মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আলো, সাজসজ্জা, উপহার আর উৎসবের আনন্দে ভরপুর ক্রিসমাস। কিন্তু এই উৎসবের আড়ালেই তৈরি হচ্ছে এক বিশাল পরিবেশগত সংকট। পরিবেশবিদ ও গবেষকদের মতে, আধুনিক সময়ে ক্রিসমাস কেবল ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি বিশ্বজুড়ে অন্যতম বড় বার্ষিক ভোগবাদী ও পরিবেশ-ক্ষতিকর উৎসবে পরিণত হয়েছে।
উৎসবের সঙ্গে বাড়ছে অতিরিক্ত ভোগ
যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে পালিত এই উৎসবটি একসময় ছিল সংযম, দান ও মানবিকতার প্রতীক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিসমাস এখন কেনাকাটা, ভ্রমণ, উপহার আদান-প্রদান, সাজসজ্জা ও খাদ্য উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বার্ষিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
শপিং মল, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, কৃষিখামার, বনাঞ্চল থেকে শুরু করে বর্জ্যভূমি – সব জায়গাতেই এই উৎসবের প্রভাব পড়ে। ডিসেম্বর শেষ হলেও তার পরিবেশগত ক্ষতি দীর্ঘদিন থেকে যায়।
বনসম্পদের উপর বাড়ছে অদৃশ্য চাপ
ক্রিসমাসের অন্যতম বড় কিন্তু কম আলোচিত প্রভাব পড়ছে বনসম্পদের উপর। প্রাকৃতিক ক্রিসমাস ট্রি, র্যাপিং পেপার, কার্ডবোর্ড বাক্স, কাঠের সাজসজ্জা ও কাগজ-ভিত্তিক উপহার – এই সবকিছুর উৎসই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বনভূমি।
উৎসবের মরশুমে এই পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায়, এমনকি নিয়ন্ত্রিত প্ল্যান্টেশন থেকেও অতিরিক্ত কাঠ ও কাগজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে বন সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের উপর চাপ বাড়ছে।
বর্জ্য ব্যবস্থায় তৈরি হচ্ছে বড় সংকট
ক্রিসমাসের সময় বর্জ্যের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। উন্নত দেশগুলির পৌর সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উৎসবের সময়ে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক বর্জ্য উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে।
একবার ব্যবহারযোগ্য সাজসজ্জা, অতিরিক্ত প্যাকেজিং, প্লাস্টিক মোড়া উপহার – এই সব মিলিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা কার্যত হিমশিম খায়। এই বর্জ্যের বড় অংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং শেষ পর্যন্ত ল্যান্ডফিলে গিয়ে জমা হয়।
প্লাস্টিক ও মিথেনের দ্বৈত বিপদ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিসমাসে ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রী পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকগুলির একটি। গবেষণা জানাচ্ছে, উৎসবের মরশুমে সারা বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
অতিরিক্ত খাদ্য অপচয় ও ব্যবহৃত ক্রিসমাস ট্রি যখন ল্যান্ডফিলে পচে যায়, তখন সেখান থেকে নির্গত হয় মিথেন গ্যাস। এই গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় বহু গুণ বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস।
ক্রিসমাস আনন্দের উৎস, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সেই আনন্দ যদি অজান্তেই প্রকৃতির উপর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করে, তাহলে সচেতন হওয়া জরুরি। জলবায়ু সংকটের এই সময়ে উৎসবের সংজ্ঞা বদলাতে হবে – ভোগ থেকে দায়িত্বের দিকে।

Leave a Reply