মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত সফরে এসেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন। সোমবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) সঙ্গে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে তিনি একটি বৈঠক করেন। এরপরে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেদের যৌথ ভাষণে বলেন, ‘‘উভয় দেশই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে মুক্ত, নিরাপদ ও উন্নত করার নীতিতে বিশ্বাস রাখে।’’
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিও
জানা গিয়েছে, নয়া দিল্লিতে হায়দরাবাদ হাউসে দুই রাষ্ট্র প্রধানের বৈঠকে একটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সময়ের সুসম্পর্কের জন্য সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধান লুক্সনের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। এর পাশাপাশি অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) নেতারা যেভাবে ভারতীয় হিন্দু পরম্পরার উৎসব হোলি উদযাপন করেছেন সেটিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভাষণে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘ভারত ও নিউজিল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুই দেশের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্ককে শক্তিশালী এবং কৌশলগত রূপ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যেকোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখব।’’
কী বললেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লুক্সন
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) বক্তব্যকে সমর্থন করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেন, ‘‘ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নতির জন্য আমরা এক সঙ্গে কাজ করব।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর এই বৈঠককে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলেও বর্ণনা করেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকের সামনে নিজের বিবৃতিতে নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘‘আমি আশা করি আমাদের এই আলোচনা ভারতের সঙ্গে গভীর এবং একটি তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে যথেষ্ট দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এতে কোনও সন্দেহ নেই।’’
দুই দেশের ১০০ বছরের ক্রীড়া সম্পর্ক
প্রসঙ্গত, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এই বৈঠকে উঠে আসে ক্রীড়া সম্পর্কের কথাও। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের ১০০ বছরের ক্রীড়া সম্পর্ক নিয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উল্লেখ করেন যে ভারত ও নিউজিল্যান্ড যে কোনও খেলার ক্ষেত্রে, তা সে ক্রিকেট হোক বা হকি, সবকিছুতেই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ, ক্রীড়াবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রের মতো অন্যান্য বিষয় নিয়েও সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘‘আমরা ২০২৬ সালে দুই দেশের ক্রীড়া সম্পর্কের ১০০ বছর উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
আলোচনায় উঠে এল নিউজিল্যান্ডের ভারত বিরোধী কার্যকলাপ
একই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে বেশকিছু ভারত বিরোধী কার্যকলাপও এদিনের বৈঠকে আলোচিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হায়দরাবাদ হাউসের ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি দুই দেশেই অবৈধ অভিবাসনের সমস্যার মোকাবিলার একটি চুক্তি তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘‘ ২০১৯ সালে ক্রাইস্ট চার্চ মসজিদ হামলা এবং ২৬/১১-র সন্ত্রাসবাদ হামলা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’
২০ মার্চ পর্যন্ত তিনি ভারত সফরে থাকবেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, রবিবারই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন পাঁচ দিনের ভারত সফরে আসেন। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক সম্পন্ন হল। জানা যাচ্ছে, ২০ মার্চ পর্যন্ত তিনি ভারত সফরে থাকবেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তাঁর সঙ্গে বড় সংখ্যার প্রতিনিধি দলও এসেছে। রবিবার দিল্লি এয়ারপোর্টে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসপি সিং বাঘেল তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। জানা গিয়েছে, এই প্রতিনিধি দলে নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রী, শিল্পপতিরাও রয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ভারতে থাকাকালীন মুম্বই সফরেরও কর্মসূচি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফে।
রবিবার দিল্লিতে পা রেখে কী বলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী?
রবিবার দিল্লিতে পা রেখে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব অনেক গুণ বাড়াতে চলেছি। ভারত বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগর অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা ও উন্নয়নে কী করতে পারি সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনা করব। নিউজিল্যান্ডকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হবে।’’