবং নিষ্ঠুর দমননীতি গ্রহণ করে। প্রসঙ্গত,রাষ্ট্রীয় মদতে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনও রাজনৈতিক নেতা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার আজও বিচার হয়নি। বামফ্রন্ট সরকার এই ঘটনার দায় আজও স্বীকার করেনি। দীর্ঘকাল ধরে এই গণহত্যার কথা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টাও করা হয়েছে। গবেষক বিমল দাসের মতে, ‘‘মরিচঝাঁপি গণহত্যা ভারতের শরণার্থী নীতির এক নিষ্ঠুর রূপ এবং কমিউনিস্ট সরকারের অত্যাচারের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় বরং দলিত নিপীড়নের এক চরম উদাহরণ, যা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক কালো দাগ হয়ে চিরদিন থাকবে।’’

LinkedIn
Share