Tag: PM Modi Initiatives

  • Bharat Bhutan Rail: ট্রেনে চেপে মাত্র এক ঘণ্টায় ভুটানে! প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্যোগে পর্যটনে জোয়ার

    Bharat Bhutan Rail: ট্রেনে চেপে মাত্র এক ঘণ্টায় ভুটানে! প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্যোগে পর্যটনে জোয়ার

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ভারতীয় রেল (Bharat Bhutan Rail)। বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পর এবার ভুটানের সঙ্গে রেল সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অসমের কোকড়াঝাড় থেকে ভুটানের গেলেফু পর্যন্ত রেলপথ বসানোর যাবতীয় প্রকল্প রিপোর্ট উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল তুলে দিয়েছে ভারতীয় রেলবোর্ডের কাছে।

    প্রস্তাবিত প্রকল্প কাঠামো

    গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের কথা গুয়াহাটিতে ঘোষণা করেছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। গুয়াহাটিতে আয়োজিত বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো শীর্ষ সম্মেলন অ্যাডভান্টেজ অসম ২.০-তে প্রস্তাবিত ৬৯.০৪ কিলোমিটার রেললাইনটির কথা ঘোষণা করেছিলেন রেলমন্ত্রী। প্রস্তাবিত ৬৯.০৪ কিলোমিটার রেললাইনটি অসমের কোকড়াঝাড় স্টেশনকে ভুটানের গেলেফুর সঙ্গে যুক্ত করবে। লাইন বসানোর জন্য আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৩,৫০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে ৬টি নতুন স্টেশন নির্মাণ হবে। স্টেশনগুলি হল বালাজান, গারুভাসা, রুনিখাতা, শান্তিপুর, দাদাগিরি ও গেলেফু। সেইসঙ্গে পরিকাঠামো পরিকল্পনায় থাকছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু, ২৯টি বড় সেতু, ৬৫টি ছোট সেতু, ১টি রোড ওভার ব্রিজ ও ৩৯টি রোড আন্ডার ব্রিজ ও ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের ০২টি ভায়াডাক্ট। ফাইনাল লোকেশন সমীক্ষা রিপোর্ট রেলবোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

    ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র দিকে এগোচ্ছে রেল

    প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য বেশ কিছু নতুন রেলওয়ে (Bharat Bhutan Rail) প্রকল্প গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ ও ‘নেবারহুড ফার্স্ট পলিসি’-র দিকে সক্রিয় ভাবে এগিয়ে চলেছে ভারতীয় রেল। প্রধানমন্ত্রীর ভিশনের সঙ্গে সংগতি রেখে কোকরাঝাড় থেকে গেলেফু পর্যন্ত নতুন রেললাইন বসানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই লাইনই অসম ও ভুটানকে যুক্ত করবে। দুই দেশের মধ্যে সংযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য এই লাইন বসানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

    দীর্ঘমেয়াদি বিকাশ ও উন্নয়নের পথ

    প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের ফাইনাল লোকেশন সার্ভে (এফএলএস) সফল ভাবে সম্পূর্ণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই রেললাইনটি উল্লেখযোগ্য ভাবে ভারত-ভুটান সম্পর্ককে মজবুত করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে বৃদ্ধি করবে। সেই সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থাকেও উন্নত করবে, এবং এর মাধ্যমে ভুটানকে সর্বপ্রথম বার রেলওয়ে সংযোগ ব্যবস্থা প্রদান করা হবে, যা বাধাহীন পরিবহণে সহায়ক হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে, এই রেললাইন বড়োল্যান্ডের জন্য একটি বাণিজ্য ও ট্রানজিট হাব হিসাবে গড়ে উঠবে। যার ফলে স্থানীয় ব্যবসা ও জনসাধারণের সুবিধা হবে। সামগ্রিক ভাবে, এই অসম-ভুটান রেললাইন বড়োল্যান্ডের অর্থনীতিতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় রূপান্তর সাধন করবে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিকাশ ও উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।

    প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’

    দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন ও বঞ্চিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নের গতি আনাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিশন ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’। বাংলাদেশ ও মায়ানমার এই দুই প্রতিবেশী দেশ ভারতের অ্য়াক্ট ইস্ট পলিসির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে ৷ কারণ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এই দুই দেশের মধ্যে দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেহেতু এই দুই দেশে ঝামেলা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে ৷ তাই নয়াদিল্লির জন্য ভুটান, নেপাল, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন ৷ সেক্ষেত্রে এই প্রস্তাবিত রেলপথ ভারত-ভুটান সম্পর্ককেঅন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে, বলে অনুমান কূটনৈতিক মহলের।

    প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্যোগ

    ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi Initiatives) ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক-এর সঙ্গে বৈঠকে এই রেললাইন নিয়ে আলোচনা হয়। এই রেললাইনের ৭০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ভুটানের ভেতরে ৫৮ কিলোমিটার রেলপথ বিছানোর পরিকল্পনা রয়েছে । উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কোকরাঝাড় থেকে ভুটানের সারপাং-এর গেলেফু পর্যন্ত এই রেলপথ পাতা হবে। পরে, ২০২৪ সালে মার্চ মাসে ভুটান সফরে গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ সেসময় মোদি ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের মধ্যে এই রেলপথ নিয়ে আলোচনা হয় ৷ তারপর দু’দেশের মধ্যে এই রেললাইন নিয়ে মৌ স্বাক্ষরও হয়েছিল।

    কোথা থেকে কোথায় রেলপথ

    ভুটানের (Bharat Bhutan Rail) সারপাং জেলার গেলেফুকে ভুটানের বৃহত্তম ইকোনমিক জোন হিসেবে ধরা হয় । এই রেলপথ তৈরি হলে ভুটানের আর্থ সামাজিক মান আরও উন্নত হবে ৷ ভারত ও ভুটানের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে । পর্যটন মানচিত্রে বিরাট জায়গা করে নেবে এই রেলপথ । শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় রেললাইন হিসেবে ভুটানের সামসি জেলা থেকে ভারতের সীমান্ত চা বাগানের মধ্যে দিয়ে কোকরাঝাড় রেলপথ বানারহাট রেললাইনে মিশবে।

    ভারতের রেল নেটওয়ার্ক

    ভারতের রেল (Bharat Bhutan Rail) নেটওয়ার্ক হার মানিয়ে দেয় অনেক দেশকেই। শুধু দেশের অন্দরে নয়, আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্কও রয়েছে ভারতের। বর্তমানে ভারতের বাইরে ট্রেনে চেপে আরও দুটি দেশে যাওয়া যায়- বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। তবে এবার ভারতের গা ঘেঁষে থাকা ভুটানেও পৌঁছে যাওয়া যাবে ট্রেনে চেপেই। ভারত-ভুটান সরাসরি রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। কারণ, তাতে আমজনতা, পর্যটকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই দুই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আরও সহজ ও সম্প্রসারিত হবে। ভুটানের সঙ্গে আরও পোক্ত হবে ভারতের সম্পর্ক।

    প্রাথমিক পরিকল্পনা

    ভারতের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি সম্ভাব্য রুটের কথা ভাবা হয়েছিল। এগুলির মধ্য়ে অসম থেকে ভুটান পর্যন্ত তিনটি রুটে ট্রেন চালানোর সম্ভাবনা উঠে আসে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে একটি করে সম্ভাব্য রুট নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। অন্যদিকে, অসম থেকে ভুটান পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলরুটগুলির মধ্য়ে অন্যতম ছিল কোকড়াঝাড়-গেলেফু। শেষ পর্যন্ত সেই রুটটিকেই বেছে নেয় রেল মন্ত্রক। এরপর, ভারত ও ভুটান – দুই দেশের সম্মতিক্রমে ২০২২ সাল থেকে এই রুটে সমীক্ষার কাজ শুরু করে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। প্রায় দুই বছর ধরে ধাপে ধাপে সেই সমীক্ষার কাজ চলে। অবশেষে, ফাইনাল লোকেশন সার্ভের কাজ শেষ হয় গত নভেম্বর মাসে। এবার তৈরি হল প্রকল্প রিপোর্ট।

    ভারত-ভুটান এক ঘণ্টায়

    তথ্যাভিজ্ঞ মহলের হিসাব বলছে, সরাসরি রেলরুট চালু হলে অসমের কোকরাঝাড় থেকে ভুটানের গেলেফু পৌঁছতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে। তাছাড়া, এই রুটে দুই দেশের মধ্য়ে পণ্য পরিবহণও শুরু করা যাবে। তাতে পরিবহণ খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। যার জেরে লাভবান হবে দুই পক্ষই।

    পর্যটনে জোয়ার

    ভুটান (Bharat Bhutan Rail) ভারতের ঠিক পাশেই অবস্থিত। ভারতীয়দের ছুটি কাটানোর অন্যতম ঠিকানা এই দেশ। হিমালয়ের কোলে থাকা সেই ভুটানে এবার যাওয়া যাবে ট্রেনে। সেই পরিকল্পনা করছে রেল। অসমের কোকরাঝাড় জেলাকে ভুটানের গেলফু শহরের সঙ্গে যুক্ত করবে রেল লাইন। একবার এই রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়ে গেলে, ভারত থেকে ভুটানে যাতায়াত করা মানুষের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে। এই রেল যোগাযোগ ভারত ও ভুটানের মধ্যে পর্যটনের প্রসার ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভারতীয়দের ভুটান ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না, তবে রেলপথ নির্মাণের পরে, ভারতীয়দের জন্য ভ্রমণ আরও সহজ হয়ে উঠবে।

LinkedIn
Share