মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে (India Pakistan Conflict) কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতার পাঠ দিতে দেশ জুড়ে মক ড্রিল (MHA Orders for Mock Drill) হতে চলেছে বুধবার। দেশের ২৭টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৫৯টি জায়গায় এই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি জেলার ৩১টি জায়গাও। মহড়া চলবে গ্রামীণ এলাকাতেও। দেশের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে মূলত বিমান হামলা হলে কী ধরনের পদক্ষেপ করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ নজর উত্তরবঙ্গে
বাজবে সাইরেন। নিভে যাবে সব আলো। যুদ্ধ শুরু হলে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে জনগণ? সেই বিষয়েই মানুষকে সর্তক করতে বুধবার অর্থাৎ ৭ মে, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আগামিকাল রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের সীমানা এলাকায় মহড়া বা মক ড্রিলে বিশেষ জোর দেবে শাহের মন্ত্রক। মহড়া চলবে বাংলার একাধিক এলাকাতেও। বিশেষ নজর থাকবে উত্তরবঙ্গে। সাধারণ ভাবেই, নানা সময় সন্ত্রাসবাদীদের ট্রানজিট রুট এই উত্তরবঙ্গই হয়ে থাকে, সেই ভিত্তিতেই বাংলার ‘মাথায়’ বেশি জোর দিচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
কোথায় কোথায় মক ড্রিল
সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশের পর মঙ্গলবার সকালে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবেরা। তার পরই কোথায় কোথায় মক ড্রিল হবে সেই জায়গার তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ থেকে অসম, ওড়িশা, আন্দামানেও হবে মক ড্রিল। এই মক ড্রিল-তে মূলত তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন গুজরাটের সুরাট, ভদোদরা এবং কাকরাপার প্রথম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। মহারাষ্ট্রের মুম্বই, উড়ান এবং তারাপুরকেও মহড়ার ফার্স্ট ক্যাটাগরিতেই রাখা হয়েছে। কী ভাবে এই মহড়া পরিচালন করা হবে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ রাজ্যের প্রশাসনকে দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বাংলার কোন কোন জায়গায় মহড়া
তালিকায় রয়েছে বাংলার ৩১টি এলাকা। সেগুলি হল— কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদা, শিলিগুড়ি, গ্রেটার কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, খড়গপুর, বার্নপুর-আসানসোল, ফারাক্কা-খেজুরিয়াঘাট, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কালিম্পং, জলঢাকা, কার্শিয়ং, কোলাঘাট, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ। মোট তিনটি বিভাগ, ক্যাটেগরি এক, দুই এবং তিনে ভাগ করে মহড়া চালাতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহড়ায় অংশ নেবেন জেলাশাসক-সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরির সুরক্ষা কর্মী, হোমগার্ডেরা। এ ছাড়াও মহড়ায় অংশ নিতে বলা হয়েছে এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।
মহড়ার সময় কী কী জিনিস সঙ্গে রাখবেন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে যে বিষয়ে মহড়া দিতে বলেছে, তার মধ্যে রয়েছে— বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কী ভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমান হামলার সাইরেন এবং ব্ল্যাকআউট পরিস্থিতিতে ভয় না পেয়ে কী করতে হবে সেই বিষয়েই মহড়ায় নির্দেশ দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে। যেমন এমন পরিস্থিতিতে হাতের কাছে টর্চ এবং মোমবাতি সহ চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রাখতে হবে। ব্ল্যাক আউটে যাতে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা সমস্যায় না পড়েন তার জন্যেও প্রস্তুতি আলোকপাত করবে এই মক ড্রিল। একইসঙ্গে অনলাইন পেমেন্টে অভ্যস্ত নাগরিকদের এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নগদ টাকাও তুলে রাখার বিষয়ে সতর্ক করা হবে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে যদি এটিএম, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ব্যাহত হয় সেক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়বেন সাধারণ মানুষ।
সিভিল ডিফেন্স প্রোটোকল সম্পর্কে শিক্ষা
রাজ্যগুলিকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী বুধবারের মহড়ায় খতিয়ে দেখে নিতে হবে যে, বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না। পাশাপাশি রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে হঠাৎ করে সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তারও মহড়া সেরে রাখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে সম্ভাব্য হামলা থেকে যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়া বা সেগুলিকে যথাসম্ভব লুকিয়ে ফেলার প্রস্তুতিও সেরে রাখতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে মোদি সরকার। এ ছাড়া সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে নাগরিক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময়ে বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের যথাসম্ভব সমন্বয় রেখে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বানিয়ে তা অভ্যাস করে রাখতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এ জন্য জেলাশাসক, অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে।