মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) ফের মুখ পুড়ল বিরোধীদের। পেগাসাস স্পাইওয়্যার (Pegasus Spyware) ব্যবহারকাণ্ডে দেশের শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়ে দিল, নাগরিক সমাজকে নিশানা করা না হলে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা অন্যায় নয়। ২০২১ সালে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার প্রসঙ্গে জমা পড়া রিট পিটিশনের শুনানি হয় মঙ্গলবার, সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। পেগাসাস নিয়ে এই জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন এদিন এমনই মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত।
আড়ি পাতার অভিযোগ (Pegasus Spyware)
প্রসঙ্গত, পেগাসাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও এনিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তা নিয়ে একটি কমিটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। যদিও সেই তদন্তের রিপোর্ট আজও দেখেনি দিনের আলো।
কী বলল বেঞ্চ
এদিন মামলাটির শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চে। বেঞ্চের প্রশ্ন, “দেশ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করলে সমস্যা কোথায়? বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, স্পাইওয়্যার ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই। কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস না করাই ভালো। কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, অবশ্যই সে প্রশ্ন উঠবে।” এর পরেই বেঞ্চ বলে, “নাগরিক সমাজের কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে, অবশ্যই দেখা হবে।” বিচারপতি সূর্যকান্ত (Supreme Court) বলেন, “আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি, তাতে সাবধানী হতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের দাবি
আবেদনকারীর হয়ে এদিন আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান পেগাসাস (Pegasus Spyware) তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের দাবিও জানান। সে প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমিকতার প্রশ্ন জড়িয়ে যে রিপোর্টের সঙ্গে, তা ছোঁয়া যাবে না। কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি জানতে চান, তাঁর নাম আছে কি না, আলাদাভাবে তাঁকে তা জানানো যাবে। এদিন মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেছিলেন দীনেশ দ্বিবেদী নামেও এক আইনজীবী। তিনি বেঞ্চকে বলেন, পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেন্দ্রীয় সরকার কিনেছে না কেনেনি, সেটা আমাদের সমস্যা নয়। আমার মামলাকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কাছে যদি সত্যই এটা থাকে, তবে তাদের এটা ব্যবহার করা থেকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ নেই। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতি সূর্যকান্তের পর্যবেক্ষণ, “সরকার যদি এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেও, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? স্পাইওয়্যার রাখায় কোনও সমস্যা নেই। আমরা কোনও মতেই দেশের নিরাপত্তাকে সঙ্কটে ফেলতে পারি না।”
সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য
কেন্দ্রের তরফে এদিন আদালতে সওয়াল করেছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “জঙ্গিদের গোপনীয়তা রক্ষার কোনও অধিকার নেই (Supreme Court)।” এদিকে, অন্য কয়েকজন মামলাকারীর তরফে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের রায় তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওদের আদালত আগেই বলেছিল, ভারত অন্যতম যেখানে পেগাসাস (Pegasus Spyware) ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।”
স্পাইওয়্যার পেগাসাস
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতানেত্রী এবং কয়েকজন সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতছে কেন্দ্র। এই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর-সহ একাধিক নেতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের ফোনেও আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল হয়েছিল সেই সময়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েকজন। সেই মামলারই শুনানি হল এদিন।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার
পেগাসাসকে আড়িপাতার অভিযোগে দায়ি করেছিল আমেরিকার একটি আদালত। সেই সময় জানা গিয়েছিল, ১৪০০ ডিভাইসে তাদের স্পাইওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছিল। মার্কিন আদালতের সেই রায়ের কপিও এদিন দেখতে চায় আদালত। ব্যক্তিবিশেষের উদ্বেগের কারণ থাকলেও, সেই সংক্রান্ত নথি রাস্তায় মুখরোচক আলোচনার বিষয় হতে পারে না বলেও জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত এদিন এও জানিয়ে দেয়, যাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে, তাঁদের সেই অধিকার নিশ্চিত করা হবে সংবিধানের আওতায়। ডিভিশন বেঞ্চ এটাও জানিয়ে দেয়, দেশের সুরক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত কোনও রিপোর্টে হাত দেওয়া যাবে না। তবে ব্যক্তিগত আশঙ্কার সমাধান করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এও জানিয়ে দিয়েছে, টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টের কতটা অংশ কাউকে দেওয়া হবে, সেটা খতিয়ে দেখবে শীর্ষ আদালত (Pegasus Spyware)।