মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৯ সালের মধ্যে দেশের ৫০টি দেশীয় পর্যটনস্থলকে বিশ্বমানের আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থলে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। ‘ট্যুরিজম বুস্ট ভিশন ২০২৯’ (Tourism Vision 2029) নামে মোদি সরকারের এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যই হল দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধুনিক পরিকাঠামোর সমন্বয়ে (Indias Heritage) এক নতুন বৈশ্বিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলা।
এক মাসের মধ্যে সম্ভাব্য পর্যটনস্থলের নাম (Tourism Vision 2029)
জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এক মাসের মধ্যে সম্ভাব্য পর্যটনস্থলের নাম প্রস্তাব করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত জায়গাগুলিতে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এই উন্নয়ন একটি কেন্দ্রীয় নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যেখানে মজবুত উন্নয়ন, সহজলভ্যতা এবং দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতা – এই তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কাশ্মীরের তুষারাবৃত উপত্যকা থেকে কেরালার শান্ত ব্যাকওয়াটার, গুজরাটের উপকূলীয় ঐতিহ্য থেকে অসমের সবুজ পাহাড় -এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র্যকে এক ঐক্যবদ্ধ উৎকর্ষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।
আন্তর্জাতিক পর্যটনের প্রতিযোগিতামূলক সম্পদ
সরকারি আধিকারিকরা এই প্রকল্পকে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা ভারতের বিশাল সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদকে আন্তর্জাতিক পর্যটনের প্রতিযোগিতামূলক সম্পদে রূপান্তরিত করবে। এই প্রকল্প এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অন্তত একটি করে ফ্ল্যাগশিপ পর্যটনকেন্দ্রে উন্নয়ন করা যায়। এটি আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা এবং জাতীয় গৌরবের আহ্বানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিরাট কর্মসংস্থানের সুযোগ
আধিকারিকদের মতে, এই ৫০টি নির্বাচিত পর্যটনস্থলের উন্নয়ন হলে তা বিরাট কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে (Tourism Vision 2029), ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে, ভারতে ঢুকবে রাশি রাশি বিদেশি মুদ্রা। স্থানীয় শিল্পী, পর্যটনগাইড এবং হোটেল শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও সরাসরি উপকৃত হবেন। সর্বোপরি, এই প্রকল্পের লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, বিশেষত পর্যটন পরিকাঠামো খাতে। তবে এটি এমনভাবে রূপায়িত হবে যাতে পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের বৈশ্বিক মানদণ্ড বজায় থাকে (Indias Heritage)।
আধুনিক যুগের স্বদেশি আন্দোলন!
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রের এই উদ্যোগ পর্যটনে আধুনিক যুগের এক স্বদেশি আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করে – যার ভিত্তি স্থানীয় সংস্কৃতি, অথচ উপস্থাপিত হবে বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এর লক্ষ্য এমন সব পর্যটনস্থল তৈরি করা, যা ভারতের চিরন্তন ঐতিহ্যকে প্রকাশ করবে এবং একই সঙ্গে উৎকর্ষ ও নবতর উদ্ভাবনের আকাঙ্ক্ষাকেও প্রতিফলিত করবে। মোদি সরকারের আশা, ২০২৯ সালের মধ্যে ভ্রমণপিপাসুরা ভারত আবিষ্কারের ৫০টি নতুন কারণ খুঁজে পাবেন, যেখানে প্রতিটি জায়গাই হবে ‘বিকশিত ভারতে’র প্রতিচ্ছবি (Tourism Vision 2029)।
‘আত্মনির্ভর ভারত’
‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়তে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওকাণ্ডের জেরে পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুর চালায় ভারত। তার পর থেকে তিনি আরও বেশি করে জোর দিয়েছেন আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ওপর। এজন্য আহ্বানও জানিয়েছেন দেশবাসীকে। কেবল কৌশলগত ক্ষেত্রেই নয়, বরং ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং পর্যটনকেও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও জোর দিয়েছেন তিনি। এই সময়ই ভারতের পর্যটন শিল্প যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্কের মতো দেশগুলিকে বয়কট করার। কারণ তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষ (Indias Heritage)। এই সময় আম-ভারতীয়কে সরকার বারবার জানিয়েছে, ভারতে পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা অসীম। তবে এই শিল্প ক্ষেত্রে জোয়ার আনতে গেলে যা প্রয়োজন, তা হল এই ক্ষেত্রকে সঠিক দিকনির্দেশে পরিচালিত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল। আধিকারিকদের ভাষায়, “নয়া পরিকল্পনাটি ঠিক সেটাই, যেটি ভারতের স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সুবিধেগুলিকে বিশ্বমানের প্রতিযোগিতামূলক গন্তব্যে রূপান্তরিত করবে (Tourism Vision 2029)।”
কী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসেই নীতি আয়োগের বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের বলেছিলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের উন্নত দেশে রূপান্তর ত্বরান্বিত করার কৌশলগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত শহর নির্মাণ এবং প্রতিটি রাজ্যে কমপক্ষে একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে। ওই বৈঠকে তিনি পর্যটন শিল্পকে চাঙা করতে, স্থানীয় অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে এবং মজবুত নগর গড়ে তুলতে (Indias Heritage) ‘এক রাজ্য, এক বিশ্বব্যাপী গন্তব্যে’র প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাজ্যগুলির উচিত সর্বাত্মক পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিশ্বব্যাপী মাণদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তত একটি করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা। এটি প্রতিবেশী শহরগুলির উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অনুঘটকের কাজ করবে (Tourism Vision 2029)।”



