মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam attack) নৃশংস জঙ্গি হামলার নেপথ্যে ছিল গভীর পরিকল্পনা ও স্থানীয় ভৌগোলিক জ্ঞানের কৌশলী ব্যবহার। তদন্তকারী সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারীরা জানত সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর নিকটতম ক্যাম্প থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগবে — আর এই সময়টুকুই তাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সূত্রের দাবি, সবচেয়ে নিকটবর্তী রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ইউনিট থেকে বাহিনীকে প্রথমে ৪০-৪৫ মিনিট গাড়িতে যেতে হয়, এরপর আরও ৩০-৩৫ মিনিট ট্রেক করে বৈসরন (একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট)-এ পৌঁছাতে হয়। এমনকি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (CRPF) একটি ক্যাম্প সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সামনেই থাকলেও, তারাও এক ঘণ্টার আগে পৌঁছতে পারে না। কারণ ওই পথ গাড়ি চলাচল করা কষ্টসাধ্য। ঘোড়ায় বা ট্রেক করে উঠতে হয় বৈসরন।
পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট
এই ঘটনায় তিনজন সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। অভিযুক্তরা হল – পাকিস্তানের নাগরিক হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান, আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই এবং অনন্তনাগ জেলার বাসিন্দা আব্দুল হুসেন থোকার। তিনজনই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সক্রিয় সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার কিংবা অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। হামলার পর থেকেই ভারতীয় সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী পুরো অঞ্চলে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে, তবে এখনও হামলাকারীদের কোনও খোঁজ মেলেনি।
দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে হামলা
কাশ্মীরস্থিত সেনার ১৫ কোরের প্রাক্তন জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিপি পান্ডে বলেন, “রাজ্য শান্ত ছিল, মানুষ ঘুরতে আসছিল— কিন্তু কিছু উগ্রপন্থীদের মনে শান্তি ছিল না। এই মৌলবাদী চিন্তাধারার অবসান না হলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। হামলাকারীরা জানত কোন সময়ে পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে এবং সেই অনুযায়ী তারা একাধিক দিন ধরে রেকি করেছে। হামলাকারীরা জানত এমন একটি স্থান বেছে নিলে তারা ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যাকাণ্ড চালাতে পারবে — যা অন্য কোথাও সম্ভব নাও হতে পারত।”
পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা
সূত্রের খবর, বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে ১২০-র বেশি পাকিস্তানি জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ জন কাশ্মীর উপত্যকায় এবং বাকি পীর পঞ্জালের দক্ষিণে। ২০২২ সালে যেখানে স্থানীয় জঙ্গি নিয়োগ ছিল ১২০-এর বেশি, ২০২৪ সালে তা কমে ১০-এর নিচে নেমে এসেছে। ৩৭০ ধারা বিলোপ ও কাশ্মীরের উন্নতি জঙ্গিদের কাছে চিন্তার কারণ। তবে, এই হত্যাকাণ্ড কাশ্মীরের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে। এর ফলে সীমান্ত পেরিয়ে আসা টাকা দিয়ে স্থানীয়দের সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।
Leave a Reply