মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট (Budget 2025) পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman)। প্রতি বছরের নিয়ম মেনে ওইদিন সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে বাজেট পেশ। যদিও বাজেট অধিবেশন শুরু হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। এর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি পেশ করা হবে কেন্দ্রীয় বাজেট। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। বাজেট (Budget 2025) পেশ হওয়ার আগে শুক্রবারই মিষ্টিমুখ পর্ব সম্পন্ন হল অর্থমন্ত্রকে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশের আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় নর্থ ব্লকে পালিত হল হালুয়া উৎসব।
হালুয়া উৎসব আসলে কী?
বাজেট (Budget 2025) পেশের আগে এমন উৎসবের রীতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। শুক্রবার এই হালুয়া উৎসবের আয়োজন করা হয় নর্থ ব্লকে। সেখানে হাজির ছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি সমেত কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বাজেট পেশের আগে হালুয়া উৎসব এক ধরনের প্রতীকী পদক্ষেপ। যে সমস্ত উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বাজেটের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাই এভাবে মিষ্টি হালুয়া প্রস্তুত করেন এবং সকলকে পরিবেশন করেন। বাজেটের তথ্য চূড়ান্তভাবে গোপন রাখতে এই সময়ে বাইরের সমস্ত যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
বাজেট (Budget 2025) পেশের ৯ থেকে ১০ দিন আগে পালিত হয় হালুয়া উৎসব
রীতি অনুযায়ী, বাজেট পেশের ৯ থেকে ১০ দিন আগে পালিত হয় হালুয়া উৎসব। হালুয়া উৎসবের সম্পূর্ণে দায়িত্বে থাকেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। প্রতি বছরের মতোই চলতি বছরও পালন হল হালুয়া উৎসব। নয়াদিল্লির নর্থ ব্লক এলাকায় অর্থমন্ত্রীর বাসভবনের রান্নাঘরেই তৈরি হল হালুয়া। রান্নার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ালেন খোদ অর্থমন্ত্রী নিজেও। তারপরেই এই হালুয়া পরিবেশন করা হল বাজেট কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে।
কেন পালন হয় এই উৎসব?
বছর বছর ধরে বাজেট পেশের একদম শেষ পর্বের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উৎসব। হালুয়া উৎসবের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যাওয়া মানেই বুঝে নিতে হয় তৈরি হয়ে গিয়েছে বাজেট। এবার শুধু অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন এবং বাজেট নথির মুদ্রণ। তবে মনে রাখতে হবে শুধুই বাজেটের অন্তিম পর্বকে ইঙ্গিত দেয় না হালুয়া উৎসব। এর পাশাপাশি, বাজেট পেশের আগে ‘লক-ইন’ পর্বের সূচনাও হয় এই হালুয়া উৎসবের সঙ্গেই। হালুয়া উৎসবের পরেই একেবারে নিভৃতবাসে থাকতে হয় বাজেট কমিটির সদস্যদের। বাজেটের মধ্যে থাকা তথ্য যাতে কোনওভাবেই ফাঁস না হয়, তাই এই গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়।
হালুয়া উৎসব কবে থেকে চালু হল
স্বাধীনতার কয়েক দশক পর থেকে বাজেটের অন্যতম অঙ্গ হয়ে ওঠে হালুয়া উৎসব। ১৯৫০ সালেই বাজেটে থাকা তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। বাজেট লিক-কাণ্ডের পর থেকেই বাজেটের মধ্যে থাকা তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে এই উৎসবের সূচনা করা হয় বলে মনে করেন অনেকে। ১৯৫০ সালের বাজেট লিক-কাণ্ডের পর বাজেটের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তখন অবশ্য হালুয়া উৎসবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর ঠিক তিন দশক পর ১৯৮০ সালে হালুয়া উৎসবের মাধ্যমে লক-ইন পর্বের সূচনা করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই তখন থেকেই বছর বছর ধরে পালন হচ্ছে এই রীতি।
লক-ইন সময়কাল
হালুয়া অনুষ্ঠান আসলে বাজেট প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত যে ধরনের কঠিন পরিশ্রম করেন কর্মীরা সেটিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওই বাজেট প্রস্তুতিতে যুক্ত সকলের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সম্মান জানানো হয়। একই সঙ্গে সেই বাজেটের নথি যাতে কোনওভাবে ফাঁস না হয়ে যায় সেজন্য তাঁরা চূড়ান্ত গোপনীয়তাও বজায় রাখেন। এই সময়কালকে লক-ইন সময়কাল বলা হয়। অর্থ মন্ত্রকের কর্মীরা এ সময় নর্থ ব্লকের মধ্যেই থাকেন এবং বহির্জগতের থেকে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন থাকেন। বাজেটের তথ্য ফাঁস রোধ করার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থাও নেওয়া হয় এবং কোনও রকমের ইলেকট্রনিক ডিভাইস অথবা মোবাইল ফোনও তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে লক-ইন সময়কাল কতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হবে? বাজেটের নথিগুলি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন পাচ্ছে এবং সেগুলি প্রিন্টিং বা মুদ্রণের জন্য প্রস্তুত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই লক-ইন সময়কালকে স্থায়ী ধরা হবে।
বাজেট নথিগুলি কোথায় মুদ্রণ করা হয়?
বাজেট নথিগুলি কোথায় মুদ্রণ করা হয়? জানা যায়, নর্থ ব্লকেরই বেসমেন্টে একটি স্থান রয়েছে সেখানেই ব্যাপক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকে। ওই জায়গাতেই এই নথিগুলিকে মুদ্রণ করা হয়। প্রক্রিয়াটি এতটাই গোপনীয় রাখতে হয় যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে পরিচালনা করেন। যদিও, বর্তমানে মুদ্রণের বিষয়টি প্রতীকী পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে মোদি সরকার। ওই বছরেই ভারতের বাজেট পদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। যেমন রেল বাজেটকে মূল বাজেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় এবং বাজেট উপস্থাপনার তারিখ প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এগিয়ে আনা হয়। একইসঙ্গে, মোদি জমানাতেই কাগজের পরিবর্তে ই-বাজেট অনুমোদিত হয়। ফলে, এখন আর কাগজে মুদ্রিত নয়, ট্যাবের মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছে যায় এই বাজেটের বৈদ্যুতিন সংস্করণ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।