মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেবী অহল্যা বাঈ (Ahilya Bai) হোলকারের ৩০০তম জন্ম বার্ষিকী চলছে। এই আবহে সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের সরকারের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অহল্যা বাঈয়ের রাজত্বকালের সুশাসন সম্পর্কে জনগণকে জানানো। দেবী অহল্যা বাঈ-এর রাজত্বকালে রাজস্ব আদায় থেকে পঞ্চায়েতের ক্ষমতায়ন ইত্যাদি সবই দেখা যে। বর্তমানে যে কোনও সরকারের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এমন মডেল অনুসরণযোগ্য। কেমন ছিল অহল্যা বাঈ-এর আমলে তাঁর রাজ্য পরিচালনার নীতি। এ নিয়েই আমাদের প্রতিবেদনে (Good Governance)।
রাজ্যগুলিতে দূত নিয়োগ
এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়, তেমনই রানি অহল্যা বাঈ ভারতীয় রাজ্যগুলিতে তাঁর দূত নিয়োগ করতেন। তাঁর আমলে দূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, ভগবন্ত রাও জগতাপ (উদয়পুর), মার্তন্দ্রাও আন্নাজি (জয়পুর), মাধব রাও লক্ষ্মণ (হায়দরাবাদ দক্ষিণ), খান্ডু জগদেব রাও (অযোধ্যা), শ্যামজি মোরেশ্বর (শিন্দে কোর্ট), অয়াজি জাখদেব (পুনে কোর্ট), বিঙ্কোজি কৃষ্ণা রাও (ভোলা), বিঙ্কোজি কৃষ্ণা রাও (বুধোয়া)। জিভাজি গিরমাজি (ভোপাল নবাব), বাপুজি আনন্দরাও (কোটা), বাহাদুর সিং (দিল্লি), বেঙ্কোজি শিবাজি (ডুঙ্গারপুর), বিনায়ক সদাশিব (প্রতাপগড়), কেশো ভিকাজি দাতার (পেশওয়া), জাস্কর মেহতা এবং দত্তরাম (মারওয়ার), বলওয়ান্তপুর গোবিন্দপুর (রামপুর) ইত্যাদি।
যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে আমেরিকান কর্নেল নিয়োগ করেছিলেন অহল্যা বাঈ
হোলকার রাজ্যের গ্রামগুলিতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তরবারি চালনা, বর্শা নিক্ষেপ এবং অন্যান্য যুদ্ধ কৌশল শেখানো হত। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির আক্রমণ রুখতে অহল্যা বাঈ (Ahilya Bai) হোলকার তাঁর সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য, তিনি আমেরিকান কর্নেল জেপি বাইডকে নিয়োগ করেন। কর্নেলকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা বেতন দিতেন তিনি।
কর বৃদ্ধি না করেই রাজস্ব সংগ্রহ ৭৫ লক্ষ থেকে ১.২৫ কোটি করতে পেরেছিলেন তিনি
জানা যায়,হোলকার (Ahilya Bai) রাজ্য উত্তরে রামপুরা, দক্ষিণে রাজপুতানা এবং নিমার অঞ্চলের দক্ষিণ মালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সমস্ত অঞ্চল থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা হত। রাজ্যের বার্ষিক আয় ছিল ৭৫ লক্ষ টাকা। ঐতিহাসিকরা বলেন, মন্ত্রিসভা রাজ্যের ব্যয় পরিচালনার জন্য কর বৃদ্ধি করতে চাইলেও তা নাকচ করে দেন রানি। কর বৃদ্ধি না করেই রাজস্ব সংগ্রহ ১.২৫ কোটি টাকা করতে পেরেছিলেন তিনি।
জন উন্নয়নমূলক কাজ
পঞ্চায়েতের ক্ষমতা: সুশাসন আনতে রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিকে বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করা: পঞ্চায়েতগুলি যাতে স্বৈরাচারী না হয়, সেকারণে কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হত রাজ্যের কাছে।
গণশুনানি: অহল্যাবাঈ সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিদিন গণ শুনানির ব্যবস্থা করতেন ।
ব্যক্তিগতভাবেও শুনতেন মামলা: তাঁর রাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি কারও আপত্তি থাকলে, অহল্যাবাঈ ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের সমস্যার কথা শুনতেন।
দেশজুড়ে মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার
মথুরায় বিহারি মন্দির: অহল্যা বাঈ ভগবান কৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরা-বৃন্দাবনে বিহারি মন্দির, চিরহরন ঘাট এবং কালিয়াদেহ ঘাট নির্মাণ করেন। হরিদ্বারে, তিনি এক কোটি টাকা ব্যয়ে হোলকার ওয়াড়া এবং ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে কুশঘাট নির্মাণ করেন।
কাশীতে রাম মন্দির: কাশীতে, তিনি ভগবান রাম, মা সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন এবং হনুমানের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন।
কাশীতে মন্দির নির্মাণ: মণিকর্ণিকা ঘাট, রামেশ্বর পঞ্চকোশী ধর্মশালা, ভগবান শিব মন্দির, দশাশ্বমেধ ঘাট, কপিল ধারা ধর্মশালা, নাগওয়া গার্ডেন, মণি কর্ণেশ্বর মন্দির, অহিলেশ্বর মন্দির এবং ঋষি অগস্ত্য কুন্ড নির্মাণ করেন।
বিশ্বনাথ-সোমনাথ মন্দির: গুজরাটের সোমনাথ এবং বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরে আফগানিস্তান থেকে আনা চন্দন কাঠের দরজা স্থাপন করেন তিনি।
পণ্ঢরপুরের বিঠ্ঠল মন্দির: ভগবান বিঠ্ঠলের হীরকখচিত মুকুট অহল্যা বাঈ করে দেন।
অযোধ্যার রাম মন্দির: সরযূ নদীর দক্ষিণে শ্রী রাম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। স্বর্গ দ্বার, সূর্য ঘাট, নাগেশ্বর মন্দির এবং ধর্মশালাও তিনি নির্মাণ করেছিলেন রামনগরীতে। অহল্যা ঘাটও নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
জ্যোতির্লিঙ্গ সংস্কার: উজ্জয়িনীর ভগবান মহাকালেশ্বর মন্দির সংস্কার করেছিলেন তিনি (Ahilya Bai)।