মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: করোনা (Coronavirus) এখনও দূর হয়নি। তার মধ্যেই নয়া দোসর মাঙ্কিপক্স (Monkey Pox)। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত বহু মানুষ। ভারতে (India) এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস হানা না দিলেও পর্তুগাল, স্পেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো কয়েকটি দেশে মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত রোগীর হদিশ মিলেছে। উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বা হু। কী ভাবে এই নয়া ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিংবা কী পদ্ধতিতে এর মোকাবিলা করা যায়, এই নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে হু (WHO)। সতর্ক দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকও (Union Health Ministry)। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আইসিএমআর (ICMR) কে সচেতন থাকতে বলেন। চিকিৎসক ও গবেষকদের নয়া ভাইরাস নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কথাও জানান। বিমানবন্দর ও বন্দর এলাকাগুলিতে আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আসা ব্যক্তিদের উপরেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
মাঙ্কিপক্স কী?
এটি একটি বায়ুবাহিত ভাইরাস। এই ভাইরাসের জেরে যে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, তাকেই মাঙ্কিপক্স বলা হচ্ছে। ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স পাওয়া গিয়েছিল। মূলত ইঁদুর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল। তবে মূল চিন্তার বিষয় একজন আক্রান্তের থেকে মাঙ্কিপক্স অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সংক্রমণের আশঙ্কা: মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বাড়তে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনও ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরের প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কি ভাইরাস। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও একে অপরের শরীরে হানা দিতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক মিলনেও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোগের উপসর্গ: কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথার মতো কিছু প্রাথমিক উপসর্গ তো রয়েছেই। এ ছাড়াও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে ছোট ছোট অসংখ্যা ক্ষতচিহ্নের দেখা মেলে। ক্রমশ সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গুটি বা জল বসন্তের সঙ্গে মাঙ্কি পক্সের উপসর্গের দিক থেকে সাদৃশ্য থাকায় অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন।
চিকেন পক্স ও মাঙ্কি পক্স: ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস অনুসারে, মাঙ্কি পক্সকে অনেকেই চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন। চিকেন পক্সের (Chicken Pox) মতো মাঙ্কি পক্সের ক্ষেত্রেও শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে। ফ্লুইড যুক্ত এই ফুসকুড়িগুলি পরে ত্বকের দাগেরও সৃষ্টি করছে। উপসর্গগত সাদৃশ্য থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কি পক্স সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রতিকার থাকলেও এই বিরল রোগ নিরাময়ের এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ৭ মে লন্ডনে প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কি পক্সের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। সেখানেই কোনওভাবে আক্রান্ত হন বলে ধারণা করা হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, সমকামী পুরুষদের মধ্যে এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkey Pox Virus) দ্রুতহারে ছড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ যাচাই করতেই হু-এর (WHO) এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি, মাঙ্কিপক্সের হাত থেকে নিস্তার পেতে কোনওপ্রকার ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে, তা জানতেও নানাবিধ পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্রিটেন (UK), স্পেন, বেলজিয়াম, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং কাডানা এই ভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
Leave a Reply