মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মৌনী অমাবস্যার সকালে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লেও মহাকুম্ভে উপচে পড়ল ভিড়। এদিন সকালে অমৃতস্নান শুরুর আগেই বহু মানুষের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার পরেও ভক্তরা পবিত্র স্নানের জন্য সঙ্গমে সমবেত হতে থাকে। এই অটূট ভক্তি মৌনী অমাবস্যার পবিত্র দিনে গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করার আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে উজ্জীবিত করে। মহাকুম্ভে যতগুলি অমৃত স্নানের তারিখ রয়েছে, হিন্দু শাস্ত্র মতে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মৌনী অমাবস্যা। সেই কারণে মৌনী অমাবস্যাতেই প্রয়াগরাজে সবচেয়ে বেশি মানুষ স্নান করবেন বলে আগেই অনুমান করেছিল যোগী প্রশাসন। সেই মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু তারপরেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তবে এর পরেও মৌনী অমাবস্যার পূণ্যতিথিতে অমৃতস্নান চলছে মহাকুম্ভে। পূণ্যলাভের আশায় সঙ্গমে অমৃত স্নান করছেন কোটি কোটি পুণ্যার্থী।
মৌনী অমাবস্যায় স্নানের গুরুত্ব
মাঘ মাসের অমাবস্যা তিথি মৌনী অমাবস্যা হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে সঙ্গমে স্নান করলে পাপমুক্তি ঘটে বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এই তিথিতে সূর্য, চন্দ্র ও বৃহস্পতি এক রেখায় আসে। মহাজাগতিক শক্তির প্রভাব এসে পড়ে নদীর জলে। সেই কারণে মৌনী অমাবস্যার বিশেষ ক্ষণে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করলে শরীর ও মনে বিশেষ শক্তি লাভ হয় বলে শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মত। এই দিনে গঙ্গার জলে অমৃতের বর্ষণ হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। কথিত আছে, এই দিন পূণ্যস্নান করলে কোষ্ঠীর সব রকম দোষ থেকে মুক্তি পান মানুষ। বিশেষ করে কালসর্প দোষ ও পিতৃদোষ থেকে মুক্তি পেতেও মৌনী অমাবস্যায় পূণ্যস্নানের মাহাত্ম্য রয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই এই দিনে কোটি কোটি মানুষ সঙ্গমে স্নান করেন।
কড়া নজর প্রধানমন্ত্রীর
এদিন সকালে প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে কোটি কোটি মানুষ ভিড় জমান। সঙ্গমে স্নান শুরুর আগেই পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটে। ভিড় সামলাতে না পেরে এক মহিলা পড়ে গেলে তাঁর পিছনের লোকও টাল সামলাতে পারেননি। এর ফলে, পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটলে কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়। তবে তৎক্ষণাৎ অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রশাসন। গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। ইতিমধ্যে ঘটনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে একাধিক বার ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কার্যত দফায় দফায় গোটা ঘটনার ( Maha Kumbh 2025) বিস্তারিত খোঁজ তিনি নিয়েছেন বলে খবর।
সক্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশ সরকার
অন্যদিকে, যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। কেন্দ্রের তরফে সম্পূর্ণ সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আহতদের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নিয়েও যোগীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয় শাহের। গোটা এলাকা বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে। দ্রুত বাধা দূরে সরিয়ে ভক্তরা সঙ্গমে স্নান শুরু করেন। ভক্তরা যে সমস্ত ঘাটে আছেন সেখানেই যাতে স্নান সারেন সেই বার্তা দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। মৌনি অমবস্যায় মহাকুম্ভে ‘অমৃত স্নান’ সারতে কয়েক কোটি মানুষ ভিড় জমান। মধ্যরাত থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। সময় যত গড়িয়েছে ততই মানুষের ভিড় বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এদিন মহাকুম্ভে জোড়ো হন শাহী স্নান সারবেন বলে। কিন্তু স্নানের আগেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
প্রশাসনের তরফে সমস্ত জায়গায় ব্যারিকেড করা থাকলেও প্রবল ভিড়ের চাপে সমস্ত কিছু ভেঙে পড়ে। সঙ্গমস্থলে স্নান সারতে মানুষের মধ্যে একেবারে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আর সেই সময় মর্মান্তিক পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি গুজব ও মিথ্যা খবর ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ৫০টিরও বেশি অ্যাম্বুল্যান্স এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আহতদের প্রয়াগরাজের হাসপাতালগুলিতে পাঠানোর জন্য একটি গ্রিন করিডর স্থাপন করা হয়েছে।
আখড়াগুলি সতর্ক
দুর্ঘটনার পর অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ অমৃত স্নান স্থগিত রাখে। যদিও দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আখড়াগুলি অমৃত স্নান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলি চলতে থাকে। অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদের সভাপতি রবিশংকর পুরী বলেছেন, সঙ্গম ঘাটে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সবাইকে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্নান করতে আহ্বান করেছেন। সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং ভক্তদের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, তারা সঙ্গম ঘাটে না গিয়ে অন্য যেকোনও ঘাটে স্নান করতে পারে। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ কুম্ভমেলা ক্ষেত্রই পবিত্র, তাই নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং যে কোনও ঘাটে স্নান করা সম্ভব।” সব ধর্মীয় নেতারা নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জগদগুরু স্বামী রামভদ্রাচার্য মহারাজ এক ভিডিও বার্তায় ভক্তদের সঙ্গম ঘাটে ভিড় না জমাতে এবং তাঁদের ক্যাম্পে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিটি ভক্তের নিরাপত্তা, এবং স্নান একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন, তাই এর ভৌগলিক স্থান অগ্রাধিকার পাওয়ার দরকার নেই।”