মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রত্যাঘাতের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান। এই আবহে পাক সেনায় বিদ্রোহের খবর মিলেছে! বুধবার মধ্যরাতে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত আক্রমণ করবেই। এর পরেই একাধিক সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হয়েছে, সেনাপ্রধান মুনিরকে ঘিরে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সেদেশে। সূত্রের খবর, পাক সেনায় গণ-ইস্তফার হিড়িক লেগে গিয়েছে। ইতিমধ্যে, ২৫০ অফিসার ও সাড়ে ৪ হাজার জওয়ান ছুটি চেয়েছেন বা ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাক প্রশাসন। ইস্তফা রুখতে জরুরি নির্দেশ জারি করেছে সেনা-আইএসআই। এদিকে, আকাশপথে ভারত আক্রমণ করতে পারে ধরে নিয়েই, সীমান্তে রেডার সিস্টেম বসিয়েছে (Pahalgam Attack) পাকিস্তান।
ইস্তফার কারণ হিসেবে অনেকেই অসুস্থতা ও মানসিক চাপকে দেখিয়েছেন
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই বিপুল সংখ্যক পদত্যাগের ফলে প্রচুর সামরিক পদ পাকিস্তানে খালি হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই সৈন্যদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত তাদের দ্বাদশ কোরের ২০০ জন অফিসার এবং ৬০০ জন সৈন্য পদত্যাগ করেছেন (Pahalgam Attack) বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে নর্দার্ন কমান্ড এরিয়ায় ১০০ জনেরও বেশি অফিসার এবং ৫০০ জন সৈন্য পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া ভারতের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মঙ্গল কোরের ৭৫ জন অফিসার এবং ৫০০ জনেরও বেশি সৈন্য পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার আধিকারিকরাও ইস্তফা দিচ্ছেন। ইস্তফার কারণ হিসেবে অনেকেই অসুস্থতা ও মানসিক চাপকে দেখিয়েছেন।
ভাইরাল গোপন চিঠি
এমন গণপদত্যাগের খবরের মধ্যেই একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অন্দরে। ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তাতেই এই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলেই পদত্যাগের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। ওই চিঠিতে সৈন্যদের ভয় না পেতে বলা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনার (Indo Pak War) উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখে। ওই চিঠিতেই আহ্বান জানানো হয়েছে, সৈন্যরা যেন অর্ধচন্দ্র এবং তারার নিচে নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন। ওই চিঠিতে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, তোমরা আমাদের শহিদের উত্তরাধিকারী। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রত্যাঘাতের ভয়ে যারা পদত্যাগ করবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। সেখানে লেখা হয়েছে, যাঁরা পদত্যাগ করতে চাইবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সেনা আইনের অধীনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফাঁস করল কারা?
কিন্তু পাকিস্তানের এমন গোপন চিঠির ফাঁস হলই বা কীভাবে? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব (Pahalgam Attack) ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই কারণে এমন ফাঁসের খবর সামনে এসেছে। বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং প্রাক্তন জেনারেল ফাইজ আহমেদ ও কামার জাভেদ- এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই বিভেদের কারণেই চিঠি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। একদিকে ভারতের প্রত্যাঘাতের তীব্র আশঙ্কা, তারপর দেশের মধ্যে আঞ্চলিক উত্তেজনা, বেহাল অর্থনীতি, খাদ্য সংকটের পরে এবার জুড়ল এই পাকিস্তান (Indo Pak War) সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ অসন্তোষ।পহেলগাঁও হামলার পরপরই একের পর এক গরম গরম কথা বলতে শোনা গিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রীকে। পরমাণু হামলার হুমকিও দিতে দেখা গিয়েছে তাদের। তার মধ্যেই এই ঘটনায় স্পষ্ট যে তাঁরা সবাই ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছিলেন। কারণ ময়দানে তো নেতা মন্ত্রীরা যুদ্ধ করবেন না। লড়াই করবে পাক সেনা। তারাই এখন পিছিয়ে যাচ্ছে ভয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভূ রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়িয়ে তুলেছে পহেলগাঁও হামলা
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ের পরেই ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় (Pahalgam Attack)। শুধু তাই নয়, এই হামলা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তা নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। এই আবহে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করেছে। সীমান্ত বন্ধ করেছে। এর ফলে ইসলামাবাদকে কূটনৈতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এই আবহে বুধবারই এক উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কোথায় কখন হামলা হবে তা ঠিক করতে।
পাক সেনায় গণ-ইস্তফার পর সীমান্ত রক্ষা করবে কে
এখন একটা প্রশ্নই উঠছে বারবার,পাক সেনায় গণ-ইস্তফার পর সীমান্ত রক্ষা করবে কে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু জওয়ানরাই নয়, তাদের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অফিসাররাও গণইস্তফা দিচ্ছেন। এখন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে, তা পরিচালন করবে কে, তা নিয়েই চিন্তিত পাকিস্তান। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এক মাস আগেই পাকিস্তানি সেনার জুনিয়র অফিসার ও সেনারা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, আসিম মুনিরের নেতৃত্ব ভালো লাগছে না তাঁদের। শুধু তাই নয়, তাঁকে পদ থেকে না সরালে, বিদ্রোহ শুরু হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পাক সৈন্যদের একাংশ। এবার পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার পর যেখানে দুই দেশের মধ্যে কার্যত যুদ্ধ আবহ তৈরি হয়েছে, সেখানেই পাক সেনার গণইস্তফা একদিকে চিন্তা, অন্যদিকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে।
আকাশপথে ভারত হামলা চালাতে পারে, আশঙ্কায় ঘুম ছুটেছে পাকিস্থানের, সীমান্তে বসছে রেডার সিস্টেম
অন্যদিকে, আকাশপথে ভারত হামলা চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় ঘুম ছুটেছে পাকিস্থানের। তারা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বেশ কয়েকটি পদক্ষেপও করেছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের সম্ভাব্য বিমান হামলার ঠেকাতে সীমান্তে রেডার বসাচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী শিয়ালকোট সীমান্তে রেডার সিস্টেমগুলিকে বসাচ্ছে। ভারতের সম্ভাব্য বিমান হামলা ঠেকাতে সেদেশের চোর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান টিপিএস-৭৭ রেডার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এই চোর ক্যান্টেনমেন্ট হল নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে, পহেলগাঁও হামলার পরে এই আবহে টানা পঞ্চম বার পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্তে গুলি চালাল। পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই ভারতের যুদ্ধ মহড়া চলছেই। একসঙ্গে স্থলবাহিনী নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনী মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তীব্র উত্তেজনার মাঝে সেদেশের যুদ্ধ বিমানগুলিকে করাচি থেকে লাহোর এবং সে দেশের উত্তরের রাওয়ালপিণ্ডির দিকে ঘাঁটির দিকে রওনা হতে দেখা গিয়েছে। গত সোমবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ জানিয়েছিলেন, ভারত সামরিক হামলা চালাবেই।