Tag: vedas

vedas

  • Dayanand Saraswati: আজ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রয়াণ তিথি, ফিরে দেখা তাঁর কর্মকাণ্ড

    Dayanand Saraswati: আজ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রয়াণ তিথি, ফিরে দেখা তাঁর কর্মকাণ্ড

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর (Dayanand Saraswati) প্রয়াণ তিথি আজ অর্থাৎ ১ নভেম্বর। তিনি মনে করতেন, এদেশের শাশ্বত সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক গ্রন্থগুলির মাধ্যমেই বর্তমান যুগের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আজীবন সত্যের আরাধনা করে গিয়েছেন। প্রতিটি মানুষকে সত্যের উপাসনা করার জন্য তিনি সর্বদা প্রেরণা দিতেন। একটি পত্রিকাও চালু করেছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতী (Dayanand Saraswati), যার নাম ছিল সত্যার্থ প্রকাশ। সেখানেই তিনি বেদ, মনুস্মৃতি, উপনিষদ, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করতেন। সত্যার্থ প্রকাশের মাধ্যমেই, সমাজ গঠন, উন্নত জীবন-যাপন কীভাবে করা যায়, সে কথা বলতেন তিনি। ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রকৃত ভগবান, ইত্যাদি নানা বিষয়ে মতামত দিয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন বৈদিক পণ্ডিত, লেখক, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক সর্বোপরি একজন যোগী।

    ‘বেদের (Vedas) যুগে ফিরে চলো’

    আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী (Dayanand Saraswati) জন্মগ্রহণ করেন ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪ সালে। উনবিংশ শতকের এই মহান কর্মযোগী দার্শনিক এবং সনাতন ধর্মের প্রচারক হিসাবে সামাজিক এবং শিক্ষামূলক বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর মূল বাণী ছিল, ‘বেদের যুগে ফিরে চলো’। এই আদর্শেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন। সমগ্র হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ঊনবিংশ শতকের এই মহান কর্মযোগী মাত্র ৫৯ বছর বয়সে ৩০ অক্টোবর ১৮৮৩ সালে প্রয়াত হন।

    সামাজিক, ধর্মীয় এবং শিক্ষামূলক নানা সংস্কার আন্দোলন
     
    সামাজিক, ধর্মীয় এবং শিক্ষামূলক নানা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দয়ানন্দ সরস্বতী। এর মধ্যে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্থাপন করেন আর্য সমাজ। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বেদের প্রচার এবং ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ। বেদের (Vedas) যুগে ফিরে যাওয়া ছাড়াও আর্য সমাজের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই। তিনি শুদ্ধি আন্দোলনও শুরু করেছিলেন। যে সমস্ত হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হতেন, শুদ্ধি আন্দোলনের মাধ্যমে পুনরায় তাঁদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা হত।

    চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের বিকাশেও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর চিন্তাধারা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল

    বৈদিক সাহিত্যের প্রচার এবং বৈদিক শিক্ষার জন্য সারা জীবন প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী (Dayanand Saraswati)। কারণ তিনি মনে করতেন যে হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিকতা, শারীরিক, মানসিকভাবে যে কোনও হিন্দুর বিকাশ সম্ভব বেদকে অধ্যয়ন করে, বেদের অন্তর্নিহিত সত্যকে উপলব্ধি করে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জ্ঞানের বিকাশের জন্য বৈদিক সাহিত্য অপরিহার্য বলেই তিনি মনে করতেন। বৈদিক সাহিত্যের প্রচারের জন্য তিনি স্কুল এবং কলেজ স্থাপনও করতেন। দয়ানন্দ সরস্বতী ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ নামে একটি পত্রিকা বের করতেন। পত্রিকার মাধ্যমে সামাজিক এবং বিভিন্ন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলতেন। এটা মনে করা হয় যে ভারতবর্ষের চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের বিকাশেও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর চিন্তাধারা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।

    বৈদিক শিক্ষার মাধ্যমেই ভারতের সমাজ এবং সভ্যতার পুনর্জাগরণ সম্ভব

    এছাড়াও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী রচনা করেছিলেন বেদভাষ্য ভূমিকা এবং বেদভাষ্য। একইসঙ্গে আর্য পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করতেন বলে জানা যায়। যেখানে প্রতিফলিত হত, তাঁর চিন্তাধারা। তিনি মনে করতেন, স্বার্থপর এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরোহিতরাই হিন্দু ধর্মকে বিপথগামী করে তুলছে। হিন্দু সংস্কৃতিকে তিনি ভারতবর্ষের ভিত্তি মানতেন। এছাড়াও জানা যায়, যেকোনও ধরনের জাতিভেদ প্রথারও বিরোধী ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত সামাজিক ব্যধির বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলনও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। নারী স্বাধীনতা এবং সমাজের বঞ্চিত শ্রেণীর ক্ষমতায়নের পক্ষেও তিনি বারবার আওয়াজ তুলেছেন। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মনে করতেন, বৈদিক শিক্ষার মাধ্যমেই ভারতের সমাজ এবং সভ্যতার পুনর্জাগরণ সম্ভব। এজন্য তিনি অসংখ্য গুরুকুল স্থাপন করেন। পুরুষ-নারীদের আলাদা আলাদা গুরুকূল তিনি স্থাপন করেছিলেন।

    তিনিই প্রথম স্বরাজ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন 

    দয়ানন্দ সরস্বতী সারা জীবন সচেষ্ট ছিলেন যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব থেকে এ দেশকে কীভাবে মুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে। একই সঙ্গে গণতন্ত্র এবং জাতির গঠন নিয়ে তিনি অনেক জায়গাতেই বক্তৃতা করেছেন বলে জানা যায়। তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বরাজ কথাটি সর্ব প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যও তিনি আওয়াজ তুলতেন। পরবর্তীকালে লোকমান্য তিলক যে স্বরাজ-এর কথা বলতেন, সেই ধারনা তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর (Dayanand Saraswati) কাছ থেকেই পেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Hinduism And Quantum Physics: সনাতন ধর্মের  বেদের দ্বারা প্রাণিত হয়েছিলেন পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা?

    Hinduism And Quantum Physics: সনাতন ধর্মের  বেদের দ্বারা প্রাণিত হয়েছিলেন পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘সবই বেদে আছে।’ বহু ব্যবহারে অতি ক্লিশে হয়ে যাওয়া এই শব্দবন্ধ যে নিছক কথার কথা নয়, তার প্রমাণ মিলেছে বহুবার। এবার আরও একবার জানা গেল, মহাবিশ্বের বয়স অনুমান থেকে শুরু করে জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, সৃষ্টিরহস্য সবই রয়েছে হিন্দু ধর্মের মূল স্তম্ভরূপ শক্তি বেদে (Hinduism And Quantum Physics)। বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের মতে, মহাবিশ্বের যে বয়স অনুমান করে আধুনিক বিজ্ঞান, তার সঙ্গে মেলে বেদে উল্লিখিত তথ্যও।

    ‘সবই বেদে আছে’ (Hinduism And Quantum Physics)

    অথর্ব বেদের চিকিৎসা পদ্ধতি আজও বিস্ময়ের জন্ম দেয় চিকিৎসকদের মধ্যে। চরক এবং সুশ্রুত সংহিতায় এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির কথা রয়েছে, যা আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময় বলে বিবেচিত হয়। এই বেদেই মেলে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বহু তত্ত্ব। ক্যালকুলাস, শূন্য, ঋণাত্মক সংখ্যার ধারণা, দশমিক, পাই, সাইন, কো-সাইইন, বিগ ব্যাং এবং একটি আন্তঃমাত্রিক মাল্টিভার্সের ধারণাও পাই বেদে (Hinduism And Quantum Physics)।

    কর্ম এবং পুনর্জন্মের ধারণা

    কর্ম এবং পুনর্জন্মের যে ধারণা বহু আগে বলে গিয়েছেন আর্য ঋষিরা, সেসবেরই মূল ভিত্তি ছিল বৈজ্ঞানিক। পদার্থবিদ্যায় বলা হয় শক্তি অবিনশ্বর। বেদেও তো বলা হয়েছে শক্তির সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস নেই। সেটা প্রাণ শক্তি হোক কিংবা পরাশক্তি। পদার্থবিদ্যায় বলে প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সনাতন ধর্মের কর্মফলবাদও তো সেকথাই বলে আসছে সেই কোন সুপ্রাচীন কাল থেকে।

    ‘কজ অ্যান্ড এফেক্ট’

    ফিজিক্সের ‘কজ অ্যান্ড এফেক্টে’র কথাই ধরা যাক। বৈদিক ঋষি এই তত্ত্বের উদগাতা। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানের দাবি, এ সত্য তাদের আবিষ্কার। অথচ, সনাতন ধর্মের কার্য-কারণবাদের ধারণার সঙ্গে মেলে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের ধারণা। আধুনিক পদার্থবিদ্যা বলে জড় উপ-পরমাণুগুলি মানুষের চিন্তার সংস্পর্শে না আসা পর্যন্ত সুপ্ত থাকে। সচেনতা প্রয়োগ করা হলে কণাগুলি জীবিত বা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বস্তুত, এই ধারণার হদিশ আধুনিক বিজ্ঞানের ঢের আগে মেলে বেদে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জনক বলা হয় যে দুই বিজ্ঞানীকে, তাঁদেরই একজন হলেন নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী নীলস বোর। সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বিশ্বখ্যাত এই পদার্থবিদ বলেছিলেন, “আমার মনে কোনও প্রশ্ন জাগ্রত হলে আমি উপনিষদের দ্বারস্থ হই।”

    বেদের জয়গান

    বিস্ময় বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার কথায়ও তো জয়গান শোনা যায় বেদের ধারণারই। তিনি বলেছেন, “মানসিক শক্তির উপহার আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে। আমরা যদি এই সত্যের ওপর মনকে নিবিষ্ট করতে পারি, আমরা এই মহান শক্তির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারব।” নিয়মিত বেদ পাঠ করতেন বিশ্বশ্রুত বিজ্ঞানী হেইনসবার্গ। তিনি বলেন, “যাঁরা বেদান্ত পড়েছেন, তাঁদের কাছে কোয়ান্টাম থিয়োরি হাস্যকর লাগবে না।” প্রসঙ্গত, বেদের শেষ ভাগকেই ‘বেদান্ত’ বা ‘উপনিষদ’ বলে।

    আর পড়ুন: গণনা চলছে ইরানের নির্বাচনের ভোট, ‘পুতুল’ প্রেসিডেন্ট কে?

    বেদের ঋষিই তো বস্তুর ভরের ধারণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ইউনির্ভাসাল ইনটেলিজেন্স এবং চেতনা ছাড়া মহাবিশ্ব হয়ে পড়বে স্থির, থাকবে না জীবনের অস্তিত্ব। মহাকর্ষ এবং সময় যে সম্পর্কিত, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের এই তত্ত্বের উদগাতাও তো বেদেরই ঋষি (Hinduism And Quantum Physics)। যোগের ফলে যে আত্মার সঙ্গে দেবমূর্তির ঐক্য স্থাপিত হয়, তা তো বিজ্ঞানের কানেকটেড কনসাসনেসের ধারণা ব্যক্ত করে। জড় বস্তু ও সজীব বস্তুর ধারণাও তো প্রতিফলিত হয় পূজকের ইনটেনশানের মধ্যে দিয়ে। পূজক যখন বিগ্রহের পায়ে কোনও কিছু দিয়ে ‘স্বাহা’ কিংবা ‘স্বধা’ বলেন, তখন তো তিনি আসলে বলেন ‘কী নিবেদন করা হচ্ছে’ (স্বাহা), ‘এই বস্তুটি নিবেদনের উদ্দেশ্য’(স্বধা)। বেদে দ্যূলোক, ভূলোক-সহ একাধিক লোকের কথা বলা হয়েছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সেও তো সেই ধারণারই প্রতিরূপ দেখতে পাই। কোয়ান্টাম ফিজিক্সে ইউনিভার্স নয়, বলা হয়েছে মাল্টিভার্সের কথা।

    ওপেনহাইমারের গলায় হিন্দুধর্মস্তুতি

    হিন্দু ধর্মের জয়গান শোনা যায় বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারের গলায়ও। তিনি বলেন, “বিশ্বে হিন্দুধর্মই একমাত্র ধর্ম যারা বলে মহাবিশ্ব স্বয়ং মারা যায়, পুনর্জন্ম গ্রহণ করে। এটিই একমাত্র ধর্ম, যেখানে সময়ের স্কেলগুলি আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে মিলে যায়। এর চক্র আমাদের সাধারণ দিনরাত্রি থেকে ব্রহ্মার দিনরাত পর্যন্ত ৮.৬৪ বিলিয়ন বছর দীর্ঘ। পৃথিবী বা সূর্যের বয়সের চেয়ে দীর্ঘ এবং বিগ ব্যাংয়ের থেকে প্রায় অর্ধেক। তাদের দীর্ঘ সময়ের স্কেলও রয়েছে।”

    বেদের বিভিন্ন তত্ত্বের রহস্য উদ্ঘাটন করবেন বলেন সংস্কৃত শিখেছিলেন বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার। পরে তিনি সংস্কৃতেই পড়েছিলেন ভগবদ-গীতা। তাঁর মতে, গীতা তাঁর জীবনদর্শনকে বদলে দিয়েছিল। গীতাকে তিনি ‘সর্বাধিক ইনফ্লুয়েন্সিয়াল গ্রন্থ’ বলেও অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই শতাব্দীর সব চেয়ে বড় সুবিধা হল বেদ হাতে পাওয়া। সমস্ত কোয়ান্টাম প্রসেসের জনক সুপ্রিম ফাদার কৃষ্ণ (Hinduism And Quantum Physics)।”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

     

  • Sanatan Dharma: সনাতন ধর্মে ঋষি এবং বেদের ভূমিকা জানুন

    Sanatan Dharma: সনাতন ধর্মে ঋষি এবং বেদের ভূমিকা জানুন

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সপ্তসিন্ধু তীরে খ্রিস্টের জন্মের ২৫০০ বছর আগে বেদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। বিভিন্ন সাহিত্যে, নাটকে কণ্ব মুনির আশ্রমে শকুন্তলার বেড়ে ওঠার গল্পতো খুবই জনপ্রিয়। প্রাচীন বৈদিক সভ্যতার সামাজিক জীবন আমাদের সামনে এইভাবেই চিত্রায়িত হয়।

    সনাতন ধর্মে (Sanatan Dharma) ঋষিদের ভূমিকা

    গৈরিক বসন পরিহিত গলায় রুদ্রাক্ষের মালা সমেত শ্বেত শুভ্র লম্বা দাড়ি, ঋষি শব্দ শুনলেই আমাদের মনে এমন এক পুরুষের চিত্র ভেসে ওঠে। ঋষি মানে মন্ত্রদ্রষ্টা। যাঁরা সংস্কার দান করেন। সংস্কৃতিকে ধারণ করে থাকবেন এবং জীবন বোধ সম্পর্কে শিক্ষা দেবেন। প্রত্যেক বৈদিক ঋষিই ছিলেন এক একজন মহান যোগী যাঁরা ঘন অরণ্যে অথবা পর্বতের গুহায় তপস্যা করতেন। সর্বোচ্চ এবং শাশ্বত সত্যকে জানার তপস্যা। তপস্যায় তাঁরা যে জ্ঞান উপলব্ধি করতেন , সেই জ্ঞানই পরবর্তীকালে বেদ এবং বিভিন্ন মন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হত। 

    প্রাচীন ভারতীয় ঋষিরা মহাকাশ বিজ্ঞান এবং প্রকৃতি সম্পর্কেও অনেক যুক্তিনির্ভর তথ্য দিয়েছেন। যেগুলি বর্তমানে সময়োপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এগুলি ছাড়াও  চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য, প্রযুক্তিবিদ্যা, শিল্পবিদ্যা, আধ্যাত্মিক বিদ্যা এসব বিষয়ের চর্চাও প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মধ্যে ছিল বলে জানা যায়। শূন্যের আবিষ্কারক আর্যভট্ট, জ্যোতির্বিজ্ঞানী বরাহমিহির, চিকিৎসাশাস্ত্রে চরক, সুশ্রুত ইতিহাস প্রসিদ্ধ নাম।

    বৈদিক সভ্যতায় যে সমস্ত বিষয় ঋষিরা চর্চা করতেন সেগুলিকে সাধারণত বলা হত আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান, এটাই সনাতন ধর্মের (Sanatan Dharma) মূল তত্ত্ব বলা যেতে পারে। ভারতীয় পরম্পরা এবং ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার যে ধারা, সেটিকে ভারতীয় মুনি ঋষিরাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করে গেছেন। প্রাচীন ভারতীয় ঋষিরা সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতেন। সংস্কৃত ছন্দের মাধুর্যে উচ্চারিত হত বৈদিক শ্লোক। সারা পৃথিবীতে যখন লিখিত শব্দ অজ্ঞাত ছিল তখন কিন্তু ভারতীয় মুনি ঋষিদের স্মৃতিশক্তির কারণেই  ঋষিদের জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হতো। একেই বলা হয় গুরু শিষ্য পরম্পরা। 

    প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় কোন কোন বিষয় পড়ানো হত

    আধুনিককালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা কিছু পড়ানো হয় প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সভ্যতায় (Sanatan Dharma) এর থেকে কম কিছু পড়ানো হতো না। সে সময়ে চতুরাশ্রমের কথাতো আমরা সকলেই জানি। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। ব্রহ্মচর্য পালনকালে শিষ্যরা গুরুগৃহে থেকে বিদ্যা আহরণ করতো। এই সময়ে শিষ্যকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করতেন গুরু। কোন কোন বিষয় তখন গুরুগৃহে পড়ানো হত গুরুকুলে, তার একটি তালিকা একনজরে দেখা যাক। প্রথমে জেনে নিই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বিষয়ে কী কী পড়ানো হত।

    ১) অগ্নিবিদ্যা (Metallurgy)

    ২) বায়ুবিদ্যা (aviation)

    ৩) জলবিদ্যা (Navigation)

    ৪) অন্তরীক্ষবিদ্যা (Space Science)

    ৫) পৃথিবীবিদ্যা (Environment and Ecology)

    ৬) সূর্যবিদ্যা (Solar System Studies)

    ৭) চন্দ্রলোক বিদ্যা (Lunar Studies)

    ৮) মেঘ বিদ্যা (Weather Forecast) 

    ৯) পদার্থ-বিদ্যুৎবিদ্যা (Battery)

    ১০) সৌরশক্তি-বিদ্যা (Solar Energy)

    ১১) দিনরাত্রি-বিদ্যা (Day Night Studies)

    ১২) সৃষ্টিবিদ্যা (Space Research)

    ১৩) মহাকাশ বিজ্ঞান (Cosmic Science)

    ১৪) ভূগোলবিদ্যা (Geography)

    ১৫) কালবিদ্যা (Time)

    ১৬) ভূগর্ভ-বিদ্যা (Geology and Mining)

    ১৭) রত্ন এবং ধাতুবিদ্যা (Gemology and Metal)

    ১৮) আকর্ষণবিদ্যা (Gravity)

    ১৯) আলোকবিদ্যা (Optics)

    ২০) যোগাযোগ-বিদ্যা (Communication)

    ২১) বিমানবিদ্যা (Aviation)

    ২২) জলযান-বিদ্যা (Water Hydraulics Vessels)

    ২৩) অস্ত্রবিদ্যা (Arms and Ammunition)

    ২৪) জীবজন্তু বিজ্ঞান (Zoology Botany)

    ২৫) পদার্থবিদ্যা (Material science)

    বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর রীতিও প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সভ্যতায় (Sanatan Dharma) প্রচলিত ছিল। এরকম ৩৫ টি বিষয় প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সভ্যতাতে পড়ানো হতো যেগুলি আমরা জানবো এবার এক নজরে।

    ১) বাণিজ্য (Commerce)

    ২) ভেষজ (Pharmacy)

    ৩) শল্যকর্ম বা চিকিৎসা (Diagonis and Surgery) 

    ৪) কৃষি (Agriculture)

    ৫) পশুপালন (Animal Husbandry)

    ৬) পাখি পালন (Birdkeeping)

    ৭) পশু প্রশিক্ষণ (Animal Training)

    ৮) যান যন্ত্রকার (Mechanics)

    ৯) রথকার (Vehicle Designing)

    ১০) রত্নকার (James Designing)

    ১১) সুবর্ণকার (Jewellery Designing)

    ১২) বস্ত্রকার (Textile)

    ১৩) কুম্ভকার (Pottery)

    ১৪) লৌহকার (Metallurgy)

    ১৫) তক্ষক (Toxicology)

    ১৬) রঙ্গসাজ (Dying)

    ১৭) রজ্জুকর (Logistics)

    ১৮) বাস্তুকার (Architect)

    ১৯) পাকবিদ্যা (Cooking)

    ২০) সারথ্য (Driving)

    ২১) নদীজল প্রবন্ধক (Water Management)

    ২২) সুচিকার (Data Entry)

    ২৩) গোশালা (Animal Husbandry)

    ২৪) নদী জল প্রবন্ধক (Water Management)

    ২৫) বাগানপাল (Horticulture)

    ২৬) বনপাল (Forestry)

    ২৭) বদ্যি (Paramedical)

    ২৮) অর্থশাস্ত্র (Economics)

    ২৯) তর্কশাস্ত্র (Logic)

    ৩০) ন্যায়শাস্ত্র  (Law)

    ৩১) নৌকাশাস্ত্র (Ship Building) 

    ৩২) রসায়ন শাস্ত্র  (Chemical Science)

    ৩৩) ব্রহ্মবিদ্যা (Cosmology)

    ৩৪) অথর্ববেদ (Atharvved)

    ৩৫) ব্যবচ্ছেদ (Postmortem)
     
    বেদ এবং স্মৃতির ভাগ

    প্রাচীন ভারতীয় পরম্পরায় (Sanatan Dharma) বৈদিক সাহিত্যের দুটি ভাগ ছিল। একটি শ্রুতি এবং অপরটি স্মৃতি। গুরুর মুখ থেকে শিষ্যরা শুনে শুনে বেদ মুখস্ত করতো তাই বেদের অপর নাম শ্রুতি এবং এই পরম্পরা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে প্রবাহিত হত। শ্রুতির মধ্যে চারটি বেদ রয়েছে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদ আবার কতগুলি ভাগে বিভক্ত যেমন বেদাঙ্গ, উপবেদ, সংহিতা,  ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। 

    প্রতিটি বেদাঙ্গের আবার ছ’টি ভাগ রয়েছে যেমন ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, নিরুক্ত, শিক্ষা, ছন্দ ও কল্প। প্রতিটি উপবেদের আবার চারটি ভাগ রয়েছে অর্থভেদ, ধনুর্বেদ, গন্ধর্ববেদ এবং আয়ুর্বেদ। 

    স্মৃতির মধ্যে পড়ছে ১৮ টি পুরাণ, তন্ত্রবিদ্যা, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সমেত বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র-গুলি তার পাশাপাশি ঐতিহাসিক যে গ্রন্থ, মহাকাব্য রামায়ণ এবং মহাভারতও স্মৃতির মধ্যে পড়ছে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

     

LinkedIn
Share