মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ছয় দশকে এই প্রথমবার! ১৯৬১ সালের পর প্রথম রেকর্ডহারে চিনের জনসংখ্যা কমল। ফলে চলতি বছরেই ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই চিন ও ভারত জনসংখ্যার নিরিখে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে চলছিল। তবে এবারে খুব শীঘ্রই চিনকে ছাপিয়ে ভারতই হতে চলেছে বিশ্বের জনবহুল দেশ। আজ, মঙ্গলবার ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিনের জনসংখ্যা কমছে। দীর্ঘ ৬০ বছর পর রেকর্ড পতন হয়েছে জন্মের হারে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আগের বছর ১৪১ কোটির মধ্যে চিনের জনসংখ্যা ৮ লক্ষ ৫০ হাজার কমেছে।
চিনের জনসংখ্যার গ্রাফ নিম্নমুখী
এদিন পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, চিনের জনসংখ্যা ২০২২ সালে ৮৫০,০০০ জন কমে ১.৪১১৭৫ বিলিয়ন হয়েছে। ইউএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা প্রায় ১০৯ মিলিয়ন কমে যাবে। আরও জানা গিয়েছে, গত বছর ওই দেশে জন্মহার প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ছিল ৬.৭৭ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সেটা ছিল ৭.৫২ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছর চিনের জন্মহার ছিল সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, ১৯৭৬ সালের পর চিনে মৃত্যুহারও সর্বাধিক হয়েছে। প্রতি হাজার জনে ৭.৩৭ শতাংশ। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিল ৭.১৮ শতাংশ। ফলে গত ৬০ বছরে এই প্রথম বার এমন হারে কমেছে জনসংখ্যা। আবার চিনে গত বছর জন্ম হয়েছে ৯৫ লক্ষ শিশুর। তবে, ২০২২ সালে চিনে মৃত্যু হয়েছে বেশি।
আরও পড়ুন: ‘দোষী’ আইনজীবীদের চিহ্নিত করে মামলা, বিচারপতি মান্থা বিক্ষোভকাণ্ডে বলল হাইকোর্ট
জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী?
জানা গিয়েছে, চিনের জনসংখ্যা এমন হারে হ্রাস পাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হল ‘ওয়ান চাইল্ড পলিসি’। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঠেকাতে ১৯৭৯ সালে এক সন্তান নীতি চালু করেছিল চিন। এটি ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছিল। এর পর ২০১৬ সালেই ‘এক সন্তান নীতি’ প্রত্যাহার করে দুই সন্তানের অনুমোদন দিয়েছিল চিন। কিন্তু তার পরেও জন্মহারের পতন অব্যাহত। এছাড়া শিক্ষা সংক্রান্ত খরচ আকাশছোঁয়া হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানের জন্মে রাশ টেনেছেন। এক সন্তানের বেশি কেউ-ই চাইছেন না। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, এর পর করোনার ফলে চিনে জিরো কোভিড পলিসি চালু করা হলে এটিও জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জনসংখ্যা কমায় কী প্রভাব পড়তে পারে?
চিনের এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কয়েক জন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে, চিনের জনসংখ্যা যদি ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তা হলে তার উল্টো প্রভাব পড়বে। চিনের অর্থনীতির পাশাপাশি সারা বিশ্বের অর্থনীতিও ধাক্কা খাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চিনে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংখ্যা অনেকটা বেশি হয়ে পড়েছে। ফলে এমন একটি দিন খুব শীঘ্রই আসবে যখন চিনের গতি বাড়াতে কর্মক্ষম বয়সের পর্যাপ্ত লোক থাকবে না। অর্থাৎ জন্মহার কমে আসার ফলে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকবলের অভাব দেখা দিতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৬০ সালে চিনে শেষবারের মত জনসংখ্যা কমেছিল। সেইবার চিন সম্মুখীন হয়েছিল আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের। এর পর দীর্ঘ ছয় দশক পর ফের জনসংখ্যা কমল চিনে।