মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফরে রওনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। তিনি মোট পাঁচটি দেশ সফর করবেন। যা শুরু হচ্ছে আজ, ২ জুলাই থেকে। আট দিনের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে। এর পাশাপাশি তিনি ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা ও নামিবিয়া সফর করবেন। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বিতীয় দীর্ঘতম বিদেশ সফর। এর আগে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তিনি টানা আট দিনের জন্য বিদেশে ছিলেন, সেই সময় তিনি রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ সফর করেছিলেন।
২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মোদি পৌঁছাবেন ঘানা
২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi) পৌঁছাবেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় এবং ৩ জুলাই পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম তিনি আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে সফর করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিগত ৩০ বছরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঘানা সফর করেননি। ঘানার পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, যেখানে তিনি ভারত-ঘানা সম্পর্কের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, বাণিজ্য এবং উন্নয়নমূলক নানা সহযোগিতা নিয়ে কথা বলবেন। এছাড়াও তিনি বৈঠক করবেন ঘানার রাষ্ট্রপতি জন মহামা-র সঙ্গে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ভারত সফরে এসে ইন্ডিয়া-আফ্রিকা ফোরাম সামিটে অংশগ্রহণ করেছিলেন জন মহামা।
ঘানা পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এবং সোনা রফতানিতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে ভারত ঘানা থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা আমদানি করে। দুই দেশের মধ্যে এই সফরে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, শক্তি এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফর
৩ জুলাই মোদি (PM Modi) পৌঁছাবেন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে। এই সফর দুই দিন চলবে। ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই দ্বীপরাষ্ট্র সফর করছেন। এই দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুজনেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এবং তাঁরা মোদিকে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রচুর ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগণের বাস বলে জানা যায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি অংশগ্রহণ করবেন একটি যৌথ সংসদ অধিবেশনে। এর পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী কমলা প্রসাদ বিশ্বেশ্বর-এর সঙ্গে।
বৈঠকে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল পরিকাঠামো, কৃষি, দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইত্যাদি ইস্যুতে আলোচনা হবে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ভারতের ইউপিআই (UPI) পেমেন্ট প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে, যা দুই দেশের ডিজিটাল সহযোগিতার নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।
আর্জেন্টিনা সফর
৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi) পৌঁছাবেন আর্জেন্টিনা, যেখানে তিনি বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলায়ে-র সঙ্গে। আর্জেন্টিনা ও ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অন্যতম স্তম্ভ হল পেট্রোলিয়াম পণ্য, অ্যাগ্রোকেমিক্যাল, অর্গানিক কেমিক্যাল, দুই চাকার যানবাহন এবং খনিজ সম্পদ।
এই সফরে আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে থাকবে, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, টেলিমেডিসিন, পরিকাঠামো উন্নয়ন, খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা। আর্জেন্টিনার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দক্ষিণ আমেরিকায় ভারতের অবস্থানকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রাজিল সফরে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেবেন
৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মোদি পৌঁছাবেন ব্রাজিল, যেখানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন ১৭তম ব্রিকস (Brics Summit) সম্মেলনে। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রিও ডি জেনেইরোতে। ব্রিকস শুরু হবে ৫ জুলাই থেকে চলবে ৮ জুলাই পর্যন্ত।
ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদি বক্তব্য রাখবেন জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে। মোদি তাঁর বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গও তুলে ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনা ও ভারতের অপারেশন সিঁদুর উঠে আসবে তাঁর ভাষণে।
ব্রাজিলে মোদি বৈঠক করবেন সে দেশের রাষ্ট্রপতি লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা-র সঙ্গে (Brics Summit)। প্রতিরক্ষা, মহাকাশ প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও শক্তি সম্পদের উপর আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা চলে সয়াবিন তেল, চিনি, তুলো, কাঠ, কেমিক্যাল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য নিয়ে। এবারের ব্রাজিল সফর আরও একটি দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এবার প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্রাজিলে স্টেট ভিসিট বা রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
মোদির নামিবিয়া সফর
৮ জুলাই সফরের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি পৌঁছাবেন নামিবিয়া, যেখানে তিনি বৈঠক করবেন রাষ্ট্রপতি নেতুঙ্গ নন্দি-র সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানাবেন নামিবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা ড. স্যাম নজোমা-কে এবং বক্তব্য রাখবেন সে দেশের সংসদে। নামিবিয়া সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। নামিবিয়া থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি হীরা (ডায়মন্ড) আমদানি করে এবং রপ্তানি করে রিফাইনড পেট্রোলিয়াম। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালে নামিবিয়া থেকে ভারতে আনা হয়েছিল আটটি চিতা, যাদের মধ্যপ্রদেশের একটি অভয়ারণ্যে ছাড়া হয়।