Tag: Relation with Taliban

  • India Afghanistan Relation: মহিলা সাংবাদিকদের নিয়েই সম্মেলন তালিবান মন্ত্রীর! দিল্লিই পারে, দেখাল ভারত সরকার

    India Afghanistan Relation: মহিলা সাংবাদিকদের নিয়েই সম্মেলন তালিবান মন্ত্রীর! দিল্লিই পারে, দেখাল ভারত সরকার

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যে কাজ আমেরিকার মতন রাষ্ট্রশক্তি পারেনি, রাশিয়া পারেনি, ন্যাটো পারেনি— সে কাজ করে দেখাল ভারত সরকার (India Afghanistan Relation)। আদ্যান্ত মহিলা বিরোধী, তালিবান সরকার বাধ্য হল মহিলা সাংবাদিকদের সামনে সাংবাদিক সম্মেলন করতে। যারা মনে করে মেয়েদের জন্মই হয়েছে বংশবিস্তার করার জন্য, যারা মনে করে মেয়েদের চোখ টুকু বাদ দিয়ে পুরো শরীরটাই পর্দা করা দরকার সেই তালিবানরা যখন ভারতে এসে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনটি করে সেখানে মহিলা সাংবাদিক ছিল না। তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে। যদিও ভারত সরকার বিবৃতি দেয় যে, আফগান দূতাবাসের ভেতর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাতে ভারতের কোনও হাত থাকে না। তা সত্ত্বেও একদল বামপন্থী এবং তৃণমূলের লোকজন ভয়ংকর প্রচার চালাচ্ছিল ভারত সরকারের বিরুদ্ধে।

    ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য

    ভারত সরকারের (India Afghanistan Relation) অপমান হচ্ছে বুঝতে পেরে এক অভাবনীয় পদক্ষেপ করে তালিবান সরকার। পরের দিন আরও একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে তারা এবং অবাক করা বিষয় এইবার সেই সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলারা ছিলেন একেবারে সামনের সারিতে। যার পুরোটাই সম্ভব হয়েছে মোদি সরকারের কূটনীতির ফলেই। তাহলে কি তালিবান-রা শুধরে গেল? ভারত বন্ধু হয়ে গেল? হয়ত নয়। বা সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে আগের ভারত বিরোধী অবস্থান থেকে যে সরে এসেছে তালিবানরা সেটা স্পষ্ট। চাণক্য বলতেন যখন চারদিকে শত্রু রয়েছে৷ তখন সবার সঙ্গে যুদ্ধ করা সমীচীন নয়৷ শত্রু বন্ধু না হলে, শত্রুতা নিষ্ক্রিয় করো যতটা সম্ভব৷ মোদির ভারত ঠিক এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছে তালিবানের জন্য। পাক সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে যতটা দূর্বল করা যায় ততটাই ভারতের জন্য মঙ্গল।

    পাক বিরোধিতায় তালিবান

    পাকিস্তান তাদের জন্ম লগ্ন থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে। সম্মুখ সমরে বার বার হারার পর, ভারতে সন্ত্রাসবাদী পাঠিয়ে আক্রমণ করে গিয়েছে৷ নতুন ভারত পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে৷ কিন্তু শুধু ঘাঁটি গুড়িয়ে দিয়েই থেমে নেই মোদি সরকার। কংগ্রেসের আমলে পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী হানা, প্লেন হাইজ্যাকের মতো একাধিক বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারত বিরোধী সন্ত্রাসে অংশ নিত তালিবান৷ সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো অবস্থানে পহেলগাঁও হামলার সময় ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরোধিতা করে তালিবান৷

    আফগান নীতি বদল করে মোদি সরকার

    ভারতের আফগানিস্তান (India Afghanistan Relation) বিজয়ের চেষ্টা বেশ কয়েক বছর আগের৷ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে আফগান নীতি বদল করে মোদি সরকার৷ আফগানিস্তানে পরিকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক, হাসপাতাল, সহ একাধিক ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করা শুরু করে ভারত। ভারতের সাহায্যে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ হয় আফগানিস্তানে৷ এমনকি ক্রিকেটের মতো খেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভারত আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করে। তালিবানরা আফনাগিস্তানে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই আফগানদের ভারত নির্ভরশীলতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল মোদি সরকার৷

    ভারত-পাক-আফগানিস্তান ত্রিদেশীয় সম্পর্কে নয়া মোড়

    ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালিবান৷ সে সময়ও খবুই সাবধানী তালিবান নীতি নিয়েছিল ভারত৷ সে সময় তালিবান শাসকদের সরাসরি সরকার না বলে, ‘আফগানিস্তানে যারা শাসন ক্ষমতা নিয়েছে’ বলে উল্লেখ করে৷ এমনকি ২০২১-২২ সালে আফগানিস্তান দূতাবাসে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল কিছু সদস্য রেখে বাকিদের সুরক্ষার কারণে ফিরিয়ে এনেছিল ভারত৷ শাসন ক্ষমতা দখল করেও ভারত বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেনি তালিবানরা৷ উল্টে বারবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান শাসকরা৷ যে তালিবানরা ভারত-পাক সীমান্ত সমস্যায় পাকিস্তানকে শক্তি যুগিয়ে আসত তারাই এখন ভারতের পাশে। তালিবান-পাকিস্তান সীমান্ত সমস্যা তো রয়েছেই কিন্তু মোদি সরকারের ভবিষ্যতমুখী আফগান নীতিই ভারত-পাক-আফগানিস্তান ত্রিদেশীয় সম্পর্ককে নতুন সুতোয় বুনছে৷

    কেন প্রথমে কিছু বলেনি ভারত

    ভারতে আফগান (India Afghanistan Relation) দূতাবাসে বসে তালিবান বিদেশমন্ত্রী একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। যেখানে মহিলা সংবাদিকদের জায়গা না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে বিরোধীরা৷ বাম-কংগ্রেস-নকশালপন্থী সাংবাদিক-ব্লগার-বুদ্ধিজীবীরা এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে আক্রমণ করতে মাঠে নেমে পড়েন। বিরোধীদের অদ্ভুত যুক্তি হল, আফগান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এটা কী করে মেনে নিতে পারে! কিন্ত প্রশ্ন হল কোথায় হল এই সাংবাদিক সম্মেলন? সাউথ ব্লকে? খুব সাধারণ উত্তর, না। এই সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে আফগান দূতাবাসে। তালিবান নেতা ওমর আল মুত্তাকির এই সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

    ভিয়েনা কনভেনশন-এর যুক্তি

    ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস, ১৯৬১-এর ধারা ২২ এর ১, ২২ এর ২ এবং ২২ এর ৩ অনুযায়ী কোন দেশে বিদেশি রাষ্ট্রের দূতবাস বিশেষ কিছু ক্ষমতা ভোগ করে। ধারা ২২ এর ১ এ বলা হয়েছে দূতাবাসের জায়গায় অন্যরা যখন তখন ঢুকে পড়বে না৷ অর্থাৎ ভারতের কোনও সরকারি আধিকারিককে কোনও দূতাবাসে ঢুকতে হলে সেই দেশের অনুমতি নিতে হবে৷ আতিথ্যদানকারী দেশ (host country) দূতাবাসের প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না বা সেখানে তাদের নিজস্ব আইন প্রয়োগ করতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনের জন্য কাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণভাবে দূতাবাসের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বা অধিকার।

    মিথ্যে ন্যারেটিভ দিয়ে মোদি সরকারকে আক্রমণ

    মজার বিষয় হচ্ছে যারা সব ইস্যুতে মিথ্যে ন্যারেটিভ দিয়ে মোদি সরকারকে আক্রমণ করতে রাস্তায় নামে তাদেরও অনেকে এই ভিয়েনা কনভেনশনটি জানেই না৷ অনেকে আবার জেনে বুঝে মোদি-বিরোধী মিথ্যে প্রচারটি করছিলেন৷ ২০২২ সালে আফগানিস্তানে মেয়েদের উপর যখন একের পর এক শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে তালিবানরা তখন ভারত সেই নীতির বিরোধিতা করে স্পষ্ট বলেছিল, ‘আফগানিস্তানে তালিবানের নারী নীতি উদ্বেগজনক। নারী সুরক্ষা ও স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে আফগানিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে যাক তালিবান। স্পষ্টতই ভারতের আফগান নীতি ভারতের শর্তে। অন্য কারও চাপিয়ে দেওয়া নীতির কারণে বা পিছু হঠে নয়।

    নতুন ধারণা তৈরি করতে মরিয়া তালিবান

    তালিবান মানেই ‘নারীবিদ্বেষী’, এই ধারণা ভাঙতে মরিয়া মন্ত্রী মুত্তাকিও। রবির সাংবাদিক বৈঠক থেকে তালিবান মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১ কোটি। যার মধ্য়ে মেয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। মাদ্রাসাতেও শিক্ষায় কোনও সীমা নেই। একেবারে স্নাতক স্তর পর্যন্ত কেউ নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। অবশ্য, কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু আমরা কখনওই মেয়েদের শিক্ষাদানকে হারাম বলে মনে করি না।’ আগের দিনের সমস্যা প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি ‘ওই সাংবাদিক বৈঠকটি সংক্ষিপ্ত নোটিসে আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এই নয় যে তাতে কোনও মহিলা সাংবাদিকদের ডাকা হয়নি। সেখানেও মহিলা সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু একটি যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ওই সমস্যা তৈরি হয়। এর নেপথ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’ তবে কারণ যাই হোক শেষ সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের দূতাবাসে প্রবেশ করতে দিয়ে তালিবান বুঝিয়েছে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে শেষ কথা বলে মোদির ভারতই।

LinkedIn
Share