মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিদ্যা, জ্ঞান এবং সঙ্গীতের দেবী হিসেবে আরাধিত হন মা সরস্বতী (Saraswati Puja)। দেবী শ্বেতপদ্মে অধিষ্ঠান করেন, তাঁর এক হাতে থাকে পুস্তক, অন্য হাতে দেখা যায় বীণা। হাতে বীণা থাকার কারণে দেবী সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেবী সরস্বতী হলেন বৈদিক দেবী। বৈদিক যুগে অবশ্য চারহাতের দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই চার হাতে পুস্তক, জপমালা, জলের পাত্র এবং বীণা ধারণ করে থাকে দেবী। শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুস্তক হল বিদ্যা, জপমালা হল জ্ঞান, জলের পাত্র হল সৃষ্টি এবং বীণা হল সঙ্গীতের প্রতীক। এক কথায় বলতে গেলে, দেবী সরস্বতীকে অপার্থিব সম্পদের দেবী মানা হয়। বসন্ত পঞ্চমীর পবিত্র তিথিতে অভ্র, আবির, আমের মুকুল, যবের শীষ এবং দোয়াত-কলম সহযোগে দেবী সরস্বতীর পুজো করা হয়।
কবে সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja)?
মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে হয় দেবী সরস্বতীর (Saraswati Puja) আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলে। ঠিক এই কারণেই সরস্বতী পুজোর পাশাপাশি এই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী হিসেবেও পালিত হয় দেশজুড়ে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দিনেই আবির্ভূতা হয়েছিলেন জ্ঞান, বিদ্যা ও শিল্পকলার দেবী সরস্বতী। তবে চলতি বছরে কবে পালিত হবে সরস্বতী পুজো? তা নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মনেই। দেখে নিন পঞ্জিকা অনুসারে কবে পড়েছে বসন্ত পঞ্চমী? দেবী সরস্বতীর আরাধনা করার সঠিক দিন কবে?
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে:
পঞ্চমী তিথি আরম্ভ–
বাংলা– ১৯ মাঘ, রবিবার।
ইংরেজি– ২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার।
সময়– সকাল ৯টা ১৬ মিনিট।
পঞ্চমী তিথি শেষ–
বাংলা– ২০ মাঘ, সোমবার।
ইংরেজি– ৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার।
সময়– সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে:
পঞ্চমী তিথি আরম্ভ–
বাংলা– ১৯ মাঘ, রবিবার।
ইংরেজি– ২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার।
সময়– বেলা ১২টা ১২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড।
পঞ্চমী তিথি শেষ–
বাং– ২০ মাঘ, সোমবার।
ইং– ৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার।
সময়– সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড।
অন্যান্য পঞ্জিকা কী বলছে?
অন্যদিকে, দৃকপঞ্জিকা অনুসারে ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা ১৪ মিনিটে পঞ্চমী পড়ছে। ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ৬টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত পঞ্চমী থাকবে। এর পরেই পড়ে যাচ্ছে মাঘ শুক্লা ষষ্ঠী। প্রসঙ্গত, উদয়া তিথি অনুসারে ৩ ফেব্রুয়ারি হল বসন্ত পঞ্চমী (Saraswati Puja)। কিন্তু সেদিন যেহেতু খুব সকালেই পঞ্চমী ছেড়ে যাচ্ছে, তাই ২ না ৩ ফেব্রুয়ারি, কবে সরস্বতী পুজো করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। বেণীমাধব শীলের গার্হস্থ্য পঞ্জিকা বলছে, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা ৩৪ মিনিটে পঞ্চমী পড়ছে। সোমবার ৯টা ৫৯ মিনিটে পঞ্চমী ছাড়ছে। তবে শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা, সকালে পঞ্চমী ছেড়ে গেলেও বসন্ত পঞ্চমী তিথি যেহেতু ৩ ফেব্রুয়ারি, তাই সেদিনই পুজো করতে বলছেন সবাই।
বসন্ত পঞ্চমীর মাহাত্ম্য (Saraswati Puja)
মা সরস্বতীর (Saraswati Puja) পাশাপাশি গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, পেন এবং বাদ্যযন্ত্রের পুজোও করা হয় এই বিশেষ দিনে। অনেক বাড়িতেই শিশুদের প্রথম হাতেখড়ির অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয় এই দিন। তাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম বিদ্যাচর্চা শুরু হয় এই দিন থেকেই। মনে করা হয় বসন্ত পঞ্চমী থেকেই শীত ঋতুর অবসান ও বসন্তের আগমন বার্তা ঘোষিত হয়। দেবীকে হলুদ ফুল অর্পণ করা হয়। সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য মা সরস্বতীকে হলুদ রঙের ফুল নিবেদন করা ভালো বলে মনে করা হয়। এছাড়া বসন্তের আগমনের বার্তা বয়ে আনে হলুদ রং। দেবীভাগবত পুরাণ থেকে জানা যায়, পরম কুস্মন্দের প্ৰথম অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে তাঁর উৎপত্তি । সরস্বতী বাক, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
পৌরাণিক আখ্যান
পৌরাণিক আখ্যান অনুসারে, বসন্ত পঞ্চমীর দিনেই জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতী আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ছিলেন ব্রহ্মা। যখন তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখনই তিনি অনুভব করেছিলেন কোনও কিছু অনুপস্থিত রয়েছে। ধরাধামে শব্দ সঞ্চারের জন্য তিনি তাঁর কমণ্ডলু থেকে পৃথিবীতে জল ছিটিয়ে দেন। আর ঠিক সেই সময়তেই পৃথিবী কাঁপিয়ে আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী (Saraswati Puja 2025)। দেবীর হাতে ছিল বীণা, জপমালা ও বই। তখনই দেবীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সারাবিশ্ব জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়। তাই বসন্ত পঞ্চমীর দিন সরস্বতীর বিশেষ পুজো করা হয়। বসন্ত পঞ্চমী জীবনের নতুন শুরুর প্রতীক বলে মনে করা হয়। বসন্ত ঋতুতে ফসল পাকতে শুরু করে। হালকা শীতের মনোরম আবহাওয়ায় প্রকৃতি রঙে ভরে ওঠে, চারিদিক রঙিন ফুলে ঢেকে যায়। গাছে গাছে নতুন পাতা, রঙিন ফুল ও ফল ধারণ করে। এই দিনটিকে নতুন জিনিস শুরু করার জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।
Leave a Reply