তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বর্ষার দাপট বেশি। লাগাতার বৃষ্টিতে সকলেই নাজেহাল। জমা জলের জেরে কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি, হাওড়ার একাধিক এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। আর এই পরিস্থিতিতে একাধিক রোগ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের একাধিক জায়গায় হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই তাঁরা মনে করছেন। কয়েক দিন ধরে জমা জলের জেরেই এই ধরনের রোগের সংক্রমণ বাড়ছে বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগাম সতর্কতা বজায় রাখতে না পারলে বিপদ আরও বাড়বে। লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।
কাদের বিপদের আশঙ্কা বেশি?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হেপাটাইটিস-এ মূলত জলবাহিত রোগ। আবার অনেক সময়েই দেখা যায়, অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার জেরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি শিশুদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। তাই তাঁদের এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাছাড়া শিশুরা অনেক সময়েই বাড়ির বাইরে যায়। বিশেষত স্কুলে দীর্ঘ সময় কাটায়। সেখানেও তারা জল খাচ্ছে। বর্ষার আবহাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জল কতখানি পরিশ্রুত থাকছে, সে নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থাকছে। কারণ, বিভিন্ন জায়গায় জল জমে পানীয় জলের লাইনে নোংরা জল মিশে গিয়েছে। এমন আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। পানীয় জল কতখানি পরিশ্রুত, তার উপরে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নির্ভর করে। তাই রাজ্যের একাধিক জায়গায় শিশুরা হেপাটাইটিস-এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের দিকে বাড়তি নজরদারি জরুরি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
লিভারের কোনও সমস্যা থাকলে, হেপাটাইটিসের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকেই লিভারের নানান রোগে ভুগছেন। এই পরিস্থিতি তাঁদের জন্য বাড়তি বিপজ্জনক। কারণ, লিভারের রোগের ঝুঁকি হেপাটাইটিসের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই আবহাওয়ায় একাধিক পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের দাপট এই রাজ্যে মারাত্মক। আর এই ধরনের রোগের জেরে হেপাটাইটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে একেবারেই কমিয়ে দেয়। এর ফলে সামান্য অসাবধানতা বড় বিপদ তৈরি করে। ফলে, অনেকেই এই ধরনের সংক্রামক রোগের পরেই জন্ডিসের মতো লিভারের রোগের শিকার হয়। তাই যারা ডেঙ্গি কিংবা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বাড়তি সাবধানতা জরুরি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
গর্ভবতীদের বাড়তি বিপদ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় যে কোনও অসুখ বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে। তাই বর্ষার এই পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মায়েদের হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যাতে তৈরি না হয়, সেদিকে নজরদারি জরুরি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
কীভাবে ঝুঁকি কমাবেন?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্ষার এই জলমগ্ন পরিবেশে হেপাটাইটিস-এ’র বিপদ কমাতে জরুরি পানীয় জলের উপরে নজরদারি। তাঁরা জানাচ্ছেন, পরিশ্রুত পানীয় জল সুনিশ্চিত করতে হবে। বাড়ির শিশু থেকে বয়স্ক, সকলের ক্ষেত্রে এই নিয়ে সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। প্রয়োজনে জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, হেপাটাইটিস এ মূলত জল থেকেই ছড়ায়। তাই পরিশ্রুত পানীয় জল নিশ্চিত করতে পারলে বিপদের ঝুঁকি অনেক কমবে।
খাবারের দিকেও বাড়তি নজরদারি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, হেপাটাইটিস লিভারের রোগ। তাই লিভার সুস্থ রাখতে পারলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। তাই তাঁদের পরামর্শ, এই সময়ে সবুজ সব্জি, ফল এবং দানাশস্য পর্যাপ্ত পরিমানে খাওয়া জরুরি। এতে লিভার ভালো থাকবে। বরং অতিরিক্ত তেলেভাজা জাতীয় খাবার কিংবা বাজারের চটজলদি চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। কারণ, এই ধরনের খাবারে লিভারে বাড়তি চাপ তৈরি করে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম হেপাটাইটিস-এ’র মতো জটিল রোগের ঝুঁকিও কমাতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রাম হলে তবেই রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়বে। এনার্জি যথেষ্ট থাকবে। তাহলে যেকোনও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে শরীর মোকাবিলা করতে পারবে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, এই দুই অভ্যাস শরীরের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। এই দুই অভ্যাসের জেরে লিভার ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জেরে হেপাটাইটিসের মতো রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই এই দুই ক্ষতিকারক অভ্যাস ছাড়লে হেপাটাইটিসের ঝুঁকিও কমবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।