Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 490: “যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি, ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না”

    Ramakrishna 490: “যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি, ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—অনন্ত ঢুকুতে চাও কেন? তোমাকে ছুঁলে কি তোমার সব শরীরটা ছুঁতে হবে? যদি গঙ্গাস্নান করি তা হলে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত কি ছুঁয়ে যেতে হবে? ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’। যতক্ষণ ‘আমি’ টুকু থাকে ততক্ষণ ভেদবুদ্ধি। ‘আমি’ গেলে কি রইল তা কেউ জানতে পারে না,— মুখে বলতে (Kathamrita) পারে না। যা আছে তাই আছে! তখন খানিকটা এঁতে প্রকাশ হয়েছে আর বাদবাকিটা ওখানে প্রকাশ হয়েছে,—এ-সব মুখে বলা যায় না। সচ্চিদানন্দ সাগর!—তার ভিতর ‘আমি’ ঘট। যতক্ষণ ঘট ততক্ষণ যেন দুভাগ জল,—ঘটের ভিতরে একভাগ, বাহিরে এক ভাগ। ঘট ভেঙে গেলে—এক জল—তাও বলবার জো নাই!—কে বলবে?

    বিচারান্তে ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সঙ্গে মিষ্টালাপ করিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুমি তো আনন্দে আছ?

    ত্রৈলোক্য—কই এখান থেকে উঠলেই আবার যেমন তেমনি হয়ে যাবে। এখন বেশ ঈশ্বরের উদ্দীপনা হচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—জুতো পরে থাকলে, কাঁটা বনে আর তার ভয় নাই। ‘ঈশ্বর সত্য আর সব অনিত্য’ এই বোধ ধাকলে কামিনী-কাঞ্চনে আর ভয় নাই।

    ত্রৈলোক্যকে মিষ্টমুখ করাইতে বলরাম কক্ষান্তরে লইয়া গেলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ত্রৈলোক্যের ও তাঁহার মতালম্বী লোকদিগের ভক্তদের নিকট বর্ণনা করিতেছেন। রাত নয়টা হইল।

    অবতারকে কি সকলে চিনিতে পারে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) গিরিশ, মণি ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—এর আকি জানো! একটা পাতকুয়ার ব্যাঙ কখনও পৃথিবী দেখে নাই; পাতকুয়াটি জানে; তাই বিশ্বাস করবে না যে, একটা পৃথিবী আছে। ভগবানের আনন্দের সন্ধান পায় নাই, তাই ‘সংসার, সংসার’ করছে।

    (গিরিশের প্রতি)—“ওদের সঙ্গে বকচো কেন? দুইই নিয়ে অছে। ভগবানের আনন্দের আস্বাদ না পেলে, সে আনন্দের কথা বুঝতে পারে না। পাঁচবছরের বালককে কি রমণসুখ বোঝানো যায়? বিষয়ীরা যে ঈশ্বর ঈশ্বর করে, সে শোনা কথা। যেমন খুড়ী জেঠিরা কোঁদল করে, তাদের কাছ থেকে বালকেরা শুনে শেখে আর বলে(Kathamrita), ‘আমার ঈশ্বর আছেন’, ‘তোর ঈশ্বরের দিব্য।

  • Ramakrishna 489: “প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ— যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার”

    Ramakrishna 489: “প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ— যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও অবতারতত্ত্ব

    একজন ভক্ত (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনার বইয়েতে দেখলাম আপনি অবতার মানেন না। চৈতন্যদেবের কথায় দেখলাম।

    ত্রৈললোক্য—তিনি নিজেই প্রতিবাদ করেছেন,—পুরীতে যখন অদ্বৈত ও অন্যান্য ভক্তেরা ‘তিনিই ভগবান’ (Ramakrishna) এই বলে গান করেছিলেন, গান শুনে চৈতন্যদেব ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের অনন্ত ঐশ্বর্য। ইনি যেমন বলেন ভক্ত ঈশ্বরের বৈঠকখানা। তা বৈঠকখানা খুব সাজান বলে কি আর কিছু ঐশ্বর্য নাই?

    গিরিশ—ইনি বলেন, প্রেমই ঈশ্বরের সারাংশ—যে মানুষ দিয়ে ঈশ্বরের প্রেম আসে তাকেই আমাদের দরকার। ইনি বলেন, গরুর দুধ বাঁট দিয়ে আসে, আমাদের বাঁটের দরকার। গরুর শরীরে অন্য কিছু দরকার নাই; হাত, পা কি শিং।

    ত্রৈলোক্য—তাঁর প্রেমদুগ্ধ অনন্ত প্রণালী দিয়ে পড়ছে! তিনি যে অনন্তশক্তি!

    গিরিশ—ওই প্রেমের কাছে আর কোন শক্তি দাঁড়ায়?

    ত্রৈলোক্য—যাঁর শক্তি তিনি মনে (Kathamrita) করলে হয়! সবই ঈশ্বরের শক্তি।

    গিরিশ—আর সব তাঁর শক্তি বটে,—কিন্তু অবিদ্যা শক্তি।

    ত্রৈলোক্য—অবিদ্যা কি জিনিস! অবিদ্যা বলে একটা জিনিস আছে না কি? অবিদ্যা একটি অভাব। যেমন অন্ধকার আলোর অভাব। তাঁর প্রেম আমাদের পক্ষে খুব বটে। তাঁর বিন্দুতে আমাদের সিন্ধু! কিন্তু ওইটি যে শেষ, একথা বললে তাঁর সীমা করা হল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্য ও অন্যানা ভক্তদের প্রতি)—হাঁ হাঁ, তা বটে। কিন্তু একটু মদ খেলেই আমাদের নেশা হয়। শুঁড়ির দোকানে কত মদ আছে সে হিসাবে আমাদের কাজ কি! অনন্ত শক্তির খপরে আমাদের কাজ কি?

    গিরিশ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—আপনি অবতার মানেন?

    ত্রৈলোক্য—ভক্ততেই ভগবান (Ramakrishna) অবতীর্ণ। অনন্ত শক্তির manifestation হয় না,—হতে পারে না!—কোন মানুষেই হতে পারে না।

    গিরিশ—ছেলেদের ‘ব্রহ্মগোপাল’ বলে সেবা (Kathamrita) করতে পারেন, মহাপুরুষকে ঈশ্বর বলে কি পূজা করতে পারা যায় না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি)—অনন্ত ঢুকুতে চাও কেন? তোমাকে ছুঁলে কি তোমার সব শরীরটা ছুঁতে হবে? যদি গঙ্গাস্নান করি তা হলে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত কি ছুঁয়ে যেতে হবে? ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’।

  • Ramakrishna 488: “‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়, তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে”

    Ramakrishna 488: “‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়, তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিদ্যার সংসার—ঈশ্বরলাভের পর সংসা

    “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না! ছাতি ফেটে যাচ্ছে তবু খাবে না! স্বাতী নক্ষত্রের বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে আছে! ‘বিনা স্বাতীকি জল সব ধূর!”

    দুআনা মদ ও দুদিক রাখা

    “বলে দুদিক রাখব। দুআনা মদ খেলে মানুষ দুদিক রাখতে চায়, আর খুব মদ খেলে কি আর দুদিক রাখা যায়!

    “ঈশ্বরের (Ramakrishna) আনন্দ পেলে আর কিছু ভাল লাগে না। তখন কামিনী-কাঞ্চনের কথা যেন বুকে বাজে। (ঠাকুর কীর্তনের সুরে বলিতেছেন) ‘আন্‌ লোকের আন্‌ কথা, কিছু ভাল তো লাগে না!’ তখন ঈশ্বরের জন্য পাগল হয়, টাকা-ফাকা কিছুই ভাল লাগে না!”

    ত্রৈলোক্য—সংসারে থাকতে গেলে টাকাও তো চাই, সঞ্চয়ও চাই (Kathamrita)। পাঁচটা দান-ধ্যান—

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কি, আগে টাকা সঞ্চয় করে তবে ঈশ্বর! আর দান-ধ্যান-দয়া কত! নিজের মেয়ের বিয়েতে হাজার হাজার টাকা খরচ—আর পাশের বাড়িতে খেতে পাচ্ছে না। তাদের দুটি চাল দিতে কষ্ট হয়—অনেক হিসেব করে দিতে হয়। খেতে পাচ্ছে না লোকে,—তা আর কি হবে, ও শালারা মরুক বাঁচুক,—আমি আর আমার বাড়ির সকলে ভাল থাকলেই হল। মুখে বলে সর্বজীবে দয়া!

    ত্রৈলোক্য—সংসারে তো ভাল লোক আছে,—পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি, চৈতন্যদেবের ভক্ত। তিনি তো সংসারে ছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তার গলা পর্যন্ত মদ খাওয়া ছিল, যদি আর একটু খেত তা হলে আর সংসার করতে পারত না।

    ত্রৈলোক্য চুপ করিয়া রইলেন। মাস্টার গিরিশকে জনান্তিকে বলিতেছেন (Kathamrita), ‘তাহলে উনি যা লিখেছেন ঠিক নয়।’

    গিরিশ—তা হলে আপনি যা লিখেছেন ও-কথা ঠিক না?

    ত্রৈলোক্য—কেন, সংসারে ধর্ম হয় উনি কি মানেন না?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হয়,—কিন্তু জ্ঞানলাভ করে থাকতে হয়, ভগবানকে লাভ করে থাকতে হয়। তখন ‘কলঙ্ক সাগরে ভাসে, তবু কলঙ্ক না লাগে গায়।’ তখন পাঁকাল মাছের মতো থাকতে পারে। ঈশ্বরলাভের পর যে সংসার সে বিদ্যার সংসার। কামিনী-কাঞ্চন তাতে নাই, কেবল ভক্তি, ভক্ত আর ভগবান। আমারও মাগ আছে,—ঘরে ঘটিবাটিও আছে,—হরে প্যালাদের খাইয়ে দিই, আবার যখন হাবীর মা এরা আসে এদের জন্যও ভাবি।

  • Bhai Phonta 2025: শুধু যম-যমুনার আখ্যান নয়, ভাইফোঁটা ঘিরে রয়েছে আরও পৌরাণিক কাহিনি, জানেন কি?

    Bhai Phonta 2025: শুধু যম-যমুনার আখ্যান নয়, ভাইফোঁটা ঘিরে রয়েছে আরও পৌরাণিক কাহিনি, জানেন কি?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উত্‍সব। বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর এই মিষ্টি-মধুর মঙ্গলময় উৎসব, যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মতো পশ্চিম ভারতে বলা হয় ‘ভাই দুজ’। আবার কর্নাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই বিজ’। উত্তরবঙ্গেই ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাই টিকা’। হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উত্‍সব ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী (Mythological Stories)।

    যম-যমুনার গল্প (Yama-Yamuna)

    কথিত, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার ছিল যমুনা নামে এক কন্যা ও যম নামে এক পুত্র। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্য দিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা। দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কাঁদে যমের। মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025) হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন।

    কৃষ্ণ-সুভদ্রার কাহিনী (Lord Krishna-Subhadra)

    আরও এক পৌরাণিক কাহিনিতে (Mythological Stories) বলা হয়েছে, একসময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু। সেইকারণে চরম বিপদের মুখে পড়লেন স্বর্গের সব দেবতারা। কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, ঠিক সেই সময় লক্ষ্মীর উপর সকলে ভরসা করতে শুরু করেন। নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য় লক্ষ্মী বালিকে ভাই পাতিয়ে ফেলেন। তাকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয় তিথি। ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণুর মুক্তি চেয়ে উপহার চেয়ে নেন। ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপাখ্যানও শোনা যায়। কথিত রয়েছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণের আদরের বোন হল সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয়তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উত্‍সব পালন করা হয়।

    জৈন ধর্মের কাহিনী

    চতুর্দশ শতাব্দীর পুঁথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে তাঁর বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের কাছে অনশন ভঙ্গ করেন। এই কাহিনি সত্যি হলে ভাইফোঁটা উৎসবের বয়স আড়াই হাজার বছরের বেশি। কারণ, মহাবীরের প্রয়াণে হয়েছিলেন ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ছোট-বড় এরকম নানা গল্প কহিনিকে মনে রেখে কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পরের পরের দিন ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উৎসবটি পালিত হয়। এদিন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় উপবাস রেখে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে।

  • Ramakrishna 487: “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না!”

    Ramakrishna 487: “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না!”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিদ্যার সংসার—ঈশ্বরলাভের পর সংসার

    সন্ধ্যা হইল। বলরামের বৈঠকখানায় ও বারান্দায় আলো জ্বালা হইল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) জগতের মাতাকে প্রণাম করিয়া, করে মূলমন্ত্র জপ করিয়া মধুর নাম করিতেছেন। ভক্তেরা চারিপার্শ্বে বসিয়া আছেন ও সেই মধুর নাম শুনিতেছেন। গিরিশ, মাস্টার, বলরাম, ত্রৈলোক্য ও অন্যান্য অনেক ভক্তরা এখনও আছেন। কেশবচরিত গ্রন্থে ঠাকুরের সংসার সম্বন্ধে মত পরিবর্তনের কথা যাহা লেখা আছে, ত্রৈলোক্যের সামনে সেই কথা উত্থাপন করিবেন, ভক্তেরা ঠিক করিয়াছেন। গিরিশ কথা (Kathamrita) আরম্ভ করিলেন।

    তিনি ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, “আপনি যা লিখেছেন—যে সংসার সম্বন্ধে এঁর মত পরিবর্তন হয়েছে, তা বস্তুতঃ হয় নাই।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্য ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—এ-দিকের আনন্দ পেলে ওটা ভাল লাগে না, ভগবানের আনন্দলাভ করলে সংসার আলুনী বোধ হয়। শাল পেলে আর বনাত ভাল লাগে না!

    ত্রৈলোক্য—সংসার যারা করবে তাদের কথা আমি বলছি,—যারা ত্যাগী তাদের কথা বলছি না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ও-সব তোমাদের কি কথা!—যারা ‘সংসারে ধর্ম’ ‘সংসারে ধর্ম’ করছে, তারা একবার যদি ভগবানের আনন্দ পায় তাদের আর কিছু ভাল লাগে না, কাজের সব আঁট কমে যায়, ক্রমে যত আনন্দ বাড়ে কাজ আর করতে পারে না,— কেবল সেই আনন্দ খুঁজে খুঁজে বেড়ায়! ভগবানের আনন্দের কাছে বিষয়ানন্দ আর রমণানন্দ! একবার ভগবানের আনন্দের আস্বাদ পেলে সেই আনন্দের (Kathamrita) জন্য ছুটোছুটি করে বেড়ায়, তখন সংসার থাকে আর যায়।

    “চাতক তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে,—সাত সমুদ্র যত নদী পুষ্করিণী সব ভরপুর! তবু সে জল খাবে না! ছাতি ফেটে যাচ্ছে তবু খাবে না! স্বাতী নক্ষত্রের বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে আছে! ‘বিনা স্বাতীকি জল সব ধূর!”

    দুআনা মদ ও দুদিক রাখা 

    “বলে দুদিক রাখব। দুআনা মদ খেলে মানুষ দুদিক রাখতে চায়, আর খুব মদ খেলে কি আর দুদিক রাখা যায়!

    “ঈশ্বরের আনন্দ পেলে আর কিছু ভাল লাগে না। তখন কামিনী-কাঞ্চনের কথা যেন বুকে বাজে। (ঠাকুর কীর্তনের সুরে বলিতেছেন) ‘আন্‌ লোকের আন্‌ কথা, কিছু ভাল তো লাগে না!’ তখন ঈশ্বরের জন্য পাগল হয়, টাকা-ফাকা কিছুই ভাল লাগে না!”

  • Bhai Phonta 2025: ‘যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা…’, জেনে নিন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময়

    Bhai Phonta 2025: ‘যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা…’, জেনে নিন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময়

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিকের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা (Bhai Phonta 2025) উৎসব। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/ আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’-এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ভাই-এর দীর্ঘাষু কামনা করে বোন। আর ভাই বোনকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে বছর বছর। এর পর ভাইকে মিষ্টিমুখ করানো এবং প্রীতি উপহার বিনিময়, হাসি-ঠাট্টা, মজা করে কাটানোর উৎসব হল ভাইফোঁটা।

    ভাতৃদ্বিতীয়ার (Bhatri Dwitiya) গল্প

    ভাইবোনের ভালবাসার সম্পর্ক দৃঢ় করার উৎসব হল ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া । কথিত রয়েছে, এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসব তাই যমন দ্বিতীয়া নামে পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্রের আরেকটি মতে নরকাসুরকে বধ করে ফেরার পর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে ফোঁটা নেন এই দ্বিতীয়া তিথিতে। শ্রীকৃষ্ণের কপালে জয়টিকা পরিয়ে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন সুভদ্রা। সেই থেকেই সম্ভবত ভাইফোঁটার (Bhai Phonta 2025) প্রচলন। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমে একই উৎসবকে, ‘ভাই দুজ’ (Bhai Dooj) নামে চেনে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি—সব জায়গায় এই দিনটি ভাই-বোনের স্নেহবন্ধনের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। বাংলায় ‘ভাইফোঁটা’, ওড়িশায় ‘ভাইজুন্তিয়া’, দক্ষিণ ভারতে ‘যম দ্বিতীয়া’—নামে ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য একই—ভাই-বোনের স্নেহের বন্ধন।

    দ্বিতীয়া শুরু কখন? থাকবে ক’টা পর্যন্ত? শুভ তিলক মুহূর্ত থাকবে কতক্ষণ?

    বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী:

    দ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025)  তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) রাত ৮টা ১৮ মিনিটে।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে।

    অর্থাৎ, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে ভাইফোঁটার মূল পালন ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।

    গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী:

    দ্বিতীয়া (Bhai Phonta 2025) তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট ৩ সেকেন্ডে।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা ১৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডে।

    অর্থাৎ, ভাইফোঁটা পালন করা হবে ২২ অক্টোবর, বুধবার সন্ধ্যার পর বা ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৩ অক্টোবরকেই শুভ দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিনই দ্বিতীয়া (Bhatri Dwitiya)। সুর্যোদয় হিসেবে তিথি ধরলেও অসুবিধা নেই, কেন না, সে ক্ষেত্রেও সকাল থেকেই চলবে ফোঁটা।

    ভাইফোঁটার তিলক মুহূর্ত

    সাধারণ ভাইফোঁটার (Bhai Phonta 2025) একটি তিলক মুহূর্ত থাকে। আর সেটা সচরাচর পড়ে অপরাহ্নে। ভাইফোঁটার অপরাহ্ন মুহূর্ত এবার পড়ছে– ২৩ অক্টোবর বেলা ১২টা ৪০ থেকে দুপুর ২টো ৫৯ মিনিট। আর তিলক মুহূর্ত– বেলা ১টা ১৩ মিনিট থেকে ৩টে ২৮ মিনিট।

  • Ramakrishna 486: “জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর”

    Ramakrishna 486: “জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুই বাপ-মাকে খুব ভক্তি করবি।—কিন্তু ঈশ্বরের পথে বাধা দিলে মানবিনি। খুব রোখ আনবি—শালার বাপ!

    ছোট নরেন—কে জানে, আমার কিছু ভয় হয় না।

    গিরিশ বাড়ি হইতে আবার আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সহিত আলাপ করিয়া দিতেছেন; আর বলিতেছেন, ‘একটু আলাপ তোমরা কর।’ একটু আলাপের পর ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, ‘সেই গানটি আর একবার,’—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন (Kathamrita):

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী

    জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী 

    জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ,
    কিবা মৃণালনিন্দিত, আজানুলম্বিত, প্রেম প্রসারিত, কোমল যুগল কর
    কিবা রুচির বদন-কমল, প্রেমরসে ঢল ঢল,
    চিকুর কুন্তল, চারু গণ্ডস্থল, হরিপ্রেমে বিহ্বল, অপরূপ মনোহর।
    মহাভাবে মণ্ডিত হরি রসে রঞ্জিত, আনন্দে পুলকিত অঙ্গ,
    প্রমত্ত মাতঙ্গ, সোনার গৌরাঙ্গ,
    আবেশে বিভোর অঙ্গ, অনুরাগে গরগর।
    হরিগুণগায়ক, প্রেমরস নায়ক,
    সাধু-হৃদিরঞ্জক, আলোকসামান্য, ভক্তিসিন্ধু শ্রীচৈতন্য,
    আহা! ‘ভাই’ বলি চণ্ডালে, প্রেমভরে লন কোলে,
    নাচেন দুবাহু তুলে, হরি বোল হরি বলে,
    অবিরল ঝরে জলে নয়নে নিরন্তর!
    ‘কোথা হরি প্রাণধন’ — বলে করে রোদন,
    মহাস্বেদ কম্পন, হুঙ্কার গর্জন,
    পুলকে রোমাঞ্চিত, শরীর কদম্বিত,
    ধুলায় বিলুণ্ঠিত সুন্দর কলেবর।
    হরি-লীলা-রস-নিকেতন, ভক্তিরস-প্রস্রবণ;
    দীনজনবান্ধব, বঙ্গের গৌরব, ধন্য ধন্য শ্রীচৈতন্য প্রেম শশধর।

    ‘গৌর হাসে কাঁদে নাচে গায়’—এই কথা শুনিয়া ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়া পড়িলেন,-একেবারে বাহ্যশূন্য!

    কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া—ত্রৈলোক্যকে অনুনয় বিনয় করিয়া বলিতেছেন, “একবার সেই গানটি!—কি দেখিলাম রে।”

    ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    কি দেখিলাম রে, কেশব ভারতীর কুটিরে,
    অপরূপ জ্যোতি; গৌরাঙ্গ মূরতি, দুনয়নে প্রেম বহে শত ধারে।

    গান সমাপ্ত হইল। সন্ধ্যা হয়। ঠাকুর এখনও ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রামের প্রতি)—বাজনা নাই! ভাল বাজনা থাকলে গান খুব জমে। (সহাস্যে) বলরামের আয়োজন কি জান,—বামুনের গোড্ডি (গরুটি) খাবে কম, দুধ দেবে হুড়হুড় করে! (সকলের হাস্য) বলরামের ভাব,—আপনারা গাও আপনারা বাজাও! (সকলের হাস্য)

  • Ramakrishna 485: “নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে”

    Ramakrishna 485: “নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে”

    ৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
    সংকীর্তনানন্দে ভক্তসঙ্গে

    ঠাকুর ঘরের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন,—একটু আনন্দময়ীর গান,—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

       কত ভালবাস গো মা মানব সন্তানে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে (গো মা)।
    তব পদে অপরাধী, আছি আমি জন্মাবধি,
    তবু চেয়ে মুখপানে প্রেমনয়নে, ডাকিছ মধুর বচনে,
    মনে হলে প্রেমধারা বহে দুনয়নে।
    তোমার প্রেমের ভার, বহিতে পারি না গো আর,
    প্রাণ উঠিছে কাঁদিয়া, হৃদয় ভেদিয়া, তব স্নেহ দরশনে,
    লইনু শরণ মা গো তব শ্রীচরণে (গো মা) ॥

    গান শুনিতে শুনিতে ছোট নরেন গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হইয়াছেন, যেন কাষ্ঠবৎ! ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, “দেখ, দেখ, কি গভীর ধ্যান! একেবারে বাহ্যশূন্য! (Kathamrita)”

    গান সমাপ্ত হইল। ঠাকুর (Ramakrishna) ত্রৈলোক্যকে এই গানটি গাইতে বলিলেন—‘দে মা পাগল করে, আর কাজ নাই জ্ঞান বিচারে।’

    রাম বলিতেছেন, কিছু হরিনাম হোক! ত্রৈলোক্য গাইতেছেন:

    মন একবার হরি বল হরি বল হরি বল।
    হরি হরি হরি বলে, ভবসিন্ধু পারে চল।

    মাস্টার আস্তে আস্তে বলিতেছেন, ‘গৌর-নিতাই তোমরা দুভাই।’

    ঠাকুরও (Ramakrishna) ওই গানটি গাইতে বলিতেছেন। ত্রৈলোক্য ও ভক্তেরা সকলে মিলিয়া গাইতেছেন:

    গৌর নিতাই তোমরা দুভাই পরম দয়াল হে প্রভু!

    ঠাকুরও যোগদান করিলেন। সমাপ্ত হইলে আর একটি ধরিলেন:

    যাদের হরি বলতে নয়ন ঝরে তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা মার খেয়ে প্রেম যাচে তারা তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা ব্রজের কানাই বলাই তারা তারা দুভাই এসেছে রে।
    যারা আচণ্ডালে কোল দেয় তারা তারা দুভাই এসেছে রে।

    ওই গানের সঙ্গে ঠাকুর আর একটা গান গাহিতেছেন:

    নদে টলমল টলমল করে গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে।

    ঠাকুর আবার ধরিলেন (Kathamrita):

    কে হরিবোল হরিবোল বলিয়ে যায়?
    যা রে মাধাই জেনে আয়।
    বুঝি গৌর যায় আর নিতাই যায় রে।
    যাদের সোনার নূপুর রাঙা পায়।
    যাদের নেড়া মাথা ছেঁড়া কাঁথা রে।
    যেন দেখি পাগলেরই প্রায়।

    ছোট নরেন বিদায় লইতেছেন —

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তুই বাপ-মাকে খুব ভক্তি করবি।—কিন্তু ঈশ্বরের পথে বাধা দিলে মানবিনি। খুব রোখ আনবি—শালার বাপ!

    ছোট নরেন—কে জানে, আমার কিছু ভয় হয় না।

    গিরিশ বাড়ি হইতে আবার আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর ত্রৈলোক্যের সহিত আলাপ করিয়া দিতেছেন; আর বলিতেছেন, ‘একটু আলাপ তোমরা কর।’ একটু আলাপের পর ত্রৈলোক্যকে বলিতেছেন, ‘সেই গানটি আর একবার,’—ত্রৈলোক্য গাইতেছেন (Kathamrita):

    ঝিঁঝিট খাম্বাজ—ঠুংরী

       জয় শচীনন্দন, গৌর গুণাকার, প্রেম-পরশমণি, ভাব-রস-সাগর।
    কিবা সুন্দর মুরতিমোহন আঁখিরঞ্জন কনকবরণ

  • Kali Puja 2025: কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠের কালী মন্দিরে কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়?

    Kali Puja 2025: কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠের কালী মন্দিরে কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো (Kali Puja 2025) বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। আজ কালীপুজো। দুর্গাপুজার পাশাপাশি কালীপুজোতেও বিভিন্ন আচার-নিয়ম (Rituals) থাকে। আর কালীপুজোর বিশেষ আকর্ষণই হল মায়ের ভোগ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শ্যামামায়ের মন্দির। আর সেই এক এক মন্দিরের এক এক রকমের ভোগ মাকে (Maa Kali) নিবেদন করা হয়। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দিরটি হল কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়া দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি কালীমন্দির। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের সেভকেশ্বরী কালীমন্দিরও বেশ বিখ্যাত।

    কোন মন্দিরে মাকে (Maa Kali) কী কী ভোগ দেওয়া হয়?

    কালীপুজোর সময় মায়ের যে ভোগ হয়, তা অন্যান্য পুজোর থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। এক নজরে দেখে নিন, কোন মন্দিরে মাকে কী কী ভোগ দেওয়া হয়?

    কালীঘাট মন্দির: সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এই কালীঘাট (Kalighat)। সকালে মা-কে আমিষ পদ ভোগে দেওয়া হয়। সেই ভোগের মধ্যে রয়েছে বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা-কে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।

    সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির: আনুমানিক ১৭০৩ সালে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী সেই সময় জঙ্গলের মধ্যে পঞ্চমুণ্ডির আসনে ও ঘটে পুজো (Kali Puja 2025) শুরু করেন। কালীপুজোর রাতে ভোগ দেওয়া হয় লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি।

    দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির: ভোরে দেবী ভবতারিণীর বিশেষ আরতি দক্ষিণেশ্বরের পুজোর (Kali Puja 2025) বিশেষ আকর্ষণ। আর ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি।

    তারাপীঠ মন্দির: কালীপুজোর (Kali Puja 2025) দিন খুব সকালে ডাবের জল দিয়ে শুরু হয় মায়ের ভোগ। সকালের ভোগে থাকে পাঁচ রকম বা ন’রকমের ভাজা, সাদা অন্ন, পায়েস ও মিষ্টি। আমিষ ভোগের মূল উপাদান হল শোল মাছ। ভোগের পাতে এই মাছ না থাকলে ভোগ গ্রহণ করেন না মা তাঁরা। কালীপুজোর দিন তারা মা-এর ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ মিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। এখানকার অন্নভোগের বিশেষত্বই হল পোড়া শোলমাছ মাখা।

    সেভকেশ্বরী কালী মন্দির: শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার পথে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এই কালীমন্দির। কালীপুজোর (Kali Puja 2025) দিনগুলিতে এই সেভকেশ্বরী কালীমন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে। সেবক পাহাড়ের নির্জনতায় হয় কালী মায়ের আরাধনা। অনেকেরই বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা। এখানে মায়ের (Maa Kali) ভোগে থাকে সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, পায়েস, লুচি, দই, মিষ্টি। আর এখানে ভোগের আকর্ষণ হল বোয়াল মাছ। এদিন এই মাছ দেবীর ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়।

  • Kali Puja 2025: কখনও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল! জানুন মা কালীর বিভিন্ন রূপ

    Kali Puja 2025: কখনও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল! জানুন মা কালীর বিভিন্ন রূপ

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রামপ্রসাদের কন্যা, রামকৃষ্ণের মা ভবতারিণী, সাধক কমলাকান্তের সাধনার ধন। তিনি দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী। দেবী কালিকা। বাংলা জুড়ে কালীপুজোর (Kali Puja 2025) মাহাত্ম্য অনেক। শ্মশানবাসিনী থেকে ঘরে ঘরে পূজিত হওয়ার রয়েছে নানা আখ্যান। কড়া নিয়ম মেনে আরাধনা করা হয় দেবী কালিকার। কোথাও তিনি পূজিত হন চামুণ্ডা মতে, তো কোথাও আবার তন্ত্র মতে। কোথাও কোথাও দেবীকে কেন্দ্র করেই চলে তন্ত্র সাধনা। কোথাও তিনি শ্যামবর্ণা, কোথাও তাঁর গায়ের রং নীল। মাকে ১১ রূপে বিনাশকারী শক্তি হিসেবে আরাধনা করে থাকেন ভক্তরা।

    মায়ের (Maa Kali) নানা রূপের কথা 

    দক্ষিণা কালী: বাংলায় সবচেয়ে বেশি আরাধনা হয় দক্ষিণা কালীর। কালীর এই রূপ জায়গা ভেদে শ্যামাকালী নামেও পরিচিত। সারা শরীর নীল বর্ণের, তাঁর মূর্তি ক্রুদ্ধ, ত্রিনয়নী, মুক্তকেশ, চারটি হাত এবং গলায় মুণ্ডমালা। বাম দিকের দুই হাতে নরমুণ্ড এবং খড়গ। ডান হাতে থাকে আশীর্বাদ এবং অভয় মুদ্রা। দেবী মহাদেবের উপরে দণ্ডায়মানা।

    শ্মশান কালী: মূলত প্রাচীন কালে ডাকাতেরা দেবীর এই রূপের আরাধনা করত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। গৃহস্থের বাড়িতে কালীর এই রূপের পুজো হয় না একেবারেই। মূলত শ্মশানেই তাঁর আরাধনা।

    সিদ্ধ কালী: কালীপুজোর দিনে বহু জায়গায় সিদ্ধ কালীর আরাধনা করা হয়। কালীর (Kali Puja 2025) এই রূপ ভুবনেশ্বরী নামেও পরিচিত। গৃহস্থের বাড়িতে কালীর এই রূপ পুজো হয় না। কালী মায়ের সাধকেরা এই পুজো করে থাকেন। সিদ্ধকালীর দু’টি হাত, শরীর গয়নায় আবৃত। দেবীর ডান পা শিবের বুকে এবং বাঁ পা থাকে তাঁর দু’পায়ের মাঝখানে। এই দেবী রক্ত নয়, বরং অমৃত পানে সন্তুষ্ট থাকেন।

    ফলহারিণী কালী: এটি বাৎসরিক পুজো। মূলত, গৃহস্থ বাড়িতে শান্তি বজায় রাখতে কালীর এই রূপকে আরাধনা করা হয়।

    মহা কালী: এই দেবীর (Kali Puja 2025) দশটি মাথার মতো দশটি হাত এবং দশটি পা থাকে। প্রতিমার সঙ্গে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দশ হাতেই রয়েছে অস্ত্র। দেবীর পায়ের তলায় অসুরের কাটা মুণ্ড থাকে। ভূত চতুর্দশীর দুপুরে এমনই দশমাথা মহা কালীর সাধনা করা হয়। তবে, গৃহস্থ বাড়িতে এই পুজো করা হয় না।

    কাম্যা কালী: বিশেষ প্রার্থনায় কালীর এই রূপ আরাধনা করা হয়। পুজোর নিয়মবিধি দক্ষিণা কালীর মতোই। সাধারণত, অষ্টমী, চতুর্দশী অমাবস্যা পূর্ণিমা ও সংক্রান্তির মতো তিথিতেই কাম্যা কালীর আরাধনা করা হয়।

    গুহ্যকালী: এই দেবীর গায়ের রং গাঢ় কালো। গলায় ৫০টি নরমুন্ডের হার এবং কানে শবদেহের আকারের অলঙ্কার থাকে। শাস্ত্রে কালীর এই রূপকে ভয়ঙ্করী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    ভদ্রকালী: কালীর এই রূপ সাধারণত বারোয়ারি বিভিন্ন মন্দিরে পুজো করা হয়। ভদ্রকালী নামে ভদ্র শব্দটি ব্যবহার হয়েছে কল্যাণ অর্থে এবং কালী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে জীবনের শেষ সময় বোঝাতে।

    চামুণ্ডা কালী: চামুণ্ডা হলেন আদিশক্তি। আবার তিনিই ভগবতী দুর্গা। চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে হত্যা করে তিনি ‘চামুণ্ডা’ নামে পরিচিত হন। পার্বতী, চণ্ডী, দুর্গা, চামুণ্ডা ও কালী এক ও অভিন্ন রূপ।

    শ্রী কালী: দেবী দুর্গা বা পার্বতীর একটি রূপ শ্রী কালী (Kali Puja 2025)। অনেকে মনে করেন এই রূপে দেবী দারুক নামে অসুরকে বধ করেছিলেন। পুরাণ অনুয়ায়ী, কালীর এই রূপ মহাদেবের কণ্ঠে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হন এবং পরবর্তীকালে মহাদেব শিশু রূপে স্তন্যপান করে দেবীর শরীর থেকে বিষ গ্রহণ করেন।

    রক্ষাকালী: দক্ষিণা কালীর (Maa Kali) একটি রূপ হল রক্ষাকালী। কথিত, প্রাচীন কালে লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজো করা হত। এই দেবীর বাহন সিংহ।

LinkedIn
Share