শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি), “একটু ইংরেজিতে দু’জনে বিচার করো, আমি দেখব।”
বিচার আরম্ভ হল। ইংরেজিতে তেমন হল না, বাংলা ভাষাতেই আলোচনা চলল—মাঝে মাঝে দু’একটা ইংরেজি শব্দ। নরেন্দ্র বললেন, “ঈশ্বর অনন্ত। তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করা আমাদের সাধ্য নয়। তিনি সকলের মধ্যেই আছেন, কেবল একজনের মধ্যে নন।”
শ্রীরামকৃষ্ণ সস্নেহে বললেন, “ওর যা মত—আমারও তাই মত। তিনি সর্বত্রই আছেন। তবে একটা কথা আছে—শক্তির বিশেষ প্রকাশ। কোথাও অবিদ্যা-শক্তির প্রকাশ, কোথাও বিদ্যা-শক্তির। কোনও আঁধারে শক্তি বেশি, কোনও আঁধারে শক্তি কম। তাই সব মানুষ সমান নয়।”
রাম- এসব মিছে তর্কে কী হবে?
শ্রীরামকৃষ্ণ- না না, ওর একটা মানে আছে।
গিরিশ (নরেন্দ্রর প্রতি): তুমি কেমন করে জানলে, তিনি (ঈশ্বর) দেহ ধারণ করে আসেন না?
শ্রীরামকৃষ্ণ: না, তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর। তিনি শুদ্ধ বুদ্ধির শুদ্ধ আত্মা। যাঁরা শুদ্ধ আত্মা, তাঁরা তাঁকেই সাক্ষাৎ করেন।
গিরিশ: কিন্তু মানুষের অবতার না হলে কে মানুষকে বুঝিয়ে দেবে? মানুষকে জ্ঞান, ভক্তি দেবার জন্যই তো তিনি দেহ ধারণ করেন। না হলে কে শিক্ষা দেবে?
নরেন্দ্র- হ্যাঁ, তিনি অন্তর থেকে বুঝিয়ে দেবেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ- হ্যাঁ হ্যাঁ, অন্তর্যামী রূপে তিনি বুঝিয়ে দেন।
তারপর শুরু হলো ঘোর তর্ক। “ইনফিনিটি”-এর কী অংশ হয়? হ্যামিল্টন কী বলেন, হার্বার্ট স্পেনসার কী বলেন, টিন্ডেল, হাক্সলে, বাকিরা কী বলেছেন—এই সব নিয়ে আলোচনা চলতে লাগল।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): দেখো, এগুলো আমার ভালো লাগছে না। আমি সব কিছু দেখছি, বিচার করছি—আর করব কী? দেখছি, তিনিই সব। তিনিই সব হয়েছেন।
“তাও বটে… আবার তাও বটে।”
এক অবস্থায় মন, বুদ্ধি—সব লীন হয়ে যায়, অখণ্ডে বিলীন হয়।
নরেন্দ্রকে দেখে আমার মনও সেই অখণ্ডে লীন হয়ে যায়।