Tag: ramakrishna kathamrita

  • Ramakrishna 301: “বেদে আছে, হোমাপাখির কথা…যখন মাটির কাছে এসে পড়ে, তখন তার চৈতন্য হয়”

    Ramakrishna 301: “বেদে আছে, হোমাপাখির কথা…যখন মাটির কাছে এসে পড়ে, তখন তার চৈতন্য হয়”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    মহাষ্টমীদিবসে রামের বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

    বিজয়, কেদার, রাম, সুরেন্দ্র, চুনি, নরেন্দ্র, নিরঞ্জন, বাবুরাম, মাস্টার 

    “স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণ, মহাকারণ! মহাকারণে গেলে চুপ। সেখানে কথা চলে না!

    “ঈশ্বরকোটি (Ramakrishna) মহাকারণে গিয়ে ফিরে আসতে পারে। অবতারাদি ঈশ্বরকোটি। তারা উপরে উঠে, আবার নিচেও আসতে পারে। ছাদের উপরে উঠে, আবার সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচে আনাগোনা করতে পারে। অনুলোম, বিলোম। সাততোলা বাড়ি, কেউ বারবাড়ি পর্যন্ত যেতে পারে। রাজার ছেলে, আপনার বাড়ি সাততোলায় যাওয়া আসা করতে পারে।

    “এক একরকম তুবড়ি আছে, একবার একরকম ফুল কেটে গেল, তারপর খানিকক্ষণ আর-একরকম ফুল কাটছে তারপর আবার আর-একরকম। তার নানারকম ফুলকাটা ফুরোয় (Kathamrita) না।

    “আর একরকম তুবড়ি আছে, আগুন দেওয়ার একটু পরেই ভস্‌ করে উঠে ভেঙে যায়! যদি সাধ্য-সাধনা করে উপরে যায়, তো আর এসে খপর দেয় না। জীবকোটির সাধ্য-সাধনা করে সমাধি হতে পারে। কিন্তু সমাধির পর নিচে আসতে বা এসে খপর দিতে পারে না।

    “একটি আছে, নিত্যসিদ্ধের থাক্‌। তারা জন্মাবধি ঈশ্বরকে (Ramakrishna) চায়, সংসারে কোন জিনিস তাদের ভাল লাগে না। বেদে আছে, হোমাপাখির কথা। এই পাখি খুব উঁচু আকাশে থাকে। ওই আকাশেই ডিম পাড়ে। এত উঁচুতে থাকে যে ডিম অনেকদিন ধরে পড়তে থাকে। পড়তে পড়তে ডিম ফুটে যায়। তখন ছানাটি পড়তে থাকে। অনেকদিন ধরে পড়ে। পড়তে পড়তে চোখ ফুটে যায়। যখন মাটির কাছে এসে পড়ে, তখন তার চৈতন্য হয়। তখন বুঝতে পারে যে, মাটি গায়ে ঠেকলেই মৃত্যু। পাখি চিৎকার করে মার দিকে চোঁচা দৌড়। মাটিতে মৃত্যু, মাটি দেখে ভয় হয়েছে! এখন মাকে চায়! মা সেই উঁচু আকাশে আছে। সেই দিকে চোঁচা দৌড়! আর কোন দিকে দৃষ্টি নাই (Kathamrita)।

    “অবতারে সঙ্গে যারা আসে, তারা নিত্যসিদ্ধ, কারু বা শেষ জন্ম।

    (বিজয়ের প্রতি)—“তোমাদের দুই-ই আছে। যোগ ও ভোগ। জনক রাজার যোগও ছিল, ভোগও ছিল। তাই জনক রাজর্ষি (Ramakrishna), রাজা ঋষি, দুই-ই। নারদ দেবর্ষি। শুকদেব ব্রহ্মর্ষি।

    “শুকদেব ব্রহ্মর্ষি, শুকদেব জ্ঞানী নন, জ্ঞানের ঘনমূর্তি। জ্ঞানী কাকে বলে? জ্ঞান হয়েছে যার— সাধ্য-সাধনা করে জ্ঞান হয়েছে। শুকদেব জ্ঞানের মূর্তি অর্থাৎ জ্ঞানের জমাটবাঁধা। এমনি হয়েছে সাধ্য-সাধনা করে নয়।”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 300: “আন্তরিক হলে সংসারেও ঈশ্বরলাভ করা যায়, ‘আমি-আমার’—এইটি অজ্ঞান, হে ঈশ্বর, ‘তুমি-তোমার’—এইটি জ্ঞান”

    Ramakrishna 300: “আন্তরিক হলে সংসারেও ঈশ্বরলাভ করা যায়, ‘আমি-আমার’—এইটি অজ্ঞান, হে ঈশ্বর, ‘তুমি-তোমার’—এইটি জ্ঞান”

    সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণ—দুর্গাপূজা দিবসে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে সেপ্টেম্বর

    বিজয় গোস্বামীর প্রতি উপদেশ

    বিজয় (কৃতাঞ্জলি হইয়া)—আপনি একটু আশীর্বাদ করুন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ও-সব অজ্ঞানের কথা। আশীর্বাদ ঈশ্বর করবেন।

    গৃহস্থ ব্রহ্মজ্ঞানীকে উপদেশ—গৃহস্থাশ্রম ও সন্ন্যাস 

    বিজয়—আজ্ঞা, আপনি কিছু উপদেশ দিন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সমাজগৃহের চতুর্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া, সহাস্যে)—এ এরকম বেশ! সারে মাতে সারও আছে, মাতও আছে। (সকলের হাস্য) আমি বেশ কাটিয়ে জ্বলে গেছি। (সকলের হাস্য) নক্স খেলা জান? সতের ফোঁটার বেশি হলে জ্বলে যায়। একরকম তাস খেলা। যারা সতের ফোঁটার কমে থাকে, যারা পাঁচে থাকে, সাত থাকে, দশে থাকে, তারা সেয়ানা। আমি বেশি কাটিয়ে জ্বলে গেছি (Kathamrita)।

    “কেশব সেন বাড়িতে লেকচার দিলে। আমি শুনেছিলুম। অনেক লোক বসে ছিল। চিকের ভিতরে মেয়েরা ছিল। কেশব বললে, ‘হে ঈশ্বর (Kathamrita), তুমি আশীর্বাদ কর, যেন আমরা ভক্তি-নদীতে একেবারে ডুবে যাই।’ আমি হেসে কেশবকে বললুম, ভক্তি-নদীতে যদি একেবারে ডুবে যাবে তাহলে চিকের ভিতর যাঁরা রয়েছেন, ওঁদের দশা কি হবে? তবে এক কর্ম করো, ডুব দেবে, আর মাঝে মাঝে আড়ায় উঠবে। একেবারে ডুবে তলিয়ে যেও না। এই কথা শুনে কেশব আর সকলে হো-হো করে হাসতে লাগল।

    “তা হোক। আন্তরিক হলে সংসারেও ঈশ্বরলাভ করা যায়। ‘আমি ও আমার’—এইটি অজ্ঞান। হে ঈশ্বর, তুমি ও তোমার—এইটি জ্ঞান।

    “সংসারে থাকো, যেমন বড়মানুষের বাড়ির ঝি। সব কাজ করে, ছেলে মানুষ করে, বাবুর ছেলেকে বলে আমার হরি কিন্তু তার মন দেশে পড়ে থাকে। তেমনি সংসারে সব কর্ম কর কিন্তু ঈশ্বরের (Kathamrita) দিকে মন রেখো। আর জেনো যে, গৃহ, পরিবার পুত্র—এ-সব আমার নয়, এ-সব তাঁর। আমি কেবল তাঁর দাস।

    “আমি মনে ত্যাগ করতে বলি। সংসারত্যাগ বলি না। অনাসক্ত হয়ে সংসারে থেকে, আন্তরিক চাইলে, তাঁকে পাওয়া যায়।”

    ব্রাহ্মসমাজ ও ধ্যানযোগ—Subjective and Objective

    (বিজয়ের প্রতি)—“আমিও চক্ষু বুজে ধ্যান কত্তুম। তারপর ভাবলুম। এমন কল্‌লে (চক্ষু বুজলে) ঈশ্বর (Ramakrishna) আছেন, আর এমন কল্‌ লে (চক্ষু খুললে) কি ঈশ্বর নাই, চক্ষু খুলেও দেখছি, ঈশ্বর সর্বভূতে রয়েছেন। মানুষ, জীবজন্তু, গা ছপালা, চন্দ্রসূর্যমধ্যে, জলে, স্থলে—সর্বভূতে তিনি আছেন।”

    শিবনাথ—শ্রীযুক্ত কেদার চাটুজ্যে 

    “কেন শিবনাথকে চাই? যে অনেকদিন ঈশ্বরচিন্তা (Ramakrishna) করে, তার ভিতর সার আছে। তার ভিতর ঈশ্বরের শক্তি আছে। আবার যে ভাল গায়, ভাল বাজায়, কোন একটা বিদ্যা খুব ভালরকম জানে, তার ভিতরেও সার আছে (Kathamrita)। ঈশ্বরের শক্তি আছে। এটি গীতার মত। চন্ডীতে আছে, যে খুব সুন্দর, তার ভিতরও সার আছে, ঈশ্বরের শক্তি আছে। (বিজয়ের প্রতি) আহা! কেদারের কি স্বভাব হয়েছে! এসেই কাঁদে! চোখ দুটি সর্বদাই যেন ছানাবড়া হয়ে আছে।”

    “বিজয়—সেখানে কেবল আপনার কথা, আর তিনি আপনার কাছে আসবার জন্য ব্যাকুল!

    কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর গাত্রোত্থান করিলেন। ব্রাহ্মভক্তেরা নমস্কার করিলেন। তিনিও তাঁহাদিগকে নমস্কার করিলেন। ঠাকুর (Ramakrishna) গাড়িতে উঠিলেন। অধরের বাড়িতে প্রতিমাদর্শন করিতে যাইতেছেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 299: “কেউ কেউ সাপের স্বভাব, তুমি জান না, তোমায় ছোবল দেবে, সামলাতে অনেক বিচার আনতে হয়”

    Ramakrishna 299: “কেউ কেউ সাপের স্বভাব, তুমি জান না, তোমায় ছোবল দেবে, সামলাতে অনেক বিচার আনতে হয়”

    সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণ— দুর্গাপূজা দিবসে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে সেপ্টেম্বর

    বিজয় গোস্বামীর প্রতি উপদেশ

    বিজয় তখনও সাধারণ ব্রাহ্মসমাজভুক্ত, ওই ব্রাহ্মসমাজে একজন বেতনভোগী আচার্য। আজকাল তিনি ব্রাহ্মসমাজের সব নিয়ম মানিয়া চলিতে পারিতেছেন না। সাকারবাদীদের সঙ্গেও মিশিতেছেন। এই সকল লইয়া সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের কর্তৃপক্ষীয়দের সঙ্গে তাঁহার মনান্তর হইতেছে। সমাজের ব্রাহ্মভক্তদের (Ramakrishna) অনেকেই তাঁহার উপর অসন্তুষ্ট হইয়াছেন। ঠাকুর হঠাৎ বিজয়কে লক্ষ্য করিয়া আবার বলিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বিজয়ের প্রতি সহাস্যে)—তুমি সাকারবাদীদের সঙ্গে মেশো বলে তোমার নাকি বড় নিন্দা হয়েছে? যে ভগবানের ভক্ত তার কূটস্থ বুদ্ধি হওয়া চাই। যেমন কামারশালের নাই। হাতুড়ির ঘা অনবরত পড়ছে, তবু নির্বিকার। অসৎ লোকে তোমাকে কত কি বলবে, নিন্দা করবে! তুমি যদি আন্তরিক ভগবানকে চাও, তুমি সব সহ্য করবে। দুষ্টলোকের মধ্যে থেকে কি আর ঈশ্বরচিন্তা হয় না? দেখ না, ঋষিরা বনের মধ্যে ঈশ্বরকে চিন্তা করতো। চারিদিকে বাঘ, ভাল্লুক, নানা হিংস্র জন্তু। অসৎ লোকের, বাঘ ভাল্লুকের স্বভাব (Kathamrita); তেড়ে এসে অনিষ্ট করবে।

    “এই কয়েকটির কাছ থেকে সাবধান হতে হয়! প্রথম, বড়মানুষ (Ramakrishna)। টাকা লোকজন অনেক, মনে করলে তোমার অনিষ্ট করতে পারে; তাদের কাছে সাবধানে কথা কইতে হয়। হয়তো যা বলে, সায় দিয়ে যেতে হয়! তারপর কুকুর। যখন কুকুর তেড়ে আসে কি ঘেউ ঘেউ করে, তখন দাঁড়িয়ে মুখের আওয়াজ করে তাকে ঠাণ্ডা করতে হয়। তারপর ষাঁড়। গুঁতুতে এলে, তাকেও মুখের আওয়াজ করে ঠাণ্ডা করতে হয়। তারপর মাতাল। যদি রাগিয়ে দাও, তাহলে বলবে, তোর চৌদ্দপুরুষ, তোর হেন তেন,—বলে গালাগালি দিবে। তাকে বলতে হয়, কি খুড়ো কেমন আছ? তাহলে খুব খুশি হয়ে তোমার কাছে বসে তামাক খাবে।

    “অসৎ লোক দেখলে আমি সাবধান হয়ে যাই। যদি কেউ এসে বলে, ওহে হুঁকোটুকো আছে? আমি বলি আছে।

    “কেউ কেউ সাপের স্বভাব। তুমি জান না, তোমায় ছোবল দেবে। ছোবল সামলাতে অনেক বিচার আনতে হয়। তা না হলে হয়তো তোমার এমন রাগ হয়ে গেল যে, তার আবার উলটে অনিষ্ট করতে ইচ্ছা হয়। তবে মাঝে মাঝে সৎসঙ্গ বড় দরকার। সৎসঙ্গ কল্লে তবে সদসৎ বিচার আসে।”

    বিজয়—অবসর নাই (Kathamrita), এখানে কাজে আবদ্ধ থাকি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তোমরা আচার্য; অন্যের ছুটি হয়, কিন্তু আচার্যের ছুটি নাই। নায়েব একধার শাসিত কল্লে পর, কমিদার আর-একধার শাসন করতে তাকে পাঠান। তাই তোমার ছুটি নাই। (সকলের হাস্য)

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 298: “সবুজ গিরগিটি দেখে এলুম, জানোয়ারটি কখন লাল, সবুজ, কখন হলদে, আবার কখন কোন রঙ থাকে না ”

    Ramakrishna 298: “সবুজ গিরগিটি দেখে এলুম, জানোয়ারটি কখন লাল, সবুজ, কখন হলদে, আবার কখন কোন রঙ থাকে না ”

    সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে শ্রীরামকৃষ্ণ— দুর্গাপূজা দিবসে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজমন্দিরে

    মাস্টার, হাজরা, বিজয়, শিবনাথ, কেদার 

    সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ও সাইনর্বোড সাকার-নিরাকার—সমন্বয় 

    শ্রীরামকৃষ্ণে (বিজয়কে, সহাস্যে)—শুনলাম, এখানে নাকি সাইনবোর্ড আছে। অন্য মতের লোক নাকি এখানে আসবার জো নাই! নরেন্দ্র বললে, সমাজে গিয়ে কাজ নাই, শিবনাথের (Ramakrishna) বাড়িতে যেও।

    “আমি বলি সকলেই তাঁকে ডাকছে। দ্বেষাদ্বেষীর দরকার নাই। কেউ বলছে সাকার, কেউ বলছে নিরাকার। আমি বলি, যার সাকারে বিশ্বাস, সে সাকারই চিন্তা করুক। যার নিরাকারে বিশ্বাস, সে নিরাকারেই চিন্তা করুক। তবে এই লা যে, মতুয়ার বুদ্ধি (Dogmatism) ভাল নয়, অর্থাৎ আমার ধর্ম ঠিক আর সকলের ভুল। আমার ধর্ম ঠিক; আর ওদের ধর্ম ঠিক কি ভুল, সত্য কি মিথ্যা; এ আমি বুঝতে পাচ্ছিনে—এ-সব ভাল। কেননা ঈশ্বরের (Ramakrishna)  সাক্ষাৎকার না করলে তাঁর স্বরূপ বুঝা যায় না। কবীর বলত, ‘সাকার আমার মা, নিরাকার আমার বাপ। কাকো নিন্দো, কাকো বন্দো, দোনো পাল্লা ভারী।’

    “হিন্দু, মুসলামান, খ্রীষ্টান, শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, ঋষিদের কালের ব্রহ্মজ্ঞানী ও ইদানীং ব্রহ্মজ্ঞানী তোমরা—সকলেই এক বস্তুকে চাহিছো। তবে যার যা পেটে সয়, মা সেইরূপ ব্যবস্থা করেছেন। মা যদি বাড়িতে মাছ আনেন, আর পাঁচটি ছেলে থাকে, সকলকেই পোলাও কালিয়া করে দেন না। সকলের পেট সমান নয়। কারু জন্য মাছের ঝোলের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু মা সকলকেই সমান ভালবাসেন (Kathamrita)।

    “আমার ভাব কি জানো? আমি মাছ সবরকম খেতে ভালবাসি। আমার মেয়েলি স্বভাব! (সকলের হাস্য) আমি মাছ ভাজা, হলুদ দিয়ে মাছ, টকের মাছ, বাটি-চচ্চড়ি—এ-সব তাতেই আছি। আবার মুড়িঘন্টোতেও আছে, কালিয়া পোলোয়াতেও আছি। (সকলের হাস্য)

    “কি জানো? দেশ-কাল-পাত্র ভেদে ঈশ্বর নানা ধর্ম করেছেন। কিন্তু সব মতই পথ, মত কিছু ঈশ্বর নয়। তবে আন্তরিক ভক্তি করে একটা মত আশ্রয় কল্লে তাঁর কাছে পোঁছানো যায়। যদি কোন মত আশ্রয় করে তাতে ভুল থাকে আন্তরিক হলে তিনি সে ভুল শুধরিয়ে দেন। যদি কেউ আন্তরিক জগন্নাথদর্শনে বেরোয়, আর ভুলে দক্ষিণদিকে না গিয়ে উত্তরদিকে যায়, তাহলে অবশ্য পথে কেউ বলে দেয় ওহে, ওদিকে যেও না—দক্ষিণদিকে যাও। সে ব্যক্তি কখনও না কখনও জগন্নাথদর্শন করবে।

    “তবে অন্যের মত ভুল হয়েছে, এ-কথা আমাদের দরকার নাই। যাঁর জগৎ, তিনি ভাবছেন। আমাদের কর্তব্য, কিসে জো সো করে জগন্নাথদর্শন হয়। তা তোমাদের মতটি বেশ তো। তাঁকে নিরাকার বলছ (Kathamrita), এ তো বেশ। মিছরির রুটি সিধে করে খাও, আর আড় করে খাই, মিষ্টি লাগবে।

    “তবে মতুয়ার বুদ্ধি ভাল নয়। তুমি বহুরূপির গল্প শুনেছ। একজন বাহ্যে কত্তে গিয়ে গাছের উপর বহুরূপী দেখেছিল, বন্ধুদের কাছে এসে বললে, আমি একটি লাল গিরগিটি দেখে এলুম। তার বিশ্বাস, একবারে পাকা লাল। আর-একজন সেই গাছতলা থেকে এসে বললে যে আমি একটি সবুজ গিরগিটি দেখে এলুম। তার বিশ্বাস একেবারে পাকা সবুজ। কিন্তু যে গাছতলায় বাস কত্তো, সে এসে বললে, তোমরা যা বলছো (Kathamrita) সব ঠিক তবে জানোয়ারটি কখন লাল কখন সবুজ, কখন হলদে, আবার কখন কোন রঙ থাকে না।

    “বেদে তাঁকে (Ramakrishna) সগুণ নির্গুণ দুই বলা হয়েছে। তোমরা নিরাকার বলছো। একঘেয়ে। তা হোক। একটা ঠিক জানলে, অন্যটাও জানা যায়। তিনিই জানিয়ে দেন। তোমাদের এখানে যে আসে, সে এঁকেও জানে ওঁকেও জানে। ” (দুই-একজন ব্রাহ্মভক্তের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ)

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

LinkedIn
Share