মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাল ২০১১। তখনও তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হননি। তাঁর পরিচয় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন থেকেই তাঁর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিলেন তাহাউর রানা (Tahawwur Rana Trial)। অবশেষে ২৬/১১-এর ‘মাস্টার মাইন্ড’কে ভারতে এনেছে তাঁর সরকার। রানার প্রত্যর্পণের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশবাসী। মুম্বই হামলার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তাহাউর রানাকে বৃহস্পতিবারই ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরপরই মোদির একটি পুরনো পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। সেই পোস্টে তাহাউর রানাকে আমেরিকার ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে ভারতে তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মোদি (Narendra Modi)।
কী রয়েছে সেই পোস্টে
২০১১ সালে করা সেই পোস্টে তাহাউর রানাকে (Tahawwur Rana Trial) মার্কিন আদালতের দেওয়া ছাড়পত্র নিয়ে নরেন্দ্র মোদি তৎকালীন ইউপিএ সরকারকে দুষেছেন। নরেন্দ্র মোদি সেই পুরোনো পোস্টে লিখেছিলেন, “তাহাউর রানাকে মার্কিন সরকারের নির্দোষ তকমা দেওয়া আদতে ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত। এটা দেশের বিদেশনীতির বিরাট ব্যর্থতা।” নতুন করে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্ট নেটিজেনদের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলছে। তাহাউর রানাকে ভারতে সফল ভাবে প্রত্যর্পণ করানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয়গান গাইছেন নেটিজেনরা। কেউ বলছেন, ‘আরও এক প্রতিশ্রুতি পূরণ হল।’ আবার কারও কথায়, ‘আপনি করে দেখিয়েছেন স্যার। আপনাকে কুর্নিশ।’ অনেকের পোস্টেই দেখা গিয়েছে, ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান।
অমিত-বার্তা
২০১১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রানাকে মুম্বই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন আমেরিকা কিসের ভিত্তিতে মুম্বই জঙ্গি হামলার অপরাধীদের নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছে। মুম্বই হামলার ‘মাস্টার মাইন্ড’ রানাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতে আনা হয়েছে। রানাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পাটিয়ালা হাউস কোর্টে আনা হয়। আদালত রানাকে ১৮ দিনের এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, রানাকে দেশে ফেরানো মোদি সরকারের বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। এবং সেই সঙ্গেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তাঁর দাবি, ‘যে সরকারের আমলে ওই হামলা হয়েছিল তারা কিন্তু ওকে দেশে ফেরাতে পারেনি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মোদি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য যারা ভারতের মাটি অপব্যবহার করেছে, দেশের সম্মান অবমাননা করেছে, এমনকি ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। তাদের ভারতীয় আইনের অধীনে বিচার করার জন্য দেশে ফিরিয়ে আনা হবেই।”
মোদির জিরো টলারেন্স নীতির ফল
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জিরো টলারেন্স নীতির ফলে এই প্রত্যার্পণ সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, “কংগ্রেস সরকার কিছুই করেনি ২০০৮ সালের হামলার পর। একজন মাত্র জঙ্গি ধরা পড়েছিল— আজমল কাসব, তাকেও জেলে বসে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল। আর এখন যারা দেশকে আক্রমণ করেছে, তাদের দেশের মাটিতে এনে শাস্তি দেওয়ার দৃঢ়তা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এই হচ্ছে নতুন ভারতের সংকল্প।” ইউপিএ আমলে ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে সন্ত্রাসের সঙ্গে সর্বদা নরম মনোভাব দেখিয়েছে কংগ্রেস, দাবি বিজেপির। বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, “ইউপিএ আমলে যারা সন্ত্রাসকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। আজকের ভারত পাল্টে গেছে। উরি কিংবা পুলওয়ামার মতো ঘটনার জবাব এমএফএন দিয়ে নয়, এমটিজে— ‘মুহ তোড় জবাব’ দিয়ে দেওয়া হয়।”
মুখ খুলেছে আমেরিকা
রানার ভারতে প্রত্যর্পণ নিয়ে মুখ খুলেছে আমেরিকাও। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “এই ধরনের হামলার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতের উদ্যোগকে দীর্ঘ দিন ধরে সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা। এখন উনি (রানা) ভারতের হাতে। আমরা খুশি।” মার্কিন আদালতে রানা বার বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ভারতের জেলে তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হবে। তবে ভারত অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। নয়াদিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, জেলেও সুরক্ষিত থাকবেন রানা। এদিকে, মুম্বই হামলার চক্রীকে ভারতে আনা হতেই, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। উল্লেখ্য ২ মাস আগে, মোদির মার্কিন সফরের সময়ই রানার প্রত্যর্পণ ইস্যুটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় উত্থাপিত হয়েছিল। তারপরই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। অবশেষে এখন ভারতে রানা। জনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেও এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল,অভিমত বিশেষজ্ঞদের।