মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অফিস টাইমে শহর কলকাতায় (Waqf Protest in Kolkata) নাভিশ্বাস নিত্যযাত্রীদের। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আজ রাস্তায় নেমেছেন বহু সংখ্যালঘু মানুষ। থুড়ি! বেলা ১০টার শিয়ালদা-মৌলালি চত্বর বলছে, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতির ফলে এরাই এখন ‘সংখ্যাগুরু’। কলকাতা না করাচি বোঝা দায়। বাসে লাগানো পাকিস্তানের পতাকা! চৈত্রের কাঠ-ফাটা রোদে স্কুল থেকে মায়ের হাত ধরে ২ কিমি পথ হেঁটে চলেছে ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা। শিয়ালদা মৌলালির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দুধারে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে। গন্তব্য এনআরএস হাসপাতাল। বেজে চলেছে অ্যাম্বুল্যান্সের ঘণ্টা। তবু পথ ছাড়তে নারাজ মিছিলকারীরা। রোগীর পরিবারের লোকেদের আর্তি পুলিশ কোথায়? সত্যি পুলিশ তো চোখে পড়ছে না, যে-কয়েকজন রয়েছে তারা নীরব দর্শক। চাকরিহারা শিক্ষকরা ন্যায্য দাবি জানালে তাদের উপর লাঠিচার্জ করা যায়। কিন্তু এখানে?
অবরুদ্ধ মৌলালি চত্বর
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তীব্র যানজট শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ৷ ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে এদিন মৌলালির রামলীলা ময়দানে জমায়েত কর্মসূচি ছিল ৷ সেখানে যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে এদিন বাস বোঝাই করে শহরমুখী বিক্ষোভকারীরা ৷ এর ফলে পার্ক সার্কাস, মৌলালি, লেনিন সরণি, এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভার প্রায় অবরুদ্ধ ৷ যান চলাচল খুব ধীরগতিতে চলছে মল্লিকবাজারমুখী সব রাস্তা, এমনকি পার্ক সার্কাসমুখী মা ফ্লাইওভারেও। লালবাজার ট্র্যাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয় সিআইটি রোড। আর তার জেরে তীব্র যানযট হয় গোটা কলকাতা জুড়ে। এদিন ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মৌলালিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি মিছিল যায় মৌলালির রামলীলা ময়দান পর্যন্ত। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আয়োজক সংগঠনের বহু সদস্য উপস্থিত হয়েছেন শহরে। বাইরে থেকে বহু গাড়ি ঢুকেছে কলকাতায়। ফলে মধ্য কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে মন্থর হয়ে গিয়েছে যান চলাচলের গতি।
গরিব মুসলিমরা কী চান!
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থেকে দুই ছেলে ও এক মেয়ের হাত ধরে কলকাতায় এসেছেন সংখ্যালঘু পরিবারের এক মহিলা। ছোট ছেলের পাঁচদিন ধরে জ্বর। শিয়ালদায় ট্রেন থেকে নেমে কোনওরকমে এগিয়ে চলেছেন এনআরএসে ডাক্তার দেখাবেন বলে। কিন্তু ভিড় ঠেলে এগোতে পারছিলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘এসব বিল-টিল বুঝি না, গরিব মুসলিমরা সরকারের বিলের বিরোধিতা করছে না।’’ তাহলে যারা রাস্তায়, তারা কারা? তারা রাজনৈতিক মুসলিম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট-ব্যাঙ্ক। উল্লেখ্য, এর আগে লোকসভায় এই ওয়াকফ বিল উপস্থাপনের দিনও দিল্লি এবং ভোপালে বহু মুসলিম মহিলাদের মোদি বন্দনা করতে দেখা গিয়েছিল।
বাংলায় ওয়াকফের পরিমাণ
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল। এর ফলে উপকৃত হবে গরিব মুসলিমরা।
পাশে মমতার সরকার
সব ইসলামি দেশে ওয়াকফ ব্যবস্থা নেই। তুরস্ক, লিবিয়া, মিশর, সুদান, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডন, তিউনিসিয়া, ইরাকের মতো অনেক ইসলামি দেশের নাম করা যেতে পারে, যেখানে ওয়াকফ বলে কিছু নেই। কিন্তু বাংলায় মোদি বিরোধিতা না করলে দিদি-কে তুষ্ট করা যাবে না। তাই চাকরিহারা শিক্ষকদের মিছিলকে গৌণ করতেই সকাল থেকে ওয়াকফ নিয়ে পথে নেমে পড়া। তাতে বন্ধ হোক, স্কুল-কলেজ-অফিস। ব্যহত হোক চিকিৎসা পরিষেবা। প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো (Mamata Banerjee) বলেছেন, “দিদি যতদিন আছে আপনাদের সম্পত্তি সুরক্ষিত।”
ঘুরিয়ে দেওয়া হল চাকরিহারাদের মিছিল
এদিনই বেলা ১২টা নাগাদ শিয়ালদা থেকে শুরু হয় চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের মিছিল (SSC Jobless Rally)। কালো ব্যাজ পরে মিছিলে হাঁটেন শিক্ষাকর্মীরাও। কিন্তু ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে মিছিলের জেরে মৌলিতে তৈরি হয় প্রবল যানজট। যানজটের জেরে বদলে দেওয়া হয় মিছিলের রুট। চাকরিহারাদের মিছিলের রুট পরিবর্তন করে দেয় পুলিশ। কোলে মার্কেট হয়ে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে কলেজ স্ট্রিট হয়ে ধর্মতলা যান চাকরিহারারা। যোগ্য চাকরিহারাদের বিচার চাই। মিরর ইমেজ প্রকাশ করুক এসএসসি (SSC)’। ওএমআর-এর মিরর ইমেজ প্রকাশ করা হোক’, বুধবারের ঘটনায় পুলিশমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। মিছিল থেকে দাবি চাকরিহারাদের। কিন্তু তিনি তো চাকরিহারাদের পাশে নেই। ব্যস্ত রয়েছেন তাঁর ভোট-ব্যঙ্ক গোছাতে।