মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু মহিলাদের এয়োতির চিহ্ন মুছে ফেলতে বলছে পুলিশ! শাঁখা-পলা পরতে বারণ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ (Mothabari Allegations)! কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে ঘুরতে বলা হচ্ছে হিন্দু মহিলাদের! হিন্দু মহিলাদের (NCW) এমনই অভিযোগে তপ্ত মোথাবাড়ি। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার জানান, তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। মহিলা কমিশন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে চলেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তুষ্টিকরণের রাজনীতির বিষবৃক্ষে এবার ফল ধরতে শুরু করেছে! ওপার বাংলায় হিন্দু নির্যাতনের রেশ আছড়ে পড়েছে এবার বাংলার মোথাবাড়িতেও। এমনই আবহে আজ, সোমবার রেড রোডে ইদের নমাজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, “কেউ গোলমাল পাকাতে এলে মনে রাখবেন, দিদি আছে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, দিদির এহেন মন্তব্য যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মুসলমান ভোট ব্যাংক অটুট রাখা, তা পরিষ্কার। এই মুসলমানদের ভোটের জেরেই এ রাজ্যে টানা ১৪ বছর ধরে চলছে দিদি-রাজ!
শাঁখা-পলা খুলে ফেলার নিদান (Mothabari Allegations)
ফেরা যাক খবরে। দিন কয়েক আগে মালদার মোথাবাড়িতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় ৬১ জনকে। ইদ এবং রামনবমীর আবহে প্রমাদ গোণে প্রশাসন। বিশাল বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্ত্ব আনার চেষ্টা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী। তাঁর হাতেই রয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরের রশি। এই পুলিশের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মোথাবাড়ির হিন্দু মহিলারা। তাঁদের দাবি, পুলিশ হিন্দু মহিলাদের বলছে শাঁখা-পলা খুলে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে ঘুরতে। মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর অভিযোগ, রাতের বেলায় লুকিয়ে থেকে অত্যাচার করা হচ্ছে, হিন্দুদের বাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হচ্ছে ঢিল। সভানেত্রীর অভিযোগ, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
শুধু হিন্দুদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে!
মোথাবাড়িতে (Mothabari Allegations) যে ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সবাই হিন্দু বলে অভিযোগ বিজেপির। পদ্ম শিবিরের আইনজীবী নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনায় একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে অপর সম্প্রদায়ের একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “মালদার মোথাবাড়ি ঘটনা: পুলিশের নিরপেক্ষতা কোথায়? মালদার মোথাবাড়িতে সাম্প্রতিক ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বিচার ব্যবস্থা একতরফা হয়ে গিয়েছে। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করছে, আমি সেই তালিকায় তথাকথিত দুধ দেওয়া গরুদের দেখতে ব্যর্থ। মনে হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিশেষ জাতের গরুর দুধ পান করেন, কিন্তু সাধারণ হিন্দুরা কেন তাদের আগ্রাসনের শিকার হবেন?”
হিন্দুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক!
তিনি আরও লিখেছেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একটি তালিকা, অ্যাডভোকেট রিঙ্কি চ্যাটার্জির প্রোফাইল থেকে আমি পেয়েছি। সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, হিন্দু সম্প্রদায় পক্ষপাতদুষ্ট নীতির শিকার হয়েছে। যারা ফেসবুক লাইভে প্রকাশ্যে দোকান ভাঙচুর করেছে, এবং হিংসাত্মক হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। কারণ তারা ক্ষমতাসীন দলের বিশেষ ভোট ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত। তিনি লেখেন, এই ঘটনাটি আরও একবার হাইলাইট করে যে পশ্চিমবঙ্গের আইন (NCW) প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের (Mothabari Allegations) প্রতি অগ্রাধিকারমূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। এমনকী যখন হিন্দুদের ওপর হামলা হয়, তখন অপরাধীদের বদলে গ্রেফতার করা হচ্ছে ভুক্তভোগীদেরই। প্রশাসন কি তাহলে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখে? এই বৈষম্যমূলক অবস্থান কি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত? আর এটাই কি পশ্চিমবঙ্গের নতুন বাস্তবতা?”
জাতীয় মহিলা কমিশনের বক্তব্য
একটি খবরের চ্যানেলের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মোথাবাড়িতে পুলিশ গিয়ে হিন্দু মহিলাদের শাঁখা-পলা পরতে বারণ করছে। সেই প্রতিবেদনের ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন তরুণজ্যোতি। এরই সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনকে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছিলেন। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা মারাত্মক অভিযোগ। হিন্দু মহিলারা শাখা পলা পরতে পারবেন না?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জাতীয় মহিলা কমিশনের উচিত এই বিষয়টা দেখা এবং ওখানে টিম পাঠিয়ে বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করা’’ গেরুয়া শিবিরের আইনজীবী-নেতার পোস্টটি শেয়ার করে অর্চনা মজুমদার লেখেন, “জাতীয় মহিলা কমিশন মালদার মোথাবাড়ি থেকে একাধিক অভিযোগ পেয়েছে। সেই সব অভিযোগ নিয়ে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। একটি দল ৪ এপ্রিল ঘটনাস্থলে যাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। ন্যায়বিচার আমাদের অগ্রাধিকার (Mothabari Allegations)।”
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, মোথাবাড়ির হিংসার ঘটনায় রুজু হয়েছে ১৯টি মামলা। গ্রেফতার (NCW) করা হয়েছে ৬১ জনকে। এলাকায় জারি হয়েছে ১৬৩ ধারা (Mothabari Allegations)।