Tag: ramakrishna

ramakrishna

  • Ramakrishna 440: গৃহস্থ ভক্তদের সর্বদা বলেন— ওদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াও, তাহলে তোমাদের ভালো হবে

    Ramakrishna 440: গৃহস্থ ভক্তদের সর্বদা বলেন— ওদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াও, তাহলে তোমাদের ভালো হবে

    “পরিত্রাণায় সাধুনাং, বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম, ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবানি যুগে যুগে। কি ভালোবাসা! নরেন্দ্রর জন্য পাগল, নারায়ণের জন্য ক্রন্দন। বলতেন, “এরা ও অন্যান্য ছেলেরা—রাখাল, ভবনাথ, পূর্ণ, বাবু—মিথ্যে নয়, এরা সাক্ষাৎ নারায়ণ। আমার জন্য দেহধারণ করে এসেছে।” এই প্রেম তো মানুষের জ্ঞানের নয়, এ প্রেম ঈশ্বরপ্রেম।

    ছেলেরা শুদ্ধ আত্মা। স্ত্রীলোক অন্যভাবে স্পর্শ করেনি, বিষয়কর্ম করেনি। এদের লোভ, অহংকার, হিংসা ইত্যাদির স্ফূর্তি হয়নি। তাই ছেলেদের ভিতর ঈশ্বরের বেশি প্রকাশ। কিন্তু এ দৃষ্টি কার ছিল? ঠাকুরের। অন্তর্দৃষ্টি। সমস্ত দেখেছেন, দেখছেন। এ বিষয়ে সত্য, সরল, উদার, ঈশ্বরভক্ত। তাই এরূপ ভক্ত দেখলে—“এই সাক্ষাৎ নারায়ণ” বলে সেবা করেন। তাদের নাম, তাদের দেখিবার জন্য কাঁদেন। কলকাতায় ছুটে ছুটে যান।

    লোকের খোসামোদ করে বেড়ান কলকাতা থেকে। তাদের গাড়ি করে আনতে গৃহস্থ ভক্তদের সর্বদা বলেন— ‘ওদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াও, তাহলে তোমাদের ভালো হবে।’ একে মায়া নয়, স্নেহ নয়— বিশুদ্ধ ঈশ্বরপ্রেম। মাটির প্রতিমাতে যতভাবে ষোড়শ উপাচারে ঈশ্বরের পূজা ও সেবা হয়, আর শুদ্ধ নরদেহে কি হতে পারে না? তাছাড়া এরাই ভগবানের প্রত্যেক লীলার সহায়, জন্মে জন্মে সাঙ্গোপাঙ্গ।
    নরেন্দ্রকে দেখতে দেখতে বাহ্যজগৎ ভুলে গেলেন, ক্রমে ‘দেহী’ নরেন্দ্রকে ভুলে গেলেন। বাহ্যিক মানুষকে ভুলে, ‘প্রকৃত মানুষ’-কে দর্শন করিতে লাগলেন।
    অখণ্ড সচ্চিদানন্দে মন লীন হইলো। যাকে দর্শন করে কখনো অবাক, স্পন্দনহীন হয়ে চুপ করে থাকেন, কখনো বা ‘ওম ওম’ বলেন, কখনো বা ‘মা মা’ করে পালকের মতো ডাকেন।
    নরেন্দ্রর ভিতর তাঁকে (ঈশ্বরকে) বেশি প্রকাশ পেতে দেখেন। ‘নরেন্দ্র নরেন্দ্র’ করে পাগল!
    নরেন্দ্র অবতার মানেন নাই— তাঁর আর কী হয়েছে? ঠাকুরের দিব্য চক্ষু! তিনি দেখলেন যে এ অভিমান হতে পারে, তিনি যে বড় আপনার লোক! তিনি যে আপনার মা পাতানো, মাথানত— তিনি কেন বুঝিয়ে দেন না? তিনি দপ করে আলো জ্বেলে দেন না!

  • Ramakrishna 439: ছেলেরা শুদ্ধ আত্মা, স্ত্রীলোক অন্যভাবে স্পর্শ করেনি, বিষয়কর্ম করেনি

    Ramakrishna 439: ছেলেরা শুদ্ধ আত্মা, স্ত্রীলোক অন্যভাবে স্পর্শ করেনি, বিষয়কর্ম করেনি

    আমি বুঝেছি, এর অর্থ এই যে— সময় না হলে, তীব্র বৈরাগ্য না এলে, ছাড়লে কষ্ট হবে। ঠাকুর যেমন নিজে বলেন— “ঘায়ে মামড়ে ঘা শুকোতে না শুকোতেই যদি তা ছিঁড়ে ফেলো, তবে রক্ত পড়ে, কষ্ট হয়। কিন্তু যখন ঘা শুকিয়ে যায়, তখন মামড়ে নিজেই খসে পড়ে।”

    সাধারণ লোকে, যাদের অন্তর্দৃষ্টি নেই, তারা বলে— “এখনও সংসার ত্যাগ করনি?” সদগুরু অহেতুক কৃপাসিন্ধু, প্রেমের সমুদ্র। জীবের কিছু মঙ্গল হয়— এই চেষ্টাই তিনি নিশিদিন করে চলেছেন।

    আর গিরিশের কি বিশ্বাস! দুদিন দর্শনের পরেই বলেছিলেন, “প্রভু, তুমি ঈশ্বর, মানুষদেহ ধারণ করে এসেছ আমার পরিত্রাণের জন্য।” গিরিশ ঠিক তো বলেছেন? ঈশ্বর মানুষদেহ ধারণ না করলে ঘরের লোকের মতো কে শিক্ষা দেবে? কে জানিয়ে দেবে ঈশ্বরই বস্তু, আর সব অবস্তু? কে ধরায় পতিত দুর্বল সন্তানকে হাত ধরে তুলবে? কে কামিনী-কাঞ্চনাসক্ত বাসনা-স্বভাবপ্রাপ্ত মানুষকে আবার পূর্ববৎ অমৃতের অধিকারী করবে? আর তিনি মানুষরূপে সঙ্গে সঙ্গে না বেড়ালে, তাঁর তদ্গত তন্তু আত্মা—যারা ঈশ্বর বই আর কিছু ভালোবাসে না—তারা কী করে দিন কাটাবেন?

    “পরিত্রাণায় সাধুনাং, বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম, ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবানি যুগে যুগে। কি ভালোবাসা! নরেন্দ্রর জন্য পাগল, নারায়ণের জন্য ক্রন্দন। বলতেন, “এরা ও অন্যান্য ছেলেরা—রাখাল, ভবনাথ, পূর্ণ, বাবু—মিথ্যে নয়, এরা সাক্ষাৎ নারায়ণ। আমার জন্য দেহধারণ করে এসেছে।” এই প্রেম তো মানুষের জ্ঞানের নয়, এ প্রেম ঈশ্বরপ্রেম।

    ছেলেরা শুদ্ধ আত্মা। স্ত্রীলোক অন্যভাবে স্পর্শ করেনি, বিষয়কর্ম করেনি। এদের লোভ, অহংকার, হিংসা ইত্যাদির স্ফূর্তি হয়নি। তাই ছেলেদের ভিতর ঈশ্বরের বেশি প্রকাশ। কিন্তু এ দৃষ্টি কার ছিল? ঠাকুরের। অন্তর্দৃষ্টি। সমস্ত দেখেছেন, দেখছেন। এ বিষয়ে সত্য, সরল, উদার, ঈশ্বরভক্ত। তাই এরূপ ভক্ত দেখলে—“এই সাক্ষাৎ নারায়ণ” বলে সেবা করেন। তাদের নাম, তাদের দেখিবার জন্য কাঁদেন। কলকাতায় ছুটে ছুটে যান।

  • Ramakrishna 438: সময় না হলে, তীব্র বৈরাগ্য না এলে, ছাড়লে কষ্ট হবে

    Ramakrishna 438: সময় না হলে, তীব্র বৈরাগ্য না এলে, ছাড়লে কষ্ট হবে

    আমার তাঁর বাক্যে ঈশ্বরকৃপায় বিশ্বাস হয়েছে। আমি বিশ্বাস করবো, অন্য যা করে করুক আমি এই দুর্লভ বিশ্বাস কেন ছাড়বো? বিচার থাক, জ্ঞানচর্চা করে কি একটা ফার্স্ট হতে হবে?

    গভীর রজনীর মধ্যে বাতায়নপথে চন্দ্রকিরণ আসিতেছে, আর ফার্স্ট নাকি? একাকী ঘরের মধ্যে হায়! কিছুই জানিতে পারিলাম না! সায়েন্স, ফিলোসফি—বৃথা অধ্যয়ন করিলাম! এই জীবন, নে ধিক!

    এই বলিয়া বিষের শিশি লইয়া আত্মহত্যা করিতে বসবেন না। এলাস্টারের মতো অজ্ঞানের বোঝা বইতে না পেরে শিলাখণ্ডের উপর মাথা রেখে মৃত্যুর অপেক্ষাও করিব না।

    আমার এসব ভয়ানক পণ্ডিতদের মতো এক ছটাক জ্ঞানে রহস্য ভেদ করতে যাবার প্রয়োজন নাই। বেশ কথা—গুরুবাক্যে বিশ্বাস।

    “বেশ কথা, গুরু বিশ্বাস। হে ভগবান, আমায় ওই বিশ্বাস দাও— আর মিছামিছি ঘুরিয়ে দিও না।
    যা হবার নয়, তা খুঁজতে যেও না। আর ঠাকুর যা শিখিয়েছেন, যেন তোমার পাণিপদে দেশশুদ্ধ ভক্তি হয়, অমলা ভক্তি। অহেতুক ভক্তি নয়।
    আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই। কৃপা করে এই আশীর্বাদ করো।”

    শ্রীরামকৃষ্ণের অদৃষ্ট-নির্ধারিত প্রেমের কথা ভাবতে ভাবতে, ‘মনি’ সেই তমসাচ্ছন্ন রাত্রিতে রাজপথ দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। মনে মনে ভাবছেন— কী ভালোবাসা! গিরিশকে ভালোবেসেছেন এমনভাবে, যে গিরিশ থিয়েটারে যাবেন, তবুও তাঁর বাড়িতে যেতে হবে।

    শুধু তাই নয়, ঠাকুর এমনও বলেননি যে— “সব ত্যাগ করো, আমার জন্য গৃহ-পরিজন, বিষয়-সম্পত্তি সব ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস অবলম্বন করো।”

    আমি বুঝেছি, এর অর্থ এই যে— সময় না হলে, তীব্র বৈরাগ্য না এলে, ছাড়লে কষ্ট হবে।
    ঠাকুর যেমন নিজে বলেন— “ঘায়ে মামড়ে ঘা শুকোতে না শুকোতেই যদি তা ছিঁড়ে ফেলো, তবে রক্ত পড়ে, কষ্ট হয়। কিন্তু যখন ঘা শুকিয়ে যায়, তখন মামড়ে নিজেই খসে পড়ে।”

    সাধারণ লোকে, যাদের অন্তর্দৃষ্টি নেই, তারা বলে— “এখনও সংসার ত্যাগ করনি?”
    সদগুরু অহেতুক কৃপাসিন্ধু, প্রেমের সমুদ্র। জীবের কিছু মঙ্গল হয়— এই চেষ্টাই তিনি নিশিদিন করে চলেছেন।

  • Ramakrishna 436: আমার এসব ভয়ানক পণ্ডিতদের মতো এক ছটাক জ্ঞানে রহস্য ভেদ করতে যাবার প্রয়োজন নাই

    Ramakrishna 436: আমার এসব ভয়ানক পণ্ডিতদের মতো এক ছটাক জ্ঞানে রহস্য ভেদ করতে যাবার প্রয়োজন নাই

    সত্যই কি ঈশ্বর মানুষদেহ ধারণ করে আসেন? অনন্তকে শান্ত হয়? বিচার তো অনেক হলো — কি বুঝলাম? বিচারের দ্বারা কিছুই বুঝলাম না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অতিব স্পষ্ট বললেন — “যতক্ষণ বিচার, ততক্ষণ বস্তু লাভ হয় নাই, ততক্ষণ ঈশ্বরকে পাওয়া যায় নাই।”

    তাও বটে। এই তো এক ছটাক বুদ্ধি — এর দ্বারা আর কী বুঝবো ঈশ্বরের কথা? তবে আবদার, বিশ্বাস কিরূপে হয়?

    ঠাকুর বললেন — “ঈশ্বর যদি দেখিয়ে দেন দপ করে, তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায়।”

    তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায় গ্যোতে মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন “লাইট, মোর লাইট!” তিনি যদি দপ করে আলো জ্বেলে দেখিয়ে দেন।

    যেমন প্যালেস্টাইনের মূর্খ ধীবরেরা যিশুকে অথবা শ্রীবাসাদি ভক্ত শ্রীগৌরাঙ্গকে পূর্ণাবতার দেখেছিলেন।

    যদি দপ করে তিনি না দেখান তাহলে উপায় কী? কেন যে কালে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন, “কথা শেখালে অবতার বিশ্বাস করব?” তিনিই শিখিয়েছেন—বিশ্বাস, বিশ্বাস আর বিশ্বাস।

    “তোমার এই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,
    এ সমুদ্রে আর কভু হবো নাকো পথহারা।”

    আমার তাঁর বাক্যে ঈশ্বরকৃপায় বিশ্বাস হয়েছে। আমি বিশ্বাস করবো, অন্য যা করে করুক আমি এই দুর্লভ বিশ্বাস কেন ছাড়বো? বিচার থাক, জ্ঞানচর্চা করে কি একটা ফার্স্ট হতে হবে?

    গভীর রজনীর মধ্যে বাতায়নপথে চন্দ্রকিরণ আসিতেছে, আর ফার্স্ট নাকি? একাকী ঘরের মধ্যে হায়! কিছুই জানিতে পারিলাম না! সায়েন্স, ফিলোসফি—বৃথা অধ্যয়ন করিলাম! এই জীবন, নে ধিক!

    এই বলিয়া বিষের শিশি লইয়া আত্মহত্যা করিতে বসবেন না। এলাস্টারের মতো অজ্ঞানের বোঝা বইতে না পেরে শিলাখণ্ডের উপর মাথা রেখে মৃত্যুর অপেক্ষাও করিব না।

    আমার এসব ভয়ানক পণ্ডিতদের মতো এক ছটাক জ্ঞানে রহস্য ভেদ করতে যাবার প্রয়োজন নাই। বেশ কথা—গুরুবাক্যে বিশ্বাস।

  • Ramakrishna 436: ঈশ্বর যদি দেখিয়ে দেন দপ করে, তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায়

    Ramakrishna 436: ঈশ্বর যদি দেখিয়ে দেন দপ করে, তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায়

    এইবার নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:

    “সব দুঃখ দূর করিলে দর্শন দিয়ে প্রাণ সপ্তলোক ভুলে শখ তোমারে পাইয়ে কোথায় আমি প্রতিদিন হীন।”

    গান শুনিতে শুনিতে শ্রী রামকৃষ্ণের বহির্জগৎ ভুল হইয়া আসিতেছে। আবার নিমীলিত নেত্র, স্পন্দনহীন দেহ — সমাধিস্থ।

    সমাধি ভঙ্গের পর বলিতেছেন, “আমাকে কে লইয়া যাবে? বালক যেমন সঙ্গী না দেখিলে অন্ধকার দেখে, সেই রূপ। অনেক রাত হইয়াছে। ফাল্গুন কৃষ্ণ দশমী, অন্ধকার রাত্রি। ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়ি যাইবেন। গাড়িতে উঠিবেন। ভক্তেরা গাড়ির কাছে দাঁড়াইয়া। তিনি উঠিতেছেন, অনেক সন্তর্পণে তাহাকে উঠানো হইতেছে। এখনো গরগর মাতোয়ারা। গাড়ি চলিয়া গেল। ভক্তেরা যে যার বাড়ি যাইতেছেন।”

    মস্তকের উপর তারকা-মণ্ডিত নৈশ গগন, হৃদয়পটে অদ্ভুত শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি।
    স্মৃতিমধ্যে ভক্তের মজলিস, সুখস্বপ্নের ন্যায় নয়নপথে সেই প্রেমের হাট।
    কলিকাতার রাজপথে অভিমুখে ভক্তেরা যাইতেছেন,
    কেহ সরস বসন্তে নীল সেবন করিতে করিতে, সেই গানটি আবার গাইতে গাইতে যাচ্ছেন —
    “সব দুঃখ দূর করিলে দর্শন দিয়ে, মহিলা প্রাণমণি” ভাবতে ভাবতে যাচ্ছেন।

    সত্যই কি ঈশ্বর মানুষদেহ ধারণ করে আসেন?
    অনন্তকে শান্ত হয়?
    বিচার তো অনেক হলো — কি বুঝলাম?
    বিচারের দ্বারা কিছুই বুঝলাম না।
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অতিব স্পষ্ট বললেন —
    “যতক্ষণ বিচার, ততক্ষণ বস্তু লাভ হয় নাই, ততক্ষণ ঈশ্বরকে পাওয়া যায় নাই।”

    তাও বটে।
    এই তো এক ছটাক বুদ্ধি — এর দ্বারা আর কী বুঝবো ঈশ্বরের কথা?
    তবে আবদার, বিশ্বাস কিরূপে হয়?

    ঠাকুর বললেন —
    “ঈশ্বর যদি দেখিয়ে দেন দপ করে, তাহলে একদণ্ডেই বোঝা যায়।”

  • Ramakrishna 435: ওই একটা আলো আসছে, দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু কোন দিক দিয়ে আলোটা আসছে, এখনও বুঝতে পারছি না

    Ramakrishna 435: ওই একটা আলো আসছে, দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু কোন দিক দিয়ে আলোটা আসছে, এখনও বুঝতে পারছি না

    দেখিতে দেখিতে আরও ভাবান্তর হইতেছেন। এই, আবার নরেন্দ্রের কাছে হাতজোড় করে কী বলছেন? বলছেন, “একটা গান গা, তাহলে ভালো হব, উঠতে পারব। কেমন করে? গোরা প্রেমে গরগর মাতোয়ারা, নিতাই আমার!”

    এতক্ষণ আবার অবাক চিত্রপট্টলিকার মতো চুপ করে রহিয়াছেন। আবার ভাবে মাতোয়ারা হয়ে বলছেন, “দেখিস রায়, যমুনায় যে পড়ে যাবি!” কৃষ্ণ প্রেমে উন্মাদিনী, আবার ভাবে বিভোর বলিতেছেন, “সখি, সে বন কত দূর!”

    এখন জগৎ ভুল হয়েছে, কাহাকেও মনে নাই। নরেন্দ্র সম্মুখে, কিন্তু নরেন্দ্রকে আর মনে নাই। কোথায় বসে আছেন কিছুই হুঁশ নাই। এখন যেন মন-প্রাণ ঈশ্বরে গত হয়েছে।

    গোড়া প্রেমে গরগর মাতোয়ারা — এই কথা বলিতে বলিতে হঠাৎ হুংকার দিয়া দণ্ডায়মান, আবার বসিতেছেন। বসিয়া বলিতেছেন, “ওই একটা আলো আসছে, দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কোন দিক দিয়ে আলোটা আসছে, এখনও বুঝতে পারছি না।”

    এইবার নরেন্দ্র গান গাহিতেছেন:

    “সব দুঃখ দূর করিলে
    দর্শন দিয়ে প্রাণ
    সপ্তলোক ভুলে শখ তোমারে পাইয়ে
    কোথায় আমি প্রতিদিন হীন।”

    গান শুনিতে শুনিতে শ্রী রামকৃষ্ণের বহির্জগৎ ভুল হইয়া আসিতেছে। আবার নিমীলিত নেত্র, স্পন্দনহীন দেহ — সমাধিস্থ।

    সমাধি ভঙ্গের পর বলিতেছেন, “আমাকে কে লইয়া যাবে? বালক যেমন সঙ্গী না দেখিলে অন্ধকার দেখে, সেই রূপ। অনেক রাত হইয়াছে। ফাল্গুন কৃষ্ণ দশমী, অন্ধকার রাত্রি। ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়ি যাইবেন। গাড়িতে উঠিবেন। ভক্তেরা গাড়ির কাছে দাঁড়াইয়া। তিনি উঠিতেছেন, অনেক সন্তর্পণে তাহাকে উঠানো হইতেছে। এখনো গরগর মাতোয়ারা। গাড়ি চলিয়া গেল। ভক্তেরা যে যার বাড়ি যাইতেছেন।”

  • Ramakrishna 434: এরই নাম বুঝি অর্ধবাহ্যদশা, যাহা শ্রীগৌরাঙ্গের হইয়াছিল

    Ramakrishna 434: এরই নাম বুঝি অর্ধবাহ্যদশা, যাহা শ্রীগৌরাঙ্গের হইয়াছিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “নিমন্ত্রণবাড়ির শব্দ কতক্ষণ শোনা যায়? যতক্ষণ লোকে খেতে না বসে যায়। লুচি-তরকারি পড়লে, ওমনি বারোয়ানা শব্দ কমে যায়, সকলের হাস্য। অন্য খাবার পড়লে আরও কমতে থাকে। দই পাতে পাতে পড়লে কেবল চুপচাপ। ক্রমে খাওয়া হয়ে গেলেই নিদ্রা। ঈশ্বরকে যতক্ষণ লাভ হবে, ততই বিচার কমবে। তাকে লাভ হলে আর শব্দ, বিচার থাকে না। তখন নিদ্রা, সমাধি।”

    এই বলিয়া নরেন্দ্রর গায়ে হাত বুলাইয়া, মুখে হাত দিয়া আদর করিতেছেন ও বলিতেছেন— “হরি ওম, হরি ওম, হরি হরি ওম…”

    কেন এই রূপ করিতেছেন, না বলিতেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কি নরেন্দ্রর মধ্যে সাক্ষাৎ নারায়ণ দর্শন করিতেছেন? এরই নাম কি মানুষের ঈশ্বরদর্শন?

    এরই নাম বুঝি অর্ধবাহ্যদশা, যাহা শ্রীগৌরাঙ্গের হইয়াছিল। এখনো নরেন্দ্রের পায়ের উপর হাত, যেন ছল করিয়া নারায়ণের পা টিপিতেছেন, আবার গায়ে হাত বুলাইতেছেন। এত গা-টেপা, পা-টেপা কেন? একে নারায়ণের সেবা করছেন না, শক্তি সঞ্চার করছেন?

    দেখিতে দেখিতে আরও ভাবান্তর হইতেছেন। এই, আবার নরেন্দ্রের কাছে হাতজোড় করে কী বলছেন? বলছেন, “একটা গান গা, তাহলে ভালো হব, উঠতে পারব। কেমন করে? গোরা প্রেমে গরগর মাতোয়ারা, নিতাই আমার!”

    এতক্ষণ আবার অবাক চিত্রপট্টলিকার মতো চুপ করে রহিয়াছেন। আবার ভাবে মাতোয়ারা হয়ে বলছেন, “দেখিস রায়, যমুনায় যে পড়ে যাবি!” কৃষ্ণ প্রেমে উন্মাদিনী, আবার ভাবে বিভোর বলিতেছেন, “সখি, সে বন কত দূর!”

    এখন জগৎ ভুল হয়েছে, কাহাকেও মনে নাই। নরেন্দ্র সম্মুখে, কিন্তু নরেন্দ্রকে আর মনে নাই। কোথায় বসে আছেন কিছুই হুঁশ নাই। এখন যেন মন-প্রাণ ঈশ্বরে গত হয়েছে।

  • Ramakrishna 433: নিমন্ত্রণবাড়ির শব্দ কতক্ষণ শোনা যায়? যতক্ষণ লোকে খেতে না বসে যায়

    Ramakrishna 433: নিমন্ত্রণবাড়ির শব্দ কতক্ষণ শোনা যায়? যতক্ষণ লোকে খেতে না বসে যায়

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “না, এদিক-ওদিক—দুই দিক রাখতে হবে। জনক রাজা এদিক-ওদিক দু’দিন দেখে খেয়েছিল দুধের বাটি। সকলের হাস্য।”

    গিরিশ: “থিয়েটারগুলো ছেলেদেরই ছেড়ে দিই, মনে করছি।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “নানা, ও বেশ আছে। অনেকের উপকার হচ্ছে।”

    নরেন্দ্র (মৃদুস্বরে): “এই তো ঈশ্বর বলছে, অবতার বলছে, আবার থিয়েটার টানে!”

    সমাধি মন্দিরে – গড়গড় মাতোয়ারা শ্রীরামকৃষ্ণ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রকে কাছে বসাইয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন। হঠাৎ তাহার সন্নিকটে আরো শরিয়া গিয়া বসিলেন।
    নরেন্দ্র অবতার মানেন না, তা কী এসে যায়? ঠাকুরের ভালবাসা যেন আরও উথলিয়া পড়িল।
    “আছে আছে”— গায়ে হাত দিয়া, নরেন্দ্রের প্রতি কহিতেছেন—
    “আমরাও তোর মানে আছি।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “বিচারলাভ পর্যন্ত নরেন্দ্রর প্রতি যতক্ষণ বিচার, ততক্ষণ তাকে পাই নাই।
    তোমরা বিচার করছিলে, আমার ভালো লাগে নাই।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “নিমন্ত্রণবাড়ির শব্দ কতক্ষণ শোনা যায়? যতক্ষণ লোকে খেতে না বসে যায়।
    লুচি-তরকারি পড়লে, ওমনি বারোয়ানা শব্দ কমে যায়, সকলের হাস্য।
    অন্য খাবার পড়লে আরও কমতে থাকে।
    দই পাতে পাতে পড়লে কেবল চুপচাপ।
    ক্রমে খাওয়া হয়ে গেলেই নিদ্রা।
    ঈশ্বরকে যতক্ষণ লাভ হবে, ততই বিচার কমবে।
    তাকে লাভ হলে আর শব্দ, বিচার থাকে না। তখন নিদ্রা, সমাধি।”

    এই বলিয়া নরেন্দ্রর গায়ে হাত বুলাইয়া, মুখে হাত দিয়া আদর করিতেছেন ও বলিতেছেন—
    “হরি ওম, হরি ওম, হরি হরি ওম…”

    কেন এই রূপ করিতেছেন, না বলিতেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ।
    কি নরেন্দ্রর মধ্যে সাক্ষাৎ নারায়ণ দর্শন করিতেছেন?
    এরই নাম কি মানুষের ঈশ্বরদর্শন?

    কি আশ্চর্য!
    দেখিতে দেখিতে ঠাকুরের সংজ্ঞা যাইতেছে।
    ওই দেখো, বহির্জগতের ইয়া যাইতেছে…

  • Ramakrishna 432: শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রকে কাছে বসাইয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন

    Ramakrishna 432: শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রকে কাছে বসাইয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন

    ঠাকুর নরেন্দ্রকে কাছে ডাকিয়া বসাইলেন ও কুশল প্রশ্ন ও কত আদর করিতেছেন। নরেন্দ্র (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) কই, কালী-র ধ্যান তিন-চারদিন করলুম, কিছুই তো হল না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “ক্রমে হবে। কালী আর কেউ নয়। যিনি ব্রহ্ম, তিনি কালী। কালী আদ্যাশক্তি। যখন নিষ্ক্রিয়, তখন ব্রহ্ম বলি, যখন সৃষ্টি-প্রলয় করেন, তখন শক্তি বলি। যাকে তুমি ব্রহ্ম বলছ, তাকেই কালী বলছি। ব্রহ্ম আর কালী অভেদ। যেমন অগ্নি আর দাহিকাশক্তি—অগ্নি ভাবলেই দাহিকাশক্তি ভাবতে হয়। কালী মানলেই ব্রহ্ম মানতে হবে, আবার ব্রহ্ম মানলে কালী মানতে হবে। ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ—ওকেই শক্তি, ওকেই কালী আমি বলি।”

    এদিকে রাত হয়ে গেছে। গিরিশ হরিপদকে বলিতেছেন— “ভাই, একখানা গাড়ি যদি ডেকে দিস, থিয়েটারে যেতে হবে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “দেখিস যেন আনিস।”

    হরিপদ সহাস্যে — “আমি আনতে যাচ্ছি, আর আনবো না।”

    ঈশ্বর লাভ ও কর্ম – রাম ও কাম

    গিরিশ: “শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি, আপনাকে ছেড়ে আবার থিয়েটারে যেতে হবে?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “না, এদিক-ওদিক—দুই দিক রাখতে হবে। জনক রাজা এদিক-ওদিক দু’দিন দেখে খেয়েছিল দুধের বাটি। সকলের হাস্য।”

    গিরিশ: “থিয়েটারগুলো ছেলেদেরই ছেড়ে দিই, মনে করছি।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “নানা, ও বেশ আছে। অনেকের উপকার হচ্ছে।”

    নরেন্দ্র (মৃদুস্বরে): “এই তো ঈশ্বর বলছে, অবতার বলছে, আবার থিয়েটার টানে!”

    সমাধি মন্দিরে – গড়গড় মাতোয়ারা শ্রীরামকৃষ্ণ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রকে কাছে বসাইয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন। হঠাৎ তাহার সন্নিকটে আরো শরিয়া গিয়া বসিলেন।
    নরেন্দ্র অবতার মানেন না, তা কী এসে যায়? ঠাকুরের ভালবাসা যেন আরও উথলিয়া পড়িল।
    “আছে আছে”— গায়ে হাত দিয়া, নরেন্দ্রের প্রতি কহিতেছেন—
    “আমরাও তোর মানে আছি।”

  • Ramakrishna 431: যিনি ব্রহ্ম, তিনি কালী, কালী আদ্যাশক্তি

    Ramakrishna 431: যিনি ব্রহ্ম, তিনি কালী, কালী আদ্যাশক্তি

    প্রত্যক্ষ নরেন্দ্রকে শিক্ষা কালীই ব্রহ্ম

    চৈতন্য লাভ করলে তবে চৈতন্যকে জানতে পারা যায়। বিচারান্তে ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখেছি, বিচার করে একরকম জানা যায় তাঁকে, ধ্যান করে একরকম জানা যায়। আবার তিনি যখন দেখিয়ে দেবেন—এর নাম অবতার। তিনি যদি তাঁর মানব-লীলা দেখিয়ে দেন, তাহলে আর বিচার করতে হয় না, কাউকে বুঝিয়ে দিতে হয় না। কীরকম জানো? যেমন অন্ধকারের ভিতর দেশলাই ঘষতে ঘষতে দপ করে আলো হয়, সেইরকম দপ করে আলো যদি তিনি দেন, তাহলে সব সন্দেহ মিটে যায়। এরূপ বিচার করে কি তাঁকে জানা যায়?”

    ঠাকুর নরেন্দ্রকে কাছে ডাকিয়া বসাইলেন ও কুশল প্রশ্ন ও কত আদর করিতেছেন।
    নরেন্দ্র (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) কই, কালী-র ধ্যান তিন-চারদিন করলুম, কিছুই তো হল না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “ক্রমে হবে। কালী আর কেউ নয়। যিনি ব্রহ্ম, তিনি কালী। কালী আদ্যাশক্তি। যখন নিষ্ক্রিয়, তখন ব্রহ্ম বলি, যখন সৃষ্টি-প্রলয় করেন, তখন শক্তি বলি। যাকে তুমি ব্রহ্ম বলছ, তাকেই কালী বলছি। ব্রহ্ম আর কালী অভেদ। যেমন অগ্নি আর দাহিকাশক্তি—অগ্নি ভাবলেই দাহিকাশক্তি ভাবতে হয়। কালী মানলেই ব্রহ্ম মানতে হবে, আবার ব্রহ্ম মানলে কালী মানতে হবে। ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ—ওকেই শক্তি, ওকেই কালী আমি বলি।”

    এদিকে রাত হয়ে গেছে।
    গিরিশ হরিপদকে বলিতেছেন— “ভাই, একখানা গাড়ি যদি ডেকে দিস, থিয়েটারে যেতে হবে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ — “দেখিস যেন আনিস।”

    হরিপদ সহাস্যে — “আমি আনতে যাচ্ছি, আর আনবো না।”

LinkedIn
Share