মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গির (Dengue) প্রকোপ প্রত্যেক দিন লাফিয়ে বাড়ছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি (Dengue situation in West Bengal) মোকাবিলায় কার্যত ব্যর্থ রাজ্য সরকার (Mamata Banerjee Government)। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের (West Bengal Health Department) সূত্র অনুযায়ী, এই পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ডেঙ্গিতে ১৯ জন মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। বেসরকারি হিসাবে অবশ্য ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তাই বাড়তি তৎপর রাজ্য।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুজোর (Durga Puja 2022) সময় স্বাস্থ্য কর্তাদের সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুজো স্পেশাল ডিউটি রোস্টার তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যের একাধিক জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়ানক। প্রত্যেক দিন কয়েক'শ মানুষ নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার কথায়, "সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।"
কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation) সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি বরোর মধ্যে আটটি বরোর ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ১, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর বোরোয় ডেঙ্গি পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। অর্থাৎ, বালিগঞ্জ, বেকবাগান, শ্যামবাজার, কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় প্রত্যেক দিন যে হারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার। কলকাতা পুরসভার ৬, ৬৯, ৮২, ৮৩ এবং ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ। পুরসভা বিশেষ নজর দিচ্ছে। উল্লেখ্য, এরমধ্যে রয়েছে খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ওয়ার্ড। অর্থাৎ, ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। চেতলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের বাড়ল করোনা সংক্রমণ, উৎসবের আগে ডেঙ্গির পাশাপাশি ভয় ধরাচ্ছে কোভিড
তবে কলকাতার মতোই চিন্তা বাড়াচ্ছে হাওড়া (Howrah), হুগলি (Hooghly), উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা (24 Parganas)। প্রত্যেক দিন এই জেলাগুলোয় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মিছিল ও অবহ্যত। এলাকার মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বিশেষত পুরসভার ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বছর ভর পুরসভার ভূমিকা একেবারেই চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এমনকি ডেঙ্গি পরিস্থিতি বিপজ্জনক হওয়ার পরেও এলাকা পরিস্কার, রাস্তা মেরামতের মতো রুটিন কাজেও হেলদোল নেই পুরসভার। এমনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জেলার বাসিন্দাদের একাংশের।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উৎসবের মরশুমে আলাদা পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এক অধিকর্তা জানান, পুজোর সময় স্বাস্থ্য ভবনে আলাদা ডেঙ্গি কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। চব্বিশ ঘণ্টা কাজ হবে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তের ভর্তি, রক্তের প্রয়োজন, কোথাও ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হলে সেই এলাকার দিকে বিশেষ নজরদারির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবে এই বিশেষ কন্ট্রোল রুম।
পুজোর সময় সরকারি হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে যায়। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, নার্স ছুটি নেন। সরকারি হাসপাতাল পরিষেবা থমকে যায়। কিন্তু যে হারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকলে, পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে। তাই সরকারি হাসপাতালগুলোতে ও উৎসব স্পেশাল ডিউটি রোস্টার তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কে যাতে রক্তের জোগান ঠিক থাকে, সেদিকেও বাড়তি নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গি চিকিৎসায় প্লেটলেট খুব জরুরি। রক্তের জোগান ঠিক মতো না হলে, রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই ব্লাড ব্যাঙ্কের দিকে বিশেষ নজর।
আরও পড়ুন: আপনি কি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে পারেন? কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ডেঙ্গি হয়েছে?
কলকাতার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য পুর দফতরের বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন। প্রশাসনিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের পাশপাশি পুর দফতর ডেঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা নেবে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের সমস্ত পুর এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ নজরদারি দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য কর্তাদের মতোই পুর কর্তারাও উৎসবের মরশুমে এলাকা পরিদর্শন করবেন। কোথাও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে, সেই এলাকায় বিশেষ নজরদারি দেওয়া হবে।
যদিও সরকারের এই উদ্যোগ নিতে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাদের মতে, রাজ্যে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে। প্রত্যেক পাড়ায় মশাবাহিত রোগ (vector-borne disease) বাসা বাধছে। সরকারের অনেক আগেই সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল। ভাঙা রাস্তায় জমা জল, অপরিচ্ছন্ন নর্দমা, পার্ক মশার আঁতুড়ঘর। বছর ভর কাজ করছে বর্ষায় মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ কমে। কিন্তু সারা বছর সরকারের উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ডেঙ্গি হচ্ছে, এটা মানতেই প্রত্যেক বছর সরকারের অনেকটা সময় চলে যায়। পরিস্থিতি বিপদসীমা অতিক্রম করলে সরকারের হুঁশ ফেরে। তবে, পরিকল্পনা সত্যিই বাস্তবায়িত হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই আশা করছে চিকিৎসক মহল।
+ There are no comments
Add yours