মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের ইতিহাস কেবল তারিখ আর যুদ্ধের সংকলন নয়। এই ইতিহাসের মধ্যে মানবিক অভিপ্রায় এবং সংবেদনশীলতাও রয়েছে। ভারতীয়রা (Young Bharat) কীভাবে নিজেদের সাহস, নৈতিক দৃঢ়তা এবং আত্মিক শক্তিকে জীবন্ত করে রেখেছে তারও বাস্তব উদাহরণ রেখে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। প্রতি বছর ২৬শে ডিসেম্বর পালিত হয় বীর বাল দিবস (Veer Bal Diwas)। এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় একটি অমর অধ্যায়। এই দিনেই দশম শিখ গুরু, গুরু গোবিন্দ সিং-এর কনিষ্ঠ পুত্রদ্বয়—জোরাবর সিং এবং ফতেহ সিং-আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। না নিজের ধর্ম এবং রাষ্ট্রের জন্য বিদেশী শাসকের বশ্যতা স্বীকার করেননি। মাত্র নয় আর ছয় বছর বয়সে দুই বালক নিজদের বীরত্বের পরিচয়ে অমর হয়ে আছে। মুঘল শাসকদের সামনে তারা নিজধর্ম এবং আত্ম-সম্মান রক্ষার জন্য যে সাহস দেখিয়েছিল , তাদের সেই বলিদান আজও ভারতবাসীর কাছে অমর।
দেওয়ালের মধ্যে গেঁথে হত্যা করা হয়েছিল (Veer Bal Diwas)
তখন সময়টা ছিল ১৭০৫ সাল। মুঘল অত্যাচার তখন চরমে, এবং গুরু গোবিন্দ সিং জির পরিবারকে চরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছিল। গোবিন্দ সিং-এর দুই পুত্রের ঠাকুমা গুজরিকেও বন্দি করা হয়। মুঘল শাসক উজির খানের নির্দেশে তাদের ধর্ম ত্যাগ করার জন্য হুমকি, প্রলোভন এবং ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই শিশুরা অসাধারণ স্থিরতা ও সংকল্পের সঙ্গে মুঘলদের সবরকম দাবিকে নস্যাৎ করে। ফলস্বরূপ, তাদের জীবন্ত অবস্থায় একটি দেওয়ালের মধ্যে গেঁথে হত্যা করা হয়। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল না, এটি ছিল মানব আত্মার সর্বোচ্চ পরীক্ষা—যেখানে শরীরকে নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করলেও তাদের স্থির সিদ্ধান্ত ছিল অটুট। আর এই জন্যই গোবিন্দ সিং-এর দুই সন্তান কর্ম এতো মহৎ (Veer Bal Diwas) হয়ে উঠেছে।
বয়স একটা সংখ্যামাত্র
দেশের শিশু ও যুব সমাজ যাতে এই আত্মত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারে, সেই লক্ষ্যে ২০২২ সালে ভারত সরকার ২৬ ডিসেম্বরকে বীর বাল দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনটি শুধু স্মরণের জন্য নয়, দিনের সত্যতা, নৈতিকতা এবং আত্ম-সম্মানকে আমাদের জীবনের কেন্দ্রে যাতে রাখার মন্ত্র স্বরূপ ভাবা যায় সেই কথাকেই সরকারের তরফ থেকে প্রচার করা হয়। ফলে অনেক ইতিহাসবিদরাই মনে করছেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র, মনের অভীষ্ট সিদ্ধান্ত কতটা সুদূর প্রসারী (Young Bharat) হতে পারে তা এই বাল দিবসের (Veer Bal Diwas) ভাবনায় স্পষ্ট।
জেন জি-দের জন্য অনুপ্রেরণার
বর্তমানে, এই বীর বাল দিবসের (Veer Bal Diwas) ভাবনা জেন জি (Gen Z)-এর জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। যারা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তাদের জন্য ভীষণ ভাবে অণুপ্রেরণা দেবে। গবেষণায় দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন ভারতীয় তরুণের মধ্যে প্রায় একজন উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা মানসিক কষ্টের লক্ষণ দেখায়। এই সময়ে, বীর বাল দিবসের গল্পটি একটি প্রতিবিম্বের মতো। সেই সঙ্গে একটি প্রদীপের মতও। এক দিকে যেমন প্রতিরূপ (Young Bharat) দেখায় ঠিক একই ভাবে আবার উদ্যমতার আগুনও জ্বালিয়েও দেয়।
বীরত্ব কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়
গুরু গোবিন্দ সিং-এর দুই সন্তানের জীবন আজকের তরুণ প্রজন্মের সমাজকে শেখায় আত্ম-সম্মান বাইরের অনুমোদন থেকে নয়, বরং ভেতরের বিশ্বাস থেকে আসে। চরম চাপের মধ্যেও তারা নিজেদের মূল্যবোধে অবিচল ছিলেন। তাদের গল্প আমাদের (Young Bharat) মনে করিয়ে দেয়, জীবনের মহত্ত্ব, তার দৈর্ঘ্যে নয়, বরং তার গভীরতা ও উদ্দেশ্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে। মানসিক দৃঢ়তা বয়সের দ্বারা আবদ্ধ নয়। জীবনের পূর্ণতা কর্ম এবং আদর্শের মধ্যেই। আজকের জগতে, বীরত্ব কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, মনের ভেতরের ভূখণ্ডেও সমানভাবে প্রয়োজন। পড়াশোনায় ব্যর্থ হওয়ার পর আবার উঠে দাঁড়ানো, মানসিক কষ্ট নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা, সাহায্য চাওয়া, ক্ষতিকারক অভ্যাস ত্যাগ করা এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, এই সকল ক্ষেত্রে বীর বাল দিবসের (Veer Bal Diwas) গুরুত্ব অপরিসীম।
মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রগতি বৃদ্ধি পাবে
২০২৫ সালের এই বীর বাল দিবস (Veer Bal Diwas) আজকের তরুণদের এই আশ্বাস দেয় যে তারা একা নয়। তারা এমন এক উত্তরাধিকারের ধারক যা মানসিক শক্তি, আত্ম-সম্মান এবং উদ্দেশ্যের অনুভূতির ধারক বাহক। তাই বীর বাল দিবসে নিজেরা এবং পারিপার্শ্বিক বন্ধুদের মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রগতি কিভাবে বৃদ্ধি পাবে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে। একে অপরের কথা শোনা এবং সাহস নিয়ে বাঁচতে শেখার সংকল্পও গ্রহণ করে। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ সমাজকে মূল্যবোধের দ্বারা মনকে আরও শক্তিশালী করতে বিশেষ ভাবে অনুপ্রেরণার সঞ্চার করে।
