মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত–মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এই আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Modi-Trump Talk) বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেন। দুই নেতা বাণিজ্য, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে কথা বলেন। দুই নেতা ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন। পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ধারাবাহিকভাবে জোরদার করার বিষয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মনে করা হচ্ছে ভারত-রাশিয়া সখ্য বৃদ্ধিতে চাপ বেড়েছে আমেরিকার। আলোচনার সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই নেতাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজেদের প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
কী কী নিয়ে আলোচনা দুই নেতার মধ্যে
প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (Modi-Trump Meeting) দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বিষয়গুলি ভারত-মার্কিন কমপ্যাক্ট-এর মূল উপাদান। এর লক্ষ্য একবিংশ শতাব্দীর জন্য সামরিক অংশীদারিত্ব, দ্রুত বাণিজ্য এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দুই নেতা বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি, দুই দেশের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন তাঁরা। দুই পক্ষই যোগাযোগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে জোর দিয়েছেন।
উষ্ণ ও অর্থবহ আলোচনা
মনে করা হচ্ছে, পুতিনের ভারতের সফরের পরেই নড়েচড়ে বসেছে ওয়াশিংটন। সফরের মাঝেই ঘোষণা করা হয়, বাণিজ্য চুক্তির আচলনার জন্য ভারতে আসবে মার্কিন দল। এবার দুই নেতার ফোনালাপ। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দু’দেশের অংশীদারিত্বে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন মোদি ও ট্রাম্প এবং বিশেষভাবে বাণিজ্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টার গতি বজায় রাখা জরুরি। নেতারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও যৌথ স্বার্থ অগ্রসর করতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘এক্স’-এ পোস্ট করে ফোনালাপকে “উষ্ণ ও আন্তরিক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অত্যন্ত উষ্ণ ও অর্থবহ আলোচনা হল। আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাবে।”
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক-চাপে ট্রাম্প
রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা—আগেই থাকা ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে—গত ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার পর দিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েছে। ভারত বারবার বলছে, এই শুল্ক “অন্যায্য”, কারণ রাশিয়ান তেলের সর্বাধিক ক্রেতা চিন এবং এলএনজি কেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ অবস্থায়, রাশিয়া সফরে ভ্লাদিমির পুতিন ও মোদির ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের একসঙ্গে গাড়ি করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যাত্রা যুক্তরাষ্ট্রে বহু সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসেও এই ছবি দেখিয়ে ট্রাম্পের বিদেশনীতি নিয়ে সমালোচনা করেন ডেমোক্র্যাট সদস্য সিডনি কামলাগার-ডোভ। তিনি বলেন, “ট্রাম্পের ভারতনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের ক্ষতি করছে এবং দুই দেশের বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট করছে।” এরপর মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপের সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে রয়েছে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য।
ডেডলাইন মেনে আলোচনা নয়
অন্যদিকে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি না হলে বেশি হারে শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Modi-Trump Meeting)। তাঁর সেই ‘ডেডলাইন’ নিয়ে এ বার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য পীযূষ গোয়েল। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ বলেন, “ডেডলাইন মেনে আমরা আলোচনা চালাই না!” ঘটনাচক্রে, নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য-বৈঠক করতে মঙ্গলবারই ভারতে এসেছে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি দল। প্রথম দফায় আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা সফল হয়নি।
ভালো ও ফলপ্রসূ কথা-বার্তা
চলতি বছরের শুরু থেকে দফায় দফায় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে ভারত ও আমেরিকার। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য বর্তমানে ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া। গত ২৩ অক্টোবর ভার্চুয়াল মাধ্যমেও আলোচনা হয়েছিল দুই দেশের। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল বৃহস্পতিবার বলেন, আলোচনা “খুব ভালো ও ফলপ্রসূ” হলেও কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি মন্তব্য করেন, “যখন দুই পক্ষই লাভবান হয়, তখনই একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। সময়সীমার চাপে আলোচনা করা উচিত নয়, তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।” মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের মন্তব্য—ভারত তাদের “এতদিনের সেরা” প্রস্তাব দিয়েছে—উল্লেখ করে গোয়াল বলেন, “যদি সত্যিই তাই হয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন এখনই সই করে দিতে পারে।”




