Tag: CAA

CAA

  • CAA: নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া যে কোনও মুহূর্তেই উদ্বাস্তুরা হারাতে পারেন তাঁদের সারা জীবনের অর্জন

    CAA: নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া যে কোনও মুহূর্তেই উদ্বাস্তুরা হারাতে পারেন তাঁদের সারা জীবনের অর্জন

     

    মোহিত রায়

     

    যাঁরা নিত্য বিপদসংকুল জীবনযাপনে বাধ্য হন, তাঁরা ক্রমশঃ সেই বিপদের সম্ভাব্যতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যান। যে নির্মাণ শ্রমিক বাঁশের নড়বড়ে মাচায় কোনও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছাড়াই রোজ কাজ করে যান তাঁর কাছে কোনও তথ্য পৌঁছয় না যে প্রতি বছরে কতজন এরকম নির্মাণ শ্রমিক দুর্ঘটনায় সম্মুখীন হন। কোনও বিপদ, সত্যি বা মিথ্যে, নিয়ে অনেক আলোচনা হলে মানুষ ভয় পায়। অর্থাৎ যে কোনও বিপদ সম্পর্কে, তার সম্ভাব্যতা বা ভয়াবহতা যাই হোক না কেন, মানুষের ভয় উদ্রেকের জন্য দরকার তা নিয়ে যথেষ্ট হৈচৈ করা। ভয় = বিপদ + হৈচৈ। যে সব ঘটনা বেশ হৈ চৈ ফেলে, টিভিতে চোখের সামনে আতঙ্ক ছড়ায় – খুন, জখম, আগুন – এসব খবর নিয়ে সংবাদমাধ্যম বেশ হৈচৈ করে। কিন্তু যে বিপদ নীরবে আসে যেমন সর্পাঘাতে মৃত্যু (ভারতে বছরে গড়ে ৫৮০০০ জন, প্রতিদিন প্রায় ১৬০ জন) তা নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা হয় না। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকত্বহীন লক্ষ লক্ষ মানুষ যে কোনও দিন আইনের নীরব সর্পাঘাতের অপেক্ষায় আছেন। বেশিরভাগ সেটা জেনেও ওই বাঁশের মাঁচার নির্মাণ শ্রমিকটির মতন ভবিতব্যের হাতে সব ছেড়ে বসে থাকেন। 

    নাগরিক না হলে কি হয়? ভারতের নাগরিকত্ব না থাকলে বা বিদেশ থেকে এসে এখানে থাকার উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকলে আপনি দেশের ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) ১৯৪৬ অনুযায়ী আপনি বিদেশি বলে গণ্য হবেন। এই অপরাধের জন্য সাজা পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে এবং তারপর আপনি যে দেশের নাগরিক সেই দেশে আপনাকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। কিন্তু এসবের থেকেও বড় কথা এতদিন ধরে আপনার অর্জিত অর্থে সঞ্চিত ব্যাঙ্কের টাকা, আপনার বাড়ি, গাড়ি – সবই বেআইনি বলে প্রশ্নের মুখে পড়বে। আপনি শুধু নন, ১৯৮৭-র ১ জুলাইয়ের পর আপনার ছেলেমেয়ের জন্ম হলে তারাও বেআইনি বিদেশি। সুতরাং মেয়ে বিদেশে পড়তে যাবে বলে যে পাসপোর্ট করিয়েছিলেন সেটার আর কোনও দাম নেই। আপনি সরকারি চাকরি করেন, আপনার ছেলেও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি সবে পেয়েছে – এই সবই আপনি ও আপনার পুত্র হারাতে পারেন। অর্থাৎ আপনার অস্তিত্ব – আর্থিক, সাংসারিক সবই নির্ভর করছে নাগরিকত্বের উপর।

    আপনি বলবেন – আমার আধার কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে, প্যান কার্ড আছে, রেশন কার্ড আছে।  এ সবই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র। আর কি চাই। অনেক ছোটবড় নেতারাও তাই বলে বেড়াচ্ছেন। শ্রীমতী আলোরানি সরকার ভারতের নির্বাচন কমিশনের ছাড়পত্র নিয়ে ২০১৬ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে ও ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০২১-এর নির্বাচনের পর কলকাতা হাইকোর্টে নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলায় (GA 4 of 2022 EP/2/2021) আলোরানি সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের অভিযোগ আসে। আলোরানি সরকার নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেন। গত ২০ মে বিচারক বিবেক চৌধুরী তাঁর রায়ে আলোরানি সরকারকে ভারতীয় নাগরিক মানতে অস্বীকার করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আলোরানি সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছেন। এই নিবন্ধে আমরা আদালতে থাকা এই মামলার বিষয়ে আলোচনা কেবলমাত্র নাগরিকত্বের বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখব, মামলার অন্যান্য বিষয়ে নয়।
     
    আলোরানি সরকারের কিন্তু আধার কার্ড ইত্যাদি সবই ছিল কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে “এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড ভারতের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ নয়।” আলোরানি সরকারের দাবি ছিল যে তিনি জন্মসূত্রে ভারতীয় কারণ তিনি ১৯৬৯ সালে বৈদ্যবাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু আদালত দেখেছে যে তাঁর বাবা-মা থাকেন বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) পিরোজপুর জেলায়। ছোটবেলায় আলোরানি তাঁর কাকার বাড়ি বৈদ্যবাটি চলে আসেন। ফলে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের বিভিন্ন ধারায় নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ থাকলেও তা তিনি করেননি।

    আলোরানি এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ফলে তিনি ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন বিভিন্ন ধারায় নাগরিকত্বের আবেদন করার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার জন্য আবেদনের কোনও ব্যবস্থাই এতকাল ছিল না। সুতরাং এদেশে তাঁরা বেআইনি বিদেশি। এর প্রতিকারে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বলা হয়েছে যে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে অথবা আশঙ্কায় যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্শি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে এসেছেন, যাঁদের ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন ও ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইন থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে – তাঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না। 

    কিন্তু এই আইনের রুলস বা বিধি না চালু হওয়ার দরুণ উদ্বাস্তুরা আইন হওয়া সত্ত্বেও নাগরিক হতে পারছেন না। বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু উদ্বাস্তুদের উপর পুলিশ তাদের প্রয়োজন মতো নাগরিকত্বহীনতার অভিযোগ এনে, ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় ফেলছে – ভয় দেখিয়ে উৎকোচ নেওয়া থেকে শুরু করে কারাবাস। উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা এরকম অনেক ঘটনা জানেন, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আগত প্রায় দুই কোটি হিন্দু-মুসলমানের এই ভীষণ সমস্যা সাম্প্রতিক কয়েক বছর বাদ দিলে গত ৪০ বছরে সংবাদমাধ্যমে বা মানবাধিকার চর্চায় কখনও স্থান পায়নি। নীরব সর্পাঘাত কিন্তু ঘটেই চলেছে।

    ২০০৬ সালে একটি রাজনৈতিক দলের অভিযোগে হুগলির বলাগড়ের ৩৫ জন উদ্বাস্তুকে পুলিশ ফরেনার্স অ্যাক্টে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন জেলবন্দি রাখে। এঁরা সবাই গৃহস্থ মানুষ কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, জমির দলিল সব থাকা সত্ত্বেও আদালত তার কোনও মূল্য দেয়নি। ২০২০ সালে গোবরডাঙ্গা পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিক রাজু দেবনাথকে গ্রেফতার করে কয়েকটি অপরাধ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দেয়। রাজু দেবনাথের দাবি, গোবরডাঙ্গা থানার পুলিশ আধিকারিকদের কিছু অপরাধমূলক কাজ জনসমক্ষে আনায় তাঁর বিরুদ্ধে এইসব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে রাজু দেবনাথের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যায়নি। সম্প্রতি রাজু দেবনাথ জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

    তাহলে বলাগড়ের উদ্বাস্তুরা, আলোরানি সরকার বা রাজু দেবনাথ – ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড – কোনটাই তাঁদের নাগরিকত্ব দেয়নি। সুতরাং অনেক দলের নেতারা গলা ফাটিয়ে, চটি প্রচার পুস্তিকায় অনেক যুক্তিতর্ক লিখলেও, এইসব কার্ড যে আদালতে মূল্যহীন তা বারবার প্রমাণিত। আরও মনে রাখবেন, সব ক্ষেত্রে আপনার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে সাক্ষ্যপ্রমাণের দায়িত্ব – যে অভিযোগ করেছে তাঁর। কিন্তু একমাত্র ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) ১৯৪৬-এ মামলা হলে প্রমাণের দায়িত্ব অভিযোগকারীর নয়, আপনার। সুতরাং আপনার ও পরিবারের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা – সব নির্ভর করছে আপনার আইনি নাগরিকত্বের প্রমাণে। আর এই নাগরিকত্বহীনতার সর্পাঘাতে বিদ্ধ হতে পারেন শুধু সাধারণ উদ্বাস্তুরা নন, বিদ্ধ হতে পারেন গোপন উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেক জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য ও কেন্দ্রের মন্ত্রী। এখনই সচেষ্ট না হলে নীরবে সর্পাঘাতের জন্য তৈরি থাকুন। 

  • Amit Shah on CAA: “মমতা দিদি, আপনি কিছুই করতে পারবেন না…”, কোন প্রসঙ্গে একথা বললেন অমিত শাহ?

    Amit Shah on CAA: “মমতা দিদি, আপনি কিছুই করতে পারবেন না…”, কোন প্রসঙ্গে একথা বললেন অমিত শাহ?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: করোনা ঢেউ কমলেই সিএএ (CAA) চালু করা হবে। বঙ্গ (West Bengal) সফরে এসে এমনটা ফের একবার জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ (Amit Shah)।

    রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly elections) পর প্রায় বছরখানেক কেটে গিয়েছে। দু দিনের সফরে বাংলায় এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Union Home minister) অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফের (BSF) হরিদাসপুর ১৫৮ ব্যাটালিয়নে আসেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘মৈত্রী মিউজিয়ামের’ শিলান্যাস করেন। সেখানেই বিজেপি (BJP) নেতা সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (Santanu Thakur) সহ বিজেপি নেতা কর্মীরা দেখা করেন শাহের সঙ্গে। 

    বৈঠক শেষে শান্তনু ঠাকুর জানান, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বাংলায় ‘সিএএ’ চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি সাংসদ ও মতুয়া মহাসংঘের প্রধান জানান, যদিও এবিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোন কথাও হয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।

    কিন্তু শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনায় যে সিএএ প্রসঙ্গ উঠেছে তা বোঝা গেল শিলিগুড়িতে অমিত শাহের জনসভায়। সভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্টই জানান, করোনা প্রকোপ কমলেই চালু হবে সিএএ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে অমিত বলেন, “তৃণমূল (TMC) সিএএ-র বিরোধিতা করছে। সেকারণেই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তৃণমূল বলছে, সিএএ নাকি কোনও দিনই বাস্তবের আলো দেখবে না। কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই করোনা প্রকোপ কমলেই নাগরিকত্ব পাবেন আমাদের ভাইরা।” 

    অমিত শাহ জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চান অনুপ্রবেশ চলুক। আর বাংলাদেশের হিন্দু শরণার্থীরা কোনওদিন যেন নাগরিকত্ব না পায়। তিনি বলেন, “কান খুলে শুনে নিন, সিএএ ছিল, আছে, থাকবে। মমতা (Mamata) দিদি, আপনি কিছুই করতে পারবেন না।”

    গত লোকসভা নির্বাচনে সিএএ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সংসদে পাশ হয় সিএএ আইন (Citizenship Act)। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় সিএএ কার্যকর করার কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন্দ্র। সিএএ-র দাবিতে আন্দোলনও করেন জয়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঠাকুরনগরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ছিল — করোনার প্রকোপ কমলেই চালু হবে সিএএ। আজও শিলিগুড়িতে সেই কথাই বললেন অমিত শাহ।

    যদিও কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, করোনার কারণেই এখনও CAA নীতি প্রণয়ন করা যায়নি। সেই কারণেই দেরি সিএএ প্রয়োগে।

LinkedIn
Share