Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 338: “শিবে সনাতনী সর্বাণী ঈশানী, সদানন্দময়ী, সর্বস্বরূপিণী, সগুণা নির্গুণা সদাশিব প্রিয়া”

    Ramakrishna 338: “শিবে সনাতনী সর্বাণী ঈশানী, সদানন্দময়ী, সর্বস্বরূপিণী, সগুণা নির্গুণা সদাশিব প্রিয়া”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই-১০ই নভেম্বর
    সেবকসঙ্গে

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এই কথা শুনিয়া উচ্চহাস্য করিলেন।

    মণি (অতি বিনীতভাবে)—আচ্ছা, কর্তব্য কর্ম—হাঙ্গাম— কমানো তো ভাল?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, তবে সম্মুখে কেউ পড়ল, সে এক। সাধু কি গরিব লোক সম্মুখে পড়লে তাদের সেবা করা উচিত।

    মণি—আর সেদিন ঈশান মুখুজ্জেকে খোসামুদের কথা বেশ বললেন। মড়ার উপর যেমন শকুনি পড়ে। ও-কথা আপনি পণ্ডিত পদ্মলোচনকে বলেছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না, উলোর বামনদাসকে।

    কিয়ৎপরে মণি ছোট খাটের পার্শ্বে পাপোশের নিকট বসিলেন।

    ঠাকুরের (Ramakrishna) তন্দ্রা আসিতেছে,—তিনি মণিকে বলিতেছেন, তুমি শোওগে। গোপাল কোথায় গেল? তুমি দোর ভেজিয়ে রাখ।

    পরদিন (১০ই নভেম্বর) সোমবার। শ্রীরামকৃষ্ণ বিছানা হইতে অতি প্রতূষ্যে উঠিয়াছেন ও ঠাকুরদের নাম করিতেছেন, মাঝে মাঝে গঙ্গাদর্শন করিতেছেন। এদিকে মা-কালীর ও শ্রীশ্রীরাধাকান্তের মন্দিরে মঙ্গলারতি হইতেছে। মণি ঠাকুরের ঘরের মেঝেতে শুইয়াছিলেন। তিনি শয্যা হইতে উঠিয়া সমস্ত দর্শন করিতেছেন ও শুনিতেছেন (Kathamrita)।

    প্রাতঃকৃত্যের পর তিনি ঠাকুরের কাছে আসিয়া বসিলেন।

    ঠাকুর আজ স্নান করিলেন। স্নানান্তে ৺কালীঘরে যাইতেছেন। মণি সঙ্গে আছেন। ঠাকুর তাঁহাকে ঘরে তালা লাগাইতে বলিলেন।

    কালীঘরে যাইয়া ঠাকুর আসনে উপবিষ্ট হইলেন ও ফুল লইয়া কখনও নিজের মস্তকে কখনও মা-কালীর পাদপদ্মে দিতেছেন। একবার চামর লইয়া ব্যজন করিলেন। আবার নিজের ঘরে ফিরিলেন। মণিকে আবার চাবি খুলিতে বলিলেন। ঘরে প্রবেশ করিয়া ছোট খাটটিতে বসিলেন। এখন ভাবে বিভোর—ঠাকুর নাম করিতেছেন। মণি মেঝেতে একাকী উপবিষ্ট। এইবার ঠাকুর গান গাহিতেছেন। ভাবে মাতোয়ারা হইয়া গানের ছলে মণিকে কি শিখাইতেছেন যে, কালীই ব্রহ্ম, কালী নির্গুণা, আবার সগুণা, অরূপ আবার অনন্তরূপিণী।

    গান   —   কে জানে কালী কেমন, ষড়দর্শনে।

    গান   —   এ সব ক্ষেপা মেয়ের খেলা।

    গান   —   কালী কে জানে তোমায় মা (তুমি অনন্তরূপিণী!)
    তুমি মহাবিদ্যা, অনাদি অনাদ্যা, ভববন্ধের বন্ধনহারিণী তারিণী!
    গিরিজা, গোপজা, গোবিন্দমোহিনী, সারদে বরদে নগেন্দ্রনন্দিনী,
    জ্ঞানদে মোক্ষদে, কামাখ্যা কামদে, শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণহৃদিবিলাসিনী।

    গান   —   তার তারিণী! এবার ত্বরিত করিয়ে,
    তপন-তনয়-ত্রাসে ত্রাসিত প্রাণ যায়।
    জগত অম্বে জনপালিনী, জন-মিহিনী জগত জননী,
    যশোদা জঠরে জনম লইয়ে, সহায় হরি লীলায় ॥
    বৃন্দাবনে রাধাবিনোদিনী, ব্রজবল্লভ বিহারকারিণী,
    রাসরঙ্গিনী রসময়ী হ’য়ে, রাস করিলে লীলাপ্রকাশ ॥
    গিরিজা গোপজা গোবিন্দমোহিনী, তুমি মা গঙ্গে গতিদায়িনী,
    গান্ধার্বিকে গৌরবরণী গাওয়ে গোলকে গুণ তোমার ॥
    শিবে সনাতনী সর্বাণী ঈশানী, সদানন্দময়ী, সর্বস্বরূপিণী,
    সগুণা নির্গুণা সদাশিব প্রিয়া, কে জানে মহিমা তোমার ॥

    মণি মনে মনে করিতেছেন ঠাকুর যদি একবার এই গানটি গান—

    “আর ভুলালে ভুলবো না মা, দেখেছি তোমার রাঙ্গা চরণ।”

    কি আশ্চর্য! মনে করিতে না করিতে ওই গানটি গাহিতেছেন (Kathamrita)।

    কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিতেছেন—আচ্ছা, আমার এখন কিরকম অবস্থা তোমার বোধ হয়!

    মণি (সহাস্যে)—আপনার সহজাবস্থা।

    ঠাকুর (Ramakrishna) আপন মনে গানের ধুয়া ধরিলেন,—“সহজ মানুষ না হলে সহজকে না যায় চেনা।”

  • Ramakrishna 336: “যতক্ষণ ‘কুম্ভ’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি কুম্ভ” থাকবেই থাকবে, যতক্ষণ ‘আমি’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি ভক্ত, তুমি ভগবান”

    Ramakrishna 336: “যতক্ষণ ‘কুম্ভ’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি কুম্ভ” থাকবেই থাকবে, যতক্ষণ ‘আমি’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি ভক্ত, তুমি ভগবান”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই-১০ই নভেম্বর
    সেবকসঙ্গে

    “আর চাতকের কথা,—ফটিক জল বই আর কিছু খাবে না।

    “আর জ্ঞানযোগ আর ভক্তিযোগের কথা।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কি?

    মণি—যতক্ষণ ‘কুম্ভ’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি কুম্ভ” থাকবেই থাকবে। যতক্ষণ ‘আমি’ জ্ঞান, ততক্ষণ “আমি ভক্ত, তুমি ভগবান।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না, ‘কুম্ভ’ জ্ঞান থাকুক আর না থাকুক, ‘কুম্ভ’ যায় না। ‘আমি’ যাবার নয়। হাজার বিচার কর, ও যাবে না।

    মণি খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন। আবার বলিতেছেন (Kathamrita)—

    মণি—কালীঘরে ঈশান মুখুজ্জের সঙ্গে কথা হয়েছিল—বড় ভাগ্য তখন আমরা সেখানে ছিলাম আর শুনতে পেয়েছিলাম।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—হাঁ, কি কি কথা বল দেখি?

    মণি—সেই বলেছিলেন, কর্মকাণ্ড। আদিকাণ্ড। শম্ভু মল্লিককে বলেছিলেন, যদি ঈশ্বর তোমার সামনে আসেন, তাহলে কি কতকগুলো হাসপাতাল ডিস্পেনসারি চাইবে?

    “আর-একটি কথা হয়েছিল,—যতক্ষণ কর্মে আসক্তি থাকে ততক্ষণ ঈশ্বর দেখা দেন না। কেশব সেনকে সেই কথা বলেছিলেন (Kathamrita)।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কি?

    মণি—যতক্ষণ ছেলে চুষি নিয়ে ভুলে থাকে ততক্ষণ মা রান্নাবান্না করেন। চুষি ফেলে যখন ছেলে চিৎকার করে, তখন মা ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে ছেলের কাছে যান।

    “আর-একটি কথা সেদিন হয়েছিল। লক্ষ্মণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন—ভগবানকে কোথা কোথা দর্শন হতে পারে। রাম অনেক কথা বলে তারপর বললেন—ভাই, যে মানুষে ঊর্জিতা ভক্তি দেখতে পাবে—হাঁসে কাঁদে নাচে গায়,—প্রেমে মাতোয়ারা—সেইখানে জানবে যে আমি (ভগবান আছি)।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আহা! আহা!

    ঠাকুর (Ramakrishna) কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন।

    মণি—ঈশানকে কেবল নিবৃত্তির কথা বললেন। সেই দিন থেকে অনেকের আক্কেল হয়েছে। কর্তব্য কর্ম কমাবার দিকে ঝোঁক। বলেছিলেন (Kathamrita)—‘লঙ্কায় রাবণ মলো, বেহুলা কেঁদে আকুল হলো!’

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই কথা শুনিয়া উচ্চহাস্য করিলেন।

    মণি (অতি বিনীতভাবে)—আচ্ছা, কর্তব্য কর্ম—হাঙ্গাম— কমানো তো ভাল?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—হাঁ, তবে সম্মুখে কেউ পড়ল, সে এক। সাধু কি গরিব লোক সম্মুখে পড়লে তাদের সেবা করা উচিত।

    মণি—আর সেদিন ঈশান মুখুজ্জেকে খোসামুদের কথা বেশ বললেন। মড়ার উপর যেমন শকুনি পড়ে। ও-কথা আপনি পণ্ডিত পদ্মলোচনকে বলেছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না, উলোর বামনদাসকে।

    কিয়ৎপরে মণি ছোট খাটের পার্শ্বে পাপোশের নিকট বসিলেন।

    ঠাকুরের তন্দ্রা আসিতেছে,—তিনি মণিকে বলিতেছেন, তুমি শোওগে। গোপাল কোথায় গেল? তুমি দোর ভেজিয়ে রাখ।

  • Akshaya Tritiya 2025: ২৪ বছর পর অক্ষয় তৃতীয়ায় বিরল যোগ! জানেন এই বিশেষ দিনের গুরুত্ব?

    Akshaya Tritiya 2025: ২৪ বছর পর অক্ষয় তৃতীয়ায় বিরল যোগ! জানেন এই বিশেষ দিনের গুরুত্ব?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সনাতন ধর্ম ও বৈদিক জ্যোতিষে অক্ষয় তৃতীয়া (Akshaya Tritiya 2025) দারুণ শুভ ও মাহাত্ম্যপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। যে কোনও শুভ কাজ করার জন্য এই দিনটি বিশেষ শুভ। শাস্ত্র অনুসারে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় তৃতীয়া পালিত হয়। অক্ষয় শব্দের অর্থ ‘ক্ষয় নাই যার’ এবং তৃতীয়া অর্থ ‘চাঁদের তৃতীয় দিন’। হিন্দু পঞ্জিকায় বৈশাখ মাসের ‘তৃতীয় চন্দ্র দিন’-এর নামানুসারে এই দিনের নামকরণ করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) দিন থেকে নানা শুভ কাজ শুরু হয়। এছাড়াও অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে কেনাকাটা করা বা সোনার গহনা কেনা খুবই মঙ্গল বলে মনে করা হয়। অনেকের বিশ্বাস, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে শুরু করা কাজ শুভ ফল দায়ক হয়। এই কারণেই মানুষনতুন ব্যবসা শুরু করে এই তিথিতে।

    চলতি বছরে কবে অক্ষয় তৃতীয়া

    এই বছর অক্ষয় তৃতীয়া পড়েছে আজ, ৩০ এপ্রিল বুধবার। চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ায় (Akshaya Tritiya 2025) থাকছে দারুণ শুভ ও বিরল অক্ষয় যোগ। চাঁদ ও বৃহস্পতির অবস্থানের ভিত্তিতে ২৪ বছর পর অক্ষয় তৃতীয়ায় এই যোগ গঠিত হবে। এর আগে ২০০১ সালের ২৬ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় অক্ষয় যোগ গঠিত হয়েছিল। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে এই দিনে সূর্য এবং চন্দ্র তাদের সর্বোচ্চ রাশিতে থাকে। শাস্ত্রে অক্ষয় তৃতীয়ার তিথিকে স্বয়ংসিদ্ধ মুহূর্ত বলা হয়। কথায় বলে এর মানে বৈশাখের মতো কোনও পুণ্য-মাস নেই, সত্যযুগের মতো কোনও যুগ নেই, বেদের মতো কোনও শাস্ত্র নেই এবং গঙ্গার মতো কোনও তীর্থযাত্রা নেই। একইভাবে অক্ষয় তৃতীয়ার মতো কোনও তিথি নেই।

    সোনা-রুপো কেনার রীতি

    অক্ষয় তৃতীয়ায় (Akshaya Tritiya 2025) সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সোনা ও রূপো কিনে থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে সোনা কিনলে ঘরে ধন-সম্পদ, সুখ-সমৃদ্ধি আসে। এই দিনে সোনা কিনলে ঘরে অর্থের অভাব হয় না বলেও বিশ্বাস রয়েছে। ব্যক্তি এবং পরিবারের যশ ও খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অশেষ ঐশ্বর্য প্রদান করেছিলেন। কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হওয়ায় এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। তাই প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, অক্ষয় তৃতীয়ার এই শুভ দিনে সোনা-রুপো কিনলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা যায়। কথিত আছে যে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে ধন সম্পদের দেবতা কুবেরকে দেবলোকের অধিপতি নির্বাচন করা হয়। তাই এই দিনে মা লক্ষ্মীর সঙ্গে কুবেরেরও পুজো করা হয়। মনে করা হয় যে অক্ষয় তৃতীয়ায় কুবের দেবের পুজো করলে সংসারে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে।

    খুলে যায় বদ্রীনাথধাম

    অক্ষয় তৃতীয়া (Akshaya Tritiya 2025) থেকেই খুলে যায় চারধামের অন্যতম বদ্রীনাথধাম মন্দিরের দরজা। তার সঙ্গে এদিনই মথুরায় বাঁকে বিহারীর দর্শন পাওয়া যায়। সারা বছর পোশাকের আড়ালে ঢাকা থাকেন বাঁকে বিহারী। এই একদিনই তাঁর চরণ দর্শন করা সম্ভব হয়। এছাড়াও অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) দিন সূর্যোদয়ের আগে উঠে সমুদ্র, গঙ্গা বা যে কোনও পবিত্র নদীতে বা বাড়িতে স্নান করার পর শান্ত চিত্তে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর পুজো করার বিধান রয়েছে। সুখ, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মীনারায়ণের পাশাপাশি এই দিনে ভগবান শিব এবং মা পার্বতীরও পুজো করা হয়।

  • Ramakrishna 334: “মেঝেতে আসনের উপর ঠাকুর উপবিষ্ট, সুজি খাইতেছেন পার্শ্বে একটি পিলসুজের উপর প্রদীপ জলিতেছে”

    Ramakrishna 334: “মেঝেতে আসনের উপর ঠাকুর উপবিষ্ট, সুজি খাইতেছেন পার্শ্বে একটি পিলসুজের উপর প্রদীপ জলিতেছে”

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    ভক্তসঙ্গে সংকীর্তনানন্দে

    ভক্ত সঙ্গে–ভক্তকথাপ্রসঙ্গে 

    ঠাকুর চুপ করিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে আবার কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ওকে ভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলুম। তা এককথায় বললে—“আমি আনন্দে আছি।” (মাস্টারের প্রতি) তুমি ওকে কিছু কিনে মাঝে মাঝে খাইও—বাৎসল্যভাবে।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তেজচন্দ্রের কথা কহিতেছেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—একবার ওকে জিজ্ঞাসা করে দেখো, একেবার আমায় ও কি বলে,—জ্ঞানী, কি কি বলে? শুনলুম, তেজচন্দ্র নাকি বড় কথা কয় না। (গোপালের প্রতি) — দেখ্‌, তেজচন্দ্রকে শনি-মঙ্গলবারে আসতে বলিস।

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে—গোস্বামী, মহিমাচরণ প্রভৃতি সঙ্গে

    মেঝেতে আসনের উপর ঠাকুর (Ramakrishna) উপবিষ্ট। সুজি খাইতেছেন। পার্শ্বে একটি পিলসুজের উপর প্রদীপ জলিতেছে। ঠাকুরের কাছে মাস্টার বসিয়া আছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, “কিছু মিষ্টি কি আছে?” মাস্টার নূতন গুড়ের সন্দেশ আনিয়াছিলেন। রামলালকে বলিলেন, সন্দেশ তাকের উপর আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কি, আন না।

    মাস্টার ব্যস্ত হইয়া তাক খুঁজিতে গেলেন। দেখিলেন, সন্দেশ নাই, বোধহয় ভক্তদের সেবায় খরচ হইয়াছে। অপ্রস্তুত হইয়া ঠাকুরের কাছে ফিরিয়া আসিয়া বসিলেন (Kathamrita)।

    ঠাকুর কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আচ্ছা একবার তোমার স্কুলে গিয়ে যদি দেখি—

    মাস্টার ভাবিতেছেন, উনি নারায়ণকে স্কুলে দেখিতে যাইবার ইচ্ছা করিতেছেন (Kathamrita)।

    মাস্টার—আমাদের বাসায় গিয়ে বসলে তো হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না, একটা ভাব আছে। কি জানো, আর কেউ ছোকরা আছে কিনা একবার দেখতুম।

    মাস্টার—অবশ্য আপনি যাবেন। অন্য লোক দেখতে যায়, সেইরূপ আপনিও যাবেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) আহারান্তে ছোট খাটটিতে গিয়া বসিলেন। একটি ভক্ত তামাক সাজিয়া দিলেন। ঠাকুর তামাক খাইতেছেন। ইতিমধ্যে মাস্টার ও গোপাল বারান্দায় বসিয়া রুটি ও ডাল ইত্যাদি জলখাবার খাইলেন। তাঁহারা নহবতে ঘরে শুইবেন (Kathamrita) ঠিক করিয়াছেন।

    খাবার পর মাস্টার খাটের পার্শ্বস্থ পাপোশে আসিয়া বসিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—নহবতে যদি হাঁড়িকুড়ি থাকে? এখানে শোবে? এই ঘরে?

    মাস্টার—যে আজ্ঞে।

  • Ramakrishna 333: “রাত্রে একটু সুজির পায়েস ও একখানি কি দুখানি লুচি খান, ঠাকুর রামলালকে বলিতেছেন সুজি কি আছে?”

    Ramakrishna 333: “রাত্রে একটু সুজির পায়েস ও একখানি কি দুখানি লুচি খান, ঠাকুর রামলালকে বলিতেছেন সুজি কি আছে?”

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    ভক্তসঙ্গে সংকীর্তনানন্দে

    ভক্ত সঙ্গে–ভক্তকথাপ্রসঙ্গে 

    মণি এবং গোপালের আর যাওয়া হইল না, তাঁহারা আজ রাত্রে থাকিবেন। তাঁহারা ও আরও ২/১ জন ভক্ত মেঝেতে বসিয়া আছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীযুক্ত রাম (Ramakrishna) চক্রবর্তীকে বলিতেছেন, “রাম, এখানে যে আর-একখানি পাপোশ ছিল। কোথায় গেল?”

    ঠাকুর (Ramakrishna) সমস্ত দিন অবসর পান নাই—একটু বিশ্রাম করিতে পান নাই। ভক্তদের ফেলিয়া কোথায় যাইবেন! এইবার একবার বর্হিদেশে যাইতেছেন। ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন যে, মণি রামলালের নিকট গান লিখিয়া লইতেছেন (Kathamrita) —

    “তার তারিণি!
    এবার ত্বরিত করিয়ে তপন-তনয়-ত্রাসিত”—ইত্যাদি।

    ঠাকুর মণিকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “কি লিখছো?” গানের কথা শুনিয়া বলিলেন, “এ যে বড় গান।”

    রাত্রে ঠাকুর একটু সুজির পায়েস ও একখানি কি দুখানি লুচি খান। ঠাকুর রামলালকে বলিতেছেন (Kathamrita), “সুজি কি আছে?”

    গান এক লাইন দু’লাইন লিখিয়া মণি লেখা বন্ধ করিলেন।

    ঠাকুর মেঝেতে আসনে বসিয়া সুজি খাইতেছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) আবার ছোট খাটটিতে বসিলেন। মাস্টার খাটের পার্শ্বস্থিত পাপোশের উপর বসিয়া ঠাকুরের সহিত কথা কহিতেছেন। ঠাকুর নারায়ণের কথা বলিতে বলিতে ভাবযুক্ত হইতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আজ নারায়ণকে দেখলুম।

    মাস্টার—আজ্ঞা হাঁ, চোখ ভেজা। মুখ দেখে কান্না পেল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—ওকে দেখলে যেন বাৎসল্য হয়। এখানে আসে বলে ওকে বাড়িতে মারে। ওর হয়ে বলে এমন কেউ নাই। ‘কুব্জা তোমায় কু বোঝায়। রাইপক্ষে বুঝায় এমন কেউ নাই।’

    মাস্টার (সহাস্যে) — হরিপদর বাড়িতে বই রেখে পলায়ন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) —ওটা ভাল করে নাই।

    ঠাকুর চুপ করিয়াছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে কথা কহিতেছেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—দেখ, ওর খুব সত্তা। তা না হলে কীর্তন শুনতে শুনতে আমায় টানে! ঘরের ভিতর আমার আসতে হল। কীর্তন ফেলে আসা—এ কখনও হয় নাই।

  • Ramakrishna 332: “কীর্তনিয়া কীর্তন সমাপ্ত হইল, কেহ কেহ মা কালীর ও রাধাকান্তের মন্দিরে আরতি দর্শন করলেন”

    Ramakrishna 332: “কীর্তনিয়া কীর্তন সমাপ্ত হইল, কেহ কেহ মা কালীর ও রাধাকান্তের মন্দিরে আরতি দর্শন করলেন”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    ভক্তসঙ্গে সংকীর্তনানন্দে

    অনেক ভক্তেরা আসিয়াছেন। শ্রীযুক্ত বিজয় গোস্বামী, মহিমাচরণ, নারায়ণ, অধর, মাস্টার, ছোট গোপাল ইত্যাদি। রাখাল, বলরাম তখন শ্রীবৃন্দাবনধামে আছেন।

    বেলা ৩-৪টা বাজিয়াছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) বারান্দায় কীর্তন শুনিতেছেন। কাছে নারাণ আসিয়া বসিলেন। অন্যান্য ভক্তেরা চতুর্দিকে বসিয়া আছেন।

    এমন সময় অধর আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অধরকে দেখিয়া ঠাকুর যেন শশব্যস্ত হইলেন। অধর প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলে ঠাকুর তাঁহাকে আরও কাছে বসিতে ইঙ্গিত করিলেন।

    কীর্তনিয়া কীর্তন সমাপ্ত করিলেন। আসর ভঙ্গ হইল। উদ্যানমধ্যে ভক্তেরা এদিক-ওদিক বেড়াইতেছেন। কেহ কেহ মা কালীর ও রাধাকান্তের মন্দিরে আরতি দর্শন করিতে গেলেন।

    সন্ধ্যার পর ঠাকুরের ঘরে আবার ভক্তেরা আসিলেন।

    ঠাকুরের (Ramakrishna) ঘরের মধ্যে আবার কীর্তন হইবার উদ্যোগ হইতেছে। ঠাকুরের খুব উৎসাহ, বলিতেছেন যে, “এদিকে একটা বাতি দাও।” ডবল বাতি জ্বালিয়া দেওয়াতে খুব আলো হইল।

    ঠাকুর বিজয়কে বলিতেছেন (Kathamrita), “তুমি অমন জায়গায় বসলে কেন? এদিকে সরে এস।”

    এবার সংকীর্তন খুব মাতামাতি হইল। ঠাকুর মাতোয়ারা হইয়া নৃত্য করিতেছেন। ভক্তেরা তাঁহাকে খুব বেড়াইয়া বেড়াইয়া নাচিতেছেন। বিজয় নৃত্য করিতে করিতে দিগম্বর হইয়া পড়িয়াছেন। হুঁশ নাই।

    কীর্তনান্তে বিজয় চাবি খুঁজিতেছেন, কোথায় পড়িয়া গিয়াছে। ঠাকুর বলিতেছেন, “এখানেও একটা হরিবোল খায়।” এই বলিয়া হাসিতেছেন। বিজয়কে আরও বলিতেছেন, “ও সব আর কেন” (অর্থাৎ তার চাবির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কেন)!

    কিশোরী প্রণাম করিয়া বিদায় লইতেছেন (Kathamrita)। ঠাকুর যেন স্নেহে আর্দ্র হইয়া তাঁহার বক্ষে হাত দিলেন আর বলিলেন, “তবে এসো।” কথাগুলি যেন করুণামাখা। কিয়ৎক্ষণ পরে মণি ও গোপাল কাছে আসিয়া প্রণাম করিলেন—তাঁহারা বিদায় লইবেন। আবার সেই স্নেহমাখা কথা। কথাগুলি হইতে যেন মধু ঝরিতেছে। বলিতেছেন, “কাল সকালে উঠে যেও, আবার হিম লাগবে?”

    মণি এবং গোপালের আর যাওয়া হইল না, তাঁহারা আজ রাত্রে থাকিবেন। তাঁহারা ও আরও ২/১ জন ভক্ত মেঝেতে বসিয়া আছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীযুক্ত রাম চক্রবর্তীকে বলিতেছেন, “রাম, এখানে যে আর-একখানি পাপোশ ছিল। কোথায় গেল?”

    ঠাকুর সমস্ত দিন অবসর পান নাই—একটু বিশ্রাম করিতে পান নাই। ভক্তদের ফেলিয়া কোথায় যাইবেন! এইবার একবার বর্হিদেশে যাইতেছেন। ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন যে, মণি রামলালের নিকট গান লিখিয়া লইতেছেন —

    “তার তারিণি!
    এবার ত্বরিত করিয়ে তপন-তনয়-ত্রাসিত”—ইত্যাদি।

  • Ramakrishna 331: “বালীনিবাসী প্যারীবাবুর পরিবারেরা ও মেয়েরা কালীমন্দির দর্শন করিতে আসিয়াছে”

    Ramakrishna 331: “বালীনিবাসী প্যারীবাবুর পরিবারেরা ও মেয়েরা কালীমন্দির দর্শন করিতে আসিয়াছে”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    সংকীর্তনানন্দে

    আজ একজন গায়ক আসবে, সম্প্রদায় লইয়া কীর্তন করিবে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাঝে মাঝে ভক্তদের জিজ্ঞাসা করিতেছেন, কই কীর্তন কই?

    মহিমা বলিতেছেন—আমরা বেশ আছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না গো, এতো আমাদের বারমাস আছে।

    নেপথ্যে একজন বলিতেছেন (Kathamrita), ‘কীর্তন এসেছে।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) আনন্দে পূর্ণ হয়ে কেবল বললেন, “অ্যাঁ, এসেছে?”

    ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে লম্বা বারান্দায় মাদুর পাতা হইল। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতেছেন, “গঙ্গাজল একটু দে, যত বিষয়ীরা পা দিচ্ছে।”

    বালীনিবাসী প্যারীবাবুর পরিবারেরা ও মেয়েরা কালীমন্দির দর্শন করিতে আসিয়াছে, কীর্তন হইবার উদ্যোগ দেখিয়া তাহাদের শুনিবার ইচ্ছা হইল। একজন ঠাকুরকে আসিয়া বলিতেছে (Kathamrita), “তারা জিজ্ঞাসা করছে ঘরে কি জায়গা হবে, তারা কি বসতে পারে?” ঠাকুর কীর্তন শুনিতে শুনিতে বলিতেছেন, “না, না।” (অর্থাৎ ঘরে) জায়গা কোথায়?

    এমন সময় নারায়ণ আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) বলিতেছেন, “তুই কেন এসেছিস? অত মেরেছে—তোর বাড়ির লোক।” নারাণ ঠাকুরের ঘরের দিকে যাইতেছেন দেখিয়া ঠাকুর বাবুরামকে ইঙ্গিত করিলেন (Kathamrita), “ওকে খেতে দিস।”

    নারাণ (Ramakrishna) ঘরের মধ্যে গেলেন। হঠাৎ ঠাকুর উঠিয়া ঘরে প্রবেশ করিলেন। নারাণকে নিজের হাতে খাওয়াইবেন। খাওয়াইবার পর আবার কীর্তনের স্থানে আসিয়া বসিলেন।

    ভক্তসঙ্গে সংকীর্তনানন্দে

    অনেক ভক্তেরা আসিয়াছেন। শ্রীযুক্ত বিজয় গোস্বামী, মহিমাচরণ, নারায়ণ, অধর, মাস্টার, ছোট গোপাল ইত্যাদি। রাখাল, বলরাম তখন শ্রীবৃন্দাবনধামে আছেন।

    বেলা ৩-৪টা বাজিয়াছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বারান্দায় কীর্তন শুনিতেছেন। কাছে নারাণ আসিয়া বসিলেন। অন্যান্য ভক্তেরা চতুর্দিকে বসিয়া আছেন।

    এমন সময় অধর আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অধরকে দেখিয়া ঠাকুর যেন শশব্যস্ত হইলেন। অধর প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলে ঠাকুর তাঁহাকে আরও কাছে বসিতে ইঙ্গিত করিলেন।

    কীর্তনিয়া কীর্তন সমাপ্ত করিলেন। আসর ভঙ্গ হইল। উদ্যানমধ্যে ভক্তেরা এদিক-ওদিক বেড়াইতেছেন। কেহ কেহ মা কালীর ও রাধাকান্তের মন্দিরে আরতি দর্শন করিতে গেলেন।

    সন্ধ্যার পর ঠাকুরের ঘরে আবার ভক্তেরা আসিলেন (Ramakrishna)।

    ঠাকুরের ঘরের মধ্যে আবার কীর্তন হইবার উদ্যোগ হইতেছে। ঠাকুরের খুব উৎসাহ, বলিতেছেন যে, “এদিকে একটা বাতি দাও।” ডবল বাতি জ্বালিয়া দেওয়াতে খুব আলো হইল।

    ঠাকুর বিজয়কে বলিতেছেন (Kathamrita), “তুমি অমন জায়গায় বসলে কেন? এদিকে সরে এস।”

  • Ramakrishna 330: “রাগভক্তির কিন্তু পতন নাই! কাদের রাগভক্তি হয়? যাদের পূর্বজন্মে অনেক আছে অথবা যারা নিত্যসিদ্ধ”

    Ramakrishna 330: “রাগভক্তির কিন্তু পতন নাই! কাদের রাগভক্তি হয়? যাদের পূর্বজন্মে অনেক আছে অথবা যারা নিত্যসিদ্ধ”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    একাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    স্ব-স্বরূপে থাকা কিরূপ—জ্ঞানযোগ বড় কঠিন

     

    শ্রীরামকৃষ্ণ ও ভক্তিযোগ—রাগভক্তি হলে ঈশ্বরলাভ 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—রাগভক্তি এলে, অর্থাৎ ঈশ্বরে ভালবাসা এলে তবে তাঁকে পাওয়া যায়। বৈধীভক্তি হতেও যেমন যেতেও তেমন। এত জপ, এত ধ্যান করবে, এত যাগ-যজ্ঞ-হোম করবে, এই এই উপচারে পূজা করবে, পূজার সময় এই এই মন্ত্র পাঠ করবে—এই সকলের নাম বৈধীভক্তি। হতেও যেমন, যেতেও তেমন! কত লোকে বলে, আর ভাই, কত হবিষ্য করলুম, কতবার বাড়িতে পূজা আনলুম, কিন্তু কি হল (Kathamrita)?

    “রাগভক্তির কিন্তু পতন নাই! কাদের রাগভক্তি হয়? যাদের পূর্বজন্মে অনেক কাজ করা আছে। অথবা যারা নিত্যসিদ্ধ। যেমন একটা পোড়ো বাড়ির বনজঙ্গল কাটতে কাটতে নল-বসানো ফোয়ারা একটা পেয়ে গেল! মাটি-সুরকি ঢাকা ছিল; যাই সরিয়ে দিলে অমনি ফরফর করে জল উঠতে লাগল!

    “যাদের রাগভক্তি (Ramakrishna) তারা এমন কথা বলে না, ‘ভাই, কত হবিষ্য করলুম—কিন্তু কি হল!’ যারা নূতন চাষ করে তাদের যদি ফসল না হয়, জমি ছেড়ে দেয়। খানদানি চাষা ফসল হোক আর না হোক, আবার চাষ করবেই। তাদের বাপ-পিতামহ চাষাগিরি করে এসেছে, তারা জানে যে চাষ করেই খেতে হবে।

    “যাদের রাগভক্তি, তাদেরই আন্তরিক। ঈশ্বর তাদের ভার লন। হাসপাতালে নাম লেখালে — আরাম না হলে ডাক্তার ছাড়ে না।

    “ঈশ্বর (Ramakrishna) যাদের ধরে আছেন তাদের কোন ভয় নাই। মাঠের আলের উপর চলতে চলতে যে ছেলে বাপকে ধরে থাকে সে পড়লেও পড়তে পারে—যদি অন্যমনস্ক হয়ে হাত ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাপ যে ছেলেকে ধরে থাকে সে পড়ে (Kathamrita) না।”

    “বিশ্বাসে কি না হতে পারে? যার ঠিক, তার সব তাতে বিশ্বাস হয়,—সাকার-নিরাকার, রাম, কৃষ্ণ, ভগবতী।

    “ও-দেশে যাবার সময় রাস্তায় ঝড়-বৃষ্টি এলো। মাঠের মাঝখানে আবার ডাকাতের ভয়। তখন সবই বললুম—রাম, কৃষ্ণ, ভগবতী; আবার বললুম, হনুমান! আচ্ছা সব বললুম—এর মানে কি?

  • Ramakrishna 329: “জ্ঞানীর উদ্দেশ্য স্ব-স্বরূপকে জানা; এরই নাম জ্ঞান, এরই নাম মুক্তি, পরমব্রহ্ম, ইনিই নিজের স্বরূপ”

    Ramakrishna 329: “জ্ঞানীর উদ্দেশ্য স্ব-স্বরূপকে জানা; এরই নাম জ্ঞান, এরই নাম মুক্তি, পরমব্রহ্ম, ইনিই নিজের স্বরূপ”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    একাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর
    স্ব-স্বরূপে থাকা কিরূপ—জ্ঞানযোগ বড় কঠিন

    ঠাকুর (Kathamrita) একটু চুপ করিলেন ও মহিমাদি ভক্তদের দেখিতেছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) শুনিয়াছিলেন যে, মহিমাচরণ গুরু মানেন না। এইবার ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—গুরুবাক্যে বিশ্বাস করা উচিত। গুরুর চরিত্র দিকে দেখবার দরকার নাই। ‘যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়, তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।’

    “একজন চন্ডী ভাগবত শোনাতো। সে বললে, ঝাড়ু অস্পৃশ্য বটে কিন্তু স্থানকে শুদ্ধ করে।”

    মহিমাচরণ বেদান্তচর্চা করেন। উদ্দেশ্য ব্রহ্মজ্ঞান। জ্ঞানীর পথ অবলম্বন করিয়াছেন ও সর্বদা বিচার করেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মহিমার প্রতি)—জ্ঞানীর উদ্দেশ্য স্ব-স্বরূপকে জানা; এরই নাম জ্ঞান, এরই নাম মুক্তি। পরমব্রহ্ম, ইনিই নিজের স্বরূপ। আমি আর পরমব্রহ্ম এক, মায়ার দরুন জানতে দেয় না।

    “হরিশকে বললুম, আর কিছু নয়, সোনার উপর ঝোড়া কতক মাটি পড়েছে, সেই মাটি ফেলে দেওয়া।

    “ভক্তেরা ‘আমি’ রাখে, জ্ঞানীরা রাখে না। কিরূপে স্ব-স্বরূপে থাকা যায় ন্যাংটা উপদেশ দিত,—মন বুদ্ধিতে লয় কর, বুদ্ধি আত্মাতে লয় কর, তবে স্ব-স্বরূপে থাকবে।

    “কিন্তু ‘আমি’ থাকবেই থাকবে; যায় না। যেমন অনন্ত জলরাশি, উপরে নিচে, সম্মুখে পিছনে, ডাইনে বামে, জল পরিপূর্ণ! সেই জলের মধ্যে একটি জলপূর্ণ কুম্ভ আছে। ভিতরে বাহিরে জল, কিন্তু তবু ও কুম্ভটি আছে। ‘আমি’ রূপ কুম্ভ।”

    পূর্বকথা—কালীবাড়িতে বজ্রপাত—ব্রহ্মজ্ঞানীর শরির ও চরিত্র

    “জ্ঞানীর শরীর যেমন তেমনই থাকে; তবে জ্ঞানাগ্নিতে কামাদিরিপু দগ্ধ হয়ে যায়। কালীবাড়িতে অনেকদিন হল ঝড়-বৃষ্টি হয়ে কালীঘরে বজ্রপাত হয়েছিল। আমরা গিয়ে দেখলাম, কপাটগুলির কিছু হয় নাই; তবে ইস্ক্রুগুলির মাথা ভেঙে গিছিল। কপাটগুলি যেন শরীর, কামাদি আসক্তি যেন ইস্ক্রুগুলি।

    “জ্ঞানী কেবল ঈশ্বরের কথা ভালবাসে। বিষয়ের কথা হলে তার বড় কষ্ট হয়। বিষয়ীরা আলাদা লোক। তাদের অবিদ্যা-পাগড়ি খসে না। তাই ফিরে-ঘুরে ওই বিষয়ের কথা এনে ফেলে।

    “বেদেতে সপ্তভূমির কথা আছে। পঞ্চমভূমিতে যখন জ্ঞানী উঠে, তখন ঈশ্বরকথা বই শুনতেও পারে না, আর বলতেও পারে না। তখন তার মুখ থেকে কেবল জ্ঞান উপদেশ বেরোয়।”

    এই সমস্ত কথায় শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কি নিজের অবস্থা বর্ণনা করিতেছেন? ঠাকুর আবার বলিতেছেন —“বেদে আছে ‘সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম।’ ব্রহ্ম একও নয়, দুইও নয়। এক-দুয়ের মধ্যে। অস্তিও বলা যায় না, নাস্তিও বলা যায় না। তবে অস্তি-নাস্তির মধ্যে।”

  • Bagha Nacha: ওড়িশায় দেবী বুধি ঠাকুরানিকে সন্তুষ্ট করতে বাঘের পোশাক পরে নাচ করেন শিল্পীরা

    Bagha Nacha: ওড়িশায় দেবী বুধি ঠাকুরানিকে সন্তুষ্ট করতে বাঘের পোশাক পরে নাচ করেন শিল্পীরা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওড়িশার (Odisha) গঞ্জামের ঐতিহাসিক লোকনৃত্য় হল বাঘা-নাচ বা বাঘ নৃত্য (Bagha Nacha)। এই উৎসবে নৃত্যশিল্পীদের বাঘের পোশাক পরে নাচতে দেখা যায়। তাঁরা দেবীকে বুধি ঠাকুরানিকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন এভাবেই। এরসঙ্গে শুরু হয় ঠাকুরানি যাত্রা। ভক্তদের বিশ্বাস, এতে দেবী সন্তুষ্ট হন।

    বাঘা নাচ (Bagha Nacha) সম্পর্কে কী বলছেন জনৈক নৃত্যশিল্পী?

    বাঘা নাচ (Bagha Nacha) সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন শিল্পী রাজকুমার বেহারা বলেন, ‘‘এখানে নাচটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেমন পরিবেশন হল সেই নাচটা, সেটাও খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে এই নৃত্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আধ্যাত্মিকতার এবং দেবত্ব লাভের। দেবীকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এই বাঘা নাচ (Bagha Nacha) অনুষ্ঠিত হয়। এটি এক ধরনের ব্রত বলা যেতে পারে। ভক্তরা যাঁরা এই নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং বাঘা নাচে অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা এই ব্রত পালন করেন। তাঁদেরকে উপবাস পালন করতে হয়। এই সময়কালে ব্রহ্মচর্য বজায় রাখতে হয়। এর পাশাপাশি মানসিকভাবে শান্ত থাকতে হয়। তাঁরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং পবিত্র পোশাক পরেন। গোটা গায়ে তাঁরা পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে হলুদ এবং চন্দনের গুঁড়ো লাগান। একইসঙ্গে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ দিয়েও তাঁরা শরীরে নকশা করেন।’’

    সারা রাত ধরে চলে বাঘা নাচ (Bagha Nacha)

    জানা যায়, এভাবে সেজে উঠতে প্রত্যেক ব্যক্তির পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা সময় লাগে। ব্যবহৃত রঙ গুলিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে নানা রকমের পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। যাতে তা খুব সহজে গা থেকে উঠে না যায়। নৃত্যশিল্পী বেহেরা আরও বলেন,‘‘এই রঙ গুলি তৈরি করতেও আমাদের দু মাসের বেশি সময় লাগে। সারা শরীর এইভাবেই আমরা চিত্রকর্ম করি। দেবী বুধি ঠাকুরানীকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই শিল্পীরা বাঘের মুখোশ পরেন।’’ তবে, নৃত্যশিল্পীরা যে ধরনের পোশাক ব্যবহার করেন, তার দাম কিন্তু খুব একটা কম নয়। ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে এই পোশাক তাঁরা কেনেন। নিজেরাই কেনেন। দেবী বুধি ঠাকুরানির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি অর্পণ করতেই তাঁরা এই কাজ করেন। এই পোশাক প্রস্তুত হয়ে গেলে নৃত্যশিল্পীরা এক একটি স্থানে যান। সেখানে অনেক মানুষের জমায়েত হয়। সারা রাত ধরেই তাঁরা নৃত্য পরিবেশন করতে থাকেন। এই সময়ের মধ্যে যে সমস্ত মানুষ বা ভক্তবৃন্দ বাঘা নাচ দেখতে আসেন, তাঁরাই এই শিল্পীদের এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যান।

LinkedIn
Share