Tag: ramakrishna

ramakrishna

  • Ramakrishna 22: “গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়, বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে”

    Ramakrishna 22: “গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়, বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    সংসারেও ঈশ্বরলাভ হয়–সকলেরই মুক্তি হবে

    প্রতিবেশী—মহাশয়, সংসারে থেকে কি ভগবানকে পাওয়া যায়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—অবশ্য পাওয়া যায়। তবে যা বললুম, সাধুসঙ্গ আর সর্বদা প্রার্থনা করতে হয়। তাঁর কাছে কাঁদতে হয়। মনের ময়লাগুলো ধুয়ে গেলে তাঁর দর্শন হয়। মনটি যেন মাটি-মাখানো লোহার ছুঁচ—ঈশ্বর চুম্বক পাথর, মাটি না গেলে চুম্বক পাথরের সঙ্গে যোগ হয় না। কাঁদতে কাঁদতে ছুঁচের মাটি ধুয়ে যায়, ছুঁচের মাটি অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, পাপবুদ্ধি, বিষয়বুদ্ধি। মাটি ধুয়ে গেলেই ছুঁচকে চুম্বক পাথরে টেনে লবে—অর্থাৎ ঈশ্বরদর্শন হবে। চিত্তশুদ্ধি হলে তবে তাঁকে লাভ হয়। জ্বর হয়েছে, দেহেতে রস অনেক রয়েছে তাতে কুইনাইনে কি কাজ হবে। সংসারে হবে না কেন? ওই সাধুসঙ্গ, কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা, মাঝে মাঝে নির্জনে বাস, একটু বেড়া না দিলে ফুটপাথের চারাগাছ, ছাগল গরুতে খেয়ে ফেলে।

    প্রতিবেশী—যারা সংসারে আছে, তাহলে তাদেরও হবে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সকলেরই মুক্তি হবে। তবে গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়। বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে। মুক্তি অনেক দেরিতে হয়। হয়তো এ-জন্মেও হল না, আবার হয়তো অনেক জন্মের পর হল। জনকাদি সংসারেও কর্ম করেছিলেন। ঈশ্বরকে মাথায় রেখে কাজ করতেন। নৃত্যকী যেমন মাথায় বাসন করে নাচে। আর পশ্চিমের মেয়েদের দেখ নাই? মাথায় জলের ঘড়া, হাসতে হাসতে কথা কইতে কইতে যাচ্ছে।

    প্রতিবেশী—গুরুর উপদেশ বললেন। গুরু কেমন করে পাব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—যে-সে লোক গুরু হতে পারে না। বাহাদুরী কাঠ নিজেও ভেসে চলে যায়, অনেক জীবজন্তুও চড়ে যেতে পারে। হাবাতে কাঠের উপর চড়লে, কাঠও ডুবে যায়, যে চড়ে সেও ডুবে যায়। তাই ঈশ্বর যুগে যুগে লোকশিক্ষার জন্য নিজে গুরুরূপে অবতীর্ণ হন। সচ্চিদানন্দই গুরু।

    জ্ঞান কাকে বলে; আর আমি কে? ঈশ্বরই কর্তা আর সব অকর্তা—এর নাম জ্ঞান। আমি অকর্তা। তাঁর হাতের যন্ত্র। তাই আমি বলি, মা, তুমি যন্ত্রী, আমি যন্ত্র, তুমি ঘরণী, আমি ঘর, আমি ইঞ্জিনিয়র, যেমন চালাও তেমনি চলি; যেমন করাও তেমনি করি; যেমন বলাও তেমনি বলি; নাহং নাহং তুঁহু তুঁহু।

    আরও পড়ুনঃ “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 21: “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    Ramakrishna 21: “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    পাপীর দায়িত্ব কর্মফল

    পরিবেশী—তবে পাপ করলে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরের নিয়ম যে পাপ করলে তার ফল পেতে হবে। লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না? সেজোবাবুর বয়সকালে অনেকরকম করেছিল, তাই মৃত্যুর সময় নানারকম অসুখ হল। কম বয়সে এত টের পাওয়া যায় না। কালীবাড়িতে ভোগ রাঁধবার অনেক সিঁদুরী কাঠ থাকে। ভিজে কাঠ প্রথমটা বেশ জ্বলে যায়, তখন ভিতরে যে জল আছে টের পাওয়া যায় না। কাঠটা পোড়া শেষ হলে যত জল পেছনে ঠেলে আসে ও ফ্যাঁচফোচ করে উনুন নিভিয়ে দেয়। তাই কাম, ক্রোধ, লোভ—এ-সব সাবধান হতে হয়। দেখ না, হনুমান ক্রোধ করে লঙ্কা দগ্ধ করেছিল, শেষে মনে পড়ল, অশোকবনে সীতা আছেন, তখন ছটফট করতে লাগল, পাছে সীতার কিছু হয়।

    প্রতিবেশী—তবে ঈশ্বর দুষ্টু লোক করলেন কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁর ইচ্ছা তাঁর লীলা। তাঁর মায়াতে বিদ্যাও আছে। অন্ধকারেরও প্রয়োজন আছে, অন্ধকার থাকলে আলোর আরও মহিমা প্রকাশ হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, খারাপ জিনিস বটে, তবে তিনি দিয়েছেন কেন? মহৎ লোক তয়ের করবেন বলে। ইন্দ্রিয় জয় করলে মহৎ হয়। জিতিন্দ্রিয় কি না করতে পারে? ঈশ্বরলাভ পর্যন্ত তাঁর কৃপায় করতে পারে। আবার অন্যদিকে দেখ, কাম থেকে তাঁর সৃষ্টি-লীলা চলছে।

    দুষ্টু লোকেরও দরকার আছে। একটি তালুকের প্রজারা বড়ই দুর্দান্ত হয়েছিল। তখন গোলক চৌধুরীকে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তার নামে প্রজারা কাঁপতে লাগল—এত কঠোর শাসন। সবই দরকার, সীতা বললেন, রাম! অযোধ্যায় সব অট্টালিকা হত তো বেশ হত, অনেক বাড়ি দেখছি ভাঙা, পুরানো। রাম বললেন, সীতা! সব বাড়ি সুন্দর থাকলে মিস্ত্রীরা কি করবে? (সকলের হাস্য) ঈশ্বর (Ramakrishna) সবরকম করেছেন—ভাল গাছ, বিষ গাছ, আবার আগাছাও করেছেন। জানোয়ারদের ভিতর ভাল-মন্দ সব আছে—বাঘ, সিংহ, সাপ সব আছে।

    আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 20: “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

    Ramakrishna 20: “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”

     

    ভক্ত—সাধুসঙ্গে কি উপকার হয়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরে আনুরাগ হয়। তাঁর উপর ভালবাসা হয়। ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না। সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়। যেমন বাড়িতে কারুর অসুখ হলে সর্বদাই মন ব্যাকুল হইয়ে থাকে, কিসে রোগী ভাল হয়। আবার কারুর যদি কর্ম যায়, সে ব্যক্তি যেমন অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, ব্যাকুল হতে হয়, সেইরূপ। যদি কোন অফিসে বলে কর্ম খালি নেই, আবার তার পরদিন এসে জিজ্ঞেস করে, আজ কি কোন কর্ম খালি হয়েছে?

    আর একটি উপায় আছে—ব্যাকুল হয়েছে প্রার্থনা। তিনি যে আপনার লোক, তাঁকে বলতে হয়, তুমি কেমন দেখা দাও—দেখা দিতেই হবে—তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ কেন?  শিখরা বলেছিল, ঈশ্বর (Ramakrishna) দয়াময়, আমি তাঁদের বলেছিলাম, দয়াময় কেন বলব? তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমাদের মঙ্গল হয়, তা যদি করেন সে কি আর আশ্চর্য! মা-বাপ ছেলেকে পালন করবে, সে আবার দয়া কি? সে তো করতেই হবে, তাই তাঁকে জোর করে প্রার্থনা করতে হয়। তিনি যে আপনার বাপ! ছেলে যদি খাওয়া ত্যাগ করে, বাপ-মা তিন বৎসর আগেই হিস্যা ফেলে দেয়। আবার যখন ছেলে পয়সা চায়, আর চায়, আর পুনঃপুনঃ বলে, ‘মা তোর দুটি পায়ে পড়ি, আমাকে দুটি পয়সা দে, তখন মা ব্যাজার হয়ে তার ব্যাকুলতা দেখে পয়সা ফেলে দেয়।

    সাধুসঙ্গ করলে আর একটি উপকার হয়। সদসৎ বিচার। সত—নিত্য পদার্থ অর্থাৎ ঈশ্বর। অসৎ অর্থাৎ অনিত্য। অসৎপথে মন গেলেই বিচার করতে হয়। হাতি পরের কলাগাছ খেতে শুঁড় বাড়ালে সেই সময় মাহুত ডাঙস মারে।

    প্রতিবেশী—মহাশয়, পাপবুদ্ধি কেন হয়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁর জগতে সকলরকম আছে। সাধু লোকও তিনি করেছেন, দুষ্ট লোকও তিনি করেছেন, সদ্‌বুদ্ধি তিনিই দেন, অসদ্‌বুদ্ধিও তিনিই দেন।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 19: “ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না”

    Ramakrishna 19: “ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না”

     শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরে—প্রাণকৃষ্ণের বাটিতে

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কলিকাতায় আজ শুভাগমন করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত প্রাণকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের শ্যামপুকুর বাটির দ্বিতলায় বৈঠকখানা ঘরে ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। এইমাত্র ভক্তসঙ্গে বসিয়া প্রসাদ পাইয়াছেন। আজ ২ রা এপ্রিল, রবিবার, ১৮৮২ খ্রীঃ, ২১ শে চৈত্র, ১২৮৮, শুক্লা, চতুর্দশী; এখন বেলা ১/২ টা হইবে। কাপ্তেন ওই পাড়াতেই থাকেন; ঠাকুরের ইচ্ছা এ-বাড়িতে বিশ্রামের পর কাপ্তেনের বাড়ি হইয়া, তাহাকে দর্শন করিয়া কমলকুটির নামক বাড়িতে শ্রীযুক্ত কেশব সেনকে দর্শন করিতে যাইবেন। প্রাণকৃষ্ণের বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন; রাম, মনোহর, কেদার, সুরেন্দ্র, গিরীন্দ্র (সুরেন্দ্রর ভাতা), রাখাল, বলরাম, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তেরা উপস্থিত।

    পাড়ার বাবুরা ও অন্যান্য নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও আছেন, ঠাকুর কি বলেন—শুনিবার জন্য সকলেই উৎসুক হইয়া আছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) বলিতেছেন, ঈশ্বর ও তাঁহার ঐশ্বর্য। এই জগৎ তাঁর ঐশ্বর্য।

    কিন্তু ঐশ্বর্য দেখেই সকলে ভুলে যায়, যাঁর ঐশ্বর্য তাঁকে খোঁজে না। কামিনী-কাঞ্চন ভোগ করতে সকলে যায়, কিন্তু দুঃখ, অশান্তিই বেশি। সংসার যেন বিশালাক্ষীর দ, নৌকা দহে একবার পড়লে আর রক্ষা নাই। সেকুল কাঁটার মতো এক ছাড়ে তো আর একটি জড়ায়। গোলোকধান্দায় একবার ঢুকলে বেরুনো মুশকিল। মানুষ যেন ঝলসা পোড়া হয়ে যায়।

    একজন ভক্ত—এখন উপায়?

    উপায়—সাধুসঙ্গ আর প্রার্থনা

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—উপায়ঃ সাধুসঙ্গ আর প্রার্থনা।

    বৈদ্যের কাছে না গেলে রোগ ভাল হয় না। সাধুসঙ্গ একদিন করলে হয় না, সর্বদাই দরকার, রোগ লেগেই আছে। আবার বৈদ্যের কাছে না থাকলে নাড়ীজ্ঞান হয় না, সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে হয়। তবে কোনটি কফের নাড়ী, কোনটি পিত্তের নাড়ী বোঝা যায়।

    আরও পড়ুনঃ “ভজানন্দ ব্রহ্মানন্দ, এই আনন্দই সুরা! মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরে প্রেম”

    আরও পড়ুনঃ “খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 18: “ভজানন্দ ব্রহ্মানন্দ, এই আনন্দই সুরা! মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরে প্রেম”

    Ramakrishna 18: “ভজানন্দ ব্রহ্মানন্দ, এই আনন্দই সুরা! মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরে প্রেম”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ভক্তসঙ্গে ভজনানন্দে—রাখালপ্রেম-প্রেমের সুরা

    আর এক দিন ঠাকুর নিজের ঘরে ছোট খাটটির উপর বসিয়া আছেন, আনন্দময় মূর্তি—হাস্যবদন। শ্রীযুক্ত কালীকৃষ্ণের (Ramakrishna) সঙ্গে মাস্টার আসিয়া উপস্থিত।

    কালীকৃষ্ণ জানিতেন না, তাঁহাকে তাঁহার বন্ধু কোথায় লইয়া আসিতেছেন। বন্ধু বলিয়াছিলেন, শুঁড়ির দোকানে যাবে তো আমার সঙ্গে এস; সেখানে এক জালা মদ আছে। মাস্টার আসিয়া বন্ধুকে যাহা বলিয়াছেন, প্রনামান্তর ঠাকুরকে সমস্ত নিবেদন করিলেন। ঠাকুরও হাসিতে লাগিলেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) বলিলেন, ভজানন্দ ব্রহ্মানন্দ, এই আনন্দই সুরা। মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরে প্রেম, ঈশ্বরকে ভালোবাসা। ভক্তিই সার, জ্ঞানবিচার করে ঈশ্বরকে জানা বড়ই কঠিন। এই বলিয়া ঠাকুর গান গাহিতে লাগিলেনঃ

    কে জানে কালী কেমন, ষড় দর্শনে না পায় দরশন

    আত্মারামের আত্মা কালী প্রমাণ প্রণবের মতন,

    সে যে ঘটে ঘটে বিরাজ করে ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা যেমন।

    কালীর উদরে ব্রহ্মাণ্ড ভাণ্ড প্রকাণ্ড তা বুঝ কেমন!

    মূলাধারে সহস্রারে সদা যোগী করে মনন

    কালী পদ্মবনে হংস-সনে, হংসীরূপে করে রমণ।

    প্রসাদ ভাষে, লোকে হাসে, সন্তরণে সিন্ধু-তরণ,

    আমার মন বুঝেছে, প্রাণ বুঝে না, ধরবে শশী হয়ে বামন।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) আবার বলিতেছেন, ঈশ্বরকে ভালবাসা—এটিই জীবনের উদ্দেশ্য; যেমন বৃন্দাবনে গোপ-গোপীরা, রাখালরা শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসত। যখন শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গেলেন, রাখালেরা তাঁর বিরহে কেঁদে কেঁদে বেড়াত।

    এই বলিয়া ঠাকুর উর্ধবদৃষ্টি হইয়া গান গাহিতেছেনঃ

    দেখে এলাম এক নবীন রাখাল,

    নবীন তরুর ডাল ধরে,

    নবীন বৎস কোলে করে

    বলে, কোথা রে ভাই কানাই।

    আবার, কা বই কানাই বেরোয় না রে,

    বলে কোথা রে ভাই

    আর নয়ন-জলে ভেসে যায়।

    ঠাকুরের প্রেমমাখা গান শুনিয়া মাস্টারের চক্ষুতে জল আসিয়াছে। 

    আরও পড়ুনঃ “খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 17: “খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না”

    Ramakrishna 17: “খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে প্রেমানন্দে নৃত্য

    রাত্রি ৮টা-৯টা হইবে। দোলযাত্রা। রাম, মনোমোহন রাখল, নিত্যগোপাল প্রভৃতি ভক্তগণ তাঁহাকে ঘেরিয়া রহিয়াছেন। সকলেই হরিনাম সংকীর্তন করিতে করিতে মত্ত হইয়াছেন। কয়েকটি ভক্তের ভাবাবস্থা হইয়াছে। নিত্যগোপালের ভাবাবস্থায় বক্ষঃস্থল রক্তিমবর্ণ হইয়াছে। সকলে উপবেশন করিলে মাস্টার ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন। দেখিলেন রাখাল, শুইয়া আছেন, ভাববিষ্ট ও বাহ্যজ্ঞানশূন্য। ঠাকুর তাঁহার বুকে হাত দিয়া শান্ত হও শান্ত হও বলিতেছেন। রাখালের এই প্রথম ভাবাবস্থা। তিনি কলিকাতার বাসাতে পিত্রালয়ে থাকেন, মাঝে মাঝে ঠাকুরকে দর্শন করিতে যান। এই সময়ে শ্যামপুকুর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্কুলে কয়েকদিন পড়িয়াছিলেন।

    ঠাকুর মাস্টারকে দক্ষিণেশ্বরে বলিয়াছিলেন, “আমি কলিকাতায় বলরামের বাড়িতে যাব, তুমি আসিও। তাই তিনি তাঁহাকে দর্শন করিতে আসিয়াছেন। (২৮ শে ফাল্গুন, ১২৮৮, কৃষ্ণা ষষ্ঠী), ১১ই মার্চ, শনিবার ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ, শ্রীযুক্ত বলরাম ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়াছেন।

    এইবার ভক্তেরা বারান্দায় বসিয়া প্রসাদ পাইতেছেন। দাসের ন্যায় বলরাম দাঁড়াইয়া আছেন, দেখিলে বোধ হয় না, তিনি এই বাড়ির কর্তা।

    মাস্টার এই নূতন আসিতেছেন। এখনও ভক্তদের সঙ্গে আলাপ হয় নাই। কেবল দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ হইয়াছে।

    সর্বধর্ম-সমন্বয়

    কয়েকদিন পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) দক্ষিণেশ্বরে শিবমন্দিরে সিঁড়ির উপর ভাবাবিষ্ট হইয়া বসিয়া আছেন।

    কিয়ৎক্ষণ পূর্বে নিজের ঘরে মেঝের উপর বিছানা পাতা—তাহাতে বিশ্রাম করিতেছিলেন। এখনও ঠাকুরের সেবার জন্য কাছে কেহ থাকেন না। হৃদয় যাওয়ার পর ঠাকুরের কষ্ট হইতেছে। কলিকাতা হইতে মাস্টার আসিলে তিনি তাঁহার সঙ্গে কথা কহিতে, শ্রীশ্রীরাধাকান্তের মন্দিরের সম্মুখস্থ শিবমন্দিরের সিঁড়িতে আসিয়া বসিয়াছিলেন। কিন্তু মন্দির দৃষ্টে হঠাৎ ভাবাবিষ্ট হইয়াছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) জগ্নাতার সঙ্গে কথা কহিতেছেন। বলিতেছেন, মা সব্বাই বলছে, আমার ঘড়ি ঠিক চলছে। খ্রিষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী, হিন্দু, মুসলমান—সকলেই বলে, আমার ধর্ম ঠিক, কিন্তু মা, কারুর ঘড়ি তো ঠিক চলছে না। তোমাকে ঠিক কে বুঝতে পারবে। তবে ব্যাকুল হয়ে ডাকলে তোমার কৃপা হলে সব পথ দিয়ে তোমার কাছে পৌঁছানো যায়। মা খ্রিষ্টানরা গির্জাতে তোমাকে কি করে ডাকে, একবার দেখিও! কিন্তু মা ভিতরে গেলে লোকে কি বলবে? যদি কিছু হাঙ্গামা হয়? আবার কালীঘরে যদি ঢুকতে না দেয়? তবে গির্জার দোরগোড়া থেকে দেখিও।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 16: “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

    Ramakrishna 16: “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির..”

    নবম পরিচ্ছেদ

    চতুর্থ দর্শন

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) আনন্দ করিতেছিলেন ও মাস্টারকে এক-একবার দেখিতেছেন। দেখিলেন, তিনি অবাক হইয়া বসিয়া আছেন। তখন রামলালকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, দেখ এর একটু উমের বেশি কিনা, তাই একটু গম্ভীর। এরা এত হাসিখুশি করছে, কিন্তু এ চুপ করে বসে আছে। মাস্টারের বয়স তখন সাতাশ বৎসর হইবে।

    কথা কহিতে কহিতে পরম ভক্ত হনুমানের কথা উঠিল। হনুমানের পট একখানি ঠাকুরের ঘরের দেওয়ালে ছিল। ঠাকুর বলিলেন, দেখ হনুমানের কি ভাব! ধন, মান, দেহসুখ কিছুই চায় না; কেবল ভগবান চায়! যখন স্ফটিকস্তম্ভ থেকে ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে পালাচ্ছে তখন মন্দোদরী অনেকরকম ফল নিয়ে লোভ দেখাতে লাগল। ভাবলে ফলের লোভে নেমে এসে অস্ত্রটা যদি ফেলে দেয়; কিন্তু হনুমান ভুলবার ছেলে নয়; সে ভাবলে।

    আমার কি ফলের অভাব।

    পেয়েছি যে ফল, জনম সফল,

    মোক্ষ-ফলের বৃক্ষ রাম হৃদয়।।

    শ্রীরামকল্পতরুমূলে বসে রই—

    যখন যে ফল বাঞ্চা সেই ফল প্রাপ্ত হই।

    ফলের কথা কই, (ধনি গো), ও ফল গ্রাহক নই;

    যাব তোদের প্রতিফল যে দিয়ে।।

    ঠাকুর এই গান গাহিতেছেন। আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির! বসিয়া আছেন—ফটোগ্রাফে যে রূপ ছবি দেখা যায়। ভক্তেরা এইমাত্র এত হাসিখুশি করিতেছিলেন, এখন সকলেই একদৃষ্টি হইয়া ঠাকুরের সেই অদ্ভুত অবস্থা নিরীক্ষণ করিতেছেন। দেহ শিতল হইল। মুখ সহাস্য হইল। ইন্দ্রিয়গণ আবার নিজের নিজের কার্য করিতেছে। চক্ষের কোণ দিয়া আনন্দাশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে ঠাকুর (Ramakrishna) রাম রাম, এই রাম উচ্চারণ করিতেছেন।

    মাস্টার ভাবিতে লাগিলেন, এই মহাপুরুষ কি ছেলেদের সঙ্গে ফচকিমি করিতেছিলেন? তখন যেন পাঁচ বছরের বালক!

    ঠাকুর পূর্ববৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া আবার প্রাকৃত লোকের ন্যায় ব্যবহার করিতেছেন। মাস্টারকে ও নরেন্দ্রকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, তোমরা দুজনে ইংরেজিতে কথা কও ও বিচার কর আমি শুনব।

    মাস্টার ও নরেন্দ্র উভয়ে এই কথা শুনিয়া হাসিতেছেন। দুইজনে কিছু কিছু আলাপ করিতে লাগিলেন, কিন্তু বাংলাতে। ঠাকুরের (Ramakrishna) সামনে মাস্টার বিচার আর সম্ভব নয়। তাঁহার তর্কের ঘর ঠাকুরের কৃপায় এরকম বন্ধ। আর কিরূপ তর্ক-বিচার করিবেন? ঠাকুর আর একবার জিদ করিলেন, কিন্তু ইংরেজিতে তর্ক করা হইল না।

     

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

    তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৯ম পরিচ্ছেদ

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 15: দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    Ramakrishna 15: দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    নবম পরিচ্ছেদ

    চতুর্থ দর্শন

    যং লবধ্বা চাপরং লাভং মান্যতে নাধিকং ততঃ।

    যস্মিন্‌ স্থিতো ন দুঃখেন গরুণাপি বিচাল্যতে।। গীতা-৬/২২/

    তাহার পরদিনও ছুটি ছিল। বেলা তিনটার সময় মাস্টার আবার উপস্থিত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সেই পূর্বপরিচিত ঘরে বসিয়া আছেন। মেঝেতে মাদুর পাতা। সেখানে নরেন্দ্র, ভবনাথ আরও দুই–একজন বসিয়া আছেন। কয়টিই ছোকরা, উনিশ-কুড়ি বৎসর বয়স। ঠাকুর সহাস্যবদন, ছোট তক্তপোশের উপর বসিয়া আছেন, আর ছোকরাদের সহিত আনন্দে কথাবার্তা কহিতেছেন।

    মাস্টার ঘরে প্রবেশ করিতেছেন দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে।–বলিয়াই হাস্য। সকলে হাসিতে লাগিল। মাস্টার আসিয়া ভূমিষ্ট হইয়া প্রণাম করিয়া বসিলেন।–আগে হাতজড়ো করিয়া দাঁড়াইয়া প্রণাম করিতেন—ইংরেজি পড়া লোকেরা যেমন করে। কিন্তু আজ তিনি ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিতে শিখিয়াছেন। তিনি আসন গ্রহণ করিলে, শ্রীরামকৃষ্ণ কেন হাসিতেছিলেন, তাহাই নরেন্দ্রাদি ভক্তদের বুঝাইয়া দিতেছেন।

    দেখ, একটা ময়ূরকে বেলা চারটার সময় আফিম খাইয়ে দিচ্ছিল। তার পরদিন ঠিক চারটার সময় ময়ূরটা উপস্থিত—আফিমের মৌতাত ধরেছিল—ঠিক সময়ে আফিম খেতে এসেছে! (সকলের হাস্য)

    মাস্টার মনে মনে ভাবিতেছেন, ইনি ঠিক কথাই বলিতেছেন। বাড়িতে যাই কিন্তু দিবানিশি ইহার দিকে মন পড়িয়া থাকে–কখন দেখিব, কখন দেখিব। এখানে কে যেন টেনে আনলে! মনে করলে অন্য জায়গায় যাবার জো নাই, এখানে আসতেই হবে! এইরূপ ভাবিতেছেন, ঠাকুর (Ramakrishna) এদিকে ছোকরাগুলির সহিত অনেক ফষ্টিনষ্টি করতে লাগিলেন যেন তারা সমবয়স্ক। হাসির লহরী উঠিতে লাগিল। যেন আনন্দের হাট বসিয়াছে।

    মাস্টার অবাক হইয়া এই অদ্ভুত চরিত্র দেখিতেছেন। ভাবিতেছেন, ইহারই কি পূর্বদিনে সমাধি ও অদৃষ্টপূর্ব প্রেমানন্দ দেখিয়াছিলাম? সেই ব্যক্তি কি আজ প্রাকৃত লোকের ন্যায় ব্যবহার করিতেছেন? ইনিই কি আমায় প্রথম দিনে উপদেশ দিবার সময় তিরস্কার করিয়াছিলেন? ইনিই কি আমায় তুমি কি জ্ঞানী বলেছিলেন? ইনিই কি সাকার-নিরাকার দুই সত্য বলেছিলেন? ইনিই কি আমায় বলেছিলেন যে ঈশ্বরই (Ramakrishna) সত্য আর সংসারের সমস্তই অনিত্য? ইনিই কি আমায় সংসারে দাসীর মতো থাকতে বলেছিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

    আরও পড়ুনঃ “ভালো লোকের সঙ্গে মাখামাখি চলে, মন্দ লোকের কাছ থেকে তফাত থাকতে হয়”

     

    তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৯ম পরিচ্ছেদ

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 13: “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”

    Ramakrishna 13: “দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজুটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, আর এক মূর্তি”

    ৭ম পরিচ্ছেদ

         নরেন্দ্র–হোমাপাখি

    এই ছেলেটিকে দেখছ, এখানে একরকম। দুরন্ত ছেলে বাবার কাছে যখন বসে, যেমন জুজটি, আবার চাঁদনিতে যখন খেলে, তখন আর এক মূর্তি। এরা নিত্যসিদ্ধের থাকে। এরা সংসারে কখনও বদ্ধ হয় না। একটু বয়স হলেই চৈতন্য হয়, আর ভগবানের দিকে চলে যায়। এরা সংসারে আসে জীবশিক্ষার (Ramakrishna) জন্য। এদের সংসারের বস্তু কিছু ভাল লাগে না-এরা কামিনীকাঞ্চনে কখন আসক্ত হয় না।

    বেদে আছে হোমাপাখির কথা। খুব উঁচু আকাশে সে পাখি থাকে। সেই আকাশেই ডিম পাড়ে। ডিম পাড়লে ডিমটা পড়তে থাকে-কিন্তু এত উঁচু যে, অনেকদিন থেকে ডিমটা পড়তে থাকে। ডিম পড়তে পড়তে ফুটে যায়। তখন ফুটলেই দেখতে পায় যে, সে পড়ে যাচ্ছে, মাটিতে লাগলে একেবারে চুরমার হয়ে যাবে। তখন সে পাখি মার দিকে একেবারে চোঁচা দৌড় দেয়, আর উঁচুতে উঠে যায়।”

    নরেন্দ্র উঠিয়া গেলেন।

    সভামধ্যে কেদার, প্রাণকৃষ্ণ, মাস্টার ইত্যাদি অনেক আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)-দেখ নরেন্দ্র গাইতে, বাজাতে, পড়াশুনায়—সব তাতেই ভাল। সেদিন কেদারের সঙ্গে তর্ক করছিল। কেদারের কথাগুলো কচকচ করে কেটে দিতে লাগল। (ঠাকুর ও সকলের হাস্য) (মাস্টারের প্রতি)-ইংরেজিতে কি কোন তর্কের বই আছে গা?

    মাস্টার-আজ্ঞে হাঁ, ইংরেজিতে ন্যায়শাস্ত্র (Logic) আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ-আচ্ছা, কিরকম একটু বল দেখি।

    মাস্টার এইবার মুশকিলে পড়িলেন। বলিলেন, এরকম আছে সাধারণ সিদ্ধান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। যেমন-

    সব মানুষ মরে যাবে,

    পণ্ডিতেরা মানুষ,

    অতএব পণ্ডিতেরা মরে যাবে।

    আর একরকম আছে, বিশেষ দৃষ্টান্ত বা ঘটনা দেখে সাধারণ সিদ্ধান্তে (Ramakrishna) পৌঁছেনো। যেমন-

    এ কাকটা কালো,

    ও কাকটা কালো

    (আবার) যত কাক দেখছি সবই কালো,

    এতএব সব কাকই কালো। 

    কিন্তু এরকম সিদ্ধান্ত করলে ভুল হতে পারে, কেননা হয়তো খুঁজতে খুঁজতে আর এক দেশে সাদা কাক দেখা গেল। আর এক দৃষ্টান্ত-যেখানে বৃষ্টি সেইখানেই মেঘ ছিল বা আছে, অতএব এই সাধারণ সিদ্ধান্ত হল যে, মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। আর এক দৃষ্টান্ত—এ-মানুষটির বত্রিশ দাঁত আছে, ও-মানুষটির বত্রিশ দাঁত, আবার যে-কোন মানুষ দেখেছি তারই বত্রিশ দাঁত আছে। অতত্রব সব মানুষেরই বত্রিশ দাঁত আছে।

    এরূপ সাধারণ সিদ্ধান্তের কথা ইংরেজী ন্যায়শাস্ত্র আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ কথাগুলি শুনিলেন মাত্র। শুনিতে শুনিতে অন্যমনস্ক হইলেন। কাজেই আর এ-বিষয়ে বেশি প্রসঙ্গ হইল না।

    আরও পড়ুনঃ “টাকায় কি হয়? ভাত হয়, ডাল হয়, থাকবার জায়গা হয়–এই পর্যন্ত, ভগবানলাভ হয় না”

    আরও পড়ুনঃ “দুষ্ট লোকের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটু তমোগুণ দেখানো দরকার!”

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

     

    তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৭ম পরিচ্ছেদ

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 14: “জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই”

    Ramakrishna 14: “জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই”

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    শ্রুতিবিপ্রতিন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা।

    সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি।।

    সমাধিমন্দিরে

    সভা ভঙ্গ হইল। ভক্তেরা এদিক ওদিক পায়চারি করিতেছেন। মাস্টারও পঞ্চবটি ইত্যাদি স্থানে বেড়াইতেছেন, বেলা আন্দাজ পাঁচটা। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের দিকে আসিয়া দেখিলেন, ঘরের উত্তরদিকের ছোট বারান্দার মধ্যে অদ্ভুত ব্যাপার হইতেছে!

    শ্রীরামকৃষ্ণ স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন। নরেন্দ্র গান করিতেছেন, দুই-চারিজন ভক্ত দাঁড়াইয়া আছেন। মাস্টার আসিয়া গান শুনিতেছেন। গান শুনিয়া আকৃষ্ট হইয়া রহিলেন। ঠাকুরের গান ছাড়া এমন মধুর গান তিনি কখনও শুনেন নাই। হঠাৎ ঠাকুরের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া অবাক্‌ হইয়া রহিলেন। ঠাকুর দাঁড়াইয়া নিস্পন্দ, চক্ষুর পাতা পড়িতেছে না, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বহিছে! জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই, শুনেন নাই। অবাকহইয়া তিনি ভাবিতেছেন ভাগবানকে চিন্তা করিয়া মানুষ কি এত বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়? না জানি কতদূর বিশ্বাস-ভক্তি থাকলে এরূপ হয়। গানটি এই;

    চিন্তয় মম মানস হরি চিদঘন নিরঞ্জন।

    কিবা, অনুপমভাতি, মোহনমূরতি, ভকত-হৃদয়-রঞ্জন

    নবরাগে রঞ্জিত, কোটি শশী-বিনিন্দিত;

    (কিবা) বিজলি চমকে, সেরূপ আলোকে, পুলকে শিহরে জীবন।

    গানের এই চরণটি গাহিবার সময় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শিহরিতে লাগিলেন। দেহ রোমাঞ্জিত! চক্ষু হইতে আনন্দশ্রু বিগলিত হইতেছে। মাঝে মাঝে যেন কি দেখিয়া হাসিতেছেন। না জানি কোটি শশী-বিনিন্দিত কী অনুপম রূপদর্শন করিতেছেন! এরই নাম কি ভগবানের চিন্ময়-রূপ-দর্শন? কত সাধন করিলে, কত তপস্যার ফলে, কতখানি ভক্ত-বিশ্বাসের বলে, এরূপ ঈশ্বর-দর্শন হয়? আবার গান চলিতেছেঃ

    হৃদ কমলাসনে, ভজ তাঁর চরণ,

    দেখ শান্ত মনে, প্রেমে নয়নে অপরূপ প্রিয়দর্শন!

    আবার সেই ভুবনমোহন হাস্য! শরীর সেইরূপ নিস্পন্দন! স্তিমিত লোচন! কিন্তু কি যেন রূপদর্শন করিতেছেন! আর সেই অপরূপ রূপদর্শন করিয়া যেন মহানন্দে ভাসিতেছেন।

    এইবার গানের শেষ হইল। নরেন্দ্র গাইলেনঃ

    চিদানন্দরসে, ভক্তি যোগাবেশে, হও রে চির গমন।

    (চিদানন্দরসে, হায় রে প্রেমানন্দ রসে)

    সমাধির ও প্রেমানন্দের এই অদ্ভুত ছবি হ্রদয়মধ্যে গ্রহণ করিয়া মাস্টার গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে হৃদয়মধ্যে সেই হৃদয়োত্তকারী মধুর সঙ্গীতের ফুট উঠিতে লাগিলঃ

    প্রেমানন্দরসে হও রে চিরমগন। (হরিপ্রেমে মত্ত হয়ে)

    আরও পড়ুনঃ “দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না”

    আরও পড়ুনঃ “ভালো লোকের সঙ্গে মাখামাখি চলে, মন্দ লোকের কাছ থেকে তফাত থাকতে হয়”

     

    তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৮ম পরিচ্ছেদ

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share