মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সময়সীমা মাত্র ১৮ দিন। তার মধ্যেই ছ’টি মামলায় সিবিআই তদন্তের (CBI investigation) নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High court)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্রমেই রাজ্য পুলিশে (West Bengal police) আস্থা হারাচ্ছে আদালতও। তাই সত্য উদ্ঘাটনে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (CBI)।
বামেরা বলছে, তাদের জমানার শেষের দিকে পাঁচ বছরে তিনটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আর তৃণমূল জমানায় ১৮ দিনেই ৬টি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নিখাদ রাজনীতি করতে গিয়েই পুলিশকে দলদাসে পরিণত করেছে রাজ্যের শাসক দল। যার জেরে ক্রমেই বাড়ছে সিবিআই তদন্তের দাবি।
পুরসভা ভোটের ফল বেরনোর পরে পরেই খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। পুরুলিয়ার ঝালদার ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই শুরু। ওই ঘটনার পরে পরেই রহস্য মৃত্যু হয় তপন খুনের প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের। ওই ঘটনার তদন্তের রাশও যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে।
এর পরেই ঘটে রাজ্য তোলপাড় করা ঘটনা। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে খুন হন স্থানীয় উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখ। ওই ঘটনার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ঘরে আগুন লাগিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় ন’ জনকে। এই দুটি মামলাও গড়ায় আদালত অবধি। জোড়া ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ যাবৎ কালের এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বড় কেলেঙ্কারি এসএসসির মাধ্যমে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে। ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্ধারিত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আলাদা করে ডেকে বেশ কয়েকজনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই কেলেঙ্কারির রহস্যভেদ করতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
সিবিআই তদন্তের নির্দেশের হাতে গরম উদাহরণ আরও আছে। নদিয়ার হাঁসখালিতে বছর চোদ্দর এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত রক্তক্ষণের জেরে মৃত্যুও হয় তার। ওই ঘটনায়ও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতের বারবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট। সেটি হল, সাধারণ মানুষের মতো রাজ্য পুলিশে আস্থা হারাচ্ছে আদালতও। হারানোরই কথা। কারণ পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগে সরব হয়েছেন খোদ রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শাসক দলের কোনও কর্মীকে কোনও অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে, পুলিশকে মারধর করে আসামী ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও এ রাজ্যে ঘটেছে ঘাসফুল জমানায়।
ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেওয়ার মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত মারমুখী তৃণমূল কর্মীদের ‘ঝান্ডাঘাত’ থেকে বাঁচতে খোদ কলকাতার বুকে নির্লজ্জভাবে পুলিশকে আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছিল টেবিলের তলায়। এসব ঘটনা থেকে আমজনতা বুঝে গিয়েছে বাম জমানার মতোই তৃণমূল জমানায়ও পুলিশ পরিণত হয়েছে দলদাসে। পার্থক্য কেবল একটাই। বামেরা (Left Front) রেজিমেন্টড পার্টি। সব কিছু গুছানো। আর তৃণমূল (TMC)? ওয়ান উওম্যান শো! সব কিছুই বড্ড অগোছালো! তাই বারেবারেই মুখ পুড়ছে রাজ্য সরকারের (Mamata Banerjee government)।