মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পুজোর মুখে বানভাসি কলকাতা! হাতে আর কটা দিন, শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীপক্ষ। কিন্তু নিম্নচাপ পিছু ছাড়ছে না। পুজোর মরসুমে কাঁটা বৃষ্টি ৷ নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের জোড়া ফলায় বঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস ৷ শারদোৎসবের সময় এমন নজিরবিহীন বৃষ্টি আগে দেখেনি কলকাতা। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ চলছে মঙ্গলবার সকালেও। বৃষ্টি চলবে বুধবারও। অন্ধ্র এবং ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর বঙ্গোপসাগরের বুকে একটি নিম্নচাপ গতকাল থেকে আকার নেওয়া শুরু করেছে। আগামিকালের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আগেই অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলের মাঝে কোনও অংশে তা স্থলভাগের প্রবেশ করে যাবে।
কলকাতায় মেঘভাঙা বৃষ্টি
আবহবিদরা বলছেন, পাহাড়ের মেঘভাঙা বৃষ্টি দেখা গেল মহানগরে। সাধারণভাবেই টানা ১ ঘণ্টা ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই সেটিকে ‘ক্লাউডবার্স্ট’ বা মেঘভাঙা বৃষ্টির তকমা দিয়ে থাকে হাওয়া অফিস। মঙ্গলবার সেই বৃষ্টিরই সাক্ষী থাকল কলকাতা। মোট ৭ জায়গায় টানা ১ ঘণ্টা ধরে চলল ১০০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত। বেশ কয়েকটি জায়গায় আবার মাত্র দু-তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হল ২০০ মিলিমিটারেরও অধিক। সোমবার রাত ১২টা থেকে শহরে শুরু হয় হালকা বৃষ্টিপাত। কিন্তু রাত গভীর হতেই বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বৃষ্টির তেজ খানিক কমলেও, হাওয়া অফিস বলছে, এটা আসলে ‘ইনিংস ব্রেক’। বানভাসি কলকাতায় রয়েছে আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বাংলার অদূরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ। তার প্রভাবেই মঙ্গলে ভাসল দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা সংলগ্ন একাধিক এলাকা। ওই নিম্নচাপের জেরেই জল ভরে মেঘ ভেসে ভেসে ঢুকে পড়ছে বাংলায়। আর তারপরই শুরু হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিপাত। আগামী দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফের বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে বলেই পূর্বাভাস। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, যদি আবার বৃষ্টি হয়, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি না হলেও শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যু
দুর্যোগের সকালে কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যুর খবর মিলছে। মঙ্গলবার সকালে একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। পাশাপাশি নেতাজিনগর এবং বেনিয়াপুকুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। গড়িয়াহাটেও এক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। গড়ফাতেও এক সাইকেল আরোহীর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
পুজোতে ফের নিম্নচাপ
পূর্বাভাস অনুযায়ী, উৎসব মুখর শহরে বৃষ্টি চলবে। ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নাগদ পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে। এই নিম্নচাপটির পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে গিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দক্ষিণ ওড়িশা-উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হবে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি এবং কিছু কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যে নিম্নচাপটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, তার ব্যাসার্ধ ৭০০ কিলোমিটার। তাই কেন্দ্রস্থল থেকে দু’পাশের প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার এলাকার আবহাওয়াকে এই নিম্নচাপটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এই নিম্নচাপ কাটলেই আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। মায়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর। সেই নিম্নচাপ ক্রমে পশ্চিমে সরে এসে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মাঝামাঝি কোনও এলাকা দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। সেই নিম্নচাপটির ব্যাসার্ধও বেশ বড় হবে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আজ মঙ্গলবার বেশিরভাগ জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ার একাধিক জায়গায় ভারী বৃষ্টির (৭০-১১০ মিমি) পূর্বাভাস রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দমকা হাওয়া (৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা) হতে পারে। বাকি জেলাগুলিতেও বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝোড়ো হাওয়া (৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা) বইতে পারে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার বেশিরভাগ জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়া (৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা) বওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দমকা হাওয়া (৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা) হতে পারে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দমক হাওয়া (৪-৫০ কিমি/ঘণ্টা) বইতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়া (৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা) বওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শনি ও রবিবার একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস। ২৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে। ২৯ ও ৩০ তারিখ আবহাওয়া পরিষ্কার থাকতে পারে। তার পর থেকেই ফের পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
Leave a Reply