মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দুদিনের সফরে রাজ্যে এসেছেন অমিত শাহ। আর তাঁর সফরের মধ্যেই খাস কলকাতায় বিজেপি যুব মোর্চা কর্মীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার বেঁধে গেল কাশীপুরে। মৃত্যুর রহস্যভেদে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে পরিবার। একইভাবে দলের যুব নেতাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি তুলে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের পক্ষে সওয়াল করলেন খোদ অমিত শাহ।
শুক্রবার সকালে কাশীপুরে রেল কোয়ার্টারের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ২৬ বছরের অর্জুন চৌরাসিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বেতন পেয়ে ঘরে ফেরেন অর্জুন চৌরাসিয়া। পরে বাইরে বের হন। কিন্তু মাঝরাত পর্যন্ত ফেরেননি। বারবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, রাতে থানায় গিয়ে অর্জুনের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানালেও গা করেনি পুলিশ। শুক্রবার সকালে মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে চিৎপুর থানার পুলিশ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিত্যক্ত ঘরেই পড়ে ছিল দেহ। মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পথে আটকায় সাধারণ মানুষ। পুলিসের সঙ্গে কার্যত ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় তাঁদের। ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। দফায় দফায় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিসের বচসা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই তৃণমূল হুমকি দিচ্ছিল অর্জুনকে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই অর্জুনকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে। একই দাবি বিজেপিরও। কাউন্সিলার সজল ঘোষ ও উত্তর কলকাতার বিজেপি সভাপতি কল্যাণ চৌবে কথা বলছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
বিজেপি সূত্রে খবর, অর্জুন কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিজেপি যুব মোর্চার মণ্ডল সহ-সভাপতি ছিলেন। কলকাতা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় ট্যুইটে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, "অর্জুন চৌরাসিয়াকে খুন করেছে তৃণমূল। খুন করে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিজিৎ সরকারের পর আরও এক কর্মী খুন। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।"
পরিবারের দাবি ছিল, অমিত শাহ না আসা পর্যন্ত দেহ ছুঁতে দেওয়া হবে না পুলিশকে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকা সিল করে দিয়েছে চিৎপুর থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনাস্থলে কলকাতার পুলিশের ডিসি সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। তাঁদের ঘিরেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকার মানুষ। অবশেষে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর, অমিত শাহ পৌঁছনোর আগেই মৃতদেহ নিয়ে যায় পুলিশ।
অমিত শাহকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল দলের তরফে। কাশীপুরের ঘটনার জেরে বাতিল করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর বিজেপির কর্মসূচি। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই সোজা কাশীপুর যান অমিত শাহ। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ। অর্জুনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পরে শাহ বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত। তাঁর দফতরও যে এই ঘটনায় পদক্ষেপ করছে তা বুঝিয়ে শাহ বলেন, ‘‘আজই রাজ্য সরকারের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রিপোর্ট তলব করছে। এই ঘটনায় দোষীদের সবাইকে কঠোর শাস্তি সুনিশ্চিত করব।’’
সব মিলিয়ে কাশীপুরের যুবকের মৃত্যু ঘিরে সরগরম হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতি।
+ There are no comments
Add yours