মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ইউনেস্কোর (UNESCO) মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে (Memory of World Register) লিপিবদ্ধ করা হল হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতা এবং ভরত মুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র। এই ঘটনাকে গর্বের মুহূর্ত বলে আখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। প্রসঙ্গত, গতকালই ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ হয় ৭৪টি নতুন বিষয়। ইউনেস্কো জানিয়েছে, নতুন খোদাই করা সংগ্রহগুলির মধ্যে ১৪টি বৈজ্ঞানিক তথ্যচিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রাচীন বিষয়গুলির মধ্যে ছিল ভারতের এই দুই প্রাচীন শাস্ত্র। এর ফলে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে মোট লিপিবদ্ধ সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭০।
এক্স মাধ্যমের পোস্টে কী লিখলেন নরেন্দ্র মোদি?
নিজের সমাজ মাধ্যমের পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘‘সারা বিশ্বের ভারতীয়দের পক্ষে এটা একটা খুব গর্বের মুহূর্ত। গীতা এবং নাট্যশাস্ত্র ইউনেস্কোর (UNESCO) মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের প্রাচীন ভারতের জ্ঞান এবং সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে বহন করছে গীতা এবং নাট্যশাস্ত্র। এই দুটোই ভারতীয় সভ্যতাকে লালন-পালন করে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। এখনও পর্যন্ত এই দুই গ্রন্থ বিশ্বকে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে।’’ ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল অড্রে আজোলে ৭৪টি নতুন বিষয় ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
কী জানালেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি এবং পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দর সিং শেখাওয়াত
গীতা এবং নাট্যশাস্ত্রের এমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির (UNESCO) বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন দেশের সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। নিজের এক্স মাধ্যমের পোস্টে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি আমাদের দেশবাসীর জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন গীতা এবং নাট্যশাস্ত্র ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রেজিস্টারের স্থান পাওয়াতে এদেশের মোট ১৪টি প্রাচীন লিপি স্থান পেল সেখানে। তিনি বলেন, ‘‘এটি ভারতের সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। যে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা এবং ভারত মুনির লেখা নাট্যশাস্ত্র বর্তমানে ইউনেস্কোর মেমোরিয়াল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্মান জানাল প্রাচীন ভারতের শাশ্বত-সনাতন সংস্কৃতিকে। প্রাচীন ভারতের এই দুই গ্রন্থ আক্ষরিক অর্থে একটি জ্ঞান এবং জীবন দর্শনের ভাণ্ডার। এই দুই গ্রন্থের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে বিশ্বের কাছে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের অনুভূতি, আমাদের ভাবনা, আমাদের জীবন শৈলী- এই সমস্ত কিছুই প্রতিফলিত হয়েছে এই দুই গ্রন্থে। এর ফলে আমাদের দেশ থেকে ১৪টি ধরনের লিপি বর্তমানে আন্তর্জাতিক রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে।’’
১৯৯২ সালে শুরু হয় ইউনেস্কোর (UNESCO) মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারের পথ চলা
আন্তর্জাতিক প্রাচীন ঐতিহ্যশালী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংরক্ষণের কথা রাষ্ট্রসংঘের বেশ কয়েকটি অধিবেশনে আলোচিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সুইৎজারল্যান্ডে জেনেভা কনভেনশন উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে বলা দরকার ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে তৈরি হয়েছিল ১৯৯২ সালে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে বহু অসামান্য মূল্যবান প্রামাণ্য নথি এবং ঐতিহ্য এখানে তালিকাভুক্ত হয়ে রয়েছে। ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রয়েছেন বিশাল শর্মা। তিনি এই ঘটনাকে দেশবাসীর জন্য একটা অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত বলে জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘‘ভারতীয়দের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত এবং ভারতীয় চিন্তা ভাবনার প্রতিফল ঘটায় ভগবত গীতা। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। অন্যদিকে, ভারত মুনির নাট্যশাস্ত্রের পান্ডুলিপি হল অন্যতম মৌলিক পাঠ।’’
ভারতের আর কী কী তালিকাভুক্ত হয়েছে এই গ্রন্থে?
অন্যান্য ভারতীয় লিপির মধ্যে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে পুনের ভান্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা ঋগ্বেদের ৩০টি পাণ্ডুলিপি, ২০০৫ সালে পন্ডিচেরি থেকে শৈব পাণ্ডুলিপিকে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান দেওয়া হয়। ঠিক ৮ বছর আগে ২০১৭ সালে ইউনেস্কোতে স্থান পায় গিলগিট পাণ্ডুলিপি এবং ২০২৩ সালে মৈত্রেয়বরকরণ তালিকাভুক্ত হয় ইউনেস্কোতে।
গীতা এবং ভরত মুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৮টি অধ্যায়ে ৭০০টি শ্লোক রয়েছে গীতায়। গীতা হল মহাভারতের অংশ। প্রাচীন এই গ্রন্থের ভীষ্মপর্বে (অধ্যায় ২৩-৪০) পাওয়া যায় গীতা। গীতায় মূল বিষয় হল জ্ঞান যোগ, কর্ম যোগ, ভক্তি যোগ। অন্যদিকে, ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র ভান্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সংরক্ষিত ছিল। গবেষকরা জানাচ্ছেন, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর কাছাকাছিতে সংকলিত হয় এই শাস্ত্রটি। এটি গন্ধর্ববেদ নামে পরিচিত। ৩৬,০০০ শ্লোক নিয়ে তৈরি এই শাস্ত্রে নাট্য (নাটক), রসবোধ, ভাব (আবেগ) এবং সঙ্গীত রয়েছে।