মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যে ব্যক্তির ডান হাতের চারটি আঙুল ঠিকমতো নেই, তিনি সুইসাইড নোট লিখলেন কী করে? পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির প্রদীপ করের সুইসাইড নোটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি। মঙ্গলবার সকালে আগরপাড়ার ফ্ল্যাটে তাঁর ঘর থেকে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘরেই মেলে একটি ডায়েরি। সেই ডায়েরির পাতা থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যায়। রাজ্যের শাসকদলের দাবি, এনআরসি এবং এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন পানিহাটির এই বাসিন্দা। সুইসাইট নোটেও লেখা ছিল সে কথা। কিন্তু বিজেপির প্রশ্ন প্রদীপ কর কি আদৌ লিখতে পারতেন?
যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন
মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রদীপ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন এবং সর্বোপরি তাঁর ডান হাতের ৪টি আঙুল ছিল না। ১৯৮০ সালে একটি দুর্ঘটনায় তাঁর হাতের ৪ আঙুল কাটা পড়ে। তবে তিনি বাঁ হাতে লিখতেন কি না, সে তথ্য মেলেনি। ফলে মৃতের দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট এবং তাতে এনআরসি-কে মৃত্যুর জন্য দায়ী করার বিষয়টি ধোপে টিকছে না বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পানিহাটির এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও বলেন, “যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সুইসাইড নোটটি কে লিখেছেন তা জানা দরকার। এনআরসি তো চালুই হয়নি। এনআরসি নিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল।” সুইসাইড নোটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
‘বিতর্কিত’ সুইসাইড নোট
প্রদীপের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। তিনি আদৌ লিখতে জানতেন কি না, তা নিয়ে তাঁর সংশয় রয়েছে। অবিবাহিত প্রদীপ ভাই এবং ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে তিনি নিজের ঘরে শুতে যান। মঙ্গলবার সকালে ভ্রাতৃবধূ বার বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে প্রদীপের ভাইকে ডাকেন। প্রতিবেশীরা আসেন। থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। পুলিশই উদ্ধার করে ‘বিতর্কিত’ সুইসাইড নোটটি। মশারির দোকান ছিল প্রদীপের। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, উনি পানিহাটি বিধানসভার ভোটার। ২০২৪ সালেও ভোট দিয়েছেন। তবে বাবা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। বুধবারই আগরপাড়ায় প্রদীপ করের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মৃত্যুর জন্য কমিশন ও বিজেপিকে একযোগে তোপ দাগেন তিনি। তারপর তিনি স্লোগান তোলেন, ‘জাস্টিস ফর প্রদীপ কর।’ সামাজিক মাধ্যমে নিজের ডিপিও পরিবর্তন করেন তিনি। এবার এই নিয়ে সরব হলেন সুকান্ত মজুমদার।
চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের পর পানিহাটির তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে সারা কলকাতা সরব হয়েছিল ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানে। রাস্তায় হয়েছিল গণঅভ্যুত্থান। এবার প্রদীপ করের এই মৃত্যু, আর তাতে বিচারের দাবিতে অভিষেক এই স্লোগান সেই পানিহাটি-আগরপাড়া এলাকাতে দাঁড়িয়েই চড়ালেন। এ প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, “আরজি করের ঘটনায় অভিষেক চুপ ছিলেন। সে সময় উনি তো নিজের জিমে ব্যস্ত ছিলেন। উনি এই বক্তব্য এর মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সারা বিশ্ব আন্দোলন করলেও তৃণমূলের কিছু করতে পারবে না। বাংলার মানুষকে হিউমিলিয়েট করার চেষ্টা করলেন। চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ।”
মিথ্যা ভয়ের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে এই ঘটনার নিন্দা করেন সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি সাংসদ বলেন, “কপি ক্যাট। নকল করার চেষ্টা করছে।” প্রদীপ করের মৃত্যু নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তোলেন সুকান্ত। তিনি বলেন,“অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, পানিহাটির ব্যক্তি এসআইআর- আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর ডায়েরিতে লেখা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” কথা প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “যে কোনও মৃত্যু দুঃখের। যে ব্যক্তির নাম ২০০২ এর ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁর চিন্তা থাকার কথা নয়। তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন। ভুল বুঝিয়ে মিথ্য ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে।”

Leave a Reply