Tag: Sanjeev

  • Sanjeev Sanyal: “ভারতের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিচার ব্যবস্থা”, বললেন সঞ্জীব সান্যাল

    Sanjeev Sanyal: “ভারতের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিচার ব্যবস্থা”, বললেন সঞ্জীব সান্যাল

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের একবার খবরের শিরোনামে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল (Sanjeev Sanyal)। গত কয়েক দিনে ভারতীয় বিচারব্যবস্থা (Judiciarys Long Vacations) নিয়ে তাঁর মন্তব্য ভাইরাল হয়েছে। দিল্লিতে অ্যাডভোকেট জেনারেলদের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, “ভারতের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিচার ব্যবস্থা। আইন অনেক সময় সমস্যার সমাধান তো করেই না, উল্টে বিষয়টিকে জটিল করে তোলে।”

    উন্নত দেশ হওয়ার পথে বড় বাধা (Sanjeev Sanyal)

    সঞ্জীবের মতে, বিচারব্যবস্থা ভারতের ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার আশার পথে সব চেয়ে বড় বাধা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মাই লর্ড’ সম্বোধনের মতো সেকেলে রীতি, ‘প্রেয়ার্স’ নামের ঔপনিবেশিক ধারা, দীর্ঘ গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার প্রথা, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব। তাঁর কথায়, “সময়ে ন্যায়বিচার মেলে না। এটা অন্যতম বড় সমস্যা।” আদালতের দীর্ঘ ছুটি দেওয়া নিয়েও আপত্তি রয়েছে সঞ্জীবের। তিনি বলেন, “বিচার বিভাগও একটি জনসেবা। হাসপাতাল কি এক মাস বন্ধ রাখা যায়?”

    ভারতবাসীরই কণ্ঠস্বর

    সঞ্জীবের মন্তব্যে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন আইনজীবী মহল। তবে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, সঞ্জীবের ভাইরাল হওয়া বক্তব্য আদতে ভারতবাসীরই কণ্ঠস্বর। মনে রাখতে হবে, এটি শাসনব্যবস্থার কোনও বাইরের লোকের হালকা সমালোচনা নয়। বরং এটি সেই অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি, যা প্রতিটি মামলাকারী, উদ্যোক্তা এবং নাগরিক অনুভব করেছেন। ভারতে ন্যায়বিচার দেরিতে মেলে, ব্যয়বহুল এবং অপ্রাপ্য। ভারতের আইন পেশা এখনও সবচেয়ে আঁটসাঁট একটি পেশা, যা রক্ষণশীল, ঔপনিবেশিক এবং পরিবর্তনের বিপ্রতীপ। সান্যালের মন্তব্য সরাসরি বিচারব্যবস্থার অদক্ষতার সঙ্গে দেশের বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের আশার মধ্যে একটা সীমারেখা টেনে দেয় বই কি!

    আইনি ডিগ্রির প্রয়োজন

    সঞ্জীবের (Sanjeev Sanyal) মতে, সব ক্ষেত্রেই আইনি ডিগ্রির প্রয়োজনও হয় না। নিজের দাবির স্বপক্ষে সওয়ালও করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সঞ্জীব বলেন, “ভারতীয় আইনি ব্যবস্থা কেবল প্রক্রিয়ার কারণেই নয়, মানসিকতা ও সংস্কৃতির কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইনি ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় কাঠামোর। এর বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যেমন সিনিয়র অ্যাডভোকেট, অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড এবং অন্যান্য। একবিংশ শতাব্দীতে এত স্তর কেন? অনেক ক্ষেত্রে মামলা লড়তে আইনি ডিগ্রিরও প্রয়োজন হয় না। কারণ আজকের বিশ্বে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো সাহায্য করতে পারে প্রযুক্তিও।”

    ছ’সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটি (Judiciarys Long Vacations)

    সান্যালের বক্তব্য যে নিছক অর্থহীন, তা বলা যাবে না। কারণ সুপ্রিম কোর্টে সাধারণত ছ’সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে। এর সঙ্গে দশেরা ও বড়দিনে ছোট ছোট ছুটিও থাকে। হাইকোর্টগুলিও একই ধরনের ছুটির সময়সূচি মেনে চলে। সঞ্জীবের কথায়, ‘বিচার বিভাগও একটি জনসেবা। হাসপাতাল কি এক মাস বন্ধ রাখা যায়? আপনি কি পুলিশ বিভাগ বা হাসপাতালগুলিকে মাসের পর মাস বন্ধ রাখতে পারেন?’ যদিও ছুটিতেও বেঞ্চ বসে। সঞ্জীবের মতে, দীর্ঘ ছুটির এই প্রতীকী দিকটি জনগণের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করে, বিশেষ করে যখন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড থেকে জানা গিয়েছে, সারা দেশে প্রায় পাঁচ কোটি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। বর্তমানে যেভাবে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, তাতে এই অমীমাংসিত মামলাগুলি শেষ করতে বহু বছর লেগে যাবে।

    বিচার ব্যবস্থার অদক্ষতা

    সান্যালের (Sanjeev Sanyal) মূল বক্তব্য হল, বিচার ব্যবস্থার অদক্ষতা ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস ২০২০ রিপোর্টে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারতকে ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৩তম স্থানে রাখা হয়েছে, যেখানে একটি বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গড়ে ১ হাজার ৪৪৫ দিন সময় লাগে। পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি প্রায়ই মামলার জটে আটকে থাকে। আর ভূমি ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধ ভারতের আদালতগুলির সবচেয়ে সাধারণ দেওয়ানি মামলার মধ্যে অন্যতম (Judiciarys Long Vacations)।

    প্রি-লিটিগেশন মধ্যস্থতার অবস্থা

    ২০১৮ সালের কমার্শিয়াল কোর্টস অ্যাক্টের অধীনে প্রি-লিটিগেশন মধ্যস্থতা চালু করা হয়েছিল যাতে এই জাতীয় বিরোধগুলিকে বিচার ব্যবস্থা থেকে দূরে সরানো যায়। কিন্তু বাস্তবে মুম্বইয়ের মতো বড় শহরে এর সাফল্যের হার খুবই কম। আর অনেক মামলাকারীকে শেষ পর্যন্ত আবার আদালতে ফিরে যেতে হয়। ফলস্বরূপ, মামলার চাপ কমার বদলে প্রায়ই সময় এবং খরচ আরও বেড়ে যায়। এর পরিণতি হল, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি মূল্যায়নের সময় আইনি অনিশ্চয়তাকে হিসেবের মধ্যে রাখে। ব্যবসাগুলি এমন খাতে সম্প্রসারণে দ্বিধা করে, যেখানে চুক্তি বাস্তবায়ন অপ্রত্যাশিত থাকে। সাধারণ মানুষের জন্য ‘তারিখ পে তারিখ’ অর্থাৎ একের পর এক মুলতুবি শুনানি এক পরিচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    আইনের নিষ্পত্তি

    সান্যাল (Sanjeev Sanyal) আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই আইন তৈরি করেন অতিরিক্ত জটিল করে। কারণ তাঁরা মনে করেন অল্প সংখ্যক মানুষ এর অপব্যবহার করতে পারে। এর ফলে আইনে অসংখ্য ব্যতিক্রম ও শর্ত যোগ হয়, যা পরে বিচারিক ব্যাখ্যার স্তরে স্তরে জমা হয়ে যায়। দেউলিয়াত্ব ও দেউলিয়া আইন (Insolvency and Bankruptcy Code) এই সমস্যার একটি উদাহরণ। যদিও আইনটির ৩৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তবে বাস্তবে মামলাগুলি প্রায় দ্বিগুণ সময় নেয় (Judiciarys Long Vacations)। যদি বিচারব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস থাকত যে এটি সোজাসাপ্টা নিয়ম দ্রুত ও আগাম অনুমানের ভিত্তিতে কার্যকর হবে, তবে আইন প্রণেতারা প্রতিরক্ষামূলক আইন বানাতে বাধ্য হতেন না। তাই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার শুধু মামলা-পেন্ডেন্সি কমানো নয়, বরং আরও স্পষ্ট এবং সরল শাসনব্যবস্থা তৈরির শর্ত তৈরি করা।

    স্বাধীনতা হল সর্বাধিক পবিত্র একটি মূল্যবোধ

    বিচারব্যবস্থার রক্ষকরা বলেন, স্বাধীনতা হল এর সর্বাধিক পবিত্র একটি মূল্যবোধ। এটি সঠিক, কিন্তু স্বাধীনতা মানে জবাবদিহি থেকে মুক্তি নয়। জবাবদিহি মানে নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং নাগরিকের কাছে সহজলভ্যতার জন্য জবাবদিহি থাকা। দু’টি ধারণা এক সঙ্গে রাখা (Sanjeev Sanyal) সম্ভব। বিচারব্যবস্থা হল এক্সিকিউটিভ কর্তৃত্বের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ। কিন্তু এটি ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের পথে অন্তরায়ও হয়ে উঠতে পারে, যখন এটি পুরনো পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে থাকে, বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে রাখে এবং আধুনিকীকরণের পথে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। স্বাধীনতা বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের সংস্কার করতে ক্ষমতাবান করে তুলবে। তাদের উচিত নয়, জনগণের সমালোচনা থেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা (Judiciarys Long Vacations)।

    ‘বিকশিত ভারত’

    সান্যালের বক্তব্যটি শক্তিশালী। কারণ তিনি কোনও আইনজীবী বা বিচারক নন। তিনি অর্থনীতিবিদ, যিনি বিচারব্যবস্থাকে একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। বিচার বিভাগীয় সংস্কারকে ভারতের উন্নয়নের গতিপথের সঙ্গে যুক্ত করে তিনি বিতর্ককে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁর কথা গভীরভাবে অনুরণিত হয়, কারণ তা বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। যতক্ষণ না আদালত ন্যায়বিচার দিচ্ছে, ততক্ষণ সত্যি সত্যিই ভারতের অগ্রগতি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। সঞ্জীব (Sanjeev Sanyal) বলেন, “আমার দৃষ্টিতে বিচারব্যবস্থাই ‘বিকশিত ভারত’ হওয়ার এবং দ্রুত অগ্রসর হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। যথা সময়ে চুক্তি কার্যকর করতে না পারা কিংবা ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হওয়া এখন এত বড় সীমাবদ্ধতা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি আপনাদের বলছি যদি আমরা পুরো আইনি কাঠামোয় বড় ধরনের কোনও সংস্কার না দেখি, তবে সিস্টেমের অন্য যে ক্ষেত্রেই যত কাজই করি না কেন, তার কোনও গুরুত্ব থাকবে না।”

    আগেও বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন সঞ্জীব

    প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে অন্য একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়ে সঞ্জীব বলেছিলেন, “এটি (বিচার বিভাগ) ভারতের প্রবৃদ্ধির পথে কিছু দিক থেকে সবচেয়ে (Judiciarys Long Vacations) বড় বাধা। এটি এখন আমলাতন্ত্রের চেয়ে সময়ের চেয়েও ঢের বেশি পিছিয়ে।” তিনি তখনও বলেছিলেন, “এর বিশাল পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি অবশ্য কেবল বিচারব্যবস্থাকেই দোষারোপ করব না, বিচারকদের ক্ষেত্রে – একটি সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র রয়েছে এবং বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি আইনজীবী এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বার কাউন্সিল ইত্যাদির পদস্থ ব্যক্তিরা আসলে অগ্রগতি থামিয়ে দিচ্ছেন (Sanjeev Sanyal)।”

LinkedIn
Share